Bangla - কল্পবিজ্ঞান - হাস্যকৌতুক

জিরো-জী সুন্দরী

Spread the love

সঞ্চারী নাথ


মঙ্গলেও চা

মঙ্গল গ্রহের লালাভ আকাশের নিচে গড়ে উঠেছিল ‘জিরো-জী টাউন’—ভারতীয় বাঙালিদের প্রথম মহাকাশ উপনিবেশ। মাধ্যাকর্ষণ প্রায় শূন্য, তাই সবকিছু ভাসমান, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। এই শহরের মাঝখানে ভাসমান ছোট্ট এক ক্যাপসুল, যার নাম ‘চা-রকেট’। চন্দন ঘোষ, বয়স তিরিশের কাছাকাছি, ‘চা-রকেট’ চালান। তার বানানো চায়ের স্বাদে মঙ্গলবাসীর হৃদয় জয় করেছে। একদিন বিকেলে, ঝুমুর সেন নামে এক মহাকাশ প্রকৌশলী ‘চা-রকেট’-এ এসে এক কাপ লাল চা অর্ডার করল। ঝুমুর ছিল নতুন পোস্টিং পাওয়া, তার কাজ মহাকাশ ক্রায়োজেনিক রিয়্যাক্টর ঠিক রাখা। তার আগমন চন্দনের জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত, আর সেই ছোট্ট ‘ভাসমান চা’-র দোকানে দুজনের মধ্যে অদ্ভুত একটা টান তৈরি হল। তাদের কথোপকথনে জানলাম, মঙ্গল গ্রহে ভালোবাসা একটু অন্যরকম—স্পর্শ কম, কিন্তু টান বেশি। চন্দনের GraviTea হৃদয়ের তাপ বাড়ায়, আর ঝুমুর বুঝতে পারে, মাধ্যাকর্ষণহীন মুহূর্তেও ভালোবাসার গতি কমেনা। তবে প্রশাসনের ‘Close Contact Warning’ এলার্ম দুজনের মাঝের দূরত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। ভালোবাসার নিয়ম ছিল কঠোর, আর সে নিয়মের মধ্য দিয়েই তাদের গল্প এগোচ্ছে। চন্দনের চোখে ঝুমুরের জন্য এক অদ্ভুত উষ্ণতা, আর ঝুমুর বুঝতে পারে, এই মঙ্গলের ভাসমান ভালোবাসা তার জীবনের নতুন সূচনা। পরের পর্বে দেখা যাবে, কীভাবে বায়ো-নিয়ম আর ভালোবাসার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, আর তাদের ‘ভাসমান ডেটিং’-এর রোমাঞ্চ কেমন হয়।

