Bangla - রহস্য গল্প

ফিসফিসে কবরস্থান

Spread the love

ঋতা মিত্র


পর্ব ১: কাঁচের নাম

বিকেলের আলো যেদিন জঙ্গলের কিনারায় ঢালু হয়ে পড়ে, সেদিনই নীলার ক্যামেরা সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকে; যেন আলোটা সরে যাওয়ার আগেই তা ধরে ফেলতে চায়। শহরের উত্তর-পশ্চিমে, পুরনো রেললাইনের পাশে, গলানো টার আর ঘাসের গন্ধমেশানো একটা ফাঁকা জমিতে দাঁড়িয়ে ছিল কবরস্থানটা—চুনসুরকির মলিন রঙ, বুজে থাকা লোহার ফটক, আর তার উপর দিয়ে বুনো লতাগুল্মের চক্রাকার আঁচড়। জায়গার নাম বোর্ডে নেই, মানচিত্রে নেই; তবু গুগল ম্যাপে জুম করলে একটা অচেনা ছোপ, যেন পুরনো দাগের মতো, চোখে পড়ে।

নীলা প্রথমে ভেবেছিল বোধহয় এটা একটা ব্যক্তিগত জমি—পুরনো পরিবারের কবরখানা—যেখানে কেউ আসে না, কেবল সময় এসে পড়ে থাকে। কিন্তু লোহার ফটকটা যখন এক চাপে কঁকিয়ে-ওঠা শব্দ তুলল, ও বুঝল জায়গাটা সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত নয়—কেউ না কেউ কখনো না কখনো এই দরজা খোলে। প্রবেশ করতেই কাঁধে নামল থমথমে ঠান্ডা, বাতাসে গন্ধ যেন লেপটে থাকা পুরনো পোশাকের মতো। পাথরের ফলকগুলোতে মস, ফাটল, আর কোথাও কোথাও সাদা চকচকে দাগ—যেন কোন তীক্ষ্ণ জিনিস দিয়ে আঁচড় কাটা হয়েছে।

“ওয়াইড আর টু-স্টপ ডাউন,” নীলা ফিসফিস করে নিজেকেই বলে। সে ২৪মিমি লেন্স লাগাল, হাঁটু গেড়ে বসে ফ্রেম ধরল—একসঙ্গে তিনটা ফলক, তাদের পিছনে বাঁশবাগান, আর তারও পিছনে সোনালি-সবুজ সাঁঝ। শাটার চাপল। ক্লিক। আরেকটা অ্যাঙ্গেল। ক্লিক। কবরফলকের ফাঁকে ফাঁকে শুকনো পাতার সড়সড় শব্দ, আকাশে একদল পাখি বৃত্ত এঁকে সরে গেল। যতটা দরকার, ততটা ছবিই তোলা হলো; এই সিরিজটা নীলার চলতি প্রজেক্ট ‘শহরের নীরবতা’র জন্য—মানুষ নেই, তবু মানুষের উপস্থিতির ভার আছে—এরকম স্থান-চিত্র। সে ভাবল, এই কবরস্থানটা বইটির প্রথম অধ্যায়ের কভার হতে পারে।

বাড়ি ফিরে দাঁতের ব্রাশটা যেমন একটা শৃঙ্খলা, তেমনিই নীলার ল্যাপটপ অন করা, কার্ড স্লট করা, লাইটরুমে ইমপোর্ট—সবই অভ্যেস। স্ক্রিনে বড় বড় থাম্বনেইল ভেসে উঠল: পাতলা কুয়াশার ভিতর পাথরের দাগ, ছায়ায় ঢাকা বুনো ঘাস, এক ফলকের কোনায় খসে পড়া সাদা চক। প্রথম ছবিটা খুলতেই নীলা থামল। কিছু একটা বেমানান। ফন্ট? না, ফন্ট নয়—এ তো পাথরে খোদাই করা নাম! আগে নজরে পড়েনি, কুয়াশা আর মসের আড়ালে ছিল। সে জুম করল। অক্ষরগুলো স্পষ্ট হলো—বাংলা বড় হরফে খোদাই করা এক নাম। সে হিসহিস করে উচ্চারণ করল, যেন অজান্তে—”হেমন্ত রায়”। নামটার নীচে দুটি সংখ্যা: ১৯৯৫–২০২৪। নীলা কাঁধ ঝাঁকাল। কবর তো, বছর লেখা থাকবেই।

পরের ছবিতে গেল। দ্বিতীয় ফলক। নাম: “মোহনা বশিষ্ট”—তারিখের জায়গায় অদ্ভুতভাবে তিনটি ড্যাশ, তারপর “২০২৫”—আরও কাছে গিয়ে দেখে নীলা আঁতকে উঠল। বছর নয়, তারিখ। “২১ আগস্ট ২০২৫।” অস্বস্তিকর শিরশিরে এক অনুভূতি পায়ের পাতায় উঠতে লাগল। কবরফলকে ভবিষ্যতের তারিখ কেন থাকবে? কেউ কি আগে থেকে ফলক বানিয়ে রেখেছে? মাথা নাড়িয়ে নিজেকে স্থির করল—বোধহয় কারোর প্রি-নিড প্লট, বিদেশে প্রচলিত, এখানে বিরল হলেও অসম্ভব নয়। যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা আছে।

তৃতীয় ছবিতে গেল। ফটোর ফ্রেমে তিনটি ফলক পাশাপাশি। মাঝখানেরটায় আলো ঠিকঠাক পড়েছে, বামেরটা ছায়ায়। নীলা মাঝখানটা জুম করল—আর নিঃশ্বাস আটকাল। সেখানে লেখা: “নীলা দেবনাথ”—তার নিজের নাম, অক্ষরে অক্ষরে, কোনো বানানভুল নেই। নীচে খোদাই: “২১ আগস্ট ২০২৫।” আজ ১৪ আগস্ট। সাত দিন।

আঙুলে ঝিনঝিনে ঠান্ডা। কীভাবে—কেন—কে? নীলা স্ট্রিপ ব্যাক করল। মেটাডেটা চেক করল—ISO, শাটার, অ্যাপারচার, সব ঠিক। কোনো জালিয়াতি? RAW ফাইল খোলে। একই নাম, একই খোদাই। ছবি তোলে ঘাসের সোঁ সোঁ শব্দ, বাতাসের ঘনত্ব—সবই মনে পড়ে, কিন্তু এই নাম—এটা তো সেখানে দেখা যায়নি! সে তো দেখলে আঁতকে উঠত, দৌড়ে বেরিয়ে আসত। তাহলে ক্যামেরা কি মিথ্যে বলছে, নাকি স্মৃতিই?

