১
রাত্রি শহরের উপর নেমে এসেছে একটি নিঃশব্দ কুয়াশার মতো। বাতাসে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে অদ্ভুত এক শীতলতা, যা গলির মোড়, ফুটপাথে, এবং পুরনো ইটের ভবনের দেয়ালে এক অদৃশ্য সুনিপুণ স্পর্শে উপস্থিত। কলকাতার এই উত্তরাঞ্চলের রাস্তা—যেখানে রাতের আলোও নিজেকে পুরোপুরি প্রমাণ করতে পারে না—শীতল বাতাসে ভাসছে। দিকহীন হাহাকার যেন বাতাসে মিশে গেছে; এক সময়কার রঙিন লণ্ঠনগুলো আজ নিঃশব্দ, অন্ধকারে ধীরে ধীরে গলিয়ে যাচ্ছে। অল্প আলো, দূরের হাওয়াই বাতি, এবং খণ্ড খণ্ড কাঁচের জানালার ঝকঝকে আলো মিলেমিশে এক ধরণের রহস্যময় আবহ সৃষ্টি করেছে। পাড়ার পুরনো বাড়িগুলো, যেখানে আগে শিশুদের চিৎকার আর পথচারীর কণ্ঠ শোনা যেত, আজ নিস্তব্ধ; এক অদ্ভুত আতঙ্কের ছায়া যেন ওখানকার বাতাসের মধ্যে প্রবেশ করেছে। এই নিঃশব্দে হঠাৎ ভাঙল ফোনের রিং—একটি স্বর যা রাতের গভীরতা কেটে মানুষকে বাস্তবের দিকে ফিরিয়ে আনে।
রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তী তার ছোট, পুরনো কিন্তু সুনিপুণভাবে সাজানো ফ্ল্যাটের ডেস্কে বসে ছিলেন। ডেস্কের পাশে একটি ল্যাম্প, যার অল্প নরম আলো তাঁর চোখে পড়ছিল, আর পাশে খোলা নোটবুক এবং ল্যাপটপ। ল্যাপটপের স্ক্রিনে অসমাপ্ত রিপোর্টের খসড়া, কলামের আকারে সাজানো খবরে চোখ রাখছে তাঁর মন। এই মুহূর্তে ফোনের শব্দ ভেসে এল। রুদ্র অবিলম্বে ফোনটা ধরলেন। “হ্যালো?” তাঁর কণ্ঠে প্রফেশনাল শীতলতা। কিন্তু বিপদ বোঝার মুহূর্তেই তিনি বুঝলেন—সাধারণ ফোন কল নয়। অপর প্রান্তে মহিলার কণ্ঠ—কাঁপছে, ভয়, আর তীব্র সংকটময়তা মিশ্রিত। তাঁর কথায় ছিল এমন এক অনির্ধারিত আতঙ্ক, যা রুদ্রের অভিজ্ঞ সাংবাদিক মনকেও কিছুটা শীতল করে দিল। “আমাকে কেউ হত্যা করতে চলেছে,” সে বলল, কণ্ঠের মধ্যে অশ্রু মিশ্রিত। রুদ্র এক চোখে ঘড়ির দিকে তাকালেন—মাঝরাত। এই সময়ে ফোন আসা, এবং বিশেষ করে এমন হুমকি, সাধারণ ঘটনার মধ্যে পড়ে না।
রুদ্র অবিলম্বে নম্বর চেক করলেন। ফোনটি লোকাল ছিল, কিন্তু লুকানো। এই ধরনের নম্বরকে ট্রেস করা সহজ নয়। তাঁর অভিজ্ঞতা বলে—কেউ যদি নিজেকে আড়াল করতে চায়, তা হলে সরাসরি পরিচয় বের করা কঠিন। কিন্তু রুদ্র প্রফেশনাল, এমন চ্যালেঞ্জ তাঁর জন্য নতুন নয়। তিনি দ্রুত ল্যাপটপে বিভিন্ন ট্রেসিং সফটওয়্যার চালু করলেন, এক হাতে ফোন ধরে মহিলার কণ্ঠ শুনছেন, অন্য হাতে মাউসের সাহায্যে নম্বর শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। তাঁর মন সেই মহিলার অবস্থার প্রতি মনোযোগী—সাহসী, কিন্তু আতঙ্কিত। তিনি রেকর্ডার চালু করে রাখলেন, যেন কোনো শব্দ, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের হালকা কম্পনও ক্যাপচার হয়। প্রফেশনাল সাংবাদিক হিসেবে রুদ্র জানতেন—এই মুহূর্তে তথ্য যতটা সম্ভব সঠিকভাবে সংগ্রহ করা অপরিহার্য।
কলকাতার রাতের নিঃশব্দ এবং এই অচেনা ফোনের রহস্য যেন এক সঙ্গীতের মতো মিলিত হয়েছে রুদ্রের চারপাশে। রুদ্রপ্রিয়ত চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং অদম্য অনুসন্ধিৎসা একত্রে কাজ করছে। তিনি বুঝতে পারছেন—মহিলার জীবনের জন্য হুমকি বাস্তব, আর প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনি প্রাথমিকভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের পরিকল্পনা করছেন, কিন্তু সাথে সাথে নিজের সাংবাদিকী তৎপরতা চালু রাখছেন—কারণ খবরের ভেতর থেকে সত্য বের করার তাগিদও তাঁর পেশাগত শৃঙ্খলা। চারপাশের অন্ধকার, রাস্তার নিঃশব্দ, হাওয়ার হালকা ঝাপটা, এবং ফোনের অপর প্রান্তের কণ্ঠ—সব মিলিয়ে একটি ভয়ংকর, কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে বাস্তব গল্পের সূচনা।
২
রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তীর মনে এখন একটাই প্রশ্ন—এই মহিলার পরিচয় কে এবং কেন তিনি এমন আতঙ্কে ভুগছেন। ফোনের পর থেকে রাতের নিঃশব্দে তার কণ্ঠস্বর বারবার তার মনের কোণে বাজছিল। কণ্ঠে যে তীব্র আতঙ্ক, তা রুদ্র বুঝতে পারছিলেন—কেবল ভয়ই নয়, বরং ভীতির সাথে জড়িত এক অজানা বিপদের উপস্থিতি। তিনি দ্রুত তার ল্যাপটপ খুললেন, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্থানীয় সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে সম্ভাব্য সূত্র খুঁজতে থাকলেন। মহিলার ফোন নম্বরটি ট্রেস করার চেষ্টা চলছিল, কিন্তু নম্বরটি এমনভাবে লুকানো যে সরাসরি তথ্য পাওয়া সহজ ছিল না। রুদ্র বুঝতে পারলেন—এই ঘটনা শুধুমাত্র ফোনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তবেও বিপজ্জনক। মহিলার ভয় এবং তার আচরণের রহস্যময়তা রুদ্রকে আরও সতর্ক করে দিল।
পরের ধাপে, রুদ্র ঠিক করলেন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার। তিনি একটি প্রফেশনাল সাংবাদিক হিসেবে জানতেন—যদি প্রাণের হুমকি বাস্তব হয়, তা হলে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি তৎক্ষণাৎ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। ফোনের তথ্য এবং মহিলার কণ্ঠস্বরের রেকর্ড পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হল। কলকাতার উত্তরাঞ্চলের জ্যেষ্ঠ অফিসার, কমিশনার দেবনাথ, তৎক্ষণাৎ রুদ্রকে ফোনে ধন্যবাদ জানালেন এবং একসাথে মহিলার অবস্থান খুঁজে বের করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করলেন। রুদ্র, যদিও সাংবাদিক, নিজের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে পুলিশের প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করার চেষ্টা করছিলেন—যেন প্রত্যেকটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ হয়। মহিলার আতঙ্ক এবং পুলিশের তৎপরতা একত্রে গল্পকে নতুন মাত্রা প্রদান করল।
রুদ্র যখন মহিলার পেছনের তথ্য খুঁজছিলেন, তখন সে যেন আরও রহস্যময় হয়ে উঠল। ফোন কলের সময় তার কণ্ঠস্বর যে আতঙ্কিত ছিল, সেই আতঙ্কের উৎস এখনো অনিশ্চিত। সে কোথায় থাকে, কার সাথে রয়েছে, এবং কেন তার জীবন বিপদে—এই প্রশ্নগুলো রুদ্রকে গভীর অনুসন্ধানের দিকে পরিচালিত করল। রুদ্র বুঝতে পারছিলেন, গল্পটি কেবল সাংবাদিক হিসেবে তার দক্ষতার পরীক্ষা নয়, বরং মানবিক দায়িত্বও। মহিলার কণ্ঠের মধ্যে লুকানো সংকেতগুলি তার প্রফেশনাল মনকে উস্কে দিচ্ছিল, যেন প্রতিটি শব্দের পেছনে লুকানো রহস্য তিনি খুঁজে বের করতে পারেন।
রাত্রি শহরের অন্ধকারে এই অনুসন্ধান যেন আরও নাটকীয় হয়ে উঠল। রুদ্র জানতেন, পরিচয়হীন মহিলার আতঙ্ক এবং তার রহস্যময় আচরণ শুধুমাত্র গল্পকে উত্তেজনাপূর্ণ করছে না, বরং পাঠককে প্রতিটি মুহূর্তে অজানা বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ, সাংবাদিক, এবং মহিলার মধ্যে এক ধরণের তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যা গল্পকে নাটকীয় এবং রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। রাতের নিঃশব্দ, দূরের হাওয়া, এবং মহিলার অদৃশ্য উপস্থিতি—সব মিলিয়ে একটি অব্যাহত রহস্যের সূচনা ঘটিয়েছে। প্রতিটি মুহূর্তে রুদ্র গভীরভাবে অনুভব করছিলেন—এই ঘটনা কেবল একটি খবর নয়, বরং এক বাস্তব বিপদের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি।
৩
কলকাতার উত্তরের অন্ধকার রাস্তায় ইন্সপেক্টর সঞ্জয় ঘোষ হঠাৎ করে উপস্থিত হলেন। মাঝরাতের নির্জনতা, কুয়াশা, এবং দূরের হাওয়ায় হঠাৎ তার নীরব পদচারণা যেন পুরো ঘটনাস্থলের আবহকে আরও রহস্যময় করে তুলল। তিনি জানতেন—এ ধরনের ঘটনায় সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন একজন অসহায় মহিলা প্রাণহানির হুমকির মুখে রয়েছে। সঞ্জয় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের একটি ছোট দল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালেন। প্রথম কাজ ছিল মহিলাকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়া। অন্ধকার রাস্তায় কেবল তাদের টর্চলাইটের আলো এবং দূরের হালকা বাতি পথ নির্দেশ করছিল। মহিলার কণ্ঠস্বর তখনো ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যে কাঁপছিল। সঞ্জয় শান্তভাবে তাকে আশ্বাস দিলেন—“আপনি নিরাপদ আছেন, আমরা আছি।” এই ছোট্ট কথায় মহিলার চোখে অদ্ভুতভাবে শান্তির এক ঝলক দেখা দিল, কিন্তু আতঙ্ক পুরোপুরি যায়নি।
