• Bangla - ভূতের গল্প

    কাঠের পুতুল

    দর্শনা চক্রবর্তী অধ্যায় ১: শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে, উত্তর কলকাতার এক নিঃসঙ্গ গলির শেষে দাঁড়িয়ে ছিল পুরোনো এক বাগানবাড়ি—চুন খসা দেয়াল, উঁচু উঁচু কাঠের জানালা, আর চারপাশে পরিত্যক্ত উদ্যান যেন সময়ের ভারে অবনত হয়ে পড়েছিল। এই বাড়িটিই ছিল ঈশিতার ঠাকুরদার পৈত্রিক বাসভবন, যেখানে বহু বছর পর গ্রীষ্মের ছুটিতে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছিল সে। ঈশিতা তখন আট বছরের মেয়ে—চঞ্চল, কৌতূহলী, আর কল্পনাপ্রবণ। শহরের অ্যাপার্টমেন্টের বন্দি জীবন থেকে বেরিয়ে এমন অজস্র ঘর-বেড়া, অন্ধকার করিডর আর বিশাল উঠোনে এসে তার চোখ জ্বলে উঠেছিল। বাড়ির এক কোনায় ছিল এক লাল টালির ছাতবাড়ি, যেটা আগে নাকি গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার হতো। ঘরের দরজাটা আধখোলা পড়ে…

  • Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    পোড়োবাড়ির প্রেতছায়া

    অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী কলকাতার গরম রোদের মধ্যে দিয়ে হোঁচট খেতে খেতে এক সাদা রঙের সেকেন্ড হ্যান্ড জিপ গ্রামের দিকে এগিয়ে চলেছে। ড্রাইভিং সিটে বসে দীপ, চশমার কাচে ঘাম জমে গেছে, কপালে টপটপ করে ঘামের ফোঁটা পড়ছে। পাশে বসে অমিত, রোদ থেকে বাঁচতে মাথায় কাপড়ের ফেট্টি বেঁধেছে। ওদের দুজনের মুখেই রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার ছাপ। “আর কত দূর, দীপ?” অমিত হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করে। “আর বেশি না। এই বুঝি মদনপুর পৌঁছে গেলাম,” দীপ বলে। রাস্তা সরু হয়ে এসেছে। দুপাশে বিস্তৃত ধানের মাঠ, মাঝে মাঝে নারকেল আর তালগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। একপাশ দিয়ে সরু খাল বয়ে চলেছে। হালকা বাতাসে ধানের শীষ দুলছে, যেন প্রকৃতির…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    সন্ধ্যার পর কেউ আসে

    অরিন্দম বসু লালগ্রাম—একটা ছোট্ট, প্রায় ভুলে যাওয়া গ্রাম দক্ষিণবঙ্গের এক প্রান্তে। জনসংখ্যা হাতে গোনা, কিন্তু কাহিনির অভাব নেই। দিন যতই আধুনিক হোক, লালগ্রাম সন্ধ্যা নামতেই আজও হারিয়ে যায় অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতায়। কেউ বলে, এই সময়ে কেউ আসে। কাকে বলা হয় “কেউ”? কেউ জানে না। দেখা যায় না তাকে। কিন্তু তার উপস্থিতি অনুভব করা যায়—মনে হয় ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, নিঃশ্বাস ফেলছে ঘাড়ের কাছ ঘেঁষে। এই গল্প ঠিক এখান থেকেই শুরু। রুদ্র বসু—একজন তরুণ চিত্রনাট্যকার। শহুরে জীবন থেকে ক্লান্ত হয়ে কয়েক মাস আগে এসেছিল লালগ্রামে, একটি সিনেমার লোকেশন দেখতে। তারপর হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে গেল। পুলিশ, সাংবাদিক, বন্ধু—সবাই খুঁজেছে। কিছুই মেলেনি।…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ঘড়ির ভিতর মুখ