মাউস থেকে হাত সরিয়ে নীলা চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল। জানলার বাইরে আকাশে আলো ফিকে, মাথার ভিতরে হালকা বমি-বমি ভাব। রান্নাঘরে গিয়ে জল খেল, ফিরে এসে আবার স্ক্রিনের সামনে গান্ধারীর মতো বসে রইল, অন্ধ না হয়েও অন্ধ। এবার সে ছবি একেক করে স্ক্যান করল—মোহনা বশিষ্ট, হেমন্ত রায়, কৈলাসী মিত্র, বিনায়ক সেন—all living? কে জানে। কিন্তু দু-একটা নাম অস্বস্তিকরভাবে চেনা লাগছে—ফ্রেন্ডলিস্টে আছে, শহরের রিপোর্টেজে দেখা নাম। একটার উপর কার্সর নিয়ে থামতেই বুকের ভিতর ছ্যাঁৎ করে উঠল—“সাবিদা খাতুন”—তিন মাস আগে যার সাথে নীলা এক রাস্তাঘাটের ফটো-ওয়ার্কশপে পরিচিত হয়েছিল। তারিখ? আবারও ২১ আগস্ট। একই দিন। একই ডেডলাইন।

“ডেডলাইন”—শব্দটার হাস্যকর দ্ব্যর্থতা নীলার মাথায় খট করে বাজল। একটা কিশোরী-হাসি শোনার মতো লাগল দূর থেকে—না, সেটা বোধহয় উপরের ফ্ল্যাটে টিভির শব্দ। নীলা ক্যামেরার কার্ডটা বের করে আবার ঢুকাল, RAW ফাইল অন্য সফটওয়্যারে খুলল, এমনকি ফোনে ট্রান্সফার করে আলাদা করে দেখল। কোনো পার্থক্য নেই। নামগুলো আছে। পাথরে খোদাই করা, নির্দয়, ঠান্ডা, স্পষ্ট।

সেই রাতে ৩টা ৩৩ মিনিটে নীলার ঘুম ভাঙল। ঠিক কাঁধের কাছে শ্বাস লাগার মতো এক ধরনের শব্দে। গলার কাছে বরফের জলের মতো এক রেখা নেমে গেল। সে ঘুম-চোখে মোবাইল জ্বালাল—সময়টা দেখে হতভম্ব: ৩:৩৩। বাইরে বাতাস নেই, তবু বাঁশপাতা কেঁপে উঠছে। সেই সঙ্গে খুব মৃদু, খুব নিচু একটা ফিসফিস, যেন দেয়ালের ভেতর থেকে কেউ কানে কথা বলছে—শব্দ নয়, শব্দের ধারণা, ভাষাহীন। নীলা বিছানায় সোজা হয়ে বসল। কানে হাত দিল। শব্দ থামল। হাত সরাতেই আবার ফিরে এল—শু… শু…

পরদিন সকালে নীলা সিদ্ধান্ত নিল, যুক্তির দড়ি ছেড়ে ভৌতিক সন্দেহকে খুশি করা যাবে না। সে বরং করবে—ক্রস-চেক। সাবিদা খাতুনকে ফোন করবে, অর্ককে জিজ্ঞেস করবে প্রিন্টিং প্রোফাইলের কোনো গ্লিচে এধরনের “ইমপ্রিন্টিং” হতে পারে কি না। সে ফোনটা তুলল। সাবিদার নম্বর টাচ করতেই থেমে গেল—স্ক্রিনে নিজের মুখ, কাঁচে প্রতিফলিত, চোখের তলার কালো হালকা রেখা। প্রতিফলনের পিছনে দেয়ালে টাঙানো নীলার পুরনো কাজের একটা ফ্রেম—একটি অচেনা গলির কালো-সাদা ছবি। ছবির ডান প্রান্তে ছোট্ট একটা সাইনবোর্ড—জুম করলে কি কিছু পড়া যাবে? অস্বাভাবিক এক টান তাকে আবার ক্যামেরার দিকে টেনে নিল। সে ফ্রেমটা প্রতিস্থাপন করে, দেয়ালের দিকে ক্যামেরা তাকাল—ক্লিক। ছবিটা স্ক্রিনে খুললেই সে দেখল—সাইনবোর্ডে, যেখানে আগে অস্পষ্ট কালোচে দাগ ছাড়া আর কিছুই ছিল না, এখন স্পষ্ট অক্ষরে একটি নাম লেখা—“রেশমি দে”—আর তার নীচে: “২১ আগস্ট ২০২৫।”

বাড়ির দেয়ালও কি মেতে উঠেছে এই খেলার ভিতর? নাকি “খেলা” কথাটাই এখানে ভুল? কে বা কী এই নামগুলোকে অবাধে ছড়িয়ে দিচ্ছে—পাথর, কাগজ, কাঁচ, আর পিক্সেলের ভেতর?

দুপুর গড়িয়ে বিকেল, নীলা সাবিদাকে ফোন করল অবশেষে। দু’বার রিং যাওয়ার পর কল কেটে গেল। সে একটা টেক্সট করল—“Hey, coffee?” কোনো উত্তর না। তারপর অর্ককে মেসেজ দিল—“Need to check a weird RAW glitch. φ symbol—ring a bell?” অর্ক টুকটাক কাজের লোক, রুক্ষ, কিন্তু ছবির টেকনিক্যাল স্পন্দন বোঝে। কয়েক মিনিট পরেই রিপ্লাই—“আজ নই। ঘাটে আছি। কাল?”

ঘাট। শব্দটা খসখসে লাগল। কবরস্থানের নীলাপাথরের রুক্ষতা যেন আঙুল ঘষে দিল। নীলা জানল, কথা বলে কিছু না হলে তাকে আবার সেখানে ফিরতেই হবে। যে জায়গা থেকে এই সব শুরু হয়েছে, সেই জায়গাই হয়তো শেষ উত্তর লুকোয়—অথবা আরও বড় প্রশ্ন।

বিকেলের শেষে যখন আলো সবুজ থেকে ধূসর এবং তারপর সোনালি-খয়েরিতে ঢলে পড়ছিল, নীলা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। কাল ভোরে সে আবার যাবে। হয়তো লোহার ফটকের ওদিকে ইটের নীচে, বাঁশঝাড়ের তলায়, অথবা কড়া নাড়া দরজার পিছনে কেউ আছে—একজন মানুষ, একজন কেয়ারটেকার, একজন সাক্ষী—যে বলবে, “এখানে আমরা নাম খোদাই করি তখনই, যখন কেউ ডেকে নেয়।”