মাধ্যাকর্ষণহীন মুহূর্ত

মঙ্গল গ্রহের লালাভ আকাশের তলায় ‘জিরো-জী টাউন’ যেন ভেসে ওঠে এক অদ্ভুত মোহময়ায়। এই স্থানে, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ প্রায় নেই, মানুষের জীবনের প্রতিটি সম্পর্ক ও আবেগই নিতান্ত আলাদা রূপ নেয়। ‘চা-রকেট’ দোকানে ঝুমুর আর চন্দনের সম্পর্ক এখন স্পেস স্টেশনের কঠোর নিয়ম আর মাধ্যাকর্ষণহীন ভালোবাসার মাঝে ঝুলে রয়েছে। ঝুমুর সেন, ব্রহ্মপুত্র ব্যারেল ডক-৩ থেকে মঙ্গলে কর্মস্থলে নতুন আসা মহাকাশ প্রকৌশলী, প্রতিদিন কাজ শেষে ‘চা-রকেট’-এ এসে চন্দনের তৈরি GraviTea’র মিষ্টি গন্ধে নিজের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। চন্দন ঘোষ, বাঙালি চা-দোকানির তরুণ স্বপ্নদ্রষ্টা, যার ভাসমান দোকানে ঘুরে বেড়ায় মঙ্গলবাসীর একদল স্বপ্নদর্শী। তাদের মধ্যে প্রথম দেখা থেকেই সৃষ্টি হয় এক অদ্ভুত টান—স্পর্শহীন, মাধ্যাকর্ষণহীন, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে প্রবল। মঙ্গল গ্রহের কঠোর বায়ো-নিয়ম অনুযায়ী, কেউ কারো শরীরে স্পর্শ করলে তা ‘বায়ো-স্ক্যান’ বাধ্যতামূলক, কারণ এতে সংক্রমণ কিংবা অজানা এলিয়েন অণুজীবের প্রবেশ ঝুঁকি থাকে। কিন্তু ঝুমুর আর চন্দনের ভালোবাসা এই নিয়মের চেয়ে অনেক বড়। এক বিকেলে, ‘চা-রকেট’-এর ভাসমান চেয়ারগুলোতে বসে ঝুমুর বলল, “চন্দন, এই ভালোবাসার জন্য আমাদের কি এতটা সতর্ক থাকতে হবে? একে কি শুধু চোখে চোখ রাখাই হবে?” চন্দন হেসে বলল, “মঙ্গল গ্রহের মাধ্যাকর্ষণে টানই সবচেয়ে বড় অনুভূতি, আর আমাদের ভালোবাসাও সেই টানের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠছে। স্পর্শ কম, কিন্তু অনুভব গভীর।” তারা হাত বাড়িয়ে একে অপরের কাছে চলে গেলেও মৃদু দূরত্ব রয়ে গেল—এক রকম মাধ্যাকর্ষণহীন স্পর্শ যা নিয়ন্ত্রিত। এমন সময়, দোকানের নিরাপত্তা স্ক্রিনে ‘Close Contact Warning’ এলার্ম বেজে উঠল। “দেখছো, প্রশাসনের চোখে আমাদের ভালোবাসা একটা হ্যাজার্ড,” ঝুমুর একটু হাসি দিয়ে বলল, “তবুও তো আমরা থামতে পারবো না।” চন্দনের চোখে এক রকম আভা ফুটে উঠল। “ভালোবাসা মানেই তো একটু বিপদ।” তাদের ‘ভাসমান ডেটিং’ রাত্রি গড়িয়ে দিনে পরিণত হল। ঝুমুর প্রতিদিন নতুন গল্প শোনাতো মহাকাশ প্রকৌশল ও চায়ের মেলবন্ধন নিয়ে, আর চন্দন শোনাতো মঙ্গলের রঙ ও গন্ধ। তাদের মধ্যে কথাবার্তা ও হাসি ভাসমান স্পেসের মতো ছড়িয়ে পড়ত। কিন্তু ভালোবাসার পথে বাধাও ছিল অনেক। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, নিয়ম-কানুন, আর এক অবাঞ্ছিত সংকেত—একদিন ঝুমুরের হেডকোয়ার্টার থেকে একটি জরুরি মেসেজ এলো। ‘বায়ো-স্ক্যান রিপোর্টে অদ্ভুত অণুজীব শনাক্ত হয়েছে’। ঝুমুর জানত, এই রিপোর্ট তাদের জন্য বড় বিপদ। চন্দনের দোকানে হঠাৎ সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা এসে হাজির হলেন। তাদের হাতে আধুনিক বায়ো-স্ক্যানার, যা চায়ের কাপ থেকে অজানা অণুজীব খুঁজে বের করবে। প্রশাসনের কাছে চন্দনের দোকান এখন সন্দেহজনক, কারণ এই অণুজীব সম্ভবত এলিয়েন স্পোর। ঝুমুর চন্দনের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “আমাদের ভালোবাসা এখন এক পরীক্ষায় দাঁড়িয়ে।” চন্দনের মন ভারাক্রান্ত, তবে সে বলল, “ঝুমুর, আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তবে পারব।” তাদের সম্পর্ক এখন শুধু ভালোবাসার নয়, এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেখানে রয়েছে বায়ো-নিয়ম, প্রশাসনের চাপ আর একটি রহস্যময় এলিয়েন স্পোর। পরবর্তী দিনগুলোতে, ঝুমুর আর চন্দন নিজের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে চেষ্টা করল নিয়ম মেনে চলতে। কিন্তু প্রশাসনের চোখ থেকে তারা দূরে থাকতে পারেনি। ‘চা-রকেট’-এ ঝুমুর শুধু দূর থেকে চা দেখে হাসতো, কাছে যেতে সাহস পেত না। চন্দনের মনে গভীর এক দুঃখের সুর বাজত। চন্দন প্রতিদিন ঝুমুরের জন্য বাদামচা বানাতো—মঙ্গলের মাটির মিষ্টি গন্ধ মেশানো। ঝুমুর এসে সেই বাদামচা নিয়ে বলত, “তুমি ভালোবাসাও বানাও।” তাদের ভালোবাসা এমন এক জটিলতায় ঢুকে পড়ল যেখানে রয়েছে বিজ্ঞান, প্রেম আর রহস্যের সমন্বয়। কিন্তু একটা অদ্ভুত গ্রাহক এসে পরিস্থিতি আরও জটিল করল। সে ছিল এক এলিয়েন স্পাই, যার গলা মানুষীদের মতো হলেও উদ্দেশ্য ছিল ‘জিরো-জী টাউন’-এর মানুষের আচরণ নজরদারি করা। ঝুমুর বলল, “আমাদের ভালোবাসার পথ এখন অনেক বিপজ্জনক।” চন্দন মাথা নেড়ে বলল, “আমার GraviTea আর তোমার সাহসই আমাদের এই যুদ্ধে জিতাবে।” তাদের ছোট্ট প্রেমের গল্প এখন এক বিশাল ষড়যন্ত্রের মোড়কে আবৃত হয়ে গেল।