    ঋজু বসু সাঁইবাবা মন্দিরের পেছনের সরু গলি দিয়ে ঢুকলেই একখানা বাড়ি চোখে পড়ে, তার তিন তলা মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন নিজের অস্তিত্বের প্রতিবাদে, অথচ প্রতিটি জানালায় জীর্ণ কাচ, প্রতিটি দেয়ালে কুয়াশার দাগ। রামেশ্বর লেন ৩। লোকেরা বলে, ওটা ঘড়িওয়ালা বাড়ি। কারণ বাড়িটার ভেতর যত ঘড়ি আছে, সব থেমে আছে—ঠিক রাত বারোটায়। কেউ বলে সেগুলো আর চলে না, কেউ বলে এগুলো নতুন কারও জন্য অপেক্ষায়। ইতিহাসের গবেষক সায়ন্তিকা সাহা এসব কুসংস্কার মানে না, কিন্তু অলৌকিক স্থাপত্য নিয়ে তার থিসিসের জন্য এই বাড়িটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সে সিদ্ধান্ত নেয়, একরাত কাটিয়ে যাবে। সঙ্গে ক্যামেরা, সাউন্ড রেকর্ডার আর তার বন্ধু চন্দন, যার একটাই…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    আঁধারের ডাকে

    ঋতবান চ্যাটার্জী হারিয়ে যাওয়া সকাল পুরুলিয়ার ঘাঘরা গ্রাম যেন একটানা নিঃশব্দে বেঁচে থাকে। এই গ্রামের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে শীতল সুবর্ণরেখা, আর মাথার ওপর ছায়া ফেলে রেখেছে অজস্র শাল-সেগুন। এখানে দিনের আলো পড়ে নরম, আর রাতের অন্ধকার গাঢ়, জ্যোৎস্নাতেও কালো। কেবলই যেন কেউ দেখে, তবু ধরা পড়ে না। বিপ্লব দাস ছিলেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক। গ্রামের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করত, কিন্তু ভালোবাসার চোখে—যেন তিনি তাঁদের আশার বাতি। সকাল সাতটায় উঠোনে লাল চায়ের কাপ হাতে বসে থাকতেন, পোষা কুকুর ‘রাঙা’ পায়ের পাশে বসে। সেদিন সকালে রাঙা ছিল, কাপটাও ছিল, শুধু মানুষটা ছিল না। অরুন্ধতী, বিপ্লবের স্ত্রী, প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো বাজারে…

  • Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

    ভূতের বউ আর ব্রহ্মচারী বটগাছ

    বিমলেশ বাগচী পর্ব ১: বটগাছের ব্রত ও ভবেশের বুদ্ধি ধলেশ্বরীপুর নামটা শুনলেই হাসি পায় অনেকের। কারণ এই গ্রামে আছে এমন এক বটগাছ, যেটা নাকি ব্রহ্মচারী। গ্রামের সব গুঞ্জন আর গপ্পে এই বটগাছ নিয়ে—কে নাকি এর ছায়ায় বসে প্রেম করল, আর কে নাকি ভয়ে প্যান্ট ভিজিয়ে পালাল। এই বটগাছকে কেন্দ্র করেই গল্পের শুরু। এই গাছটা গ্রামের উত্তর প্রান্তে, কাঁঠালতলা মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে। বিশাল, পুরনো, আর তার গায়ে মাটির সিন্দুর আর মাটি-গোলাপ দিয়ে সাজানো একটা ছোট্ট বেদি। সবাই জানে, এখানে প্রেম করা মানে কেলেঙ্কারি নিশ্চিত! গাঁয়ের ছেলেরা বলে, “এই গাছের নিচে বসে প্রেম করতে গেলেই ল্যাংটো ছাগল পেছনে ধাওয়া করে!” কেউ…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ধোঁয়ার ভিতর এক মুখ

    অদ্রীশা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিং, সেই পাহাড়ের শহর, যেখানে সকাল আর সন্ধ্যার মাঝের সময়টা যেন চুপচাপ কল্পনাগুলোকে জাগিয়ে তোলে—সেখানে ঠান্ডা হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় অতীতের কান্না, চা-বাগানের ঢাল বেয়ে নামে সোনালি আলো, আর পুরোনো ব্রিটিশ বাংলোর ছায়াগুলো নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কালের ইতিহাসে; এই শহরের বুকেই এসেছে অনির্বাণ ঘোষ, একচল্লিশ বছর বয়সি স্বাধীনচেতা ফটোগ্রাফার, কলকাতার নাগরিক, জীবনে অনেক কিছু দেখেছে, শহরের কংক্রিটের অস্থিরতা আর মানুষের মুখে মুখে ঘোরাফেরা করা নাটক, কিন্তু পাহাড় তাকে বরাবরই আকর্ষণ করেছে—সেখানে সময় যেন ধীরে চলে, প্রতিটি গন্ধ, প্রতিটি ছায়া নিজের ভাষায় কথা বলে, আর সেই ভাষা বোঝার তৃষ্ণাই তাকে টেনে এনেছে এখানে; তার কাছে একটা কাজ ছিল—এক…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    কবরের চাঁদ