সেই রাতে আবার ৩:৩৩-এ ঘুম ভাঙল। এবার শব্দটা একটু স্পষ্ট: খুব কাছে এসে কেউ যেন নাম ধরে ডাকল—“নী…লা…”। সে উঠে জানলা টেনে দিল। অন্ধকারে শহর একটা উল্টো রাখা কাঁচের বাটি—ভেতরে নিস্তব্ধতা। ফিরে এসে বালিশে মাথা রাখতেই মনে হলো, বালিশের কভারের কাপড়ে নখ দিয়ে কেউ হালকা একটা রেখা টেনেছে। আলো জ্বেলে দেখল—না, কিছু নেই। কেবল মনে হচ্ছে। তবু আঙুলে অদ্ভুত কাঁপুনি। সে বালিশটা উল্টে দিল। চোখ বন্ধ করল। ঠিক সেই মুহূর্তে, পাশের টেবিলে রাখা মোবাইলটা একবার টুং করে বেজে উঠল—একটি নতুন ইমেল। সাবজেক্ট লাইনে তিনটি ড্যাশের পর কেবল একটি তারিখ: ২১/০৮/২০২৫। প্রেরকের নামহীন, ঠিকানায় অসংলগ্ন অক্ষর। ইমেলটা খুলতেই একখানা মাত্র ছবি—আজকের দুপুরে নীলার ঘরের দেয়ালের শটে যে নামটা উঠেছিল, সেটাই—আর তার পাশে একটি খালি জায়গা, টেক্সট-টুলের কার্সর জ্বলছে, যেন অপেক্ষা করছে পরের নামটি বসানোর।

নীলা বুঝল, সময়টা তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর সাত দিন বলতে সাতটি ভোর, সাতটি ৩:৩৩—প্রতিটি রাত যেন একটি পাতলা কাচ, যার ওপারে বসে আছে কেউ, খুব ধীরে, তার নাম ডেকে। সে জানে, সকাল হলে কবরস্থানে ফিরতেই হবে। কারণ ভয়কে ভাষা না দিলে, ভয় কথাই হয়ে ওঠে—আর একবার কথা বলতে শুরু করলে, তাকে চুপ করানো খুব কঠিন।

পর্ব ২: সাত দিনের চিহ্ন

ভোরবেলা কুয়াশা শহরের এই প্রান্তে একটু দেরি করে সরে। নীলা যখন কবরস্থানের গলিতে ঢুকল, তখন বাতাসে এখনও রাতের ঠান্ডা লেগে আছে, আর গাছের পাতায় অদ্ভুত এক স্যাঁতসেঁতে ঝিলিক। হাতে ক্যামেরা থাকলেও আজ ফ্রেম ধরার তাড়া নেই; আজ সে এসেছে চোখে দেখার জন্য, নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে যা ছবিতে দেখেছে, তা সত্যিই পাথরে খোদাই আছে কি না।

লোহার ফটকটা ঠেলে খুলতেই আগের সেই কঁকিয়ে ওঠা শব্দ এবারও উঠল—কিন্তু এবার সেটা যেন একটু ভেতর থেকে আসা দীর্ঘশ্বাসের মতো শোনাল। ভিতরে ঢুকেই বামদিকের তিনটে ফলক খুঁজে পেল—হেমন্ত রায়, মোহনা বশিষ্ট, আর… হ্যাঁ, মাঝেরটায় নিজের নাম।

সে হাঁটু গেড়ে বসে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখল অক্ষরগুলো—পাথরের ভেতরে ঢুকে থাকা আসল খোদাই, কোন রঙ করা নয়, কোন স্টিকার নয়। তারিখও ঠিক একই: ২১ আগস্ট ২০২৫। ঠান্ডা পাথরে হাত রেখে দাঁড়াতে গেল, কিন্তু চোখের কোণে একটা নড়াচড়া ধরা পড়ল। বাঁশঝাড়ের ফাঁকে দাঁড়িয়ে আছে কেউ—অন্ধকারে ঢাকা, শুধু সাদা শার্টের অংশ দেখা যাচ্ছে। নীলা তাকাতেই লোকটা পিছিয়ে গেল, বাঁশপাতার শব্দে মিলিয়ে গেল।

নীলা চিৎকার করে ডাকতে চাইল, কিন্তু গলা শুকনো। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে দেখল, মাটির উপর ভাঙা ইট, শুকনো পাতা—কোনও পদচিহ্ন নেই।

বাড়ি ফিরে সে আর ছবি খুলল না। বরং ফোনটা হাতে নিয়ে সাবিদা খাতুনকে আবার কল করল। আজও ধরল না। দুপুরে এক সহকর্মীর স্টোরি দেখে চমকে উঠল—শহরের উত্তর দিকে এক গলির মোড়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় এক তরুণীর মৃত্যু, ছবিতে ভিড়ের মধ্যে সাবিদার ফটো স্পষ্ট। তারিখ? আজ। অর্থাৎ ২১ আগস্টের আগে!

নীলার ভেতরে কিছু ভেঙে গেল। তাহলে তারিখটা কি মৃত্যুর দিন নয়, বরং সর্বোচ্চ সময়সীমা—যার মধ্যে মৃত্যুই শেষ পরিণতি? আর যদি তাই হয়, তার নিজের জন্য সময় বাকি মাত্র ছয় দিন।

সন্ধ্যার পর অর্ক ফোন করল—
—“RAW ফাইলের φ চিহ্নটা ইন্টারেস্টিং, জানো? পুরনো ডার্করুম টেকনিক থেকে এসেছে। আমি কাল তোমার ফাইল দেখে দেব।”
নীলা দ্বিধা করল। “কাল” শব্দটা এখন আর নিরাপদ শোনায় না। সে বলল—“আজই দেখা হবে।”
অর্ক হাসল—“আজ রাতে ঘাটে শুট আছে। ভোরে ফিরব।”

ঘাট। সেই শব্দটা আবারও খসখসে শোনাল। নীলা মনে মনে ঠিক করল, অর্কের কাজ শেষ হওয়ার আগেই তাকে গিয়ে খুঁজবে। কিন্তু রাতে ঘুম ভাঙল ৩:৩৩-এ, এবং এবার ফিসফিসের সঙ্গে শোনা গেল পায়ের পাতায় পাতার ওপর হাঁটার টুকটুক শব্দ—তার নিজের ঘরের ভেতরেই, বেডরুমের কোণের দিকে।

সে আলো জ্বালাতেই কিছু নেই—শুধু দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার পুরনো ট্রাইপড, কিন্তু তাতে ক্যামেরা নেই। ক্যামেরাটা তো লিভিং রুমে ছিল! তবু সে কাছে গিয়ে ট্রাইপডটা গুটিয়ে রাখল, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন ঠিক এইমাত্র কেউ ছবি তুলেছে।

সকালে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় বড় হেডলাইন: “ফটোগ্রাফার অর্ক দত্তর অস্বাভাবিক মৃত্যু: গঙ্গার ঘাটে মৃতদেহ উদ্ধার।” ছবিতে পুলিশ, ব্যাকগ্রাউন্ডে কুয়াশা, আর একপাশে ফাঁকা কবরফলকের মতোই ধূসর একটা পাথর।