পরবর্তী ধাপে পুলিশি প্রক্রিয়াগুলি সূক্ষ্মভাবে শুরু হল। সঞ্জয় ঘোষ নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন। রাস্তায় থাকা খণ্ড কাঁচ, ফুটপাথে পড়ে থাকা ছোট নোট, এবং দূরের আলোয় প্রতিফলিত ফ্ল্যাশের ছায়া—সবকিছুই তার নজরে এল। তিনি সংবেদনশীলভাবে প্রতিটি সূক্ষ্ম তথ্য সংগ্রহ করলেন। পুলিশ দল মহিলার সঙ্গে বসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল। তাকে ধাপে ধাপে প্রশ্ন করা হল—কখন, কোথায়, এবং কি পরিস্থিতিতে সে হুমকির মুখে পড়েছিল। যদিও মহিলার উত্তর কিছুটা বিভ্রান্তিকর ছিল, তার মধ্যে লুকানো আতঙ্ক স্পষ্ট ছিল। সঞ্জয় বুঝতে পারলেন, মহিলার তথ্য যতই অপ্রতিস্পর্ধিত মনে হোক না কেন, প্রতিটি শব্দ গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে পৌঁছালেন। সাংবাদিক হিসেবে তিনি চাইছিলেন, সত্য নির্ভুলভাবে জানা এবং রিপোর্ট করা হোক। সঞ্জয় ঘোষ তাকে স্বাগত জানালেন, এবং দু’জনের মধ্যে তথ্য বিনিময় শুরু হল। রুদ্র তার রেকর্ডার, ফোন কলের রেকর্ড এবং বিভিন্ন ট্রেসিং সফটওয়্যার থেকে প্রাপ্ত তথ্য পুলিশের সঙ্গে ভাগ করলেন। পুলিশ এই তথ্যের ভিত্তিতে মহিলার অবস্থান এবং সম্ভাব্য হুমকির উৎস চিহ্নিত করার চেষ্টা করল। সঞ্জয় রুদ্রকে বোঝালেন—“আপনার সংগ্রহ করা তথ্য আমাদেরকে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।” সাংবাদিক এবং পুলিশির এই সহযোগিতা গল্পের একটি নতুন মাত্রা সৃষ্টি করল। তারা বুঝতে পারলেন—মহিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হুমকির উৎস বের করা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
রাত্রি শহরের অন্ধকার, দূরের হাওয়া, এবং ঘটনাস্থলের কোলাহল—সবকিছুই এই অধ্যায়কে আরও নাটকীয় করে তুলল। পুলিশি প্রক্রিয়া, নজরদারির কৌশল এবং জিজ্ঞাসাবাদ একত্রে তৈরি করল একটি তীব্র উত্তেজনা। মহিলার আতঙ্ক, তার কণ্ঠস্বরের রহস্যময়তা, এবং রুদ্রের প্রফেশনাল অনুসন্ধান—সব মিলিয়ে গল্পের আবহ আরও গভীর, আরও বাস্তব এবং পাঠককে পুরোপুরি গল্পের মধ্যে টেনে নেয়। পুলিশের তৎপরতা শুধু রহস্য উদঘাটনের জন্য নয়, বরং মানবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও ছিল।
৪
পরদিন সকালে কলকাতার ব্যস্ত রাস্তা, ট্রাফিকের আওয়াজ আর বাজারের চঞ্চলতা—সবকিছু যেন স্বাভাবিক। কিন্তু রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তীর মন শান্ত নয়। তিনি তার ছোট ফ্ল্যাটের ডেস্কে বসে সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠা খুললেন। চোখ খুলতেই সেই শিরোনাম পড়ে—মহিলার হত্যার খবর। রুদ্র হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন। কীভাবে সম্ভব, যখন মহিলাটি পুলিশের তত্ত্বাবধানে, নিরাপদ অবস্থায় ছিল? খবরের শিরোনাম ছিল বড়, চোখে পড়ার মতো—“অপরিচিত মহিলার রহস্যময় মৃত্যু: পুলিশের তত্ত্বাবধানে হঠাৎ হত্যাকাণ্ড।” রুদ্র শ্বাস বন্ধ করে রাখলেন, অনুভব করলেন—যে ঘটনা তিনি কেবল রিপোর্টের জন্য অনুসরণ করছিলেন, তা এখন বাস্তব এবং তার স্বাভাবিক জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করছে।
