• Bangla - রহস্য গল্প

    তালের বীজে লেখা নাম

    অদিতি সরকার পর্ব ১: আগুনের গান সাঁইথিয়া স্টেশনের বাইরে একটা মেঘলা দুপুর। ট্রেন থেকে নামার পর ধুলো-ওড়া রেললাইন পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঐশানী বসু বুঝল, শহরের থেকে এই জায়গাটা সম্পূর্ণ আলাদা। কাঁসার থালার মতো নরম আলো পড়ে আছে গাছেদের পাতায়, আর দূরে ধুলোয় ভেসে আসছে একটানা ঢোলের আওয়াজ। কোথাও কেউ বাউল গাইছে। ঐশানী একজন লোকসংস্কৃতি গবেষক, কলিকাতার এক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর ও পারফর্মিং আর্টস নিয়ে গবেষণা করে। কিন্তু এইবার তার আগ্রহ ছিল খুব নির্দিষ্ট এক চরিত্রকে ঘিরে—হেমাঙ্গিনী মা। ছয় দশক আগে, এই অঞ্চলেই এক নারী বাউলের খ্যাতি ছড়িয়েছিল। বলা হতো, তার গান নাকি মানুষের ভিতরের পাপ বার করে আনে, আর গান…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    অলিন্দের আওয়াজ

    শুভ্রনীল দে ১ নতুন শহরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো দোতলা বাড়িটা প্রথম থেকেই ইরার ভালো লাগেনি। বাইরে থেকে একরকম, ভেতরে ঢুকলেই মনে হয়, সময় যেন এখানে আটকে গেছে— দেওয়ালের ছোপ ধরা রঙ, কাঠের সিঁড়ির আর্তনাদ, আর অলিন্দে সারাদিনই একটা চাপা ছায়া। ইরার মা স্মিতা এক বড়ো কোম্পানিতে কাজ করে, রাতে দেরি হয় প্রায়শই, ফলে স্কুল থেকে ফিরে ইরাকে বেশিরভাগ সময় একাই কাটাতে হয়। প্রথম কয়েকদিন তেমন কিছু মনে হয়নি— নতুন স্কুল, নতুন পাড়া, নিজের ছোট একটা ঘর— সবকিছু মিলিয়ে একরকম উত্তেজনা ছিল। কিন্তু ঠিক সপ্তম দিন রাতে শুরু হয় প্রথম অস্বস্তি। রাতে ঘুম ভেঙে যায়, পাশে টেবিল ঘড়ির কাঁটায়…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    The Diary of John Watson

    Rakhi Pradhan Part 1: কলকাতার সেই অজ্ঞাত রাজবাড়ি লন্ডনের শীতল বিকেল। ধূসর আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে জন ওয়াটসনের একমাত্র নাতনি, ক্লারা ওয়াটসন, বক্স খুলে দেখছিলেন এক চামড়ার বাঁধানো ডায়েরি। এটি ছিল তার দাদুর, ডঃ জন এইচ. ওয়াটসনের। বাইরে লেখা—“Personal — Not for Publication”। ক্লারা ছিলেন ইতিহাসের অধ্যাপক। এক আন্তর্জাতিক বইমেলার সূত্রে কলকাতায় এসেছিলেন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে সে হঠাৎ ভাবলেন—এ শহরটায় কি ওয়াটসনের পা পড়েছিল? সম্ভব কি? তার দাদু তো সবসময় শার্লক হোমসের কেস নিয়ে ঘুরতেন ইউরোপ আর ব্রিটেনে। ডায়েরির প্রথম পাতায় লেখা: “১৮৯৪ সালের গ্রীষ্ম। হোমস তখন ভীষণ বিমর্ষ। মোরিয়ার্টির মৃত্যুর পরে তার মধ্যে এক ধরণের ফাঁকা ভাব। সেই সময়ে,…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    মা দুর্গার সোনার টিপ