নীলা কাগজের উপর হাত রেখে বুঝল, সাত দিনের সময়সীমা হয়তো তার জন্য শুরু হয়ে গেছে।

পর্ব ৩: মুছতে না-পারা অক্ষর

বিকেলের আলো সেদিন অদ্ভুত রঙের ছিল—না হলুদ, না কমলা—বরং একটা ধূসর-খয়েরি, যা নীলার চোখে লাগছিল যেন পুরনো নেগেটিভের ফিকে হয়ে যাওয়া কনট্রাস্ট। অর্কের মৃত্যুর খবর এখনও চারপাশে ঘুরছে, ফেসবুকে অচেনা মানুষ শোকবার্তা দিচ্ছে, আর নীলা একটার পর একটা মেসেজ ‘সিন’ করেও রিপ্লাই দিচ্ছে না।

সে ঠিক করল আজই কবরস্থানের সব ছবি ডিলিট করবে। ল্যাপটপ খুলে একে একে RAW ফাইলগুলো সিলেক্ট করল, কিবোর্ডে ডিলিট চাপল। ফোল্ডার ফাঁকা হয়ে গেল। কিন্তু যখন ডেস্কটপের অন্য একটি প্রজেক্ট ফোল্ডার খুলল—অবাক হয়ে দেখল, সেখানে সেই একই কবরস্থানের ছবি, একই ফ্রেম, একই নাম। যেন ফাইলগুলো নিজেরা মাইগ্রেট করে গেছে।

নীলা ফাইলগুলোর ডিটেইলসে ঢুকে মেটাডেটা চেক করল—তারিখ, সময় সব একই, কিন্তু ক্যামেরা মডেল বদলে গেছে। তার ক্যানন 5D-এর জায়গায় লেখা: “φ-Optic Mk.0”। এই নামে কোনো ক্যামেরা সে শোনেনি।

আরও অদ্ভুত হল, কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমন অ্যাঙ্গেল, যা সে কখনও নেয়নি—পাথরের ফলক একেবারে কাছ থেকে, তাতে অক্ষরের খোদাই এত স্পষ্ট যে মনে হচ্ছে কেউ আলোর ব্লেড দিয়ে কেটে নিয়েছে। এই ফ্রেমগুলোর কোণায় লালচে দাগ, যেন আঙুলের ছাপ লেগে আছে।

রাত ন’টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেল। অন্ধকারে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ খেয়াল করল, লিভিং রুমের দেয়ালে টাঙানো তার পুরনো ফটোগ্রাফগুলো যেন বদলে যাচ্ছে—একটা গলির ছবি, যা আগে খালি ছিল, এখন তার ডান পাশে দেখা যাচ্ছে নতুন এক কবরফলক। কাছে গিয়ে মোবাইলের টর্চ জ্বালাতেই নাম স্পষ্ট হল: “প্রণব চট্টোপাধ্যায়”—এটা তার এক ক্লায়েন্ট, যে কালই তাকে ফোন করে ফটোশুট বুক করেছিল। তারিখ? আগের মতোই—২১ আগস্ট ২০২৫।

নীলা আতঙ্কে ছবি খুলে ফ্রেমটা দেয়াল থেকে নামিয়ে রাখল, পেছন দিকে উল্টে দিল। কিন্তু যখন ঘুরে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিল, তখন বুঝল—বাড়ির প্রতিটি কাঁচের জিনিসে, এমনকি জানলার শীশায়ও, একেকটা নাম হালকা কুয়াশার মতো ভেসে আছে। সে হাত দিয়ে মুছতে চাইল, কিন্তু অক্ষরগুলো মুছল না—বরং আরও গাঢ় হয়ে উঠল, যেন তার আঙুলের স্পর্শেই গভীরে খোদাই হয়ে যাচ্ছে।

মনে হল, দেয়াল, কাঁচ, ফ্রেম—সবই এক অদৃশ্য নথিতে পরিণত হচ্ছে, যেখানে নাম লেখা হলে আর মুছে ফেলা যায় না।

দরজায় হঠাৎ ধাক্কা এল। তিনবার। ধীরে, ভারী। নীলা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। ধাক্কা থেমে গেল, কিন্তু বাইরে থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে এল—ফিসফিসে, কিন্তু স্পষ্ট:
—“তোমার নাম বদলাও… নয়তো আমরা বদলে দেব।”

নীলার বুকের ভিতরে ঠান্ডা বরফ জমল। সে জানল, এই খেলায় হয়তো নাম মুছতে হলে অন্য একটা নাম বসাতে হবে। আর সেই নাম বেছে নেওয়ার ক্ষমতা এখন তার হাতে এসে গেছে—এক অভিশাপের মতো।

পর্ব ৪: রাত ৩:৩৩

সেদিন সন্ধ্যা থেকেই নীলা অনুভব করছিল, বাড়ির প্রতিটি কোণে যেন কেউ বসে আছে—দেখছে, অপেক্ষা করছে। মোবাইল সাইলেন্টে, ল্যাপটপ বন্ধ, পর্দা টানা। বাইরে হালকা বৃষ্টি পড়ছে, কাঁচে ছোট ছোট বিন্দু জমে যাচ্ছে। তবুও বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত গুঞ্জন যেন জমে আছে—যেন সময়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা শব্দের আগমন।

রাত গড়াল। বৃষ্টি থেমে গেল। নীলা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল—৩:২৯। তার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। বিছানা থেকে উঠে সে ক্যামেরা হাতে নিল—আজ সে প্রমাণ রাখবে, যা-ই হোক না কেন। লিভিং রুমের মাঝখানে ট্রাইপড বসিয়ে শাটার টাইমার চালু করল—প্রতি দশ সেকেন্ডে একটা ফ্রেম তুলবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

৩:৩৩।

শব্দটা এবার স্পষ্ট—একটা দীর্ঘ শ্বাসের মতো, সঙ্গে হালকা কাঁপা সুর, যেন কারও ঠোঁট কাঁচের গায়ে লেগে আছে। নীলা স্থির হয়ে শুনতে লাগল। এবার শুধু নিজের নাম নয়, আরও কিছু শোনা গেল—অচেনা একাধিক নাম, ধীরে ধীরে, কণ্ঠগুলো মিলেমিশে যাচ্ছে, যেন এক অদ্ভুত মন্ত্রপাঠ।

হঠাৎ জানালার বাইরে নড়াচড়া। কুয়াশার আড়ালে একটা ছায়ামূর্তি—উচ্চতা মানুষের মতো, কিন্তু চলাফেরা কেমন যেন ভাসমান। নীলা কাঁপা হাতে ক্যামেরা জুম করল, কিন্তু ভিউফাইন্ডারে শুধু সাদা দানা দানা হালকা। সে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল।

গলির বাতাস ভিজে, মাটিতে বৃষ্টির কাদা। ঠিক সামনে বাঁ দিকের মোড়ের কাছে সেই ছায়া থেমে দাঁড়াল, তারপর ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে নীলার দিকে তাকাল। অন্ধকারের ভেতরেও চোখ দুটো যেন চমকাচ্ছে—না, সেটা চোখ নয়, বরং প্রতিফলন—যেন পাথরের মসৃণ ফলকে আলো পড়েছে।

