• Bangla - ভূতের গল্প

    জলকন্যার প্রতিশোধ

    সুশান্ত দাস ১ গ্রামের পুকুরটি সবসময়ই একটি রহস্যময় উপস্থিতি বয়ে আনে। দিনের আলোয় যখন গ্রামের মানুষ সাধারণ কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে, তখনও পুকুরটি যেন নীরবভাবে তাদের নজর কাড়ে। পুকুরটির পানি গভীর এবং অন্ধকারের মিশ্রণে যেন অদ্ভুত এক আভা ছড়িয়ে দেয়। পুকুরের চারপাশে হালকা ঘাস আর কিছু ছোট গাছ থাকলেও, রাতে সেই ঘাস আর গাছের ছায়া যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। গ্রামের মানুষ নানা গল্প শোনায়—কিছু গল্প কেবল ভয়ের, আবার কিছু গল্পে বলা হয় বহু বছর আগে এখানে একটি মেয়ের রহস্যময় মৃত্যু ঘটেছিল। সেই মেয়েটিকে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। লোকেদের কথা অনুযায়ী, মেয়েটির আত্মা এখনও পুকুরের পানির মধ্যে ভেসে বেড়ায়।…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    দেউড়ির আঙিনায়

    সায়ন্তন বসু অধ্যায় ১ : জমিদারবাড়ির নিস্তব্ধতা প্রাচীন গ্রাম বাংলার বুক জুড়ে যে অট্টালিকা এখনও দাঁড়িয়ে আছে, তাকে দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়। সময়ের আঁচড়ে তার দেয়াল জীর্ণ হয়ে গেছে, ছাদের টালির ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ে বৃষ্টির জল, দেউড়ির মোটা কাঠের দরজায় ঝুলছে মরচেধরা তালা, অথচ এখনো মনে হয়—এ যেন এক ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে। এ বাড়িটি এককালে ছিল রাজবাড়ির মতোই জাঁকজমকপূর্ণ জমিদারবাড়ি, যেখানে গরিব কৃষকদের ঘামে গড়া সম্পদ মজুত হতো, আর রাতে চলত রেশমি শাড়ি, নকশি পাঞ্জাবি, সোনার গয়নার রোশনাই। কিন্তু কালের নিয়মে জমিদারি প্রথা ভেঙে যাওয়ার পর বাড়িটি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে শুরু করে। বংশধরেরা কেউ কলকাতায়, কেউ লন্ডনে…

  • Bangla - তন্ত্র

    ত্রিনয়নী

    উৎসব মুখার্জী মেদিনীপুর শহরের প্রান্তে যখন অর্ণবের ট্রেন এসে দাঁড়াল, তখন সকালের কুয়াশা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। সে নেমে চারদিকে তাকাল—পরিচিত অথচ অচেনা লাগছিল জায়গাটিকে। ছোটবেলায় সে এখানে বহুবার এসেছে, মামার বাড়ি ছিল এই শহরে, কিন্তু তারপর থেকে কলকাতার ব্যস্ততা, পড়াশোনা, চাকরি আর শহুরে জীবনের দৌড়ঝাঁপ তাকে এই মাটির গন্ধ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। এখন আবার ফিরে আসার একটাই কারণ—তার বোন অনন্যা। বহু বছর আগে, অদ্ভুতভাবে অনন্যা হারিয়ে যায়। পরিবারে সেই ক্ষত আজও শুকোয়নি। বাবা-মা বোনের নাম শুনলেই কেঁদে ফেলেন, আর আত্মীয়রা চুপ করে যায়। অর্ণব একসময় চেষ্টা করেছিল খোঁজার, কিন্তু অল্প বয়সে তার কিছুই করার ছিল না। এখন যখন সে…

