অভিজিৎ রায় পর্ব ১ কালো মেঘে ঢাকা সন্ধেটা যেন গ্রামের বুক থেকে আলোটুকু শুষে নিয়েছিল। নদীর ধারে পেঁচানো পথ দিয়ে হাঁটছিল অর্ণব। কলকাতা থেকে সে এসেছিল কিছু কাজের সূত্রে, কিন্তু এই গ্রামে এসে তার মনে হচ্ছিল, শহরের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পাওয়া মানে এই নয় যে মন শান্ত হয়ে যাবে। বরং প্রকৃতির অন্ধকারের ভেতরেই এক অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা ঘিরে ফেলছিল তাকে। গ্রামটার নাম কাশীপুর, লোকসংখ্যা অল্প, আর চারদিকে ঘন জঙ্গল। তার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল এক পুরোনো বাড়িতে—লোকেরা যাকে বলে মজুমদারদের পরিত্যক্ত ভিটে। লোকজন তাকে আগেই সাবধান করেছিল, রাত হলে যেন একা বাইরে না বেরোয়। অর্ণব ভেবেছিল, এগুলো নিছক গ্রামীণ গুজব, যেখানে ভূতের…
-
-
তনয়া সেন বিকেলের শেষ আলোয় যখন সূর্য পাহাড়ের গায়ে ধূসর হয়ে গলে আসছিল, তখনই অরণ্যের বাস এসে পৌঁছল ছোট্ট গ্রামটায়। বাস বলতে আসলে একটা পুরোনো মিনিবাস, জানালার কাচ ঝাপসা, সিটের চামড়ায় ফাটল। গাঁয়ের নাম রাধাপুর—এমন নাম মানচিত্রে খুঁজলেও পাওয়া মুশকিল। তবু অরণ্যের মতো ফটোগ্রাফারের কাছে এই জায়গার টান ছিল অন্যরকম। শহরের কোলাহল, নামজাদা প্রকল্প, নামী রিসর্ট নয়—বরং অচেনা, অনাবিষ্কৃত জায়গার মধ্যে লুকোনো প্রকৃতির ছবি তুলতে তার সবচেয়ে ভালো লাগে। অরণ্যের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটা ভারী, ভিতরে ক্যামেরা, লেন্স, ত্রিপড আর কিছু নোটবুক। বাসস্ট্যান্ডে নেমে চারপাশে তাকাতেই সে বুঝল, এই গ্রাম যেন সময়ের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁচা রাস্তা, খড়ের চালের ঘর, বাচ্চাদের…
-
মেঘলা রায় শিমুলডাঙা গ্রামের আকাশ যেন চিরকাল হালকা সীসের রঙে ঢেকে থাকে। গা ছমছমে নীরবতা এখানে শব্দের চেয়েও বেশি জোরালো। সেই নীরবতার বুক চিরে যে ঘরটা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তার নাম—রায়চৌধুরী বাড়ি। টালির ছাদ ভেঙে পড়েছে অনেকখানি, জানালার পাল্লাগুলো খসে পড়ে আছে মাটিতে, কিন্তু তবুও সে একটা জীবন্ত শরীরের মতো মনে হয়—চুপচাপ শ্বাস নিচ্ছে, তাকিয়ে আছে। তিন বছর আগের কথা। অর্ক মিত্র, কলকাতার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র, গবেষণার খোঁজে এসেছিল এই গ্রামে। বিষয়: ১৯৪০ সালের শেষদিকে গায়েব হয়ে যাওয়া রায়চৌধুরী পরিবারের কাহিনি। কেউ বলে জমিজমা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল, কেউ বলে অভিশাপ, কেউ বা বলে—ওই বাড়ির ভেতর একটা পুকুর…
-