নীলা দৌড়ে কাছে যেতে চাইলে ছায়াটা বাঁশঝাড়ের দিকে সরে গেল, আর তার পায়ের নিচে নরম কাদা কেমন যেন ফাঁপা লাগল—মনে হল, পাতলা এক আস্তরণ ভেদ করে নিচে ফাঁপা ঘর আছে। সেখান থেকে আসছে সেই শ্বাসের শব্দ, ফিসফিসের প্রতিধ্বনি।

সে নিচু হয়ে কাদায় হাত দিল—আঙুলে ঠান্ডা পাথরের স্পর্শ, পাথরে খোদাই করা এক অক্ষর: φ। একই চিহ্ন যা সে ছবির মেটাডেটায় দেখেছিল। ঠিক তখনই বাঁশঝাড়ের দিক থেকে কারও কণ্ঠ—
—“সময় কমে আসছে… বেছে নাও…”

নীলা পিছনে তাকাল। কেউ নেই। কিন্তু যখন বাড়ি ফিরে ক্যামেরার ফুটেজ খুলল, প্রতিটি ফ্রেমে সে একা নয়—তার পিছনে অস্পষ্টভাবে দাঁড়িয়ে আছে কালো পোশাকের মানুষ, যার হাতে ধরা একটা ফলক, আর তাতে খালি জায়গা, যেখানে কার্সর ঝলসে উঠছে… অপেক্ষা করছে নতুন নামের জন্য।

পর্ব ৫: নিঃশব্দের রাখাল

ভোরের আলোয় কবরস্থানের লোহার ফটকটা আরও মলিন, যেন রাতের মধ্যে কিছু অদৃশ্য হাত সেটাকে ছুঁয়ে গেছে। নীলা আজ এসেছেন একটাই উদ্দেশ্য নিয়ে—যে কণ্ঠ, যে ছায়া, যে চিহ্ন তাকে গত কয়েক রাত ধরে ঘিরে রেখেছে, তার উৎস খুঁজে বের করা।

ফটক খুলতেই বাঁশপাতার ফাঁক দিয়ে দেখা গেল—মধ্যবয়সী এক মানুষ, কাঁধে মলিন শাল, চোখে ঘোলাটে সাদা দৃষ্টি। নীলা কাছে যেতেই লোকটা মাথা সামান্য নত করল, কিন্তু কোনো কথা বলল না। তার ডান হাতে লোহার পুরনো চাবির গোছা, আর বাম হাতে ধরা একটা টর্চলাইট, যার আলো নিস্তেজ।

—“আপনি কি এখানে কেয়ারটেকার?” নীলা জিজ্ঞেস করল।

লোকটা কিছু বলল না, শুধু হাত তুলে বাঁশঝাড়ের ভিতরের দিকটা দেখাল। তারপর ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল, নীলা তার পিছনে। শুকনো পাতার ওপর তাদের পায়ের শব্দ যেন কবরফলকের ভেতরে ঢুকে প্রতিধ্বনি হচ্ছে।

বাঁশঝাড় পেরিয়ে তারা পৌঁছল এক চওড়া খোলা জায়গায়, যেখানে কয়েকটা পুরনো ফলক আধা মাটির নিচে ডুবে আছে। লোকটা ইশারায় নীলাকে থামাল, তারপর একদম নিচু হয়ে একটা ফলকের মাটি সরাতে লাগল। অল্পক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট হল, পাথরে কোনো নাম নেই—শুধু সেই চিহ্ন: φ।

নীলা প্রশ্ন করল—“এই চিহ্নটা কেন? আমি এটা আমার ছবিতেও দেখেছি।”

লোকটা এবার তার দিকে তাকাল—চোখের সাদা অংশে ভোরের আলো পড়ল, কিন্তু তাতে কোনো উষ্ণতা নেই। ঠোঁট সামান্য নড়ল, কণ্ঠস্বর এত ধীরে যে প্রায় শোনা যায় না—
—“নাম মুছলে, ফিসফিস জাগে। নাম বসালে, ফিসফিস ঘুমায়।”

নীলা গলার ভেতর শুকনো কাঁটার মতো ভয় অনুভব করল। সে জিজ্ঞেস করল—“আপনি কি… আমার নাম মুছতে পারবেন?”

লোকটা মাথা নাড়ল—
—“আমি রাখাল, মালিক নই।”

নীলা বুঝল, সে যা খুঁজছে, সেটা এই লোকের কাছেও নেই—কিন্তু তার হাতে হয়তো দিকনির্দেশ আছে। লোকটা আবার হাঁটতে শুরু করল, এবার কবরস্থানের এক কোণে, যেখানে পাথরের গায়ে লতা ছড়িয়ে গেছে। সেখানে একটা ছোট্ট কাঠের দরজা, মাটির সমান উচ্চতায়।

—“এটা কী?” নীলা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।

লোকটা চাবির গোছা থেকে একটা পুরনো ব্রাসের চাবি বের করে তালায় ঢোকাল, তারপর ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে খুলল। দরজার ভিতর থেকে ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে এল, সঙ্গে এক তীব্র স্যাঁতসেঁতে গন্ধ—যেন বহু পুরনো কোনো কাগজ বা কাপড় পচে যাচ্ছে।

ভিতরে অন্ধকার, কিন্তু টর্চের ক্ষীণ আলোয় নীলা দেখতে পেল—পাথরের দেয়ালে সারি সারি ফলক বসানো, কিছুতে নাম, কিছুতে শুধু খালি জায়গা।

লোকটা ইশারায় বলল—
—“এখানেই তারা অপেক্ষা করে। সময়মতো, নতুন নাম বসানোর জন্য।”

নীলার বুক ধকধক করে উঠল। সে জানত, তার নামের জায়গাটা কোথাও এই দেয়ালেই আছে, আর তার পাশে শূন্যতা—যা হয়তো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পূর্ণ হবে।

লোকটা দরজা বন্ধ করে চাবি ঘুরিয়ে আবার শালের ভেতর লুকিয়ে ফেলল। তারপর ধীরে ধীরে পিছন ফিরে বাঁশঝাড়ের দিকে হাঁটতে লাগল, যেন এই আলাপ এখানেই শেষ।

নীলা দাঁড়িয়ে রইল, ঠান্ডা বাতাসে তার আঙুল জমে যাচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হল, বাঁশপাতার ফাঁক দিয়ে বাইরে থেকে কেউ তাকিয়ে আছে—অচেনা মুখ, কিন্তু চোখের চাহনিটা খুব চেনা… যেন আয়নায় নিজের প্রতিফলন।

পর্ব ৬: রাসায়নিক নীল

বাড়ি ফেরার পথে নীলা ঠিক করল—যা-ই ঘটুক না কেন, এবার বিষয়টাকে কেবল ভূত-প্রেতের মতো ভেবে থামা যাবে না। এখানে কোনো প্রযুক্তি, কোনো রাসায়নিক, কোনো মানুষের হাত আছে কিনা, সেটা খুঁজে বের করতেই হবে।

