• Bangla - ছোটদের গল্প - রহস্য গল্প

    রবীন্দ্র সরোবরে রহস্য

    অয়ন চক্রবর্তী ১ গ্রীষ্মের দুপুর যেন রোদে গলে যাওয়া মিছরি। দক্ষিণ কলকাতার অলি-গলি পেরিয়ে রবীন্দ্র সরোবরের ঘন ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া যেন শীতলতার অভিজ্ঞান। আজ ছিল স্কুলের শেষ দিন। আর আজ থেকেই শুরু সেই কাঙ্ক্ষিত ছুটি। তিন বন্ধু—ঋভু, সোহিনী আর আদিত্য—প্রায় রোজের মতোই দেখা করল লেকের কাছে। তাদের তিনজনের ছুটির প্রথম দিনের আড্ডা শুরু হলো পাথরের বেঞ্চে বসে পাঁপড় ভাজা খেতে খেতে। হালকা বাতাসে কদমগাছের পাতা দুলছিল, আর জলের ওপরে সূর্যের আলো রুপোর মাছরাঙার মতো লাফিয়ে পড়ছিল। ঋভু বলল, “এই লেকের নিচে যদি কিছু লুকানো থাকে রে? ধর, কোনো গুপ্তধন বা পুরনো রহস্য?” আদিত্য এক চুমুক দিয়ে বলল, “তোর গোয়েন্দাগিরির শুরু…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প - ছোটদের গল্প

    আলোর কাক

    তিয়াস চক্রবর্তী ১ বটগাছটা ছিল বিশাল, ছায়াময় আর পুরনো। বনের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সেই গাছটাকে পাখিরা ডাকে “আকাশদ্বার”—যেন তার ডালপালায় সিঁড়ি বেয়ে আকাশ ছোঁয়া যায়। সেখানে বাস করত রকমারি পাখি—নীল টিয়া, সবুজ বেনেবউ, সোনালি ঘুঘু আর শাদা পায়রা। প্রত্যেকের নিজের গান ছিল, নিজের আভিজাত্য। গাছজুড়ে প্রতিদিন সকালবেলা এক অপূর্ব সঙ্গীতসন্ধ্যা বসত—কারও কণ্ঠে মিষ্টি রাগ, কারও গলায় ঝংকারের ঝরনা। এই সংগীতের মাঝেই বসবাস ছিল একমাত্র সেই পাখিটির—যার গলায় ছিল না কোনো সুর, যার গায়ে ছিল না কোনো রং। তার নাম কেউ নেয় না—সবাই তাকে বলে “ওই কাকটা।” সে নিজে নিজের নাম রেখেছিল কাকু। কাকু কালো, সাধারণ, আর তুচ্ছ—এই তিন অভিধায়…

  • Bangla - ছোটদের গল্প - সামাজিক গল্প

    জলতলার কাগজের নৌকা

    সন্দীপন সাহা ১ জলতলার আকাশটা সকাল থেকেই ধূসর হয়ে ছিল। মেঘগুলো যেন জমাট বাধা দুঃখের মতন মাথার ওপর ঝুলছিলো, আর ঠিক বেলা এগারোটা নাগাদ প্রথম বৃষ্টি নামে। টিনের ছাউনি মাথায় চাপিয়ে থাকা ছোট ছোট ঘরগুলোর ওপর বৃষ্টির শব্দ ধাতব ঘন্টাধ্বনির মতো বাজতে থাকে। সজল জানালার ফাঁকে মুখ গলিয়ে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে তখন ঈশ্বরের খেলা—যেন নীলের বদলে আকাশের রং হয়ে গেছে রুপালি। ঘন জলকণা মাটিতে পড়তেই কাঁচা রাস্তা একাকার হয়ে যাচ্ছে, নালার জল ফুলেফেঁপে উঠছে, আর বৃষ্টির ধারায় সেই জল যেন দিকবিদিক ছুটে যাচ্ছে। সজল ভাবে—”এই জলে যদি একখানা নৌকা ভাসাই, কোথায় যাবে সেটা?” তার মা তখন ভাঙা বাসনের ওপরে…