বায়ো-স্ক্যান, ব্রেকআপ বাদামচা

মঙ্গল গ্রহের ‘জিরো-জী টাউন’-এর আকাশে রোদ কম, লালাভ মেঘ ঘিরে রাখে ভাসমান শহরটাকে। এই শহরের এক ছোট্ট কোণে, চন্দনের ‘চা-রকেট’ দোকান আজ অস্বাভাবিকভাবে সরগরম। খবর ছড়িয়েছে—চন্দনের চায়ের এক কাপ থেকে পাওয়া অদ্ভুত অণুজীব বায়ো-স্ক্যান রিপোর্টে ধরা পড়েছে। অফিসাররা এসে দোকানের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করল। চন্দনের হাতে দেওয়া হল সুরক্ষা সরঞ্জাম আর তাকে বলা হল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা। ঝুমুরও ছিল সেই ভিড়ে, চোখে ভর করল উদ্বেগ আর নির্ভরতার মিশ্রণ। চন্দনের মন ভারাক্রান্ত। সে জানত ভালোবাসা কখনো সহজ হয় না, কিন্তু এতটা কঠিনও হবে ভাবেনি। ঝুমুর তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি তোমার পাশে আছি, তবে আমাদের অবশ্যই এই নিয়মগুলো মানতে হবে। আমাদের ভালোবাসা সুরক্ষিত রাখতে হবে।” চন্দন বলল, “তুমি কি বিশ্বাস করো, এই দূরত্ব, এই নিয়ম আমাদের বন্ধন ভেঙে দেবে?” ঝুমুর একটু কাঁপা গলায় বলল, “আমরা যদি ভালোবাসি, তবে পারবো।” পরবর্তী দিনগুলোতে, ঝুমুর আর চন্দনের দেখা সাক্ষাৎ কঠিন হয়ে পড়ল। প্রশাসনের নজরদারি আর বায়ো-নিয়মের বিধি তারা মেনে চলছিলেন, তবে অন্তর থেকেই দূরে চলে যাচ্ছিলেন। চন্দন প্রতিদিন দোকানে ঝুমুরের জন্য বাদামচা তৈরি করে রাখত। বাদামচা—মঙ্গলের মাটির মিষ্টি গন্ধ মেশানো, যা ঝুমুরের প্রিয়। ঝুমুর এসে সেই বাদামচা নিয়ে বলত, “তুমি ভালোবাসাও বানাও।” তাদের ভালোবাসা এমন এক জটিলতায় ঢুকে পড়ল যেখানে রয়েছে বিজ্ঞান, প্রেম আর রহস্যের সমন্বয়। কিন্তু একদিন, ‘চা-রকেট’ দোকানে এল অদ্ভুত এক গ্রাহক। ভেসে আসে সে, আর গলায় অদ্ভুত সুর—মানুষের মতো, কিন্তু যেন এলিয়েন। সে বলল, “আমি মঙ্গলীয় গবেষক।” কিন্তু চন্দন আর ঝুমুর বুঝতে পারল, সে আসলে এলিয়েন স্পাই। তার আসল উদ্দেশ্য—মঙ্গলবাসীদের আচরণ আর আবেগ বুঝে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। ঝুমুর বলল, “আমাদের ভালোবাসার পথ এখন অনেক বিপজ্জনক।” চন্দন মাথা নেড়ে বলল, “আমার GraviTea আর তোমার সাহসই আমাদের এই যুদ্ধে জিতাবে।” তাদের ছোট্ট প্রেমের গল্প এখন এক বৃহৎ ষড়যন্ত্রের মোড়কে আবৃত হয়ে গেল।

