• Bangla - ভূতের গল্প

    ঝড়ের রাতে

    আকাশে হঠাৎ করেই যেন অদ্ভুত এক পরিবর্তন দেখা দিল। বিকেলের শেষ আলোটুকু ম্লান হয়ে যেতেই গ্রামের আকাশ ভরে উঠল কালো মেঘে। দূর থেকে আসা বজ্রপাতের গর্জন যেন ঘুমন্ত প্রকৃতিকে এক এক করে জাগিয়ে তুলছিল। চারপাশের গাছপালার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলক এসে পুরো আকাশকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো আলোকিত করে তুলছিল। গ্রাম্য জনজীবন এতদিন ছিল শান্ত ও ধীর—যেখানে সন্ধ্যা মানেই ধূপকাঠির গন্ধ, দূরে কুঁড়েঘরে আলোর ক্ষীণ দীপশিখা আর গৃহস্থালির ছোটখাটো ব্যস্ততা। কিন্তু এই দিনটি যেন ভিন্ন কিছু ঘোষণা করছিল। বাতাসে অদ্ভুত শিরশিরানি, শীতলতা আর অস্থিরতা জমে উঠতে লাগল। ঝড়ের আগমনী সঙ্কেতকে কেউই সাধারণ চোখে নিতে পারল না। বর্ষার দিনে ঝড়-বৃষ্টি নতুন…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    জলকুমারীর ডাক

    ১ অন্ধকার নেমে এসেছে গ্রামের উপর, চারদিকে নিস্তব্ধতা আর ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। আকাশে তখন অর্ধচন্দ্র, তার আলোয় গাঢ় ছায়ার মতো ঘিরে আছে তালগাছ আর বাঁশঝাড়। গ্রামের মাঝখানে পুরোনো সেই পুকুর, যেটি নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত থাকলেও এতদিন কেউ বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু সেদিন রাতে হঠাৎ করেই অদ্ভুত কিছু ঘটে। প্রথমে ভেবেছিল হয়তো চাঁদের প্রতিফলন, কিন্তু দেখা গেল পুকুরের তলদেশ থেকে অস্বাভাবিক নীল আলো উঠছে—ধীরে ধীরে জলের উপরিতলে ছড়িয়ে পড়ছে। আলো এতটাই অচেনা আর মায়াবী ছিল যে গ্রামের লোকেরা ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে রইল। বাতাস যেন হিম হয়ে গেল, পুকুরপাড়ের কুকুরগুলো হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল,…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    দূর্গার আঁধার

    গ্রামের কালীমন্দিরে দুর্গাপূজার অষ্টমীর রাত মানেই এক অন্যরকম আবহ। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসত এই মন্দিরের পুজো দেখতে। সন্ধ্যা থেকেই মন্দিরের চত্বর আলোয় ভরে উঠেছিল, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের শব্দ, কাশীর বাঁশির সুর আর ধূপকাঠির ধোঁয়া মিলেমিশে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করেছিল। গ্রামের ছোটো থেকে বড়ো সবাই নতুন কাপড় পরে এসেছিল, কেউ প্রণাম দিতে, কেউ আবার প্রতিমা দর্শন করে আনন্দ পেতে। মন্দিরের সামনের উঠোনে তখন নাচগানের আসর বসেছিল, কচিকাঁচারা ধুনুচি হাতে ঘুরছিল আর মায়ের আরাধনায় মেতে উঠেছিল। একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কুমুদিনী দেবী, গ্রামের জমিদারবাড়ির বিধবা, তাঁর চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা, যেন উৎসবের আনন্দের ভেতরও কোথাও এক অজানা ভয় তাঁর বুক চেপে ধরেছিল। পুরোহিত…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    জঙ্গলের ডাক