    ঈশান বসু বেলপাহাড়ি গ্রামটা দিনের আলোয় যেমন নিস্তরঙ্গ, রাতের অন্ধকারে ততটাই অজানা। সন্ধ্যে নামতেই চারপাশের কুঁড়ে ঘরগুলোতে আলো জ্বলে উঠলেও, গ্রামের এক প্রান্তে একটা জায়গা থেকে সব আলো যেন ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়—সেই জায়গাটার নাম কানা মসজিদ। মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায় তার নাম, তবে কেউ স্পষ্ট করে বলে না এর ইতিহাস। শুধু এটুকু বলে, মসজিদের পাশের পুরনো কবরস্থানে গেলে ফিরে আসা যায় না। আর যদি ফিরেও আসো, তুমি আর আগের মানুষ থাকো না। সেই জায়গায় রাত কাটাতে এল সোহম মিত্র। শহরের ছেলে, ইউটিউবার, ভয়হীন এক যুবক যে বিশ্বাস করে, ভূত বলে কিছু নেই—যতসব মনস্তাত্ত্বিক ছায়া। “DarkLens” নামের তার ইউটিউব…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    নিশির ডাক

    ঋধিমান বসু মাঝরাতে সেই ডাকটা আবার এল। “সু-র-জ…” নরম, স্নিগ্ধ অথচ ভয়ানকভাবে গভীর সেই আওয়াজ যেন কানে নয়, সোজা মগজে ঢুকে পড়ে। গায়ের রোম খাড়া করে দেয় এমন এক সুরে, যেন হাজার বছর আগের কোনো প্রতিজ্ঞার স্মৃতিচিহ্ন বাজছে। তিন মাস হলো সূরজ সাঁতরাগাছির এই পুরোনো ভাড়াবাড়িতে উঠেছে। চাকরির কারণে কলকাতা থেকে দূরে, একটু নিরিবিলি জায়গা খুঁজছিল। বাড়িটা পছন্দ হয়েছিল শুধু একটাই কারণে—ভাড়া খুব কম। আর যেটা কম, সেটা সবসময় সন্দেহজনক হয়। সূরজ একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু তার মনে আজীবন একটা ফাঁকা জায়গা ছিল। সম্পর্কের ক্ষেত্রে বারবার ব্যর্থতা, মনের মতো কাউকে না পাওয়া, একাকীত্ব তাকে নীরব করে তুলেছিল। সে ভাবত, “যদি…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    পেছনের জানালার অশরীরী

    অধ্যায় ১: রাত তখন নেমে এসেছে। চারদিক অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে। ময়ূরগঞ্জ গ্রামের মেঠোপথ ধরে এগিয়ে আসছে রাহুল আর বাপন। শহর থেকে সরু রাস্তা পেরিয়ে বহু কষ্টে এসেছে তারা। শহরের কোলাহল পেরিয়ে গ্রামের নিস্তব্ধতা যেন এক অজানা রহস্যের মতো তাদের বুকের ভেতর ঢুকে পড়েছে। রাহুল বলল, “শোন, বাপন, কেমন অদ্ভুত শান্তি, না?” বাপন কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটা ঠিক করতে করতে বলল, “হ্যাঁরে, শহরের তুলনায় কতটাই না শান্ত! তবে এই শান্তির ভেতরেও একটা কেমন জানি গা ছমছমে ভাব… যেন কেউ আমাদের দেখছে।” রাহুল হেসে ফেলল। “তুই আবার ভূতের ভয়ে ভয় পাচ্ছিস নাকি?” বাপন ম্লান হাসি হেসে বলল, “আরে না, তবে গ্রামটা আসলে রহস্যময়।…