শুভময় ব্যানার্জী
প্রথম পর্ব – বোর্ডের বুদ্ধি
কলকাতার গরম দুপুর। ট্রামে চেপে, বাস ধরে, নানারকম বাহন পাল্টে অবশেষে অফিসে ঢোকার সময়টা প্রায় দুপুর গড়িয়ে যায়। অফিসে ঢুকেই বিমলবাবু নিজের কপালে ঘাম মুছে চেয়ার টেনে বসলেন। বসের চোখ তখন লাল টকটকে, যেন মশারির ভেতর আটকে পড়া মশা।
—“বিমল, আবার দেরি?”
বিমল হেসে বলল, —“স্যার, এবার কিন্তু দোষ আমার নয়। রাস্তায় বড়ো বোর্ডে লেখা ছিল—‘Slow: School Ahead’। আমি তো ভদ্রলোক, নিয়ম মানতেই হবে! তাই দাঁড়িয়ে থাকলাম যতক্ষণ না স্কুল ছুটি হলো।”
অফিস একেবারে ফেটে পড়ল হাসিতে। পিয়ন হেসে চেয়ার ধরে বসেছে, টাইপিস্টের হাত কীবোর্ডে থেমে গেছে, আর পাশের টেবিলের শীলা দি হাসতে হাসতে বলল—
—“তাহলে তো আগামীকাল যদি লেখে ‘Hospital Ahead’, তুমি সেখানে ভর্তি হয়েই তবে আসবে!”
বস গম্ভীর মুখে বললেন, —“বিমলবাবু, আপনি অফিসে চাকরি করছেন না, নাটক করছেন। তবে একটা কথা বলি—আপনার মতো মানুষ না থাকলে এই অফিসটা এতদিনে বোরিং হয়ে মরত।”
সবাই আবার হো হো করে হেসে উঠল। বিমলবাবু চুপ করে নিজের টিফিনের বাক্স খুলে ফেললেন। কারণ তিনি জানেন—হাসি ছাড়া এই চাকরি টিকবে না, কিন্তু হাসির কারণ তিনিই!
দ্বিতীয় পর্ব – লিফটের লাফ
অফিসে ঢোকার পর দিনটা খুবই শান্তিপূর্ণ চলছিল। বস মেজাজে ভালো, টাইপিস্টরা কীবোর্ড বাজাচ্ছে ঝমঝম করে, আর পিয়ন দৌড়চ্ছে চা-কফি নিয়ে। এমন সময় অফিসে একেবারে নতুন চকচকে লিফট বসানো হলো। সবাই খুশি, আর সবাই একটু ভয়ে-ভয়ে—নতুন জিনিস বলে কথা!
কিন্তু বিমলবাবু? তিনি তো কৌতূহলের কারিগর। দুপুরবেলা একা একা লিফটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। ভেতরে গিয়ে দেখলেন অনেকগুলো বোতাম—১, ২, ৩, ৪… উপরে লেখা “Press the button to go up or down.”
বিমল একটু ভেবে ভেবে নিজের জুতোর বোতাম খুলে পকেট থেকে বের করলেন আর সেটাই লিফটের বোতামে চেপে ধরলেন!
অবশ্য বোতাম চেপে কিছু হল না। লিফট নড়ে না। হঠাৎ দরজা খুলে পাশের শীলা দি ঢুকলেন আর দেখে হাঁ করে গেলেন—
—“বিমলদা! আপনি জুতোর বোতাম দিয়ে লিফট চালানোর চেষ্টা করছেন কেন?”
বিমল একেবারে সিরিয়াস গলায় বললেন,
—“বোর্ডে লেখা তো স্পষ্ট—‘Press the button’। বোতাম তো এটাই!”
এইবার অফিসে খবর পৌঁছে গেল। সবাই দৌড়ে এল, আর দেখল বিমল জুতোর বোতাম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লিফটের ভেতর। হাসতে হাসতে অফিস কেঁপে উঠল। বসও এসে বললেন,
—“বিমলবাবু, আপনার মতো মানুষ থাকলে আমাদের বিদ্যুৎ খরচ বাঁচবে—কারণ লিফট চালু না করেই সবাই আনন্দে উপরে উঠে গেছে হাসির সিঁড়ি দিয়ে!”