রুদ্র দ্রুত সংবাদপত্রের অন্যান্য পাতা খুঁজতে লাগলেন। সেখানে আরও বিস্তারিত লেখা—কিভাবে মহিলাকে পুলিশ উদ্ধার করেছিল, কোথায় তাকে রাখা হয়েছিল, এবং কোন কারণে পুলিশি তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হলো। সবচেয়ে অদ্ভুত অংশটি ছিল, সাংবাদিকদের অজানা সূত্রে রুদ্রের নামও খবরের মধ্যে এসেছে, যেন তিনি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। রুদ্র হতবাক, মনেই হচ্ছে না—কীভাবে তার নাম সংবাদপত্রে স্থান পেল। এই মুহূর্তে তার মনে অজানা আতঙ্কের ঢেউ বইছে। তিনি জানতেন—এটি কেবল একটি প্রফেশনাল ভুল নয়; এটি পরিকল্পিত কিছু হতে পারে।
রুদ্র সঙ্গে সঙ্গে ফোন ধরলেন। প্রথমে কমিশনার দেবনাথকে ফোন করলেন, পুলিশি স্থিতি এবং তথ্য যাচাইয়ের জন্য। দেবনাথ অবাক, কিন্তু সতর্ক—“রুদ্র, আমি নিশ্চিত করছি, আমাদের এখানে মহিলার কাস্টডি নিরাপদে ছিল। খবরটা কোথা থেকে আসলো, আমরা খুঁজছি।” রুদ্র বুঝলেন—যে তথ্য তিনি সংগ্রহ করেছিলেন, তার কোন অংশ বেরিয়ে গেছে, তা সম্ভাব্যভাবে কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি আবার সংবাদপত্রের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করলেন, চিন্তা করলেন—এই ভুল বা পরিকল্পিত গুজব কাদের সুবিধা দেয়? তার মনে প্রশ্নের ধারা যেন থামছে না। এই অধ্যায়ে পাঠক প্রথমবার অনুভব করে—গল্পের স্থিতি একেবারেই নিরাপদ নয়, এবং যারা ঘটনায় জড়িত, তারা প্রত্যেকেই নিজের স্বার্থে কিছু লুকিয়েছে।
রুদ্রের মনে উত্তেজনা এবং আতঙ্ক একত্রিত হয়ে একটি চাপ তৈরি করল। সাংবাদিক হিসেবে তার প্রফেশনাল বুদ্ধি বলছিল—এখানে কিছু একটা ভ্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু মানবিক অনুভূতি বলছিল—মহিলার জীবন, তার আতঙ্ক এবং রহস্য এখন আরও গভীর। রাতের নিঃশব্দ, দিনের আলো, সংবাদপত্রের স্পষ্ট খবরে প্রতিফলিত ঘটনা—সব মিলিয়ে পাঠককে প্রথম ধাক্কা দিচ্ছে।
৫
রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তী জানতেন—রাতের ফোন কল এবং দিনের সংবাদপত্রের শিরোনামের মধ্যে এক গভীর ফাঁক রয়েছে। তাই তিনি সঙ্গে সঙ্গে নিজের অনুসন্ধান শুরু করলেন। তার প্রাথমিক লক্ষ্য—যে তথ্য সংবাদপত্রে এসেছে, তা সত্য কি, নাকি কারও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তিনি ল্যাপটপ খুললেন, ফোন রেকর্ড, পুলিশের প্রাথমিক প্রতিবেদন, এবং মহিলার সঙ্গে তার কথোপকথনের লিপি পর্যবেক্ষণ করলেন। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি ফাঁকা স্থান তার মনকে সতর্ক করছিল। তিনি লক্ষ্য করলেন—পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী মহিলার জীবন নিরাপদে ছিল, কিন্তু সংবাদপত্রের রিপোর্ট এমন দাবি করছে যে মহিলার হত্যা হয়েছে। এই দ্বন্দ্ব তার অভিজ্ঞ সাংবাদিক মনকে অচল করে দিল। তিনি বুঝতে পারলেন, এক বা একাধিক পক্ষ তাকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।
রুদ্র এরপর পুলিশের সঙ্গে আরও গভীর আলোচনার জন্য যোগাযোগ করলেন। কমিশনার দেবনাথ এবং ইন্সপেক্টর সঞ্জয় ঘোষ তাঁকে বিস্তারিত জানালেন—মহিলাকে উদ্ধার করে পুলিশ একটি নিরাপদ কক্ষে রেখেছিল, ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চলছিল, এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর তাদের কাছে নেই। রুদ্র শুনে হতবাক। তিনি প্রশ্ন করলেন—“তাহলে কীভাবে সংবাদপত্র এমন তথ্য প্রকাশ করল?” সঞ্জয় ঘোষ স্পষ্ট ভাষায় বললেন—“আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। তবে যেহেতু আপনার কাছে ফোনের রেকর্ড আছে, আমরা তা যাচাই করব।” রুদ্র বুঝলেন—এখানে কেউ পরিকল্পিতভাবে তথ্য বিকৃত করছে, এবং মহিলার জীবন এখনও বিপদে রয়েছে। এই দ্বন্দ্ব গল্পে নতুন উত্তেজনা যোগ করল, পাঠকও প্রথমবার বুঝতে পারল—রুদ্রের পথ সহজ নয়।
