• Bangla - তন্ত্র

    রক্তছাই

    অরিত্র ভট্টাচার্য   পর্ব ১: নিশির আহ্বান পূর্ব ভারতের গভীর এক প্রাচীন গ্রাম, নাম তার ঝোপশিরি। চারপাশে ঘন সেগুন, শাল, আর মহুয়া গাছের জঙ্গল; গ্রামের ঘরগুলো খড়ের ছাউনি দেওয়া, কাদামাটির দেয়ালে শ্যাওলা জমে আছে। দিনের বেলায় এই গ্রামকে নিরীহ মনে হলেও, সন্ধ্যা নামলেই এক অদ্ভুত সন্ত্রস্ত ভাব নেমে আসে। বাচ্চারা আঁচল আঁকড়ে ধরে মায়ের পাশে বসে থাকে, পুরুষেরা দাওয়ায় মশারি গুটিয়ে মন্ত্র পড়ে আগুন জ্বালায়, আর নারীরা খুব গোপনে দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়। তারা জানে, এই অরণ্যের ভেতর কিছু আছে—যা মানুষ নয়, আবার সম্পূর্ণ অতিপ্রাকৃতও নয়। অয়ন কলকাতার এক তরুণ গবেষক। বয়স উনত্রিশ, কপালে হালকা ভাঁজ, চোখে পুরু ফ্রেমের…

  • Bangla - তন্ত্র

    মায়ার শিকল

    অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় পর্ব ১ : শ্মশানের গহ্বর রাত তখন ন’টা পেরিয়েছে। আষাঢ়ের ভিজে হাওয়া কলকাতার গলিগুলোকে এক অদ্ভুত কুয়াশার মতো জড়িয়ে রেখেছে। দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গার ধারে ছোট্ট একটা শ্মশান—লেখাপড়ার বইতে নাম নেই, লোকমুখে প্রচলিত কেবল—“কালকেতুর আখড়া”। স্থানীয়রা বলে, এখানে শবদাহ হলে আগুন নেভার পরে অচেনা ছায়ারা ভিড় করে, যেমন করে কাক ভিড় করে ছাইয়ের স্তূপে। অয়ন, জাদুঘরে কাজ করা এক তরুণ গবেষক, সেই শ্মশানের দিকে এগোচ্ছিল। তার হাতে মোটা চামড়ার ফাইল, ভেতরে কিছু পুরোনো তালপাতার পুঁথি। সেগুলোর অক্ষর কালো হয়ে গিয়েছে, তবু সেখানে যে শব্দ লেখা আছে, সেগুলো অয়ন এক সপ্তাহ ধরে পড়ছে। শব্দগুলোতে লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত আকর্ষণ—“অমায়া তন্ত্র”—এক গোপন…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    চিত্রগুপ্তের খাতা

    শঙ্খ সেন ১ কলকাতার গরমটা যেন এ বছর আগের থেকেও একটু বেশি বেয়াড়া হয়ে উঠেছে। স্টেট আর্কাইভস বিল্ডিং-এর ভেতরে যদিও পাখার শব্দ আর পুরনো কাগজের গন্ধ ছাড়া কিছু নেই, তবুও ঘাম চুঁইয়ে পড়ে অনির্বাণ মিত্রর কপাল দিয়ে। সে কাজ করে ৩ নম্বর সেকশনে — যেখানে ফাইল নম্বর, শ্রেণি, মাইক্রোফিল্মের ক্যাটালগ এইসব ঘেঁটে দিনের পর দিন কাটে। অনির্বাণ একজন আর্কাইভ অ্যাসিস্ট্যান্ট, বয়স ত্রিশের কাছাকাছি, চোখে চশমা, গলায় ঝুলে থাকা একটা আইডি কার্ড আর স্যাঁতসেঁতে ফাইল ঘাঁটার অভ্যেস। সেদিনও ছিল একটা ক্লাসিক বুধবার। দুপুর নাগাদ অনির্বাণকে ডাকা হয় ৫ নম্বর ভল্টে, যেখানে এক কলেজের অধ্যাপক এসেছেন ১৯৭৬ সালের এক বিশেষ ফাইল খুঁজতে।…

  • Bangla - তন্ত্র

    অঘোরিণী

    অনির্বাণ বসু পর্ব ১: শ্মশানের আগুনের নিচে শ্মশানের রাতগুলো বড় নিঃশব্দ হয়, কিন্তু সেই রাতে কিছু ছিল যা নিঃশব্দ ছিল না। ছিল আগুনের গর্জন, ছিল মাটির নিচ থেকে উঠে আসা ধোঁয়ার মতো এক দীর্ঘশ্বাস। কাশীপুরের পুরনো শ্মশানঘাটে সেই রাতে আবার জ্বলে উঠেছিল চিতা, অথচ কারো মৃতদেহ ছিল না। অন্তত চোখে দেখা যায়নি। গ্রামের মানুষজন বলত—এই শ্মশানে কেউ যায় না চাঁদ না উঠলে। অথচ সেদিন ছিল অমাবস্যা, আকাশে ছিল না একফোঁটা আলো, কেবল আগুনের দীপ্তি কাঁপিয়ে দিচ্ছিল গাছের ছায়া। কুয়াশা, ধোঁয়া আর ছাই—সব মিশে এক অদ্ভুত গন্ধ তৈরি করছিল। হঠাৎ বাতাস থেমে গেল। চিতার সামনে বসে ছিল সে। সাদা ছাইয়ের মতো…