• Bangla - তন্ত্র

    কালীঘাটের নীল পদ্ম

    অধ্যায় ১: কিংবদন্তির সূচনা কালীঘাট মন্দিরের অন্ধকার কোণগুলোতে আলোর খোঁচা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, পুরনো কালের গন্ধে ভরা বাতাসে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছিল। মন্দিরের মূল প্রাঙ্গণের পাশের ছোট ঘরে বসে ছিলেন বৃদ্ধ পুরোহিত, যার চোখে বছরের অভিজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট। তার সামনে বসা শিষ্য, কণ্ঠে কৌতূহল আর চোখে অবিশ্বাসের মিশ্রণ নিয়ে, আঙুল ধরে শোনছিল প্রতিটি শব্দ। পুরোহিতের কণ্ঠস্বরে প্রতিটি বর্ণনা যেন ঘরের দেওয়ালকে জীবন্ত করে তুলছিল। তিনি শুরুর দিকে বললেন, “এই মন্দিরের বহু বছরের ইতিহাসে এমন রহস্যময় ঘটনার কথা বহুবার শোনা গেছে, কিন্তু কেউ তা স্পর্শ করতে সাহস পায়নি। নীল পদ্ম সেই রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু।” তার কথায় এক অদ্ভুত গম্ভীরতা ছিল, যেন…

  • Bangla - তন্ত্র

    ডিজিটাল যজ্ঞ

    সন্দীপন বিশ্বাস ১ অরিত্র ছিল এক নিরিবিলি স্বভাবের তরুণ প্রোগ্রামার, কলকাতার এক মাঝারি আইটি কোম্পানিতে কাজ করত। অফিসে তার কদর ছিল, কারণ জটিল সমস্যারও দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা তার ছিল। কিন্তু বাইরের চোখে যতই সে সফল মনে হোক না কেন, তার ভেতরের মানুষটা যেন শূন্যতায় ভরা ছিল। কোডের ভেতরেই সে খুঁজে পেত আশ্রয়, সংখ্যা আর চিহ্নের অদ্ভুত সুরে ডুবে থাকত সে। ছোটবেলা থেকেই তার বইয়ের প্রতি ছিল দুর্বলতা—বিশেষত পুরনো পুঁথি, প্রাচীন লিপি আর লোককথার প্রতি। সে বিশ্বাস করত, প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান ও মন্ত্রের ভেতরে এমন কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে, যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের লজিক দিয়ে পুরোপুরি ধরা…

  • Bangla - তন্ত্র

    চামুণ্ডীর অভিশাপ

    ১ পশ্চিমবঙ্গের অন্তঃস্থলে, নদীর ঘাট ছুঁয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা কাঁচা রাস্তার শেষে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়ি—এক প্রাচীন জমিদার বাড়ি, যার গাঢ় লাল ইঁটগুলো সময়ের আঘাতে ফেটে গেছে, দেয়ালের চুনকাম খসে পড়েছে, আর শ্যাওলা জমে অন্ধকার হয়ে উঠেছে প্রতিটি কোণ। এককালে এখানে আলো ঝলমলে উৎসব হতো, রথযাত্রার দিন প্রাসাদের প্রাঙ্গণে ভিড় জমত হাজার হাজার মানুষ, আর মহিষাসুরমর্দিনীর বিসর্জনকালে শোনা যেত ঢাক-ঢোলের কর্ণভেদী শব্দ। আজ সেই জমকালো ঐতিহ্য কেবল স্মৃতির কুয়াশায় ঝাপসা হয়ে গেছে। রাজবাড়ির প্রধান ফটকটি অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে, জায়গায় জায়গায় ঘাসে ঢাকা পথ আর ঝোপঝাড় দাঁড়িয়ে আছে অনাহূত প্রহরীর মতো। বাতাসে যেন এক শীতলতা ভেসে বেড়ায়, যে শীতলতা গ্রীষ্মের মধ্যদুপুরেও চামড়া…