    সায়ন ঘোষ এক শ্যামতলা সর্বজনীন দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর সন্ধ্যা, কলকাতার উত্তর শহরের এক পুরনো পাড়ার ভেতরে ছায়া-আলোয় জ্বলজ্বল করে ওঠা ঐতিহ্য আর বিশ্বাসের মেলবন্ধন। সন্ধ্যা ছ’টার পর থেকেই প্যান্ডেলে মানুষের ঢল নেমেছে—মেয়েরা নতুন শাড়িতে, ছেলেরা পাঞ্জাবি-পাজামায়, কারও হাতে ধূপকাঠি, কারও হাতে প্রসাদ আর সবার চোখে অদ্ভুত এক উজ্জ্বল আলো, যেন বছরের এই ক’টা দিনের মধ্যেই আটকে আছে জীবনের আসল আনন্দ আর আশা। ঢাকের বাজনা, কাঁসর-ঘণ্টা আর শঙ্খের ধ্বনি মিলে বাতাস ভারী হয়ে আছে, আর তার মধ্যেই বসানো হয়েছে মায়ের প্রতিমা—ছয় হাত উঁচু, সাদা সাঁকোয় দাঁড়িয়ে থাকা, সোনার গয়নায় সজ্জিত মুখ, যাকে ঘিরে রয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, আর পেছনে মহিষাসুরকে বধরত…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    সিংহদ্বারের সিঁড়ি

    নীলাভ্র মল্লিক অধ্যায় ১: অদৃশ্য পুরোহিত পুরীর আকাশটা সেইদিন অস্বাভাবিক শান্ত ছিল। জুন মাসের শেষ সপ্তাহ, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই, কেবল একটা অচেনা গুমোট ভাব জমে ছিল বাতাসে। ভোর সাড়ে চারটায় সিংহদ্বারের ঘণ্টাধ্বনি যখন ধ্বনিত হচ্ছিল, তখনও কেউ টের পায়নি যে জগন্নাথ মন্দিরের প্রবীণ পুরোহিত আচার্য বিভূতিভূষণ পাঠক আর কখনো সাড়ে চারটার পূজায় উপস্থিত হবেন না। তিনি ছিলেন এই মন্দিরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সম্মানিত সেবায়েতদের একজন—মূর্তি সাজানো থেকে শুরু করে সপ্তপ্রহরের রীতি পর্যন্ত যাঁর জ্ঞান ও শুদ্ধাচার ছিল ঈর্ষণীয়। সেইদিন ঠিক যেমনটি রীতি, তেমন করেই তাকে সকাল চারটায় ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পূজা শুরুর প্রস্তুতিতে থাকবার কথা, কিন্তু সেবায়েত…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    চতুরঙ্গের রহস্য

    অর্ঘ্য দত্ত অধ্যায় ১: অজানা উত্তরাধিকার তীর্থর জীবনের সেই দিনটি যেন অন্য সব দিনের মতোই শুরু হয়েছিল, অথচ শেষ হয়েছিল এমন এক ঘটনার মধ্যে যা তার ভাবনার সীমার অনেক বাইরে। সকালে কলেজের ক্লাস শেষ করে বিকেলে বাড়ি ফিরতেই কাকা এসে বলল, দাদুর পুরনো ঘরের জিনিসপত্র কিছু বাছাই করতে হবে, আর সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তীর্থকে, কারণ দাদু নাকি প্রায়ই বলতেন কিছু জিনিস কেবল তার প্রিয় নাতির হাতেই থাকা উচিত। দাদুর সেই ঘরটায় ঢুকতেই তীর্থর মনে হল যেন পুরনো কালের গন্ধে ভিজে আছে প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি আসবাব। টালির চালের নীচ দিয়ে হালকা আলো এসে পড়ছে ধুলো জমা ট্রাঙ্ক আর বুকশেলফের ওপরে।…

  • Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    কুয়াশার ঘড়ি

    এক দার্জিলিঙের পথে ঋদ্বয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি উঠছিল ক্রমাগত সর্পিল খাড়া রাস্তায়, আর আকাশে তখন নেমে এসেছে এক চিলতে কুয়াশা, যেন পাহাড় নিজেই ধোঁয়ার কুয়াশায় শরীর ঢেকে ফেলেছে। হিমেল হাওয়া জানালার কাচে ধুলো জমিয়ে দিচ্ছিল, আর দূর থেকে পাইন গাছের ছায়া যেন কোন গোপন সংকেত দিচ্ছিল তাকে। লেখার কাজে বেরোনো ঋদ্বয়ের পরিকল্পনা ছিল দার্জিলিঙের মূল শহরের একটু বাইরে, নির্জন এক হোমস্টেতে দু’সপ্তাহ থাকা, প্রকৃতির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে যান্ত্রিক জীবনের ধুলো ঝেড়ে ফেলা। কিন্তু পথ বদলে গেল সেই দুপুরেই, যখন হঠাৎ তার গাড়ি পাহাড়ি এক রাস্তার ধারে বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে—আর মোবাইলে সিগনালও উধাও। সামনের দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পেল একটা…