অর্কের মৃত্যুর পর তার স্টুডিও একেবারে সিল করা হয়নি—শুধু পুলিশ টেপ আর তালা। কিন্তু নীলা জানে, অর্ক সবসময় এক ব্যাকআপ চাবি লাইটবক্সের নীচের ড্রয়ারে রাখত। সন্ধ্যা নামার আগে সে সেখানে পৌঁছল। তালা খুলতেই স্টুডিওর ভেতরের গন্ধ নাকে এল—ডেভেলপার কেমিক্যাল, ফিক্সার, আর শুকনো ফটোগ্রাফিক কাগজের মিশ্রণ।

লাইটবক্সে ছড়িয়ে থাকা নেগেটিভগুলোর মধ্যে একটা চেনা ফ্রেম দেখতে পেল—তারই তোলা কবরস্থানের ছবি, কিন্তু এর রঙ পুরোপুরি নীলচে। সে জানে, এই টোনকে ডার্করুমে বলে সায়ানোটাইপ—এক পুরনো প্রিন্টিং টেকনিক, যেখানে লোহার লবণ আর আলো মিলে ছবিকে গভীর নীল রঙে পরিণত করে।

কিন্তু অর্ক তো সায়ানোটাইপ করত না। তাহলে এই ছবিগুলো এখানে কীভাবে? নীলা লুপে চোখ রেখে খেয়াল করল, প্রতিটি নীলচে প্রিন্টের কোণায় খোদাই করা আছে সেই চিহ্ন: φ—আর হালকা খয়েরি দাগ, যেন পুরনো রক্তের মতো।

ড্রয়ারের তলায় আরও কিছু পুরনো কাগজ পেল—হাতে লেখা নোট, তারিখগুলো ১৯৭৪ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত। কিছু শব্দ বারবার এসেছে: “শব্দ-চুরি”, “মৃত্যুর মানচিত্র”, “আকৌস্টিক মেমোরি”, আর “নেম-ইমপ্রিন্ট”। এক জায়গায় লেখা আছে—
“রাসায়নিক নীল শুধু ছবি ধরে রাখে না, মানুষের শেষ শব্দও আটকে রাখে। যখন নাম মুছে যায়, সেই শব্দ ফিরে আসে—ফিসফিসে।”

নীলা নোটগুলো ব্যাগে ভরে বেরিয়ে এল। মনে হচ্ছিল, অর্ক হয়তো কবরস্থানের সঙ্গে জড়িত কোনো পুরনো পরীক্ষার সূত্র পেয়েছিল। হয়তো সেই সূত্রই তার মৃত্যুর কারণ।

রাত নামার পর বাড়িতে এসে ল্যাপটপ খুলে সায়ানোটাইপ ফিল্টার দিয়ে নিজের কবরস্থানের ছবিগুলো প্রসেস করল। ফল দেখে বুকের রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল—নীলচে ছবিতে ফলকের অক্ষরগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, শুধু তাই নয়, কয়েকটায় অতিরিক্ত নাম ভেসে উঠেছে, যা কালো-সাদায় দেখা যায়নি।

তার নিজের নামের ফলকের ডান পাশে এবার আরেকটা নতুন নাম—“রিমা কর”—তারিখ একই: ২১ আগস্ট ২০২৫। রিমা তার শৈশবের বন্ধু, বহু বছর দেখা নেই, কিন্তু ফোন নম্বর এখনও কন্টাক্টে আছে।

হাত কাঁপতে কাঁপতে সে রিমাকে কল করল। দ্বিতীয় রিংয়ে রিমার গলা—খুশি, অবাক।
—“আর কত বছর পরে মনে পড়ল রে? কাল দুপুরে তোকে একটা ছবি পাঠাব, আমার নতুন বাড়ির।”

নীলা ফোন কেটে দিয়ে জানল, এই তারিখ আসার আগেই রিমার কাছে পৌঁছতে হবে। কারণ হয়তো এবার সময় শুধু তার জন্য নয়—আরও কারও জন্য গুনতে শুরু করেছে।

পর্ব ৭: ফিরে-না-আসার সেতু

গঙ্গার ধারটা এই সময়ে ফাঁকা থাকে—শুধু ভোরে প্রার্থনার সময় আর রাতে শেষ দাহের পর অল্প কিছু লোক যায়। নীলা ঠিক করল, রিমাকে খুঁজতে যাওয়ার আগে এই জায়গায় আসবে, কারণ অর্ক শেষবার এখানেই দেখা গিয়েছিল। যদি কোনো সূত্র থাকে, তা এই ঘাটেই।

নদীর জল কালো, তাতে ভাসছে ছেঁড়া ফুল, ঘি-তেল মেশানো আলো আর কাঠের টুকরো। সিঁড়ি দিয়ে নামতেই একটা কুকুর গা ঘেঁষে চলে গেল। ঘাটের এক প্রান্তে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা আছে ছোট্ট একটা নৌকা—চালক নেই, তবু নৌকাটা যেন স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে, অচল, যেন অপেক্ষা করছে।

নীলা কাছে গিয়ে দেখল, নৌকার তলায় কাদামাটির মধ্যে ডুবে আছে একটা পাথরের ফলক—ঠিক কবরস্থানের মতো, কিন্তু আকারে ছোট। সে হাতে তুলে আনতেই ভিজে মস ছুঁয়ে গেল আঙুলে। আলোতে নাম স্পষ্ট হল—“অর্ক দত্ত”—তারিখ আগের মতোই—২১ আগস্ট ২০২৫। কিন্তু অর্ক তো ইতিমধ্যেই মৃত!

হঠাৎ পেছন থেকে এক কণ্ঠস্বর—
—“মৃত্যুর পরও নাম থাকে। যতক্ষণ না নতুন নাম বসানো হয়, ততক্ষণ সে ফেরে না।”

নীলা ঘুরে দাঁড়াল। অন্ধকার ঘাটের সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে আছে সেই কেয়ারটেকার। আজ তার হাতে লণ্ঠন, আলো কাঁপছে।
—“মানে?” নীলা এগিয়ে গেল।
লোকটা ধীরে বলল—
—“নাম কেটে ফেলতে হয়। তার জায়গায় বসাতে হয় নতুন নাম। না হলে ফিসফিস থামে না।”

নীলা বুঝল, অর্ক মারা গেছে, কিন্তু তার নাম এখনও তালিকায় আছে—মানে, সেই ‘শূন্য জায়গা’ পূর্ণ হয়নি। আর পূর্ণ করার জন্যই হয়তো এখন তাকে টার্গেট করছে।

—“আমি যদি না বসাই নতুন নাম?”
লোকটার চোখে আলো পড়ল, কিন্তু তাতে কোনো আবেগ নেই—
—“তাহলে সময় এগিয়ে আসবে। সাত দিন নয়, হয়তো সাত ঘণ্টা।”