ভাসমান ষড়যন্ত্র

মঙ্গল গ্রহের লালাভ আকাশের নিচে ‘জিরো-জী টাউন’ এখন একদম ভিন্ন রূপে সজীব হয়ে উঠেছিল। চন্দনের ‘চা-রকেট’ দোকানটা ভিড় ঠাসা, কারণ সবার মনেই একটাই কথা—অদ্ভুত এলিয়েন স্পাইয়ের আগমন এবং তার রহস্যময় উদ্দেশ্য। সেই অদ্ভুত প্রাণী, যার নাম কেউ জানত না, তার গলার সুর মানুষদের মতো হলেও সে আসলেই ছিল এক বিচিত্র এলিয়েন। সে ‘মঙ্গলীয় গবেষক’ বলে নিজেকে পরিচয় দিলেও, তার প্রকৃত কাজ ছিল টাউনবাসীদের আবেগ, আচরণ আর চিন্তা পড়ে ফেলা। জিরো-জী প্রশাসন তার প্রতি সন্দেহ করেছিল, কিন্তু সে ছিল খুব চালাক। একদিকে যেমন সে ‘গবেষণা’ বলে নানা তথ্য সংগ্রহ করত, অন্যদিকে সে টাউনবাসীর মধ্যেও ভেসে বেড়াতো এক অদ্ভুত আতঙ্ক। চন্দন আর ঝুমুরের ভালোবাসার সম্পর্ক এখন শুধু ব্যক্তিগত নয়, পুরো ‘জিরো-জী টাউন’এর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ছোট্ট প্রেমের জাল ছড়িয়ে পড়ছিল ষড়যন্ত্রের এক বিশাল নেটওয়ার্কে। ঝুমুর বলল, “আমরা যেন একটা বিশাল মিশনে ঢুকেছি—যেখানে প্রেম, বিজ্ঞান আর গুপ্তচরবৃত্তি একসঙ্গে লড়ছে।” চন্দন তার নতুন সংস্করণের GraviTea নিয়ে কাজ করছিল, যা শুধু ভালোবাসাই নয়, মানুষের শরীরের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাও বাড়াতো। কিন্তু এলিয়েন স্পাইয়ের উপস্থিতি তাকে চিন্তায় ফেলেছিল—কী করে সে এই ম্যাজিককে রক্ষা করবে? তাদের ছোট্ট ভালোবাসার গল্প এখন এক মহাকাব্যের রূপ নিচ্ছিল—যেখানে চা, প্রেম আর রহস্যের মিশেল নতুন অধ্যায় লিখছিল। প্রতিদিন নতুন নতুন পরিকল্পনা, সিক্রেট মিটিং, আর গুপ্ত বার্তা বিনিময়ের মাঝে ঝুমুর আর চন্দনের টানাপোড়েন বাড়ছিল। একদিন, প্রশাসনের হেডকোয়ার্টার থেকে একটি জরুরি মেসেজ এলো—‘সন্দেহভাজন এলিয়েন স্পাইকে আটকানোর নির্দেশ’। চন্দন আর ঝুমুরের চোখে এক অদ্ভুত দৃষ্টি ফুটে উঠল—যদিও প্রেম বাঁধা পড়েছে, কিন্তু লড়াই এখন শুরু হয়েছে। তারা দুজন একসঙ্গে ভেসে উঠল, নিজেদের মধ্যকার ভালোবাসার শক্তি বুঝে—আর সেই শক্তি দিয়ে তারা মঙ্গলের এই ষড়যন্ত্র ভাঙার জন্য প্রস্তুত।