  • Bangla - তন্ত্র

    তান্ত্রিকের খড়ম

    অভিষেক মুখার্জী গ্রামের প্রান্তে, যেখানে সবুজ ধানক্ষেত আর খয়েরি মাটির রাস্তার মাঝেই ছায়া মেলে কয়েকটি পুরনো ঘর, সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িটিকে ভাঙতে শুরু করল কয়েকজন শ্রমিক। ধুলোর স্তূপের মাঝে, কাঠের পুরোনো চালের ঢাকনা খুলতে গিয়ে হঠাৎ তাদের চোখে পড়ল মাটির নিচে পুঁতে রাখা এক জোড়া খড়ম। প্রথম দেখায় খড়ম দুটি অদ্ভুত সাধারণ মনে হলেও, যখন শ্রমিকেরা তাদের হাতে তুলে নিল, তখন তারা অবাক হল—এগুলি অতি ভারী, কিন্তু কাঠে কোনো ক্ষয় বা পচন নেই। খড়মের লম্বা দণ্ড এবং সূক্ষ্ম কুঁচকানো অংশ যেন কোনো অদ্ভুত নিপুণতার নিদর্শন বহন করছিল। গ্রামের লোকেরা সকালবেলায় এগুলো দেখল এবং সাধারণ বস্তু হিসেবে উপেক্ষা করল। কেউ কেউ হেসে…

  • Bangla - তন্ত্র

    মায়াবী তাবিজ

    শৌনক দে অধ্যায় ১ – ঝড়ের রাতে রাতটা ছিল অদ্ভুত অশুভ। পশ্চিম আকাশে মেঘ জমে গিয়েছিল সারাদিন, কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই বজ্রপাতের সাথে শুরু হল তীব্র ঝড়। গাছপালা হেলে পড়ছে, গ্রামের কুঁড়েঘরের চালা একে একে খুলে উড়ে যাচ্ছে, আর বাতাসের সাথে মিশে আসছে শ্মশানঘাট থেকে ভেসে আসা শীতল গন্ধ। সেই রাতে সাধারণত গ্রামের মানুষ ঘর থেকে বের হয় না, কারণ বিশ্বাস করা হয়—শ্মশানের আত্মারা ঝড়ের সাথে বেরিয়ে আসে। কিন্তু গ্রামের ওঝা ভবানী সাধু, যার মাথায় গেরুয়া কাপড়, হাতে ত্রিশূল, চোখে রহস্যময় দৃষ্টি—সে বেরিয়েছিল এক মৃতদেহ দাহের কাজে সাহায্য করতে। হঠাৎ বজ্রের আলোয় দেখা গেল শ্মশানের এক কোণে এক সন্ন্যাসী শুয়ে আছেন,…

  • Bangla - তন্ত্র

    অঘোরীর পাঁচ শিষ্য

    দিব্যেন্দু হালদার ১ গ্রীষ্মের শেষ বিকেল। গঙ্গার একটি শাখানদী নীরবে বইছে বাংলার এক অজ পাড়াগাঁয়ের পাশ দিয়ে। চারদিক জুড়ে সোনালি আলো ছড়িয়ে পড়েছে, গাছের পাতায় হাওয়ার মৃদু সুর বাজছে, অথচ গ্রামের মানুষজনের মধ্যে এক অদ্ভুত কৌতূহল ছড়িয়ে পড়েছে। খবর এসেছে—বারাণসী থেকে এক অঘোরী সাধক হঠাৎ এ গ্রামে এসে উপস্থিত হয়েছে। কালো অর্ধফাটা চাদর জড়ানো দেহ, গায়ে চন্দনের বদলে শ্মশানের ছাই, লম্বা জটাজুট বাঁধা চুল, গলায় কপালের মালা আর হাতে একটিমাত্র খুলি। তাকে দেখে প্রথমে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভয়ে কেঁপে উঠেছিল। গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ বলল, “ওরা অঘোরী—শ্মশানই ওদের ঘর।” সত্যিই, সন্ধ্যা নামতেই তাকে দেখা গেল গ্রামসংলগ্ন শ্মশানঘাটে বসতে। একলা আগুন জ্বালিয়ে…

  • Bangla - তন্ত্র

    গুপ্তমণি

    এক জমিদারবাড়ির বিশাল প্রাসাদটি যেন সময়ের ভারে নুয়ে পড়েছে। একদা কত প্রজাপতি, দাস-দাসী আর অতিথির কোলাহলে মুখরিত ছিল এই প্রাসাদ, অথচ আজ তার চারপাশে নীরবতা আর ধ্বংসের ছাপ। লতাগুল্মে ঢাকা উঠোন, ভাঙাচোরা বারান্দা, কড়কড়ে দরজার কপাট—সব মিলিয়ে জায়গাটিকে ভূতের প্রাসাদের মতোই মনে হয়। কিন্তু এই ভগ্নদশার মাঝেই লুকিয়ে আছে এমন এক ধন, যা নিয়ে সমগ্র গ্রামে আজও গুঞ্জন থেমে নেই। গুপ্তমণি—প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারবাড়ির কুলদেবতার আসনে রাখা এই মণিকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়েছে শত কাহিনি, শত গুজব। গ্রামের মানুষ বলে, মণির ভেতরে এমন এক শক্তি লুকিয়ে আছে যা শুধু প্রকৃত তান্ত্রিকের হাতেই জাগ্রত হয়। কেউ বলে, একবার…

  • Bangla - তন্ত্র

    তারার মাঝখানে তান্ত্রিক

    পাৰ্থ প্ৰতিম মুখার্জী পূর্ণিমার রাত ছিল শান্তিনিকেতনের। আশ্রমের চারপাশে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে, শুধু দূরে মাঠের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। এমন রাতে আকাশে এক বিরল দৃশ্য ফুটে উঠল—দিগন্ত জুড়ে টানা লালচে আগুনের রেখা, যেন কেউ জ্বলন্ত মশাল ছুড়ে দিয়েছিল আকাশের বুকের ভেতর দিয়ে। গ্রামের ছেলেরা উল্লাস করে চিৎকার করল—“উল্কাপাত!” মহিলারা মন্দিরের ঘন্টার শব্দ তুলল, ভাবল দেবতার আশীর্বাদ নেমে এসেছে। কিন্তু বৃদ্ধ লোকেরা স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। তাদের চোখে ভয়, কপালে ঘাম, ঠোঁটে নিঃশব্দ ফিসফিসানি। তারা জানত, এটা কেবল কোনো নক্ষত্রপতন নয়—এটা “তান্ত্রিক পথ,” যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অন্ধকার ইতিহাস। বহু বছর আগে শোনা গিয়েছিল, এক তান্ত্রিক পূর্ণিমার রাতে এই…

  • Bangla - তন্ত্র

    দেহত্যাগ

    ভাস্কর সেনগুপ্ত হিমালয়ের অন্তহীন তুষারশৃঙ্গ আর অন্ধকার বনপথের গভীরে, এমন এক অচেনা অঞ্চল রয়েছে যেখানে সাধারণ মানুষ কোনোদিন পা রাখে না। সেখানে বাতাসও যেন রহস্য বয়ে আনে—দিনের আলো কম টিকে থাকে, আর রাত নামলেই পাহাড়ের বুক থেকে ভেসে ওঠে অদ্ভুত সুর, যেন অচেনা কোনো ভাষায় কেউ প্রার্থনা করছে। এই জনমানবশূন্য অরণ্যের মাঝে গড়ে উঠেছিল এক শতাব্দীপ্রাচীন তান্ত্রিক সম্প্রদায়, যাদের অস্তিত্বের কথা শুধু কিছু কিংবদন্তি আর মিথে টিকে আছে। তারা নিজেদের আলাদা করে রেখেছে সভ্যতার চোখ থেকে, কারণ তারা জানে, তাদের জ্ঞান যদি বাইরের জগতে পৌঁছে যায়, তবে সেটি ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। তাদের গুরুগম্ভীর মঠ গড়ে উঠেছে প্রাচীন পাথরের ওপর,…

  • Bangla - তন্ত্র

    কালীঘাটের রক্তমালা

    অধ্যায় ১ – কালীঘাটের এক শীতল ভোরে, যেখানে কলকাতার ভিড় এবং অব্যক্ত কোলাহল দূরের মনে হয়, সেখানে এক প্রাচীন আশ্রমের ভিতরে রহস্যের ছায়া ঘনিয়ে উঠেছিল। ভৃগুনাথ তান্ত্রিকের পুরনো মালা, যা বহু বছর ধরে মাটির ধুলো জমিয়ে রেখেছিল, হঠাৎ করেই ভিজে ওঠে টাটকা লাল রক্তে। আশ্রমের কাঠের মেঝে অন্ধকার এবং আর্দ্রতার সংমিশ্রণে যেন আরও গভীর হয়ে উঠেছে, আর মালার রঙের সঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে এক অদ্ভুত আতঙ্কের ছাপ। স্থানীয় বাসিন্দারা একে অমাবস্যার মতো কালো অঘটনের দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখলেন; কেউ কেউ বললেন, “এটি মানুষের রক্ত নয়, কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তির ছাপ।” আশ্রমের পুরনো দেয়ালে ঝুলন্ত ছবি এবং তান্ত্রিকের প্রত্নচিহ্নগুলো যেন হঠাৎই জীবন্ত…