নবনীতা বসু পর্ব ১: “যে চিঠি লেখা হয়নি কখনও” কলকাতার গলিগুলো রাত বারোটার পর অন্যরকম হয়ে যায়। আলো কমে আসে, ট্রামলাইনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়াগুলো যেন একটু লম্বা হয়, আর পুরনো বাড়িগুলোর জানালায় সময় দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক যেমন দাঁড়িয়ে থাকে ৩৫, বেণীপুর লেনের পুরনো দোতলা বাড়িটা, যার একতলায় ভাড়া থাকে অনুরাধা। সদ্য চাকরি পেয়েছে, একটা ডিজাইনিং এজেন্সিতে ক্রিয়েটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট। কলেজ স্ট্রিট থেকে বেশি দূরে নয় এই ফ্ল্যাট, আর বাড়িটাও সস্তায় মিলে গেছে বলে না ভাবলেও চলে। বাড়ির ভেতর ঢুকতেই একটা পলকা গন্ধ এসে লাগে তার নাকে—পুরোনো কাপড়, একটু ভ্যাপসা, আর কোথাও ধুলো মাখা কাঠের। অনুরাধা যদিও গন্ধ নিয়ে খুব একটা…
-
Anindita Pal Chapter 1: The Momo Plan It was one of those sticky summer nights in Kolkata when the ceiling fans felt more like an insult than comfort. Power had just returned after a one-hour load shedding, and the five of them—Rik, Mou, Shaon, Neel, and Isha—were sprawled on the floor of Shaon’s living room, pretending to care about a movie none of them had chosen. “Let’s go get momos,” said Mou, sitting up with the sudden clarity of someone struck by divine hunger. “Real ones. Spicy ones. From that stall near the Bata showroom.” Neel raised an eyebrow. “At…
-
ইমন দে পর্ব ১ শিলিগুড়ির দক্ষিণ চৌরঙ্গী এলাকায় একটা পুরনো দোতলা বাড়ি। লাল ইটের সেই বাড়িটা বেশিরভাগ সময়ই নির্জন। দিনের বেলায় স্থানীয়রা পাশ কাটিয়ে যায়, রাত হলে কেউই পথ মাড়ায় না। লোকজন বলে, বাড়িটার পাশের গলিতে মাঝরাতে কার যেন হেঁটে যাওয়ার শব্দ শোনা যায়, আবার জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় এক মেয়ের মুখ—মাথায় লাল ঘুঙুরের টিপ, চোখে নিঃশব্দ আর্তি। এই এলাকাতেই নবাগত পরিবার দত্তরা নতুন ভাড়া নিয়েছে। রণদীপ দত্ত, তার স্ত্রী পৌলমী এবং একমাত্র মেয়ে রিয়া। পৌলমীর স্কুলে চাকরি হয়েছে, আর রণদীপ ব্যাঙ্কে। বাড়িভাড়া কম, চারপাশে গাছপালা, তাদের বেশ ভালোই লেগেছিল। প্রতিবেশীরা প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে আর কিছু বলেনি।…
-
অমিতাভ ধর অধ্যায় ১: কুয়াশার পথ রাত দশটা বাজে। রাহুল গাড়ির জানালার কাচ খুলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। হিমেল হাওয়া গাল ছুঁয়ে যাচ্ছে। গাড়ি উঠছে পাহাড় বেয়ে—চুনাভাট্টি, দার্জিলিং-এর এক বিস্মৃত পাহাড়ি গ্রাম, যেটা এখনো পর্যটনের খাতে উঠে আসেনি। পাশে বসা অর্ণব, হাত গুটিয়ে মোবাইলে পাহাড়ি মানচিত্র ঘাঁটছে।— “এটা নিশ্চয়ই শেষ মোড়,” বলে নয়না, জানালার কুয়াশা মোছার চেষ্টা করতে করতে।— “নিশ্চয়ই?” হেসে ওঠে ঋদ্ধি, “অবশ্যই না! এখনো এক ঘণ্টা বাকি।”— “এই ট্রিপটা তুই কেন ঠিক করলি ঋদ্ধি?” প্রশ্ন করে রাহুল।ঋদ্ধি কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দেয়, “ঠাকুমার ডায়েরিতে এই গ্রামের কথা ছিল। ছোটবেলায় অনেকবার শুনেছি… কিন্তু এবার দেখতে এলাম।” গাড়ির ড্রাইভার—একজন চুপচাপ…