 “প্রেমের কণা প্লাজমা”

মঙ্গল গ্রহের ‘জিরো-জী টাউন’-এর আকাশ আজ একটু বেশিই লালাভ রঙে সেজেছে। ‘চা-রকেট’ দোকানের ভিতরে চন্দন আর ঝুমুর নতুন একটি আবিষ্কারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন—একটি বিশেষ GraviTea, যা তাদের ভালোবাসার শক্তিকে আরও বেশি বাড়িয়ে তুলবে। চন্দন মাটির গভীর থেকে সংগৃহীত এক রহস্যময় কণা মিশিয়েছিলেন তাদের চায়ের মিশ্রণে, যা শুধু শরীরের তাপমাত্রা নয়, আবেগের তাপও বাড়িয়ে দেয়।

ঝুমুর উৎসাহে বলল, “এই প্রেমের কণা কি সত্যিই আমাদের ভালোবাসাকে অটুট করতে পারবে?”

চন্দন উত্তর দিল, “ভালোবাসা যেমন মহাকাশের নক্ষত্রের মতো অসীম, ঠিক তেমনি এই কণা আমাদের আবেগের গহীনতাকে ছুঁয়ে যাবে।”

তারা একসঙ্গে চা সিপ করলেন, আর ঝুমুরের চোখে জ্বলে উঠল এক আলোকিত ঝিলিক—যেমন মহাকাশের দূর অজানা তারাগুলোর আলো।

কিন্তু সেই সময়ই ‘চা-রকেট’ দোকানে এসে হাজির হল এক অচেনা মুখ। সে এলিয়েন স্পাই, যিনি মঙ্গলবাসীদের আবেগ ও আচরণ নিয়ে গোপন গবেষণা চালাচ্ছিলেন। সে চন্দনের ‘প্রেমের কণা’ এবং ‘GraviTea Fusion’ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল।

স্পাইটি চন্দনের চায়ের কাপ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করল, যা ছিল আবেগ নিয়ন্ত্রণের একটি গোপন অস্ত্র। ঝুমুর এই ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে সতর্ক করল, “আমাদের ভালোবাসার যাত্রা এখন এক বড়ো বিপদে রয়েছে।”

তারা মিলে ‘GraviTea Fusion’ এর নতুন সংস্করণ তৈরি করল, যা সাময়িকভাবে স্থানীয় মাধ্যাকর্ষণ বাড়িয়ে ভালোবাসার দূরত্ব কমাতে পারবে। এক রাতে তারা একসঙ্গে এই নতুন চা সিপ করলেন, আর মুহূর্তের মধ্যেই স্থানীয় মাধ্যাকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়ে তাদের ভাসমান শরীরগুলো ধীরে ধীরে একে অপরের কাছে এল।

ঝুমুর বলল, “এই স্পর্শই হলো আমাদের ভালোবাসার সত্যিকারের স্বাদ।”

স্পাই বুঝতে পারল, ভালোবাসার শক্তি তার ষড়যন্ত্রকে ভেঙে দিতে পারে না। চন্দন আর ঝুমুরের ভালোবাসা ‘জিরো-জী টাউন’-এর হৃদয়ে আলো জ্বালিয়ে দিলো।

 “স্পাই ভেসে যাক”

মঙ্গল গ্রহের লালাভ আকাশের নিচে, ‘জিরো-জী টাউন’-এর ভাসমান শহর আজ কিছুটা বেশি চিন্তিত ও উত্তেজনাপূর্ণ। চন্দন আর ঝুমুরের ছোট্ট ভালোবাসার জগতে হঠাৎ করে এসেছিল এক অদ্ভুত আতঙ্ক—একজন এলিয়েন স্পাই, যিনি তাদের প্রেমের শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছিল।