অফিস আবার একদম থরথর করে কাঁপতে লাগল হাসিতে। আর বিমল গম্ভীর মুখে জুতো পরে নিলেন, যেন কিছুই হয়নি।
তৃতীয় পর্ব – ফোনের ফাজলামি
অফিসে নতুন ল্যান্ডলাইন ফোন বসানো হয়েছে। চকচকে কালো রঙের ফোনটা দেখে সবাই মুগ্ধ। বস স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন—
—“এই ফোন শুধু জরুরি অফিস কলের জন্য ব্যবহার হবে। অযথা কেউ ঘাঁটাঘাঁটি করবে না।”
কিন্তু বিমলবাবু তো নিয়ম ভাঙার ওস্তাদ। দুপুরে যখন সবাই লাঞ্চে গেছে, তিনি একা বসে ফোন নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। ডায়াল করতে গিয়েই মাথায় ঢুকল—“শুধু নম্বর ডায়াল করলে মজা কোথায়?” তাই ফোন তুলে তিনি বলতে শুরু করলেন,
—“হ্যালো? হ্যাঁ মা, আমি এখন অফিসের প্রেসিডেন্ট। কাল আমাকে প্রধানমন্ত্রী ডাকছে। তুমি মাছের ঝোল রেঁধে রেখো।”
পাশের টেবিলের শীলা দি চুপিচুপি ফিরে এসে শুনেই হেসে কুটিকুটি। তখনই বস ঢুকে পড়লেন ঘরে।
বস চিৎকার করে বললেন,
—“বিমল! কার সঙ্গে কথা বলছ?”
বিমল একেবারে নির্বিকার মুখে ফোন নামিয়ে বলল,
—“স্যার, ফোনটা তো বেজেইনি। আমি ভাবলাম, রিহার্সাল করে রাখি—কখন যদি সত্যিই প্রধানমন্ত্রী ফোন করেন!”
অফিসে আরেকবার হো হো করে হাসির ঝড় বয়ে গেল। বস মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
—“তুমি যদি প্রধানমন্ত্রী হও, তাহলে আমি সংসদের ক্যান্টিনে গিয়ে সিঙ্গারা ভাজব!”
বিমল আবার কানে ফোন লাগিয়ে গম্ভীরভাবে বলল,
—“হ্যালো? ক্যান্টিন মন্ত্রী? আমাদের বসকে নিয়ে যাবেন তো?”
সারা অফিস এবার একেবারে খিলখিল করে ফেটে পড়ল।
চতুর্থ পর্ব – টিফিনের ট্রাজেডি
অফিসে দুপুর মানেই টিফিন টাইম। সবাই যার যার ডিব্বা খুলে খাওয়া শুরু করে। কারও মাছের ঝোল, কারও ডিমের কারি, কারও আবার শুধু আলুভাজা। কিন্তু সবচেয়ে মজার টিফিন থাকে বিমলবাবুর কাছে। কারণ তিনি কখনোই নিজের খাবার আনেন না, সবসময় অন্যের টিফিনে ভাগ বসান।
সেদিন শীলা দি মাছের মাথা দিয়ে ডাল মেখে খাচ্ছিলেন। বিমলবাবু একেবারে চোখ বড় বড় করে বলল—
—“ওই যে মাথাটা আছে, একটু আমাকে দাও না! আমারও তো মাথার খুব দরকার।”
শীলা দি হেসে বললেন—
—“তাহলে কাল থেকে নিজের মাথা নিয়ে এসো!”
অফিস ফেটে পড়ল হাসিতে।
এরপর বিমলবাবু চুপিচুপি পিয়নের ডিব্বা থেকে একটা লুচি তুলে খাচ্ছিলেন। বস হঠাৎ ঢুকে বললেন—
—“বিমল, তুমি তো বলেছিলে ডায়েট করছ! তাহলে লুচি খাচ্ছো কেন?”