  • Bangla - ছোটদের গল্প - সামাজিক গল্প

    নির্বাক পুতুল

    সুব্রত দাশগুপ্ত ১ রিমার চোখে এই শহর ছিল এক স্বপ্নময় চিত্রপট — বড় বড় বিল্ডিং, আলোর রোশনাই, গাড়ির একটানা শব্দ, আর ছাদের ওপর নীল আকাশে উড়তে থাকা সাদা পায়রার মতো সুখ। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভাঙতে সময় লাগেনি। মায়ের মৃত্যুর পরে মামা তাকে শহরে নিয়ে আসে, একটা “ভালো” বাড়িতে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। বয়স দশ হলেও, রিমা জানত কাজ বলতে কী — খাটুনি, হাঁটু পর্যন্ত ঝাঁপ দেওয়া, বকুনি খাওয়া আর সবশেষে নিঃশ্বাস ফেলার সময়টুকুতে ঘুমিয়ে পড়া। প্রথম দিন শহরে এসে মালবিকার বাড়িটা দেখে তার মনে হয়েছিল, এ যেন এক রাজপ্রাসাদ। চারপাশে ঝকঝকে কার্পেট, অচেনা গন্ধে ভরা ঘর, দেয়ালে টাঙানো ছবি আর…

  • Bangla - ছোটদের গল্প

    স্টারডাস্ট ক্যাফে

    সায়ন দত্ত সেই বর্ষার দুপুরটা ছিল অবিশ্বাস্যরকম নীরব, যেন কলকাতার ক্যাম্পাস চত্বরও আজ একটু হেঁসে বলছে, “চুপ করে থাকো, কেউ আসছে…”। তন্ময় দত্ত সেদিন হোস্টেল থেকে বেরিয়েছিল একটা ছেঁড়া ছাতা হাতে, আর নিজের কল্পনার ভারে ভারাক্রান্ত মনে। ক্লাস বাতিল, ফোনে নেট নেই, আর মাথার ভেতর ঘুরছে পুরনো অর্ধেক লেখা কবিতার লাইন, “ভিজে রাস্তায় হারিয়ে গেল যে পদচিহ্ন, সে কি আবার ফিরবে?” সে হেঁটে যাচ্ছিল মূল ফটকের দিকে, কিন্তু জানত না সে হাঁটছে অন্য এক জগতে প্রবেশের পথে। কলেজের পিছনের সরু গলিটা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার চোখে পড়ে একটি কাঠের সাইনবোর্ড – হাতের লেখা, কিন্তু যেন একশো বছর আগের কালি…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প - ছোটদের গল্প - সামাজিক গল্প

    ঘুড়ির লেজ

    ঋতাংশু পাল অধ্যায় ১: লাল-নীল ঘুড়ির ছেলে ঘটনাটা শুরু হয়েছিল এক মেঘলা বিকেলে, যখন হাওয়ায় অদ্ভুত একটা টান ছিল আর বাঁশবনের পাশ দিয়ে উড়ছিল এক রঙিন ঘুড়ি—লাল-নীল ডানা ছড়িয়ে আকাশে জ্যান্ত পাখির মতো ছুটে বেড়াচ্ছিল। পুরো গ্রামে তখন মাঠ ঘাট ফাঁকা, শুধু একটা ছেলেকে দেখা গেল দূর থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে ঘুড়ির সুতোর টান ঠিক করছে, হাতের কব্জি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাতাসের গতিকে অনুভব করছে। ছেলেটির নাম রঞ্জন—বয়স তেরো, চেহারায় অস্থিরতা আর চোখে অব্যক্ত এক আলো। সে এক সময় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত, কিন্তু ক্লাস ফোরের পর আর পড়া হয়নি। গাঁয়ের লোকেরা বলে, “বই ধরলে ঘুম আসে, আর ঘুড়ি দেখলে চোখ জ্বলে…

  • Bangla - ছোটদের গল্প - হাস্যকৌতুক

    প্রেমপত্র বিভ্রাট

    সৌভিক ভট্টাচার্য ১ সৌমিক দে নামের সেই সাধারণ ছাত্রটির জীবন ছিল একঘেয়ে – সকালে স্কুল, বিকেলে টিউশন, রাতে মা-বাবার বকুনিতে পড়াশোনা। ক্লাস নাইনের গড়পড়তা ছাত্র সে, কিন্তু তার চোখে একটা স্বপ্ন লুকিয়ে ছিল—মীনাক্ষী সেন। হ্যাঁ, সেই মেয়েটি যে আঁকা-আঁকিতে দুর্দান্ত, প্রতিটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে আনে, আর যার হাসিতে সৌমিকের হৃদয়ের কাঁপুনি বেড়ে যায়। মীনাক্ষী তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলেও সেটা সৌজন্যবোধ না প্রেম—সে বিষয়ে সৌমিকের কখনও সাহস হয়নি ভাবারও। তবে প্রেমে পড়া তো আর যুক্তির বিষয় নয়—একদিন হঠাৎ ক্লাসরুমে মীনাক্ষী যখন তার খাতা ফেরত দিয়ে বলল, “তোর লেখা কবিতাটা দারুণ লেগেছে”, তখনই সৌমিক যেন ভেসে গেল এক অলীক মেঘের…