  • Bangla - তন্ত্র - রহস্য গল্প

    চামুণ্ডার রাত

    বিভাস চট্টোপাধ্যায় অধ্যায় ১ চন্দ্রকেতুগড়—এক নামই যেন রহস্যে মোড়া। সেই নাম শুনলেই মাথায় ভেসে ওঠে ধুলোমলিন প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাঠ, ঢিপির নিচে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন সভ্যতার ছায়া, আর তারই মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা শ্মশানঘেরা এক পরিত্যক্ত মন্দির, যার নাম কেউ মুখে আনে না। ঠিক সেই জায়গাতেই এক বিকেলের শেষপ্রহরে এসে পৌঁছালেন ড. তীর্থজিত্‍ ঘোষ। ধুলোমাখা জিপগাড়ি থেকে নেমে তিনি চারপাশটা নিরীক্ষণ করলেন—উত্তরে মেঘে ঢাকা বনাঞ্চল, দক্ষিণে বিস্তীর্ণ পতিতভূমি, মাঝখানে পাথরে গড়া রাস্তা যেখানে দু’পাশে গা ছমছমে নীরবতা। তাঁর সঙ্গে আছে সহকারী বিজন বিশ্বাস, পঞ্চাশোর্ধ্ব ক্যামেরাম্যান, যার চোখে মিশ্রণ রয়েছে ভয় আর উত্তেজনার। এ অঞ্চল নিয়ে বহু কিংবদন্তি রয়েছে, কিন্তু তীর্থজিত্‍ তাদের একজন…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    শেষের গন্ধ

    অনিন্দ্য সেন ১ সকালটা অন্য দিনের মতোই ছিল—আলোর বন্যা ছড়িয়ে পড়ছে শেক্সপিয়র সরণির খোলা জানলা দিয়ে, পাখির ডানার শব্দ মিশে যাচ্ছে ঘড়ির টিকটিক শব্দে। কিন্তু অনির্বাণ বসুর নাকে সকালটা কেমন যেন অন্যরকম গন্ধ নিয়ে হাজির হয়েছিল। এই গন্ধটা সে এর আগে কখনও পায়নি। যেন বাদামি কাগজের ভাঁজে পুরনো অভিমানের মত গন্ধ, যেন এক মৃত নারীর ঠোঁটে লেগে থাকা শেষ হাসির ছায়া। অনির্বাণ, পেশায় এক ‘নোজ’—অর্থাৎ পেশাদার ঘ্রাণবিশেষজ্ঞ। বিদেশ থেকে স্নাতক করে ফিরে এসে গত পাঁচ বছর ধরে সে কলকাতার সবচেয়ে অভিজাত পারফিউম ব্র্যান্ড ‘সুরভি’তে কাজ করে। তার কাজ নতুন সুগন্ধের সন্ধান, নতুন ঘ্রাণের সংমিশ্রণ তৈরি করা, যেগুলো মানুষ পরে গায়ে…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    জাদুকরের খুন

    সায়ন্তিকা দাশগুপ্ত অধ্যায় ১: শেষ কৌশলের রাত স্টার থিয়েটারের আলো নিভে যাওয়ার মুহূর্তেই সবার নিঃশ্বাস যেন আটকে গিয়েছিল। কলকাতার থিয়েটার-প্রেমীরা বহুদিন পর আবার এমন চমকপ্রদ কিছু প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছেন—রাজদীপ মুখার্জির “শেষ কৌশল”। থিয়েটারজুড়ে স্তব্ধতা। পর্দা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে, ঘন কালো ধোঁয়ার মধ্যে থেকে উদিত হচ্ছে সোনালী আলো, তার মাঝে একা দাঁড়িয়ে আছেন রাজদীপ—তার মুখাবয়বে এক রহস্যময় আত্মবিশ্বাস, গলায় কোটের কলার তুলে। হাতজোড়া তুলে বললেন, “এই কৌশল দেখার পর যদি কেউ বলতে পারেন কীভাবে করলাম, আমি আমার ম্যাজিক ছাড়বো। আর যদি না পারেন, তবে আজ আপনারা দেখবেন… মৃত্যু থেকে ফেরা যায় কি না!” দর্শকদের ভেতরে কেমন যেন এক অজানা কাঁপুনি…