স্পাইটি, যার প্রকৃত পরিচয় গোপন, একদিন ‘চা-রকেট’ দোকানে এসে একটি প্লাজমা চুরি করে নেয়—একটি জৈবিক উপাদান যা GraviTea-র বিশেষ মাধ্যাকর্ষণ বৃদ্ধিকারী শক্তি ধারণ করে। সে প্লাজমা দিয়ে মঙ্গলবাসীর আবেগ নিয়ন্ত্রণের একটি ভয়ানক পরিকল্পনা সাজাচ্ছিল।

চন্দন হঠাৎ অনুভব করল তার মনের মধ্যে অদ্ভুত উত্তেজনা। ঝুমুরের সঙ্গে তার সম্পর্ক যেন দুর্বল হয়ে আসছে। ঝুমুরও অনুভব করল এই পরিবর্তন, এবং ভয়ে ভাবল, “আমাদের ভালোবাসা কি এই ষড়যন্ত্রের সামনে স্থির থাকতে পারবে?”

তারা ‘চা-রকেট’-এ বসে এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করল। চন্দন বলল, “আমাদের একত্রে থাকার বিকল্প নেই, এই শক্তিকে আমরা জয় করব।”

ঝুমুর সম্মত হয়ে বলল, “আমাদের তৈরি ‘GraviTea Fusion’ সেই শক্তি যা আমাদের আবার একত্রিত করবে।”

তারা মিলে নতুন এক মিশ্রণ তৈরি করল যা সাময়িকভাবে মাধ্যাকর্ষণ বাড়িয়ে তাদের দূরত্ব কমাবে। এক রাতে তারা একসঙ্গে মিশ্রণটি সেবন করল। মাধ্যাকর্ষণের বৃদ্ধির কারণে তারা ধীরে ধীরে একে অপরের কাছে এসে হাত ধরল—প্রথম স্পর্শ।

ঝুমুর বলল, “চন্দন, ভালোবাসা মানে শুধু স্পর্শ নয়, এটা শক্তি।”

চন্দন হেসে বলল, “আর সেই শক্তি আমাদের সব বাধা পেরিয়ে যাবে।”

স্পাইয়ের ষড়যন্ত্র ভেঙে পড়ল, আর তাদের ভালোবাসা ‘জিরো-জী টাউন’-এর আশার আলো হয়ে উঠল।

 “প্রেম মানে গ্র্যাভিটি”

মঙ্গল গ্রহের লাল মাটির বুকে ভাসমান ‘জিরো-জী টাউন’ যেন এক স্বপ্নময় ক্যানভাস, যেখানে সবকিছুই ভাসে—মানুষ, বাড়ি, গাড়ি, আর ভালোবাসাও। কিন্তু ভালোবাসার এই ভাসমান গল্পে এসে হাজির হলো এক নতুন মোড়, যেখানে প্রেম আর মাধ্যাকর্ষণ একে অপরের সঙ্গে মিশে যায় এক অবিশ্বাস্য রূপে।

চন্দন আর ঝুমুর বুঝতে পারলেন, ভালোবাসা শুধু হৃদয়ের টান নয়, এটি স্পেসের টানও—গ্র্যাভিটি। তারা মিলে তৈরি করলেন নতুন এক GraviTea, যার নাম দিলেন ‘GraviTea Fusion’। এটি এমন এক বিশেষ চা, যা সাময়িক সময়ের জন্য স্থানীয় মাধ্যাকর্ষণ বৃদ্ধি করতে পারে, ফলে দুজনের ভাসমান শরীরগুলো একে অপরের কাছে চলে আসে।

তাদের ‘চা-রকেট’ দোকানে সবাই আগ্রহে অপেক্ষা করছিল নতুন চায়ের স্বাদ নিতে। চন্দন বললেন, “এই চায়ের মধ্যে আছে মঙ্গল গ্রহের প্রাকৃতিক খনিজ আর আমাদের ভালোবাসার শক্তি। এটি আমাদের দূরত্বকে মুছে দেয়।”