  • Bangla - ছোটদের গল্প

    মায়া আর জোনাকি রাত

    সন্ধ্যা নামতেই সেই ছোট্ট গ্রামের চিত্র যেন এক জাদুকরী রূপকথার মতো ভেসে ওঠে। চারদিক অন্ধকারে ডুবে যেতে না যেতেই গাছপালা, ধানখেত আর কুয়াশায় ঢাকা সরু পথগুলো ভরে ওঠে অসংখ্য জোনাকির ঝিলমিল আলোয়। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন আকাশের তারারা নেমে এসেছে মাটির বুকে, মিশে গেছে মানুষের জীবনে। গ্রামের বাচ্চারা প্রতিদিনের মতো আজও মাঠে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, তাদের হাসির শব্দ মিশে যাচ্ছে আলোছায়ার খেলায়। বৃদ্ধরা পানের পাত্র হাতে বসে নিজেদের পুরনো গল্প শোনাচ্ছে, অথচ এই আলোকিত রাত যেন সবার চোখে কেবল বিনোদনের মতো। কিন্তু মায়া নামের সেই তরুণী এই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকে এক ভিন্ন অনুভূতি নিয়ে। তার কাছে জোনাকির এই…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    কালপুরুষের ছায়া

    বিশ্বরূপ বসাক আর্যন সবসময়ই ছিলেন একা মানুষ। কলকাতার উত্তর শহরের একটি ছোট্ট স্টুডিও-ঘরে তিনি দিন-রাত রঙের সঙ্গে যুদ্ধ করতেন। তার তুলি আর ক্যানভাস ছিল একমাত্র সঙ্গী। তিনি শহরের কোলাহল পছন্দ করতেন না, বরং নিস্তব্ধতার মধ্যেই নিজের সৃজনশীলতাকে খুঁজে পেতেন। তবে গত কয়েক মাস ধরে তিনি এক অদ্ভুত চাপ অনুভব করছিলেন—কোনও প্রদর্শনীর ডেডলাইন নয়, কোনও আর্ট-ক্রিটিকের সমালোচনাও নয়, বরং এক অজানা অস্বস্তি। তিনি যখনই নতুন ছবি আঁকার চেষ্টা করতেন, নিজের মনের কল্পনা থেকে চরিত্রের আকার দিতে যেতেন, তখনই তার হাত যেন নিজে থেকেই অন্য রূপ গড়ে তুলত। মুখ, চোখ, নাক, ঠোঁট—সবকিছু এতটাই স্পষ্ট হয়ে উঠত যে তিনি অবাক হয়ে যেতেন। প্রথমে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    শ্মশানের ডাকঘর

    ১ অমল ছিল এক সাধারণ গ্রামীণ ডাকপিয়ন, যার জীবন প্রতিদিনের রুটিন আর নির্দিষ্ট পথেই আবদ্ধ ছিল। সকালবেলায় সে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ত, চিঠির ব্যাগ কাঁধে নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেত, আর বিকেলের মধ্যেই সব বিলি শেষ করে বাড়ি ফিরত। কিন্তু সেদিনটা অদ্ভুতভাবে ভিন্ন হয়ে দাঁড়াল। অফিসে কিছু অতিরিক্ত কাজের জন্য তাকে দেরি হয়ে গেল, আর সন্ধ্যার আলো যখন ম্লান হতে শুরু করল, তখনও অমল চিঠির ব্যাগ নিয়ে রওনা দেয়নি। সে জানত, গ্রামের মানুষরা চিঠির অপেক্ষায় থাকে, আর দেরি করলে তাদের মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে। তাই অমল নিজের ক্লান্তি উপেক্ষা করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। পথে হাঁটতে হাঁটতে সে লক্ষ্য করল,…

  • Bangla - তন্ত্র

    অতল শক্তি

    ঋতম মুখাৰ্জী ১ কলকাতার এই শতবর্ষপ্রাচীন গ্রন্থাগারটির নাম আজকাল প্রায় কেউই উচ্চারণ করে না, অথচ একসময় তা শহরের বৌদ্ধিক প্রাণকেন্দ্র ছিল। উচ্চ সিলিং, কাঠের খোদাই করা বুকশেলফ, আর দীর্ঘ করিডরজুড়ে পেতলের ল্যাম্পের আলো—এমনই ছিল এককালের আভিজাত্য। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নতুন প্রজন্মের পাঠকরা ইন্টারনেটের মোহে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, আর গ্রন্থাগার রয়ে যায় বিস্মৃত, প্রায় পরিত্যক্ত। দিনের আলোতেও ভেতরে ঢুকলে কেমন এক চাপা অন্ধকার অনুভূত হয়; কাঠের পুরোনো টেবিলগুলো কেমন যেন শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, আর বুকশেলফে সাজানো চামড়ার বাঁধাই বইগুলোর গায়ে জমে থাকা ধুলো যেন কালের সাক্ষী হয়ে নীরবতা রক্ষা করে। অদিত্য, কলকাতারই এক কলেজপড়ুয়া ছাত্র, পড়াশোনার কাজে প্রয়োজনীয় রেফারেন্স…