    প্রকাশ মাহাতো ১ পুরুলিয়ার ঘন জঙ্গলের ভেতরে সকালের কুয়াশা তখনও পুরোপুরি কাটেনি, সূর্যের আলো গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে নেমে এসে ঝিলমিল ছায়া তৈরি করছিল মাটির ওপর। চারপাশে শুধু শাল, সেগুন আর মহুয়ার বন, যেখানে পাখির ডাক মিলেমিশে এক অদ্ভুত সুর তৈরি করছিল। গ্রামের শ্রমিকরা দল বেঁধে এসেছিল কাঠ কাটতে, হাতে কুড়াল, কাঁধে দড়ির বোঝা, কারও কোমরে বাঁধা পুরনো কাপড়, যাতে পরে কাঠ বেঁধে নিয়ে যাওয়া যায়। এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ছিল শিবলাল মাহাতো, বয়সে পঁয়তাল্লিশ ছুঁইছুঁই, রোদে পোড়া চেহারা আর চোখে গাঢ় দুশ্চিন্তার ছায়া। সে বহুবার এ জঙ্গলে ঢুকেছে, কিন্তু প্রত্যেকবারই মনে হয়েছে এই জঙ্গলের বুকের ভেতর যেন কোনও…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    আটচালার অদ্ভুত বাঁশি

    মিঠু নন্দী ১ গ্রামের মাঝামাঝি জায়গাটায় ছিল সেই পুরনো আটচালা। চারদিকে খোলা, শুধু ছাদের উপর কড়িকাঠ বসানো, টালির চালে ঢাকা, আর আটখানা পিলার সেই চালের ভার ধরে রেখেছে বলেই তার নাম আটচালা। বহু পুরনো ইতিহাস জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে—কোনো এক সময় এই আটচালাতেই পূজা-পার্বণের আসর বসত, অন্নপ্রাশন হতো, গ্রামীণ নাটক-মুকাবিলা কিংবা যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হতো। সারা গ্রাম তখন একসাথে জমে যেত, শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই সেই আনন্দে শরিক হতো। দিনের বেলায় কিংবা উৎসবের কালে আটচালা যেন গ্রামীণ জীবনের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু যখন রাত নামে, গ্রাম ডুবে যায় নিস্তব্ধতায়, আর বাতাসে ভেসে ওঠে শেয়ালের ডাক কিংবা দূরের ঝিঁঝিঁ পোকার সুর, তখন এই আটচালা দাঁড়িয়ে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    পোড়া বাড়ির আলো

    অর্ণব মুখার্জি পর্ব ১ — নতুন স্কুলশিক্ষক বর্ষার শেষে যে ভেজা গন্ধ মাটির ভেতর পর্যন্ত ঢুকে থাকে, সেই গন্ধ নিয়েই অরিন্দম প্রথম দিন গ্রামে পা রাখল। ছোট্ট স্টেশন, নামটি শিলালিপির মতো খসে পড়া বোর্ডে, প্ল্যাটফর্মে দু-একটা কেরোসিনের ল্যাম্প টিমটিম করছে, আর দূরে শালগাছের রেখা এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন কারও পুরোনো হাতের লেখা— থরথর করে, তবু পড়া যায়। কলকাতা থেকে ট্রেনে নামার পর একটা ভাঙা টেম্পো তাকে স্কুল পর্যন্ত পৌঁছে দিল। স্কুল বলতে ইট-সিমেন্টের দুটো দোচালা ঘর, সামনের মাঠে ঘাস বুনোভাবে উঠে এসেছে, তালগাছের ছায়া পড়ে লম্বা কালচে দাগ। প্রধান শিক্ষক ছুটিতে; সাময়িক দায়িত্বে থাকা ক্লার্কটি, নাম হারাধন, পাতলা গলার লোক,…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    জলমহলের ডাক

    ১ ঈশা দত্ত ট্রেনে দীর্ঘ যাত্রার পর যখন সুন্দরবনের ভেতরের ছোট্ট জনপদের ধুলোমাখা স্টেশনে নেমে এলো, তখন তার মনে হচ্ছিল যেন শৈশবের স্বপ্ন আর ভয় দুটো একসাথে হাত ধরে হাঁটছে। ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে স্টেশন থেকে বেরোনোর সময় চারপাশের গন্ধটা প্রথমেই তাকে আঘাত করল—আধভেজা কাদা, নোনা বাতাস, গাছের পাতা, আর নদীর জলে লবণাক্ততার মিশ্র গন্ধ। এ সবকিছুর ভেতরে সে যেন শুনতে পাচ্ছিল অজস্র গল্পের প্রতিধ্বনি, যেগুলো ছোটবেলায় শোনানো হয়েছিল তাকে দাদার ঠোঁট থেকে। সেই জলমহল—এক ভগ্নপ্রায় জমিদারবাড়ি, নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা অর্ধেক ডুবে যাওয়া প্রাসাদ—যেটাকে নিয়ে লোকজন বলে অসংখ্য অদ্ভুত কথা। ঈশার মনে পড়ে গেল শৈশবের সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে থাকা, হাতে…

  • Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

    ভূতের বিয়ে

    সুদীপ্ত নাথ ১ গ্রামের সকালের সূর্যটি কেবল ঢেউ খেলছিল ধানক্ষেতের ওপর, যখন গ্রামের মঞ্চে একটি অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করল। সবাই জানত, আজ কিছু অস্বাভাবিক ঘটতে চলেছে। ঠিক তখনই, হঠাৎই মঞ্চের মাঝখান থেকে একটি গভীর, ঝাঁঝালো কণ্ঠে ঘোষণা হল—“আমার জন্যে পাত্রী চাই!” শব্দগুলো যেন চারপাশের সব কিছুকে থামিয়ে দিয়ে অদ্ভুত এক স্থিরতা তৈরি করল। গ্রামের লোকেরা প্রথমে হতবাক হয়ে যায়, কেউ খালি চোখে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকে, কেউ আবার ধীরে ধীরে পেছনে সরে আসে। কৌতূহল আর ভয়ের মিশ্রণে সব চোখ মঞ্চে। কেউ হাসি থামাতে পারছিল না, আবার কেউ ভয়ে কাঁপছে। বুড়ো মজুমদার, যিনি গ্রামের খবরাখবরের দায়িত্বে ছিলেন, প্রথমে অবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    পেত্নীর পায়েস

    এক গ্রামের শেষ প্রান্তে যে কুঁড়ে ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে, তা যেন সময়ের করাল থেকে কিছুই রক্ষা করতে পারেনি। ছাদের কাঠের বোর্ড গলচ্ছে, দেয়ালগুলোতে ছোপছোপ ছাঁচ ধরে আছে, আর জানালার কাঁচ এমনিতেই ফাটল ধরেছে। রাত হলে বাতাসের সঙ্গে লুপ্তপ্রায় ছায়া ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে, আর দূরের বুনো গাছের ডালপালা হাওয়ায় দুলতে দুলতে অদ্ভুত শব্দ তৈরি করে। গ্রামবাসীরা এই কুঁড়ে ঘরটিকে এড়িয়ে চলে, বিশেষত রাতের পর রাত। তবে বাচ্চাদের কৌতূহল সীমাহীন; তারা শপথ করে যে একদিন ওই ঘরে ঢুকে দেখবে বুড়ো পেত্নীর রহস্যময় জীবন। পেত্নী নিজে কখনো গ্রামের লোকেদের সামনে আসেন না, আর রাতের আঁধারে তিনি যেন আরও এক ধাপ জীবন্ত এবং…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    রক্তবর্ণ শাড়ি

    ১ কলকাতার উত্তর শহরের ভেতর একসময়ের জমজমাট থিয়েটার আজ ধ্বংসস্তূপের মতো দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকের দেওয়ালে স্যাঁতস্যাঁতে দাগ, ছাদের প্লাস্টার খসে পড়েছে, অডিটোরিয়ামের আসনগুলোতে ধুলো জমে পাহাড়ের মতো স্তূপ তৈরি হয়েছে, অথচ সব্যসাচী সেনের চোখে যেন অন্য এক স্বপ্ন ভেসে উঠেছিল। সে অনেকদিন ধরে ভেবেছিল তার নতুন নাটক কোথায় মঞ্চস্থ করবে—এমন জায়গা চাই যেখানে কেবল আলো-শব্দের খেলা নয়, জায়গাটাই যেন নাটককে জীবন্ত করে তুলতে পারে। যখন প্রথম এই ভাঙাচোরা থিয়েটারের ভেতর পা রাখল, তখনই অনুভব করল এক অদ্ভুত শীতল স্রোত তার শরীর বেয়ে নেমে যাচ্ছে, অথচ সেই শীতলতার ভেতরেই যেন জন্ম নিচ্ছে এক ধরনের কৌতূহল। কুহু মুখার্জী, নাটকের নায়িকা, প্রথম দিনেই…