বুকের ভেতর ধাক্কা খেল নীলা। নিজের জীবন বাঁচাতে হলে তাকে আরেকটা নাম দিতে হবে—কাউকে, যে তখনই এই খেলায় ঢুকে পড়বে। রিমার কথা মনে পড়ল। শৈশবের বন্ধু, যার সঙ্গে সম্পর্ক এখন শুধু স্মৃতিতে। কিন্তু কাউকে বেছে নেওয়া মানে তাকে সরাসরি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া।

ঘাটের উপর দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া বইল। লণ্ঠনের আলোয় কেয়ারটেকারের মুখ যেন আরও বয়স্ক দেখাল। সে নীচু গলায় বলল—
—“ফিরে না আসার সেতু পেরোতে হলে, কাউকে পিছনে রেখে আসতে হয়।”

নীলা তাকিয়ে রইল নদীর দিকে। জলের কালো ঢেউয়ে মনে হল, এক-একটা নাম ডুবে যাচ্ছে, আবার ভেসে উঠছে অন্য কোনো অক্ষরে। তার হাত কেঁপে উঠল—হয়তো এটাই শেষ সুযোগ।

পর্ব ৮: দরজার পেছনের দরজা

সন্ধ্যার পর নীলা আবার কবরস্থানে ফিরল। আজ সে কাউকে জানায়নি—না রিমাকে, না অন্য কাউকে। আকাশে চাঁদ নেই, শুধু মেঘের ভেতর লুকোনো একরকম ধূসর আলো। বাঁশঝাড়ের গায়ে বাতাস লাগছে, পাতার শব্দে যেন ফিসফিস মিশে যাচ্ছে।

সে সরাসরি পৌঁছল সেই জায়গায়, যেখানে কেয়ারটেকার প্রথম দিন কাঠের ছোট দরজাটা দেখিয়েছিল। চারপাশ নিস্তব্ধ। ধীরে ধীরে হাঁটু গেড়ে বসে দরজার হাতল টেনে দেখল—তালা নেই। হয়তো লোকটা ইচ্ছে করেই খুলে রেখেছে।

দরজা ঠেলে দিতেই ভেতর থেকে ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে বাতাস ধাক্কা মারল। সিঁড়ি নেমে গেছে মাটির নিচে। ধাপগুলো ভিজে, কাদার গন্ধ তীব্র। প্রতিটা ধাপ নামার সঙ্গে সঙ্গে উপরের পৃথিবী যেন মিলিয়ে যাচ্ছে, বদলে নিচে জমে উঠছে অদ্ভুত এক গুঞ্জন—যেন শত শত মানুষের গলা মিশে কোনো নাম ধরে ডাকছে।

নীচে পৌঁছে নীলা দেখল, লম্বা করিডর, দুই পাশে পাথরের দেয়াল জুড়ে ফলক বসানো। কিছুতে খোদাই করা নাম, কিছু ফাঁকা, কিছু আবার অর্ধেক মুছে গেছে, কিন্তু মুছতে গিয়ে পাথরের ভেতর রক্তের মতো দাগ জমে গেছে। ফাঁকা ফলকের নিচে হালকা কুয়াশা জমে আছে, আর মাঝে মাঝে সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে ঠান্ডা নিশ্বাসের মতো হাওয়া।

একটা ফলকের সামনে গিয়ে নীলা থমকে দাঁড়াল—তাতে খোদাই করা আছে “রিমা কর”—তারিখ সেই একই। কিন্তু এটা দেখার কথা তো তার আগেই ছিল ছবিতে! মানে, নামটা ইতিমধ্যেই বসানো হয়ে গেছে, অথচ রিমা জানে না।

হঠাৎ করিডরের শেষ প্রান্তে আলো নড়ল। লণ্ঠন হাতে কেয়ারটেকার এগিয়ে আসছে। তার সঙ্গে একজন অচেনা কিশোর—চোখ দুটো স্থির, ঠোঁট বন্ধ, বয়স হয়তো পনেরো-ষোলো।

নীলা জিজ্ঞেস করল—“এটা কী হচ্ছে?”

কেয়ারটেকার ধীরে বলল—
—“দরজার পেছনে শুধু ফলক নেই, আছে নামের ঋণ। কেউ যখন নিজের জায়গা খালি করতে চায়, তাকে অন্য কারো নাম বসাতে হয়। নাম বসালে ফলক জ্বলে ওঠে, আর ফিসফিস থেমে যায়—তার জন্য।”

নীলা বুঝল, রিমার নাম এখানে বসানো মানে সে এই খেলার শিকার হয়ে গেছে, আর সেটা করেছে… কে?

কিশোরটা হঠাৎ এগিয়ে এসে তার হাতে কিছু দিল—একটা পুরনো ফটোগ্রাফ, কুয়াশায় ঢাকা কবরস্থানের, কিন্তু ফ্রেমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে… নীলা নিজেই। হাতে ক্যামেরা, আর পেছনে খালি ফলক, যেখানে কার্সর ঝলসাচ্ছে।

ফলকের শূন্য জায়গাটা যেন তার নামের অপেক্ষায়।

পর্ব ৯: বাছাইয়ের রাত

২১ আগস্টের ভোরের আগে শেষ রাত। শহর ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু নীলার জন্য সময় থেমে নেই—প্রতিটি মিনিট যেন ভারী হয়ে তার বুকের ওপর বসে আছে। ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছুঁতেই সে কবরস্থানের দিকে হাঁটা দিল। আজ তার হাতে ব্যাগ নেই, শুধু ক্যামেরা, আর মনে এক সিদ্ধান্ত—আজ রাতে হয় সে এই চক্র থেকে বেরোবে, নয়তো চিরতরে ডুবে যাবে।

লোহার ফটক পেরিয়েই বুঝল, বাতাসে সেই ঠান্ডা শ্বাস মিশে গেছে—যেটা কবরফলকের ফাঁক থেকে বেরোয়। বাঁশপাতা একসঙ্গে দুলছে, যেন অদৃশ্য কোনো হাত তাদের নাড়িয়ে দিচ্ছে। দূরে কাঠের দরজার সামনে কেয়ারটেকার দাঁড়িয়ে, হাতে চাবি, পাশে সেই নীরব কিশোর।

নীলা এগিয়ে গেলে লোকটা বলল—
—“সময় এসে গেছে। নিজের নাম মুছতে হলে নতুন নাম বসাতে হবে। তুমি জানো কাকে দেবে।”

রিমার মুখ ভেসে উঠল—শৈশবের সঙ্গী, যার সঙ্গে বছরের পর বছর কোনো যোগাযোগ নেই, শুধু কয়েকটা পুরনো স্মৃতি। কিন্তু তার জায়গায় অন্য কেউ? এমন কেউ যার মৃত্যু হয়তো কাউকে কাঁপিয়ে দেবে না? নাকি… কাউকেই না?