  • Bangla - তন্ত্র

    অষ্টসিদ্ধির খেলা

    অধ্যায় ১ – সাধকের যাত্রা অশ্বিনের জীবন শুরু হয় এক শান্ত গ্রামের পেছনের গাঁয়ের ছোট্ট আশ্রম থেকে, যেখানে প্রতিটি সকাল কীর্তনের স্বরে ভরে ওঠে এবং প্রতিটি সন্ধ্যা নির্জন প্রার্থনার আবেশে মিশে যায়। কিন্তু অশ্বিনের অন্তরে কেবল শান্তি নয়; ছিল এক গভীর অন্বেষণ, এক অদৃশ্য আগ্রহ যা তাকে গ্রামের সীমারেখার বাইরে পাঠিয়েছিল। তার চোখে অনন্তের খোঁজ, মনে অচেনা জ্ঞান অর্জনের তীব্র বাসনা। প্রতিদিন সে গ্রাম্য বেদে বসে বৃদ্ধ সাধকদের শিষ্যত্বের পাঠ শোনে, তবুও তার হৃদয় চাইল আরও বড় কিছু, এমন কিছু যা তার আত্মাকে শুদ্ধ করবে এবং তাকে মৃত্যুর পরে মুক্তির আলো দেখাবে। এই আত্মার তৃষ্ণা তাকে ধীরে ধীরে আশ্রমের সীমানার…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    ভূগর্ভের সুড়ঙ্গপথ

    অধ্যায় ১: মন্দিরের নিস্তব্ধতা গ্রামের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক ভগ্নপ্রায় পুরনো মন্দির, যেটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত হয়ে আছে। মানুষজন দূর থেকে দেখলেও এর ভেতরে ঢোকার সাহস করে না কেউ, কারণ এ মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা গুজব, নানা অলৌকিক কাহিনি। কেউ বলে, এখানে দেবতার অভিশাপ আছে, কেউ বলে রাতে অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে আসে ভেতর থেকে, যেন কেউ অন্ধকারে হাঁটছে। গ্রামবাসীরা তাই মন্দিরকে ভয় পায়, আর দিনের আলো থাকলেও এর কাছাকাছি কেউ যায় না। নায়ক অর্ণব, পেশায় প্রত্নতত্ত্ব গবেষক, এ মন্দিরের নাম শুনে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। শৈশব থেকে তার প্রবল আকর্ষণ ইতিহাস ও পুরনো ধ্বংসাবশেষের প্রতি, আর সে বিশ্বাস করে প্রতিটি ধ্বংসস্তূপের…

  • Bangla - কল্পবিজ্ঞান

    ভিনগ্রহের অতিথি

    অনিন্দ্য মুখাৰ্জী অধ্যায় ১ : অচেনা আলো শিলিগুড়ির শহর তখনও পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়েনি। পাহাড়ি হাওয়ায় মিশে ছিল চায়ের গন্ধ, দূরে ট্রেনের হুইসেল বাজছিল, আর আকাশে পূর্ণিমার আলো ছড়িয়ে পড়েছিল। ঠিক সেই সময়েই ঘটে গেল অদ্ভুত ঘটনা। অর্ণব, বয়সে মাত্র চৌদ্দ, তখন জানালার পাশে বসে খাতা-কলমে আঁকাআঁকি করছিল। হঠাৎই তার চোখে পড়ল, আকাশে যেন এক বিশাল আগুনের গোলা ছুটে আসছে। প্রথমে মনে হলো কোনো বিমান হয়তো দুর্ঘটনায় পড়েছে, কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা আরও কাছে আসতে থাকলে স্পষ্ট হলো—এটা একেবারেই অন্যরকম। সেই গোলার চারপাশে ছিল নীল-সবুজ আলোর আভা, যা কোনোদিন কোনো আতশবাজিতেও দেখা যায়নি। মুহূর্তের মধ্যে পুরো আকাশ কেঁপে উঠল, আর সেই…