  • Bangla - ছোটদের গল্প

    অদ্ভুত দ্বীপের রহস্য

    সৌরভ পাল শহরের এক ছোট্ট গ্রামে চারজন বন্ধু থাকতো — আর্টি, সোহিনী, রাজু, আর মিথিলা। তারা সবাই খুব সাহসী আর কৌতূহলপূর্ণ। একদিন সোহিনী তার ঠাকুরদার পুরনো আলমারি থেকে একটি মলাটহীন, জীর্ণ মানচিত্র খুঁজে পায়। মানচিত্রটি ছিল এক রহস্যময় দ্বীপের। “দেখো, এখানে একটা ছোট দ্বীপে লুকানো আছে গুপ্তধন,” সে উত্তেজনায় বলল। “চলো যাই! ছুটির দিনে আমরা বের হবো,” রাজু বলল। তাদের ছোট নৌকাটি নিয়ে তারা নদী পার হয়ে সেই দ্বীপে পৌঁছল। ঢেউ আর বাতাসের শব্দের মাঝে তারা যখন পৌঁছল, তখন দ্বীপটি ছিল এক অদ্ভুত নীরবতার আবরণে। চারপাশে লতাপাতা আর গাছগাছালি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। দ্বীপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল একটা পুরানো বাতিঘর, যা…

  • Bangla - ছোটদের গল্প - রহস্য গল্প

    গঙ্গার ধারের সেই বাড়ি

    অর্পিতা ঘোষ গ্রীষ্মের দুপুরের রোদ গঙ্গার তীরের বালিতে ঠিকরে পড়ছিল, আর শহরের ধুলো-ধোঁয়ার বাইরে একটা পুরনো বাড়ির দিকে এগোচ্ছিল পাঁচ বন্ধুর ছোট্ট দল – অনির্বাণ, ইরা, তীর্থ, মেঘলা আর রুদ্র। ওদের সবার বুকের মধ্যে মিশ্র উত্তেজনা, কৌতূহল আর অল্প অল্প শঙ্কা একসাথে খেলছিল। এই বাড়িটা একসময় জমিদারদের শান-শওকতের স্মৃতিবাহী ছিল, কিন্তু এখন রোদে ফাটল ধরা ছাদ, কাঁচ ভাঙা জানালা আর মাকড়সার জালে ঢাকা শূন্য বারান্দা যেন ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শহরের কলেজের টানা ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষার চাপ থেকে মুক্তির জন্য এটাই তাদের গ্রীষ্মের অবসরযাত্রা – কিছুটা ভয়ের মায়াজালে মোড়া এক ধরনের রোমাঞ্চ খুঁজতে চেয়েছিল ওরা। রুদ্র তো…

  • Bangla - ছোটদের গল্প - ভ্রমণ - রহস্য গল্প

    পাহাড় ডাকে চুপিচুপি

    উন্মেশ বসু অধ্যায় ১: ছেলেবেলার কোনো এক দুপুরে তারা চারজন একসাথে গাছের ছায়ায় বসে স্বপ্ন দেখেছিল—একদিন পালিয়ে যাবে কোথাও, যেখানে কোনো নিয়ম নেই, যেখানে কেউ বলবে না “এই করিস না”, “ওটা ঠিক নয়”, “তুই বড় হয়ে যা”। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তব করতে আজকের সকালটাই তাদের জন্য নিযুক্ত ছিল। স্কুলের ইউনিফর্ম পরে বেরিয়ে পড়া হলেও, গন্তব্য ছিল না ক্লাসরুম; বরং শিয়ালদহ স্টেশনের দিকে। সৌরভের লাল কালো পালসার বাইক, তিয়াসার বাবার ফেলে যাওয়া ফুজি ক্যামেরা, অভির ছোট্ট নোটবুক আর ঋষভের মাথাভর্তি পাগলামি—এই ছিল তাদের রসদ। স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজের পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে অভি একবার শেষবারের মতো বলল, “আচ্ছা, আমরা ঠিক তো…