বিমল একেবারে গম্ভীর মুখে জবাব দিল,
—“স্যার, এটা লুচি নয়… এটা হলো গোলাকার চ্যাপ্টা রুটি। আলাদা নাম শুনলেই ক্যালোরি কমে যায়।”
অফিস আবার হো হো করে হেসে উঠল। বসও হাসি চেপে রাখতে পারলেন না।
কিন্তু আসল বিপদ ঘটল যখন বিমলবাবু ভুল করে নিজের বদলে বসের টিফিন খুলে ফেললেন। ভেতরে চিকেন কষা দেখে তিনি এক কামড় খেয়েই বললেন—
—“স্যার, আপনার টিফিনে নাকি অফিসের সিক্রেট আছে, তাই আমি টেস্ট করে যাচ্ছিলাম।”
বস হেসে গর্জে উঠলেন, আর সবাই হাততালি দিয়ে চিৎকার করল—
—“বিমলবাবু, আপনিই এই অফিসের আসল মেনু!”
পঞ্চম পর্ব – মিটিংয়ের মশকরা
সেদিন বড়ো একটা মিটিং ডাকা হয়েছে। বস নিজে চেয়ারম্যান, সবাইকে একেবারে গম্ভীর হয়ে বসতে হবে। ফাইল, নোটবুক, পেন—সব সঠিকভাবে সাজিয়ে সবাই বসেছে। একমাত্র বিমলবাবুই খালি হাতে হাজির।
বস চোখ কুঁচকে বললেন,
—“বিমল, নোটবুক আনোনি কেন?”
বিমল গম্ভীরভাবে দাঁড়িয়ে বলল,
—“স্যার, আমি তো সব মেমোরিতে রাখি। মস্তিষ্কই আমার হার্ডডিস্ক।”
সবাই চাপা হেসে ফেলল। বস আবার বললেন,
—“ঠিক আছে, তবে শোনো—এই মিটিংয়ের মূল এজেন্ডা হলো ‘কস্ট কাটিং’। কার কী মতামত আছে?”
বিমল একেবারে হাত তুলে উঠে দাঁড়াল।
—“স্যার, একটা জোরালো প্রস্তাব আছে।”
সবাই কৌতূহলী হয়ে তাকাল।
—“আমরা যদি অফিসে চায়ের বদলে শুধু গরম জল দিই, তাহলে এক বছরে অন্তত কুড়ি হাজার টাকা বাঁচবে। আর চাইলে গরম জলও বাদ দিয়ে শুধু কাপে হাওয়া পরিবেশন করতে পারি!”
অফিস একেবারে হেসে গড়িয়ে পড়ল। টাইপিস্ট হাসতে হাসতে চশমা খুলে ফেলল, শীলা দি চেয়ার থেকে প্রায় পড়ে যাচ্ছিলেন। বস মাথা ধরে বললেন,
—“বিমল, তোমাকে যদি আমরা কস্ট কাটিং মন্ত্রী করি, তবে একদিন দেখব অফিসটাই কেটে দিয়েছে!”
বিমল নির্লজ্জ মুখে আবার বলল,
—“স্যার, সেটাও তো আরেকটা কস্ট কাটিং!”
এইবার হাসির দমকে মিটিংয়ের সব সিরিয়াস এজেন্ডা উড়ে গেল। অফিসের ইতিহাসে এটিই হলো সবচেয়ে মজার মিটিং।
ষষ্ঠ পর্ব – কম্পিউটারের কাণ্ড
অফিসে নতুন কম্পিউটার বসানো হয়েছে। চকচকে মনিটর, কীবোর্ড, মাউস—সবকিছু একেবারে ঝকঝকে। বস খুশি হয়ে বললেন,
—“এবার থেকে সব কাজ কম্পিউটারে হবে। কাগজপত্র কমানোই লক্ষ্য।”
সবার মুখে উৎসাহ, কিন্তু বিমলবাবুর চোখে ভয়। তিনি তো জীবনে কেবল ক্যালকুলেটরেই বোতাম টিপেছেন! তবুও বীরের মতো কম্পিউটারের সামনে বসলেন।
প্রথমেই মাউস হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন। তারপর গম্ভীরভাবে পকেট থেকে বিস্কুট বের করে মাউসকে খাওয়াতে গেলেন।
শীলা দি চিৎকার করে উঠলেন—
—“আরে বিমলদা, এটা আসল ইঁদুর না, মাউস!”
অফিস তখন হাসতে হাসতে কেঁপে উঠল।
কিছুক্ষণ পর তিনি কীবোর্ডে টাইপ করা শুরু করলেন। কিন্তু টাইপ করার বদলে একটার পর একটা বোতাম একসাথে চাপতে লাগলেন। হঠাৎ পর্দায় সব অদৃশ্য হয়ে গেল।
বিমল আতঙ্কে বলে উঠলেন—
—“স্যার, কম্পিউটারটা আমি মেরে ফেলেছি!”