যতক্ষণ অনুসন্ধান চলছিল, মহিলার সত্যিকারের বিপদের চিহ্ন আরও স্পষ্ট হতে লাগল। রুদ্র কিছু সূত্র খুঁজে পেলেন—যা ইঙ্গিত দিচ্ছিল, মহিলার ফোন কল শুধুমাত্র আতঙ্ক প্রকাশ নয়; তা ছিল একটি সংকেত। তিনি তার ল্যাপটপে নোট করে রাখলেন—মহিলার আচরণ, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, এবং ফোনের সময়কাল সবকিছুই নির্দেশ করছে, কেউ তাঁকে চুপ করাতে চাইছে। তিনি মনে মনে অনুমান করলেন—এই ষড়যন্ত্র কেবল সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করার জন্য নয়, বরং মহিলার উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন এবং তার জীবনের সঙ্গে খেলাধুলা করার জন্য। রুদ্র বুঝতে পারলেন—এখন আর শুধু সংবাদ সংগ্রহ নয়, মহিলার নিরাপত্তা রক্ষা করা তার প্রাথমিক কর্তব্য।
রাত্রি শহরের অন্ধকার, পুলিশের সতর্কতা, সংবাদপত্রের দ্বন্দ্ব, এবং রুদ্রের তীক্ষ্ণ অনুসন্ধান—সব মিলিয়ে গল্পে এক নতুন মাত্রা তৈরি করল। ষড়যন্ত্রকারীরা যাঁরা, তাঁরা এখনও অদৃশ্য, কিন্তু তাদের প্রভাব স্পষ্ট। রুদ্র অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন—তাঁকে নিজের প্রফেশনাল বুদ্ধি এবং মানবিক দায়িত্ব একত্রিত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬
রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তী রাতভর ফোন রেকর্ড এবং কল লগের ওপর নজর রাখলেন। ল্যাপটপের স্ক্রিনে কলের সময়, নম্বর, এবং সংযুক্তি বিশ্লেষণ করতে করতে তিনি লক্ষ্য করলেন, ফোনটি কোনো সাধারণ অচেনা নম্বর থেকে আসেনি। কলের উৎস এবং সময়কাল মিলিয়ে তিনি বুঝলেন—কেউ অত্যন্ত সাবধানে এই কলটি পাঠিয়েছে, যেন এটি একটি বাস্তব বিপদের চিহ্ন দেখায়। ফোনের লজিক্যাল প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে পেলেন: কলটি আসলে কোনো প্রাক্তন পরিচিতের কাছে পৌঁছেছে, কিন্তু সেই পরিচিত ব্যক্তি নিজে ওই মুহূর্তে ফোন ব্যবহার করেনি। অর্থাৎ, ফোনটি এখন কোনো রহস্যজনক পক্ষের হাতে। রুদ্রের মন এক মুহূর্তে অবাক এবং সতর্ক—এই ঘটনা শুধু ভয় তৈরি করার জন্য নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত নাটকের অংশ।
রুদ্র গভীরভাবে চিন্তা করলেন—যে মহিলার কণ্ঠে আতঙ্ক, এবং যে সংবাদপত্রে তাঁর হত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা কেবল বাস্তব ঘটনা নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির একটি নাটক। ফোন কল, পুলিশি নজরদারি, সংবাদপত্রের দ্বন্দ্ব—সবকিছু যেন একটি পরিকল্পিত সৃজনশীল তন্ত্রের অংশ। তিনি পুনরায় কল লগ পরীক্ষা করলেন, দেখলেন—মহিলার ফোন নম্বরটি অন্য এক অচেনা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী চায় মহিলাকে আতঙ্কিত করে রাখা। রুদ্র বুঝতে পারলেন—এই পর্যায়ে মহিলার জীবন সরাসরি ঝুঁকিতে নেই, কিন্তু তার উপর মানসিক চাপ তৈরি করা হয়েছে।
রুদ্রের সাংবাদিকি মন তখন নতুন পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যস্ত। তিনি মনে মনে কৌশল সাজালেন—কীভাবে মহিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে এবং ফোনের সূত্রের রহস্য উদঘাটন করা যাবে। তিনি পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করলেন, রেকর্ড এবং কল লগ যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শেয়ার করলেন। কমিশনার দেবনাথ এবং ইন্সপেক্টর সঞ্জয় ঘোষও অবাক—ফোনের সূত্র এবং প্রাক্তন পরিচিতির রহস্যজনক উপস্থিতি তাদেরও ভাবাচ্ছিল। রুদ্র তাদের বোঝালেন, “এটি কোনো অপ্রত্যাশিত বিপদ নয়; এটি সুপরিকল্পিত নাটক। আমাদের লক্ষ্য—উৎস খুঁজে বের করা এবং মহিলাকে মানসিক নিরাপত্তা দেওয়া।” পুলিশের দল সঙ্গে সঙ্গে এই অনুসন্ধানকে আরও তীব্র করল।
রাত্রির অন্ধকার, শহরের নিঃশব্দ, ফোনের রহস্যজনক সূত্র, এবং রুদ্রের তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ—সব মিলিয়ে গল্পের একটি নতুন স্তর তৈরি করল। মহিলার আতঙ্ক, মৃত্যুর ভয়ের নাটক এবং ফোনের সূত্র—সবই মিলিয়ে পাঠককে চমকে দেয়, এবং গল্পকে আরও গভীর, জটিল এবং নাটকীয় করে তোলে। রুদ্র বুঝলেন—এখন শুধু তথ্য সংগ্রহ নয়, বরং মহিলার মানসিক শান্তি এবং ষড়যন্ত্রের উৎস উন্মোচনই মূল চ্যালেঞ্জ।
৭
রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তী মনে করলেন—যদি রহস্যের গভীরতা বোঝা যায়, তবে মহিলার অতীতের দিকে নজর দিতে হবে। রাতের নিঃশব্দে তিনি ল্যাপটপ খুলে মহিলার ফোন কল, ইমেল, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার লিঙ্ক খতিয়ে দেখলেন। প্রতিটি তথ্যের টুকরো যেন একটি বড় পাজলের অংশ। ধীরে ধীরে বোঝা গেল—মহিলা কেবল স্বাভাবিক নাগরিক নয়, বরং তার জীবনে কিছু এমন ঘটনা ঘটেছিল যা তাকে বিপদে ফেলার জন্য যথেষ্ট প্রভাবশালী। রুদ্রের অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই দেখা গেল, মহিলার অতীতের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কিছু তথ্য সুপরিকল্পিতভাবে লুকানো হয়েছে। তিনি বুঝলেন—মহিলা আগেই কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হতে যাচ্ছিলেন। এই অজানা ষড়যন্ত্র এখনো তার জীবনে প্রভাব ফেলছে।
রুদ্র তার অনুসন্ধানকে আরও গভীর করার জন্য মহিলার পুরনো পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কেউ সরাসরি কিছু বলতে পারছিল না, কেউবা সন্দেহভাজন চুপচাপ। প্রতিটি সাক্ষাৎকারে রুদ্র বুঝলেন, মহিলার জীবন জড়িয়ে আছে এক জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক কৌশল—যেখানে ক্ষমতা, প্রভাব, এবং প্রতিপক্ষের চক্রান্ত স্পষ্ট। মহিলার স্বভাব, তার প্রফেশনাল নৈতিকতা, এবং ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষুদ্র খুঁটিনাটি ঘটনাগুলো একত্রে রহস্যের মূলসূত্র তৈরি করছে। এই অধ্যায়ে পাঠক প্রথমবার মহিলার ব্যক্তিগত জীবন ও অতীতের ছায়ার সঙ্গে পরিচিত হয়, যা তাকে শুধু একটি আতঙ্কিত নারী হিসেবে দেখায় না, বরং একজন শক্তিশালী ও বিচক্ষণ চরিত্র হিসেবেও তুলে ধরে।
রুদ্র আরও লক্ষ্য করলেন, মহিলার আতঙ্ক এবং ফোন কলের নাটক একটি বড় উদ্দেশ্যের অংশ। অতীতের এক বিশেষ ঘটনা—যেখানে মহিলাকে সামাজিক বা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য করা হয়েছিল—এখনও তার জীবনে ধাক্কা দিচ্ছে। তিনি নোটবুক খুলে প্রতিটি সূত্র সংরক্ষণ করলেন। মহিলার অতীতের বন্ধুত্ব, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনা—সব মিলিয়ে বোঝা যায়, যে বিপদ তার দিকে আসছে তা একেবারেই দৈব সংযোগ নয়, বরং পরিকল্পিত। রুদ্র বুঝলেন—মহিলার জীবনকে শুধু রক্ষা করা নয়, তার অতীতের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ষড়যন্ত্রের পুরো চিত্রও উদঘাটন করতে হবে।
শহরের অন্ধকার, অফিসের আলো, এবং রুদ্রের গভীর অনুসন্ধান—সব মিলিয়ে গল্পের নতুন মাত্রা সৃষ্টি করল। পাঠক বুঝতে পারল, মহিলার অতীত শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত ইতিহাস নয়, বরং একটি বিপজ্জনক খেলায় প্রবেশের সূচনা। অতীতের ছায়া, রাজনৈতিক ও সামাজিক ষড়যন্ত্র, এবং মহিলার ব্যক্তিগত জীবন—সব মিলিয়ে গল্পকে আরও জটিল, নাটকীয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। রুদ্র বুঝলেন—এখন তার কাজ শুধু সংবাদ সংগ্রহ বা তদন্ত নয়, বরং মহিলার অতীতের সঙ্গে যুক্ত ষড়যন্ত্র এবং বর্তমানের বিপদকে একত্রিত করে সমাধান খুঁজে বের করা।
৮
রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তী জানতেন—যে রহস্যের সূত্র তিনি উদঘাটন করছেন, তা একা করা সম্ভব নয়। তাই তিনি পুলিশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত হলেন। ইন্সপেক্টর সঞ্জয় ঘোষ এবং কমিশনার দেবনাথও প্রস্তুত ছিলেন, এবং এক যৌথ দল গঠন করা হল। এই দলের লক্ষ্য ছিল—মহিলাকে হুমকি দিচ্ছে কে, এবং কারা সংবাদপত্রের মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। রাত্রির নিঃশব্দে শহরের বিভিন্ন এলাকা, সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজ, ফোন ট্রেসিং, এবং অনলাইন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক—সব মিলিয়ে তারা তথ্য সংগ্রহ শুরু করলেন। প্রতিটি সূত্রই ধাপে ধাপে একটি বৃহত্তর নকশার দিকে ইঙ্গিত করছিল।
