• Bangla - তন্ত্র

    মহাশ্মশান

    সুতীৰ্থ সান্যাল ১ কাশীর গঙ্গার ধারে অনন্তকালের মতো জ্বলতে থাকা মহাশ্মশান যেন মৃত্যুর এক অনন্ত নাট্যমঞ্চ। দিনের আলো ঢলে পড়তেই ঘাটের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে গলিত মোমের মতো গরম ধোঁয়া, ছাইয়ের তীব্র গন্ধ, আর কাঠ পুড়বার ফসফস শব্দ। কখনো শোনা যায় শবযাত্রার করুণ সুর, কখনো আবার ভেসে আসে পুরোহিতদের গম্ভীর মন্ত্রোচ্চারণ। নদীর জলকেও মনে হয় যেন এক অন্তহীন ছাইয়ের আয়না, যেখানে মৃতদেহ ভেসে আসে, দাহ হয়, আর আগুনের পর শেষ হয়ে যায় সব। আকাশের কালো ধোঁয়া আর লালচে শিখা যেন মিলেমিশে আড়াল করে দেয় চাঁদ-তারা। এই শ্মশানই কাশীর মানুষের কাছে মুক্তির দ্বার, কিন্তু একইসঙ্গে ভয়েরও। কারণ এখানে জীবন আর মৃত্যু দু’জন…

  • Bangla - তন্ত্র

    তান্ত্রিক নগরী

    অরিন্দম সেনগুপ্ত পর্ব ১ – নগরীর নীচে প্রাচীন নগরীর বুক চিরে যখন প্রথম খননের কোদাল পড়ল, তখন কারো ধারণা ছিল না কী অদ্ভুত রহস্য উন্মোচিত হতে চলেছে। নদীর ধারে বসে থাকা নগরটির ইতিহাস বহুবার লেখা হয়েছে, বহুবার পড়া হয়েছে, কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকেরা জানতেন, কাগজে লেখা ইতিহাস আর মাটির নীচে চাপা ইতিহাসের মাঝে কতখানি ফারাক থাকে। ড. দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ছিলেন এই অভিযানের প্রধান। তাঁর বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই, কিন্তু চোখে এক ধরনের অদম্য কৌতূহল। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় বসে বসে তিনি বহুবার এমন সব পুঁথি পড়েছেন যেখানে বলা হয়েছে এই নগরী একসময় আচার, যজ্ঞ আর রহস্যময় তন্ত্রচর্চার কেন্দ্র ছিল। তবে সবটাই…

  • Bangla - তন্ত্র

    কালীঘাটের নীলবসনা সাধক

    কেশব চক্রবর্তী অধ্যায় ১ – রাতের কালীঘাট রাত নেমে আসে কালীঘাটের সরু গলিগুলোয় যেন ছায়ার আঁচড়, আর সেই আঁধারের মধ্যে ঢোকে এক অদ্ভুত স্থিরতা। মন্দিরের ঘন্টার টিকটিকি দূরে গুনগুন করে, আর মানুষের ঢল ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। হরিপদ, যিনি প্রতিদিনের মতো মন্দিরের পাশে তার ফুলের টিকিতে বসে বিক্রি করেন, আজ রাতটা কিছুটা ভিন্ন মনে করছিলেন। গলির বাতাস হঠাৎই অস্বাভাবিকভাবে শীতল হয়ে আসে, এমনভাবে যেন ঘন কুয়াশার মতো অদৃশ্য হাত তাঁর গায়ে লেগে থাকে। হরিপদ লক্ষ্য করেন, মন্দিরের আলো দূরে আরও ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে, আর সেই ক্ষীণ আলোর মাঝে হঠাৎ এক নীলবসনা মানুষ প্রবেশ করে। সাধকের গায়ে শুধু নীল কাপড়,…

  • Bangla - তন্ত্র

    তন্ত্রিণীর হাসি

    ময়ূখ দেব রাতের অন্ধকার যখন গ্রামের কোল ঘিরে নেমে আসে, তখন সবকিছু যেন শান্তির জাল ছড়িয়ে দেয়। ঘুমন্ত গ্রামবাসীর মধ্যেই হঠাৎ একটি অদ্ভুত হাসির শব্দ ভেসে আসে বাতাসে, যা এতটাই রহস্যময়ী যে কেউ সঠিকভাবে বোঝে না এটি কার। কেউ বলছে, এটি দেবীর হাসি, যা গ্রামের লোকদের নিরাপত্তা এবং আশীর্বাদ দেয়; আবার কেউ বলে এটি একটি দুষ্টু পিশাচিনীর হাসি, যা রাতের অন্ধকারে মানুষের মন দানবীয়ভাবে কাঁপিয়ে তোলে। হাসিটি কোনোটিই নয়, বরং এক অদৃশ্য শক্তির আবহ, যা গ্রামের প্রতিটি ঘরে অচেনা ভাবনা এবং অশান্তি সৃষ্টি করে। গ্রামের কিছু বুড়ো বলেন, “এই হাসি আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি নিয়ে আসে। কেউ যদি হঠাৎ শুনে, সে…

  • Bangla - তন্ত্র

    গড়ের মাটির নিচে

    সন্দীপ সেনগুপ্ত হুগলির বিস্তীর্ণ গ্রামীণ প্রান্তরে, নদীর ধারে শ্যাওলায় ঢাকা ইটের প্রাচীর আর ধ্বংসস্তূপের মতো দাঁড়িয়ে আছে সেই পুরনো গড়। সময়ের ক্ষয়ে ক্ষয়ে এর অনেকটা ভেঙে পড়েছে, অনেকটা মাটির নিচে চাপা পড়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় নিস্তব্ধ প্রকৃতির কোলে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো অদ্ভুত নিদর্শন, অথচ স্থানীয়রা একে ভয়ে এড়িয়ে চলে। দীর্ঘদিন ধরে শোনা যায়, গড়ের ভেতরে রাত নামলে অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়—কখনো তলোয়ারের ঝনঝনানি, কখনো পদশব্দ, আবার কখনো গভীর নিশ্বাসের আওয়াজ। ফলে গ্রামবাসীর চোখে এ জায়গা “অভিশপ্ত” বলেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। এই ভয়ের মধ্যেও সরকার ঠিক করে, প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে জায়গাটি খনন করা দরকার। হয়তো গড়ের ভেতর থেকে মিলবে বাংলার ইতিহাসের…

  • Bangla - তন্ত্র

    চামুণ্ডার অর্ঘ্য

    অর্ঘ্যদীপ চ্যাটার্জী এক শ্মশানের রাতের অন্ধকারে যে ভয়ঙ্কর নীরবতা ছড়িয়ে থাকে, সেটাই যেন কালিকেশ তান্ত্রিকের সাধনার উপযুক্ত আবাস। চাঁদের আলো নেই, আকাশে ছড়ানো মেঘে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা দিচ্ছে, আর সেই ক্ষণিক আলোকেই উন্মোচিত হচ্ছে পুড়ে যাওয়া কাঠ, ছাই, হাড়গোড়, আর সদ্য নির্বাপিত চিতার ধোঁয়া। মৃতদেহের গন্ধ তখনও বাতাসে ভাসছে, কুকুর আর শেয়ালের হিংস্র ডাক শ্মশানের চারদিক থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিবেশের মাঝেই আগুনের সামনে বসে আছে কালিকেশ, গায়ে কেবল লাল রঙের কাপড়, কপালে সিঁদুরের টানা রেখা, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। তার চোখদুটো অদ্ভুত উন্মত্ততায় জ্বলছে, ঠোঁটে নিঃশব্দ মন্ত্রের আওয়াজ। মাঝে মাঝে তার কণ্ঠে ভেসে ওঠা ভৈরব মন্ত্রের গর্জন…

  • Bangla - তন্ত্র

    অদৃশ্য কোষ

    অরিন্দম বসু পর্ব – ১ কলকাতার উত্তর শহরের একটি নিভৃত ল্যাবরেটরি। বাইরে রাতের আকাশে ম্লান তারা, ভেতরে আলো-ঝলমলে কাঁচঘেরা ঘর, সারি সারি কাচের টেস্টটিউব আর ধাতব বাক্সে ঠাসা যন্ত্রপাতি। টেবিলের উপর রাখা একটি ছোট্ট কাঁচের শিশি—যার ভেতরে মৃদু নীলচে আভা ছড়িয়ে রয়েছে। এই নীল আভাটাই আসলে সেই আবিষ্কার—“অদৃশ্য কোষ”। ডক্টর সমর সেন, বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, কালো ফ্রেমের চশমার আড়ালে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন সেই শিশিটির দিকে। তিনি জানেন, এর ভেতরে লুকোনো শক্তি কেবল জীববিজ্ঞানের সীমানা ছাড়িয়ে গিয়ে মানুষের সভ্যতার সংজ্ঞাই পাল্টে দিতে পারে। কোষটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করলেই এক অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ত্বকের প্রতিটি সেল আলোকে শোষণ করতে শুরু…

  • Bangla - তন্ত্র

    রুদ্রাক্ষের অভিশাপ

    অয়ন চক্রবর্তী পর্ব ১: উত্তরাধিকার কলকাতার ব্যস্ত জীবন থেকে অনেক দূরে, পুরোনো গ্রাম বাড়িটায় পা রাখতেই অর্কের মনে হল যেন সময় থমকে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিক নিস্তব্ধ, কেবল বাতাসে খেজুরপাতার শোঁ-শোঁ শব্দ। অর্ক বহু বছর পর ফিরেছে এখানে—তার ঠাকুরদার মৃত্যুর খবর পেয়েই। ছোটবেলা কেটেছিল এই বাড়িতেই, তারপর বাবা-মায়ের সঙ্গে শহরে উঠে যাওয়া। ঠাকুরদা ছিলেন একেবারে গ্রামীণ মানুষ, কিন্তু তার চোখে একটা অদ্ভুত দীপ্তি ছিল, যেন তিনি অনেক অজানা কিছু জানতেন। বাড়ির ভেতর পা রাখতেই ধুলোমাখা গন্ধ নাকে এল। মাটির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে, সিঁড়িতে শেওলা জমেছে। কিন্তু ঠাকুরদার ঘরটা ছিল যেমন ছিল, তেমনই আছে। বাঁশের খাট, একপাশে বইয়ের তাক, আর পুরোনো কাঠের…

  • Bangla - তন্ত্র

    মহাকাশের ডাকিনী

    সৌরভ নাগ ১ ভারতের প্রত্যন্ত এক ছোট্ট গ্রাম, চারদিকে বিস্তৃত ধানক্ষেত, দূরে দূরে তালগাছ আর মাঝখানে মাটির ঘরগুলির সারি। দিনের বেলা গ্রামটি শান্ত, মানুষজন তাদের ফসল ও গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত থাকে, আর সন্ধ্যা নামলেই যেন গ্রামটা ঢেকে যায় অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতায়। আকাশভরা তারার নীচে সারা গ্রাম যখন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই ঘটল সেই অদ্ভুত ঘটনা। সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত, চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে, কেবল কিছু ঘরে কুপির আলো দপদপ করছে। সেই সময় হঠাৎ মেঘলা, গ্রামেরই এক কিশোরী, উঠোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। সে আকাশ দেখার অভ্যেস করেছে ছোটবেলা থেকে, তার মনে হয় রাতের আকাশে লুকিয়ে আছে হাজারো গল্প, হাজারো…

  • Bangla - তন্ত্র

    ডাহুকের নিশান

    অভিষেক মজুমদার ১ কলকাতার ব্যস্ত নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরে শান্তিনিকেতনের উপকণ্ঠে ছোট্ট একটি গ্রাম। নাম তার—চৌরঙ্গীডাঙা। বাইরে থেকে এ গ্রাম দেখতে সাধারণ, কাঁচা রাস্তা, ধানের ক্ষেত, গরুর গাড়ি, বিকেলের আড্ডায় চায়ের দোকান, মেলার সময় পুতুলনাচ বা বাউল গান। কিন্তু এই গ্রামকে ঘিরে এক অদ্ভুত গল্প বহুদিন ধরে চলে আসছে, যা শুনে আশেপাশের গ্রামও শিহরিত হয়ে ওঠে। কথিত আছে, বর্ষা নামার আগে, বিশেষ করে আষাঢ় মাসের শেষ রাতে গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তের বাঁশবনে এক অদ্ভুত আচার হয়। সেই বাঁশবন খুব পুরোনো, অন্ধকারাচ্ছন্ন, সূর্যের আলোও সেখানে খুব বেশি প্রবেশ করে না। দিনের বেলায় সাধারণ মনে হলেও রাত নামলে তার…