বস দৌড়ে এলেন, দেখলেন স্ক্রিনটা শুধু ব্ল্যাঙ্ক হয়ে আছে। বস বললেন,
—“মনিটরের পাওয়ার অফ করে দিয়েছ!”
বিমল আবার শান্ত গলায় বলল,
—“ওহ! মানে কম্পিউটার একটু ঘুমাচ্ছিল।”
অফিস আবার হাসির স্রোতে ভেসে গেল। বস হেসে কপালে হাত ঠুকে বললেন,
—“বিমলবাবু, আপনি আছেন বলেই এই অফিসটা এখনও জীবিত। নইলে আমরা সবাই কম্পিউটারের মতো ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যেতাম।”
সপ্তম পর্ব – ছুটির ছলনা
বিমলবাবু অফিসে ঢুকেই গম্ভীর মুখে বসের ঘরে গেলেন। বস অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন—
—“আবার কী হয়েছে?”
বিমলবাবু হাত জোড় করে বললেন,
—“স্যার, আজকে আমাকে ছুটি দিতে হবে। খুব জরুরি।”
বস কপাল কুঁচকে বললেন,
—“আচ্ছা, কী কারণ?”
বিমল গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
—“স্যার, আমার মাছ অসুস্থ হয়ে গেছে।”
বস হাঁ করে তাকালেন।
—“মাছ? সেটা আবার কীভাবে?”
বিমল খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
—“গতকাল ট্যাংকে অতিরিক্ত হাওয়া ঢুকেছিল, এখন মাছটা সর্দি কাশিতে ভুগছে। আমাকে ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে।”
অফিসের সবাই শুনে হো হো করে হেসে উঠল। শীলা দি বললেন,
—“মাছের আবার সর্দি কাশি হয় নাকি?”
বিমল গর্বের সঙ্গে জবাব দিল—
—“অবশ্যই হয়। কাশির সময় ওর মুখ থেকে বুদবুদ ওঠে!”
বস এবার হাসি চাপতে না পেরে বললেন,
—“বিমল, তোমাকে যদি ছুটি দিই, তবে কাল তুমি আসবে না কারণ টবের গাছটা হাঁচি দিয়েছে।”
বিমল হেসে গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল—
—“স্যার, একদম ঠিক ধরেছেন! আমার গাছেরও ডাক্তার দেখানো লাগবে।”
অফিস আবার একেবারে হাসিতে কাঁপতে লাগল।
অষ্টম পর্ব – টাইপিস্টের টাইপো
অফিসে সেদিন টাইপিস্ট অসুস্থ হয়ে আসতে পারেনি। বস চিন্তায় পড়ে গেলেন। হঠাৎই বিমলবাবু বুক ফুলিয়ে বললেন—
—“স্যার, টেনশন করবেন না। আজ আমি টাইপ করব।”
সবাই অবাক। বিমল তো কীবোর্ড আর হারমোনিয়ামের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। তবুও তাকে বসতে দেওয়া হলো।
বস চিঠির ড্রাফট দিলেন—
“Respected Sir, We are very happy to inform you…”
বিমল টাইপ শুরু করলেন। কিন্তু ‘happy’ টাইপ করতে গিয়ে গুলিয়ে ফেললেন। স্ক্রিনে দেখা গেল—
“We are very hungry to inform you…”
অফিস একেবারে হেসে খুন!
বস দাঁত চেপে বললেন—
—“বিমল, আবার চেক করো।”
বিমল আবার টাইপ করলেন, কিন্তু এবার আরও কাণ্ড—
“We are very hairy to inform you…”
শীলা দি চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলেন হাসতে হাসতে।
বস রাগে লাল হয়ে বললেন—
—“Enough! তুমি কি করতে চাইছো?”
বিমল শান্ত গলায় জবাব দিল—
—“স্যার, আমি তো চেষ্টা করছি সত্যি লেখার। অফিসে সবাই ক্ষুধার্ত থাকে, আর আপনার মাথার চুলও একটু কমেছে…”
বসও এবার হেসে ফেললেন।
—“বিমল, তোমার টাইপিং-এ অফিসের আসল সত্য বেরিয়ে আসছে।”
অফিস আবার একেবারে হাসিতে ফেটে পড়ল।
নবম পর্ব – ফাইলের ফাজলামি
অফিসে হঠাৎ করে জরুরি অডিট এল। বস সবাইকে নির্দেশ দিলেন—
—“সব ফাইল ঠিকঠাক করে সাজাতে হবে। অডিটরকে যেন একটা ভুলও না পাওয়া যায়।”
সবাই তৎপর হয়ে কাজ শুরু করল। টেবিলের ওপর কাগজ, ফাইল, ডকুমেন্ট—সব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। একমাত্র বিমলবাবু বসলেন যেন গুরুর ধ্যানে।
হঠাৎ তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন—
—“স্যার, আমি সব ফাইল একেবারে পারফেক্ট করে সাজিয়ে দিয়েছি।”
বস খুশি হয়ে এগিয়ে এলেন। তারপর দেখলেন—
সব ফাইলের কভার থেকে নাম-ঠিকানা, তারিখের লেবেল কেটে ফেলে একেবারে রঙ অনুযায়ী সাজানো!
একটা ফাইলে লেখা থাকার কথা—“Salary Record 2025”, সেখানে শুধু নীল কভার, আরেকটা ফাইলে—“Audit Expense Report”, সেটা হয়ে গেছে লাল কভার।
বস হাঁ করে তাকালেন—
—“বিমল! তুমি সব নাম কেটে দিলে কেন?”
বিমল গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল—
—“স্যার, অডিটর যদি কিছু না পড়তে পারে, তাহলে তো কোনও ভুল ধরতেই পারবে না।”
অফিসে সঙ্গে সঙ্গেই হেসে খুন অবস্থা। শীলা দি কপালে হাত ঠুকে বললেন—
—“বিমলদা, আপনি একেবারে জিনিয়াস!”
বসও মাথা নেড়ে হেসে বললেন—
—“তোমাকে যদি আমি রাখি, তবে অডিটররা চাকরি হারাবে!”
অফিস আবার একেবারে গর্জন করে উঠল হাসিতে।
দশম পর্ব – বসের জন্মদিনের ঝামেলা
অফিসে সেদিন খুব উচ্ছ্বাস। বসের জন্মদিন বলে সবাই মিলে কেক, ফুল, সাজসজ্জা করেছে। সবাই ঠিক করেছে—কেক কেটে শুভেচ্ছা জানাবে।
বস এসে বসতেই সবাই একসাথে বলল—
—“Happy Birthday, Sir!”
কিন্তু বিমলবাবু আবার আলাদা কাণ্ড করলেন। তিনি কেকের সামনে গিয়ে বললেন,
—“স্যার, আজকে আমি আপনার হয়ে কেক কাটব।”
বস অবাক হয়ে বললেন—
—“কেন রে?”
বিমল গম্ভীরভাবে বলল—
—“কারণ আপনার বয়স বাড়ল মানে আমাদের কাজও বাড়ল। সুতরাং কষ্টটুকু আমি ভাগ করে নিলাম।”
অফিস হেসে কুটিকুটি।
এরপর কেক কাটা হলো। সবাই এক টুকরো করে খেল। কিন্তু দেখা গেল, বিমল নিজের জন্য আলাদা করে সবচেয়ে বড়ো টুকরো কেটে নিয়েছে। শীলা দি বললেন—
—“আরে বিমলদা, এটা তো অন্যায়!”
বিমল মিষ্টি হেসে জবাব দিল—
—“না না, অন্যায় নয়। বসের জন্মদিন মানে তো অফিসের জন্মদিনও বটে। আর অফিসের সবচেয়ে বড়ো অংশ আমি—তাই আমাকেই বড়ো টুকরো খেতে হবে।”
বসও এবার হেসে কপালে হাত চাপলেন। বললেন—
—“বিমল, তুমি সত্যিই এই অফিসের প্রাণ। তোমাকে ছাড়া অফিস কল্পনাই করা যায় না।”
সবাই হাততালি দিয়ে হো হো করে উঠল। কেকের মিষ্টির সঙ্গে হাসির রস মিশে গেল পুরো ঘরে। আর বিমল, নির্লজ্জ ভঙ্গিতে নিজের টুকরোটা খেয়ে ফেলল, যেন কিছুই হয়নি।
***