রুদ্র এবং পুলিশের দল একে একে সূত্রগুলো যাচাই করলেন। দেখা গেল, মহিলার পরিচিত কিছু পুরনো রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। ফোন কল, সংবাদপত্রের খবরে ভুল তথ্য, এবং মহিলার আতঙ্ক—সবই কৌশলীভাবে পরিকল্পিত। রুদ্র এক নোটবুকে লিখতে লাগলেন—যে কোনো পক্ষ তার খোঁজে এবং মহিলাকে আতঙ্কিত করার জন্য কাজ করছে। পুলিশ এই সময় অত্যন্ত সতর্ক ছিল; তারা বুঝতে পারছিল যে, এই নেটওয়ার্ক কেবল সাধারণ হুমকি নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত, সুসংগঠিত ষড়যন্ত্র।
শহরের নিঃশব্দ, দূরের হাওয়া, এবং ফ্ল্যাশ লাইটের আলো—সব মিলিয়ে রহস্যের আবহ আরও গভীর হচ্ছিল। রুদ্র বুঝলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা অদৃশ্য, কিন্তু তাদের উপস্থিতি স্পষ্ট। তারা কোথায়, কেমন পরিকল্পনা করছে, এবং মহিলার জীবনের উপর কি প্রভাব ফেলতে চায়—সবই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগল। পুলিশি নজরদারি, সোর্স যাচাই, এবং রুদ্রের প্রফেশনাল বিশ্লেষণ—সব মিলিয়ে পাঠককে সাসপেন্সের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখল। প্রতিটি পদক্ষেপে রহস্য আরও গভীর হচ্ছিল, এবং পাঠক বুঝতে পারছিলেন—কথার পর কথা, সূত্রের পর সূত্র, সব মিলিয়ে ষড়যন্ত্রের নেটওয়ার্কটি কতটা বিপজ্জনক।
এই অধ্যায়ে রুদ্র এবং পুলিশের যৌথ অনুসন্ধান শুধু মহিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই সীমাবদ্ধ থাকল না, বরং ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন দিক উন্মোচিত করল। ফোন কলের সূত্র, সংবাদপত্রের ভুল তথ্য, অতীতের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ঘটনা—সব মিলিয়ে গল্পকে আরও নাটকীয় এবং জটিল করে তুলল। পাঠক পুরো সময় ধরে সাসপেন্সে আবদ্ধ থাকে, কারণ প্রতিটি মুহূর্তে নতুন তথ্য এবং নতুন চরিত্রের উপস্থিতি গল্পের ধারা পরিবর্তন করে। রুদ্র বুঝতে পারলেন—এখন তার কাজ শুধু অনুসন্ধান নয়, বরং ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে মহিলাকে প্রকৃত বিপদ থেকে রক্ষা করা।
৯
রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তী জানতেন—যে ষড়যন্ত্রের সূত্র তিনি ধীরে ধীরে উন্মোচন করছেন, তার চূড়ান্ত পর্যায় এখন কাছে এসেছে। রাতের শহরের নিঃশব্দে তিনি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন, এবং ফাঁদ স্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। মহিলার প্রতি হুমকি শুধুই ভয় প্রদর্শনের জন্য ছিল; প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল পুলিশের নজরভ্রষ্ট করা এবং ষড়যন্ত্রকারীদের আসল চিহ্ন লুকিয়ে রাখা। রুদ্র বুঝতে পারছিলেন, যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি চরম উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তিনি ফোন, কল লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করলেন—মহিলার জীবনে যে আতঙ্ক দেখা গিয়েছিল, তা পরিকল্পিত নাটক মাত্র। তবে এই নাটকই শেষপর্যায়ে তাদের ধরা পড়ার ফাঁদে পরিণত হবে।
ইন্সপেক্টর সঞ্জয় ঘোষ এবং কমিশনার দেবনাথ মহিলাকে নিরাপদ স্থানে রেখেছিলেন। পুলিশি নজরদারি আর কৌশল রুদ্রের পরিকল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হলো। রুদ্র মহিলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ বজায় রাখলেন, যাতে সে আতঙ্কিত না হয় এবং ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে ফেলার সময় সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। শহরের বিভিন্ন অন্ধকার এলাকা, ফাঁকা রাস্তাঘাট, এবং চতুর্থাংশে রাখা সিকিউরিটি ক্যামেরা—সবই পরিকল্পনার অংশ। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রতিটি পদক্ষেপে ফাঁদে পড়বে, এমনটাই রুদ্র এবং পুলিশের টিম আশা করছিল। পাঠক প্রথমবার বোঝে—গল্পের উত্তেজনা ইতিমধ্যেই সীমাহীন, এবং শেষ মুহূর্তে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
ফাঁদ স্থাপনের মুহূর্তে উত্তেজনা চরমে পৌঁছালো। রুদ্র এবং পুলিশ সতর্কভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের ট্রেসিং করছিলেন। প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সংকেত, এবং প্রতিটি অনিশ্চয়তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছিল। অবশেষে দেখা গেল, ষড়যন্ত্রকারীরা ফাঁদে ফাঁসছে। তারা পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পারার আগেই এক অপ্রত্যাশিত অবস্থায় আটকা পড়ল। মহিলার জীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা পুরো পরিকল্পনাটি উল্টোফেরি পেল—যারা ভয় দেখাতে চেয়েছিল, তারা নিজেই নেটওয়ার্কের ফাঁদে পড়ল। এই সময় রুদ্রের প্রফেশনাল বিশ্লেষণ এবং পুলিশের নিখুঁত কৌশল—সব মিলিয়ে এক চরম উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য তৈরি করল।
শেষপর্যায়ে পাঠক একসাথে উত্তেজনা, রহস্য, এবং তীব্র নাটক অনুভব করে। মহিলার আতঙ্ক, ষড়যন্ত্রকারীদের ধরা পড়া, এবং রুদ্র ও পুলিশের যৌথ কৌশল—সব মিলিয়ে গল্পের এক চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছে। রাতের শহরের অন্ধকার, দূরের হাওয়া, এবং ঘটনাস্থলের আলো—সবই এই অধ্যায়কে নাটকীয় করে তোলে। পাঠক বুঝতে পারে, রহস্যের সমাধান শুধু তথ্য বা সূত্রের মাধ্যমে নয়, বরং পরিকল্পিত কৌশল, প্রফেশনাল দক্ষতা এবং সাহসিকতার সঙ্গে সম্ভব।
১০
রুদ্রপ্রীত চক্রবর্তী জানতেন—এখন সময় এসেছে সব তথ্য একত্রিত করে রহস্যের চূড়ান্ত সমাধান উদঘাটনের। শহরের সকাল তার ওপর অচেনা আলো ফেলল, কিন্তু রুদ্রের মন শান্ত নয়; বরং উত্তেজনার স্রোত ক্রমশ প্রবাহিত হচ্ছিল। মহিলার পরিচয়, অতীতের ঘটনাবলি, ফোন কলের নাটক, এবং সংবাদপত্রের বিভ্রান্তি—সবই এখন একত্রিত হয়ে একটি পরিষ্কার চিত্র তৈরি করল। পুলিশি নজরদারি, সোর্স যাচাই, এবং রুদ্রের গভীর অনুসন্ধান—সব মিলিয়ে বোঝা গেল, মহিলার জীবন বিপদে ছিল না; বরং ষড়যন্ত্রকারীরা একটি নাটক সাজিয়েছিল যাতে তারা সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে।
অভিজ্ঞ সাংবাদিক হিসেবে রুদ্র পুনরায় সমস্ত প্রমাণের দিকে নজর দিলেন। তিনি দেখলেন, মহিলার ফোন, কল লগ, এবং অতীতের ঘটনাগুলি কৌশলীভাবে ব্যবহার করে একটি নাটকীয় বিপদ তৈরি করা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত “মৃত্যুর খবর” মূলত একটি বিভ্রান্তি, যা ষড়যন্ত্রকারীদের পরিকল্পনার অংশ। মহিলার পরিচয় ধীরে ধীরে স্পষ্ট হলো—তিনি ছিলেন একটি সমাজকর্মী, যে সমাজের কিছু অন্ধকার দিক প্রকাশ করার চেষ্টা করছিলেন। তার কর্মকাণ্ড, সততা, এবং প্রফেশনাল উদ্যোগ একাংশের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে হচ্ছিল। রুদ্র বুঝলেন, মহিলার জীবন ও মানসিক শান্তি রক্ষা করা এখন প্রধান লক্ষ্য, কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা প্রকৃত বিপদ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।
পুলিশের সঙ্গে যৌথ পরিকল্পনা কার্যকর হলো। ইন্সপেক্টর সঞ্জয় ঘোষ এবং কমিশনার দেবনাথ সব শর্ত বিবেচনা করে ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে ফেললেন। শহরের অন্ধকার, ফাঁকা রাস্তা, সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজ—সবই ব্যবহৃত হলো মূল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। ষড়যন্ত্রকারীরা ধীরে ধীরে তাদের ফাঁদে পড়তে লাগল। রুদ্র এবং পুলিশের কার্যক্রম সমন্বয় করছিল—ফলে মহিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত হলো, এবং ষড়যন্ত্রকারীরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ল।
***