নীলার হাত কেঁপে উঠল। কেয়ারটেকার পকেট থেকে বের করল ছোট্ট এক লোহার স্টাইলাস—পাথরের ওপর নাম খোদাই করার যন্ত্র।
—“শূন্য ফলক বেছে নাও,” সে বলল।

নীলা হাঁটতে শুরু করল করিডরের ভেতর দিয়ে। প্রতিটি ফলকের নাম যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে—অর্ক, রিমা, সাবিদা, আরও কতজন… শেষে পৌঁছে গেল একদম ফাঁকা ফলকের সামনে। তার হাতে স্টাইলাস তুলে দিল কেয়ারটেকার।

হাতের আঙুলে ঠান্ডা ধাতুর শিরশিরানি উঠল। নাম লেখার বদলে নীলা ধীরে ধীরে ফলকের গায়ে আঁকতে লাগল সেই চিহ্ন—φ। সাথে সাথে বাতাসে ফিসফিস বেড়ে গেল, যেন শত শত গলা একসঙ্গে প্রতিবাদ করছে। কেয়ারটেকারের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল—
—“তুমি খালি রাখছো? জানো এর মানে?”

নীলা মাথা তুলল—
—“হ্যাঁ। আমি কারো নাম দেব না। যদি আমার সময় শেষ হয়, হোক।”

কিশোরের চোখে যেন প্রথমবার এক ফোঁটা আলো ফুটল। কিন্তু করিডরের দেয়াল কেঁপে উঠল, ফলকের ফাঁক দিয়ে কালো কুয়াশা বেরোতে লাগল, যেন এই অবাধ্যতার প্রতিক্রিয়া। দূরে বাঁশঝাড়ে পাতার শব্দ শুরু হল, দ্রুত, অস্থির।

কেয়ারটেকার ধীরে পেছনে সরে গেল—
—“তাহলে প্রস্তুত থাকো। বাছাইয়ের রাত শেষ হলে ভোর আসবে না তোমার জন্য।”

নীলা শ্বাস নিল গভীর করে। হয়তো সে সত্যিই ভোর দেখবে না। কিন্তু অন্তত জানে, এই চক্রে আরেকজন নির্দোষকে টেনে আনেনি।

পর্ব ১০: শূন্য ফলক

বাতাসে ধুলো আর স্যাঁতসেঁতে গন্ধ মিশে আছে। ফাঁকা ফলকের সামনে দাঁড়িয়ে নীলা বুঝতে পারল—এখন যেটা ঘটবে, সেটা হয় তার সমাপ্তি, নয়তো এমন কিছু যা চক্রটাকেই ভেঙে দিতে পারে। দেয়াল জুড়ে খোদাই করা নামগুলো অদ্ভুতভাবে কাঁপছে, যেন পাথরের ভেতরে আটকে থাকা শব্দগুলো মুক্তি চাইছে।

ফলকের ওপর খোদাই করা φ চিহ্ন হালকা নীল আলো ছড়াতে শুরু করল। প্রথমে ধোঁয়ার মতো, তারপর যেন অদৃশ্য হাতে ধরে রাখা এক প্রজেক্টরের কিরণ—দেয়ালে ফুটে উঠল মানুষের মুখ, যাদের নাম এই কবরফলকে খোদাই আছে। তারা সবাই একসঙ্গে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে—অর্ক, রিমা, সাবিদা, আরও অনেকে। ঠোঁট নড়ে, কিন্তু শব্দ নেই—শুধু বাতাসের কাঁপুনি।

হঠাৎ মাটির নিচ থেকে গভীর গুঞ্জন উঠল—যেন পুরনো কোনো যন্ত্র চালু হয়েছে। দেয়ালের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এল ধুলো ধূসরিত তার, মরচে ধরা মেটাল পাইপ, আর সেগুলো একে একে জ্বলে উঠতে লাগল ক্ষীণ আলোয়। কেয়ারটেকার ধীরে বলল—
—“এগুলো ছিল শব্দের পাইপলাইন। একসময় এখানে এক গবেষণা চলেছিল—মৃতদের শেষ উচ্চারিত শব্দ সংরক্ষণ করার পরীক্ষা। কিন্তু নামের সাথে সেই শব্দ আটকে গিয়ে… অন্য কিছু জন্ম নেয়।”

নীলা স্থির চোখে দেখল—পাইপের মুখ থেকে বেরোচ্ছে ঠান্ডা বাষ্প, আর তার সাথে ফিসফিস—প্রথমে অস্পষ্ট, তারপর স্পষ্টতর। তার নিজের নাম, একের পর এক ডাকে, যেন কোনো কণ্ঠ ভুলতে চাইছে না।

—“তাহলে ভূতের গল্পটা মিথ্যে?”
কেয়ারটেকার চুপ করে রইল, তারপর ফিসফিস করে বলল—
—“মানুষই সবথেকে বড় ভূত, যদি তাকে ভুলতে না দেওয়া হয়।”

হঠাৎ ফাঁকা ফলকে খোদাই হতে শুরু করল কিছু—নীলার নাম। কোনো হাত নেই, তবু অদৃশ্য ছেনি পাথরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। কেয়ারটেকার এক পা পিছিয়ে গেল—
—“সময় শেষ।”

নীলা গভীর শ্বাস নিল, স্টাইলাসটা আঁকড়ে ধরল, আর নিজের নামের ওপর জোরে আঁচড় কাটল। অক্ষরগুলো ভেঙে গেল, কিন্তু পাথরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল কাচের মতো ধারালো শব্দ—একটা চিৎকার, যা যেন দেয়াল ফাটিয়ে বাইরে ছিটকে পড়ল।

আলো নিভে গেল।

যখন নীলা চোখ খুলল, সে কবরস্থানের বাইরে, লোহার ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে। ভোরের আলো পড়ছে গাছের গায়ে, শহরের শব্দ আস্তে আস্তে জেগে উঠছে। পকেটে হাত দিল—স্টাইলাসটা নেই। কিন্তু ক্যামেরার ভেতরে নতুন এক ফোল্ডার তৈরি হয়েছে, নাম EMPTY_PLAQUE।

সে ফোল্ডার খুলল—মাত্র একটাই ছবি। কবরফলক, খালি, কোনো নাম নেই। নিচে শুধু তারিখ—২১ আগস্ট ২০২৫। আজকের তারিখ।

দূরে বাঁশঝাড়ে বাতাস বইল, পাতার ফাঁকে ফিসফিস করে উঠল কিছু—না নাম, না ভাষা—শুধু শূন্যতার এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

নীলা ধীরে পেছন ফিরে হাঁটা দিল। সে জানে না চক্র ভেঙেছে কিনা, শুধু জানে, আজকের ভোরটা সে দেখছে। কালকের কথা… এখনো কেউ বলেনি।

***

Lipighor_1755156924018.png

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *