• Bangla - তন্ত্র

    মহাকাশের ডাকিনী

    সৌরভ নাগ ১ ভারতের প্রত্যন্ত এক ছোট্ট গ্রাম, চারদিকে বিস্তৃত ধানক্ষেত, দূরে দূরে তালগাছ আর মাঝখানে মাটির ঘরগুলির সারি। দিনের বেলা গ্রামটি শান্ত, মানুষজন তাদের ফসল ও গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত থাকে, আর সন্ধ্যা নামলেই যেন গ্রামটা ঢেকে যায় অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতায়। আকাশভরা তারার নীচে সারা গ্রাম যখন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই ঘটল সেই অদ্ভুত ঘটনা। সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত, চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে, কেবল কিছু ঘরে কুপির আলো দপদপ করছে। সেই সময় হঠাৎ মেঘলা, গ্রামেরই এক কিশোরী, উঠোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। সে আকাশ দেখার অভ্যেস করেছে ছোটবেলা থেকে, তার মনে হয় রাতের আকাশে লুকিয়ে আছে হাজারো গল্প, হাজারো…

  • Bangla - কল্পবিজ্ঞান

    সময়ের সেতু

    অনিত চক্রবর্তী এক অর্ণব সেনের চোখে তখন ঘুমের ছায়া নেই, কেবল জেগে আছে অদম্য স্বপ্নের আলো। ল্যাবরেটরির অন্ধকার ঘরখানায় টেবিলজোড়া ছড়ানো যন্ত্রপাতি, নীল আলোতে ঝলমল করা মনিটরের গ্রাফ, আর চারদিকে ছড়ানো অজস্র খসখসে কাগজ। কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে তার গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের কাছে পাগলামি ছাড়া কিছু নয়, কিন্তু অর্ণব বিশ্বাস করে—সময় কোনো স্থির জিনিস নয়, বরং এক অদৃশ্য নদী, যেখানে স্রোতের বিপরীতে হাঁটার মতোই অতীতে বা ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব। সে নিজেকে বারবার বোঝায়, এই আবিষ্কার শুধু বিজ্ঞানের ইতিহাস নয়, মানবজাতিরও নতুন ভোর নিয়ে আসবে। শৈশব থেকেই সে ভবিষ্যৎ দেখার স্বপ্নে বিভোর ছিল—যেখানে প্রযুক্তি সীমাহীন, রোগমুক্ত এক সমাজ, আর মানুষ মহাশূন্যে নিজের…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    আত্মার নদী

    ইন্দ্রনীল নস্কর ১ প্রায় সন্ধ্যার আগমুহূর্তে অর্ণব সেন পৌঁছালো সেই অজপাড়া গাঁয়ে। শহরের চওড়া রাস্তা, আলো ঝলমলে বিলবোর্ড আর ব্যস্ত ট্রাফিকের ভিড় পেরিয়ে, ধীরে ধীরে যখন গ্রামের সরু কাঁচা পথে প্রবেশ করল, তখন মনে হলো যেন অন্য এক জগতে এসে পড়েছে। চারপাশে নিস্তব্ধতা, কেবল মাঝে মাঝে দূরে শোনা যাচ্ছে শিস দিয়ে হাওয়া বয়ে চলার শব্দ। কোথাও কোথাও কয়েকটি ঝুপড়ি ঘর, ছোট ছোট বাঁশবনের আড়াল, আর সেগুলোর ফাঁক দিয়ে ভেসে আসা গরু-মোষের ঘণ্টাধ্বনি মিলিয়ে যাচ্ছে গোধূলির আলোয়। এই গ্রামটির কথা অর্ণব আগেই শুনেছিল—একটি প্রাচীন লোককথার জন্য বিখ্যাত। নদীর ধারে নাকি এমন সব ঘটনা ঘটে, যা মানুষের কল্পনারও অতীত। অর্ণব ইতিহাস গবেষক,…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    পানবিবির আসর

    প্রতীক দত্ত এক গ্রামের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন মন্দির, যার বয়স যেন সময়ের গণ্ডি ছুঁয়ে গেছে। চারপাশে বিশালাকার বটগাছ, শেকড় ঝুলে পড়েছে দেয়ালের উপর, যেন প্রকৃতি নিজেই মন্দিরটিকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। পাথরের দেওয়ালে শেওলার আস্তরণ, ফাটল থেকে জন্ম নিয়েছে ছোট ছোট গাছ, আর স্যাঁতসেঁতে গন্ধে মন্দিরের ভেতর সবসময়ই মনে হয় কারও উপস্থিতি রয়েছে। শীতের সকালের কুয়াশা কিংবা গ্রীষ্মের দুপুরের রোদ—মন্দিরের ভেতর প্রবেশ করলে বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশ চোখে পড়ে। এখানে সময় থেমে আছে, আর সেই থেমে যাওয়া সময়ের ভেতর লুকিয়ে আছে অজস্র লোককথা, বিশ্বাস আর আতঙ্ক। গ্রামের প্রতিটি মানুষ এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে, কারণ এখানেই পূজিত…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    বেহুলার শাঁখ

    অনিন্দ্য দে ১ গ্রামের রাত সবসময়ই শান্ত, বিশেষ করে শীতের শেষে ফাগুনের সন্ধ্যায় যখন চারপাশে পেঁচা ডাকে আর দূরে কোথাও শেয়ালের ডাক ভেসে আসে। সেদিনও তেমনই এক রাত। আকাশে চাঁদ নেই, শুধু অন্ধকারের চাদর মাটিকে ঢেকে রেখেছে। দূরে দূরে ক্ষেতজমির মাঝে জোনাকিরা আলো জ্বালাচ্ছিল ক্ষুদ্র প্রদীপের মতো। গ্রামের লোকেরা তখন গভীর নিদ্রায়, কেবল কয়েকজন কৃষক কাজের ফাঁকে রাত জেগে বসেছিল মচানঘরে। হঠাৎই নিস্তব্ধতার বুক চিরে ভেসে এল এক অদ্ভুত শব্দ—শাঁখের আওয়াজ। শাঁখ বাজানোর সেই সুর গ্রাম্য পূজার সময় সবাই শুনেছে, কিন্তু আজকের সেই সুর ভিন্ন ছিল—অত্যন্ত দীর্ঘ, করুণ আর বেদনায় ভরা। কৃষকরা প্রথমে ভেবেছিল হয়তো কোনো বাড়িতে পূজা চলছে, কিন্তু…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    গঙ্গার ধারে গোরস্থান

    অনিৰ্বাণ সেনগুপ্ত ১ কলকাতার গঙ্গার ধারে সন্ধ্যার পরই এক অদ্ভুত আবহ ছড়িয়ে পড়ে। দিনের ব্যস্ততা, মালবোঝাই বার্জের হর্ন, নৌকার ভিড় আর ঘাটের চেঁচামেচি—সব মিলিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জায়গাটা থাকে কর্মচঞ্চল। কিন্তু সূর্য নামলেই চেনা ছবিটা ধীরে ধীরে বদলে যায়। ঘাটের ধারে বসে থাকা চায়ের দোকানদার আলো নিভিয়ে বাড়ি ফেরে, কাঁকড়া বা ছোট মাছ বিক্রির টাটকা হট্টগোল স্তব্ধ হয়ে যায়, আর গঙ্গার কালো জল যেন আরও ঘন হয়ে ওঠে। সেই অন্ধকারেই দাঁড়িয়ে থাকে পুরনো ব্রিটিশ কবরস্থান—ধূসর পাথরের ক্রস, শেওলা ধরা সমাধিফলক আর আধভাঙা গম্বুজওয়ালা সমাধি। কবরগুলোর চারপাশে রাত নামলেই এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি পাহারা দিচ্ছে। যারা প্রতিদিন…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    হারিয়ে যাওয়া ঘণ্টাধ্বনি

    প্ৰিয়ম বসু ১ গ্রামের নাম ছিল সোনারপুর। চারদিক সবুজে মোড়া, ধানখেতের ঢেউ, পুকুরের জলচর, আর কাদামাটির সরু পথ মিলেমিশে যেন এক অদ্ভুত শান্ত পরিবেশ তৈরি করত। কিন্তু এই শান্তির মাঝেই ছিল এক রহস্য, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গ্রামের মানুষের মনে ভয় এবং ভক্তি মিশিয়ে রেখেছিল—মন্দিরের ঘণ্টা। গ্রামে প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো এক মন্দির ছিল, পাহাড়ঘেরা গ্রামের কেন্দ্রে উঁচু একটি টিলার উপর। মন্দিরের ভেতরে ছিল এক বিশালাকার পিতলের ঘণ্টা, যা প্রতি রাত ঠিক বারোটায় নিজে থেকেই বেজে উঠত। কোনো মানুষ হাত না লাগিয়েও ঘণ্টার ভারী ধ্বনি গোটা গ্রামে প্রতিধ্বনিত হতো। গ্রামের লোকেরা বলত, এই ধ্বনি অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে, গ্রামকে…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    চাঁদের আলোয় প্রতিশ্রুতি

    চৈতালী বৰ্মন চাঁদের আলোয় ডুবে থাকা সেই গ্রামটির চারপাশে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছিল। দিনের কোলাহল ফুরিয়ে গেলে গ্রামের আকাশ যেন হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে যায়, কেবল দূরের পুকুরের ব্যাঙের ডাক আর মাঝেমধ্যে শেয়ালের হাঁক সেই নীরবতাকে খানিকটা ভেঙে দেয়। অরিন্দমের জীবনের প্রতিটি দিন কাটত একই ছন্দে—ভোরের আলোয় খেতের কাজে বেরিয়ে যাওয়া, দুপুরের রোদে ঘেমে-নেয়ে খড়ের গাদায় বসে বিশ্রাম নেওয়া আর সন্ধ্যার দিকে ফেরার পথে মাঠের আল দিয়ে একবার চোখ ফেরানো। সে জানত, সেই দিকেই হয়তো দেখা মিলবে মিতালীর। কৃষকের ছেলে হয়েও তার ভেতরে এক গভীর কোমলতা ছিল, যা মাটির গন্ধে জন্মেছিল, অথচ গ্রামের চোখে সে ছিল এক সাধারণ শ্রমিক, যার…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প - সামাজিক গল্প

    কাগজের ঘুড়ি

    হিমাদ্ৰী ঘোষ ১ বস্তির সকাল সবসময় একরকম শব্দে ভরা—খটাখট হাঁড়ি-বাসনের শব্দ, চায়ের দোকানের কেটলি থেকে উঠতে থাকা সিটি, ভাঙা টিনের চালের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করা সূর্যের লালচে আলো আর তার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা ছোট ছোট শিশুদের কোলাহল। এখানে সকাল মানেই নতুন দিনের লড়াই শুরু। কেউ ভোরেই কাজে বেরিয়ে পড়ে, কেউ বা কুপির আলো নিভিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে রাতভর ইটভাটায় কাজ করে আসার ক্লান্তি নিয়ে। মায়েদের হাঁকডাক আর কিশোরদের কাশি-মেশানো অস্থিরতা মিশে যায় বাতাসে। এর মাঝেই ঘুড়ির নাম উঠলেই বদলে যায় আবহ। যেন এক মুহূর্তের জন্য হলেও দারিদ্র্যের আঁকড়ে ধরা হাতটা আলগা হয়ে যায়, আর আকাশ থেকে নেমে আসে রঙিন আশার…

  • Bangla - হাস্যকৌতুক

    স্কুলের নাটক ও দাড়ি-কাণ্ড

    মৃত্যুঞ্জয় নস্কর এক সকালটা ছিল একেবারে অন্যরকম। শীতকালীন সকালের হালকা কুয়াশা এখনো খেলার মাঠের চারপাশে ঝুলে আছে, অথচ স্কুলের করিডোরে অস্বাভাবিক একটা গুঞ্জন। টিফিনের আগেই খবরটা ছড়িয়ে পড়েছিল—এইবারের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বড় মঞ্চনাটক হবে “সিরাজউদ্দৌলা”। সাধারণত প্রতি বছর নাচ-গান, আবৃত্তি আর ছোটখাটো নাটিকা হয়, কিন্তু ঐতিহাসিক নাটক করার সিদ্ধান্তটা ছিল একেবারে চমকপ্রদ। খবর শুনেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা উত্তেজনার ঢেউ বয়ে গেল। ক্লাসে বসে কেউ মন দিয়ে পড়াশোনা করছিল না, সবাই ফিসফিস করে আলোচনা করছে—কে কোন চরিত্রে মানাবে, কে নায়ক হতে পারে, কে আবার খলনায়ক! এমনকি যারা সাধারণত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় না, তারাও এবার আগ্রহী হয়ে উঠেছে, যেন এই নাটকের…