শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় ১ সকাল সাতটার ঠিক আগেই, গলির মাথার সেই ছোট্ট চায়ের দোকানে যেন জীবনের রিহার্সাল শুরু হয়। শিবুর দোকান—আসলে এক বাঁশের ফ্রেমে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে বানানো, একটা মোড়া আর তিনটে বেঞ্চ, পাশে একটা রেডিও ঝুলছে সুতোর টানে—এইখানেই বসে ভবানী কাকু তাঁর রাজত্ব চালান। পাঞ্জাবি-ধুতি পরা, সাদা চুলে হালকা তেল, আর সেই চিরচেনা গোল চশমার আড়ালে মুখভর্তি আত্মবিশ্বাস। হাতে এক কাপ লাল চা নিয়ে বসে থাকেন সবার অপেক্ষায়, যেন এই পাড়ার সকল কথোপকথনের তিনি কর্ণধার। চা-র তাপ, পত্রিকার খবর আর ফুটবল-রাজনীতি-সিনেমা নিয়ে তাঁর ধ্রুপদী বিশ্লেষণ—সব মিলে এক নিখুঁত সকাল তৈরি হয়। “শিবু, চিনি কম নিস! কালও চাপে পড়ে রেণুদি বলল,…
-
-
মৈত্রেয়ী বসু অধ্যায় ১: “নবাগত” কলকাতার ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে খানিক দূরে, টালিগঞ্জের এক পুরনো গলিতে একটি তিনতলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল অভিষেক আর মীনাক্ষী। নতুন বিয়ে, নতুন জীবন, আর এই নতুন ভাড়া বাড়ি—সবকিছুতেই একরকম সতেজ উত্তেজনা কাজ করছিল। বাড়িটির গায়ে সময়ের ছাপ স্পষ্ট; ধূসর দেয়ালে ফাটল, জানালার পাল্লাগুলো পুরনো, আর সিঁড়িতে কাঠের ঘষাঘষির শব্দ যেন নিজেই গল্প বলতে পারে। তবে বাড়ির মালিক মিত্রবাবু বলেছিলেন, “ভালো বাড়ি, হাওয়া-বাতাস যথেষ্ট, আর শহরের ভিড় থেকে দূরে। কেবল পুরনো, তাই লোকজন আগ্রহ দেখায় না।” মীনাক্ষীর বুকের গভীরে তখন এক ধরনের শীতল বাতাস খেলে যাচ্ছিল, যেন এই পুরনো বাড়ির দেয়ালগুলো শুধু ইট-কাঠের নয়, অনেক…
-
প্ৰনব দত্ত এক পত্রটা এসেছিল একেবারে অচেনা কাগজে, যেন তালপাতার কপি, তাতে আঁচড়ে আঁকা অদ্ভুত সব অক্ষর — সংস্কৃতের মতো, কিন্তু অচেনা ছন্দে বাঁধা। কলকাতার কলেজ স্টাফরুমে বসে চা খেতে খেতে যখন ঋদ্ধিমান ভট্টাচার্য চিঠিখানা খোলে, তখন সে ভাবেনি এমন কিছুর মুখোমুখি হবে। “আপনার পাণ্ডিত্য ও ঋগ্বেদের উপর আপনার বিশেষ জ্ঞান সমীহ জাগায়। অতএব, আপনাকে ত্রয়োদশ তিথির নবচণ্ডী যজ্ঞে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি — মহাভৈরবী মন্দির, দক্ষিণ নবগ্রাম।” চিঠির নিচে কোনো নাম নেই, শুধু একটা সিলমোহর — গাঢ় লাল, আর তার উপর খোদাই করা এক নারীর মুখ, যার কপালে শূন্য। প্রথমে মজা ভেবেছিলেন ঋদ্ধিমান, কেউ হয়তো বানিয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু জায়গাটার…