ঝুমুর চোখে চোখ রেখে বললেন, “এখানে প্রেম মানেই শুধু অনুভব নয়, এটা এক শক্তি, যা সব বাঁধা পেরিয়ে যায়।”

তারা একে অপরের হাতে হাত রেখে ‘GraviTea Fusion’ সিপ করল। মুহূর্তেই তাদের ভাসমান দেহ ধীরগতিতে একে অপরের দিকে এগিয়ে এল। প্রথমবারের মতো তারা স্পর্শ করল—একটি মাধ্যাকর্ষণহীন জগতে স্পর্শের সেই আনন্দ।

মঙ্গলবাসীরা খুশিতে ভাসতে থাকল। আর স্পাইটি, যিনি তাদের ভালোবাসার শক্তিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছিল, আজ বুঝতে পারল যে ভালোবাসার শক্তি এত শক্তিশালী যে তা তার ষড়যন্ত্রকে অবলীলায় ভেদ করতে পারবে না।

তাদের ভালোবাসার গল্প মঙ্গল গ্রহের আকাশে চিরকাল গুণগুণ করবে—যেখানে স্পর্শ ও গ্র্যাভিটির এক অপূর্ব মিলন ঘটেছে।

 “জিরো-জী সুন্দরী”

মঙ্গল গ্রহের ‘জিরো-জী টাউন’ আজ যেন এক অন্যরকম আলোয় ঝলমল করছে। চন্দন আর ঝুমুরের ভালোবাসা শুধু একটি গল্প নয়, তা হয়ে উঠেছে গোটা টাউনের প্রাণ। তাদের তৈরি ‘GraviTea Fusion’ সাময়িক হলেও এমন মাধ্যাকর্ষণ সৃষ্টি করে, যা তাদের একে অপরের এত কাছে নিয়ে আসে, যেভাবে পৃথিবীতে কেউ কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি।

চন্দনের ছোট্ট ‘চা-রকেট’ দোকান আজ শুধু চায়ের দোকান নয়; এটি এক ভালোবাসার কেন্দ্র, যেখানে প্রতিটি ভাসমান কাপের মধ্যে জেগে ওঠে প্রেমের এক নতুন অধ্যায়। ঝুমুরের চোখে এক নতুন রোদের ঝিলিক, আর চন্দনের হাসিতে সেই গভীর শৈশবের মাধুর্য।

তাদের ভালোবাসার কাহিনী স্পেস স্টেশনের কঠোর নিয়ম আর বায়ো-নিয়মের মধ্যেও জেগে উঠেছে, শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে, ভালোবাসা মানে শুধু স্পর্শ নয়, ভালোবাসা মানে টান, মানে ‘গ্র্যাভিটি’।

ঝুমুর একদিন ‘জিরো-জী সুন্দরী’ নামে এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করল, যেখানে সে বর্ণনা করল কীভাবে মাধ্যাকর্ষণহীন জীবনে ভালোবাসা টিকে থাকে, কীভাবে চন্দনের ‘GraviTea’ তাদের আবেগের ফ্রেমে এক নতুন রঙ জুড়ে দেয়।

“ভালোবাসা যদি অনুভব হয় না, তবে প্রেমের মানে কী?” ঝুমুর প্রশ্ন তুলল। আর চন্দন জানাল, “যে ভালোবাসা স্পর্শ ছাড়াই টানে, সেই ভালোবাসাই সবচেয়ে প্রকৃত।”

সেই ভালোবাসাই আজ ‘জিরো-জী টাউন’-কে একত্রিত করেছে, যেখানে সবাই ভাসমান জীবন কাটায়, কিন্তু হৃদয়গুলো মাটির মতো দৃঢ়।

একত্রে তারা জানাল, “মাধ্যাকর্ষণ যতই কম হোক না কেন, ভালোবাসার টান চিরকালই থাকবে।”

মঙ্গল গ্রহের আকাশের নিচে আজ ঝুমুর আর চন্দনের ভালোবাসা শিহরণ জাগায়, নতুন প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা।

WhatsApp-Image-2025-07-01-at-6.13.45-PM.jpeg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *