নন্দিনী পাল ১ বাতাসটা ভারি ছিল, যেন চোখের পাতায়ও ধুলো জমেছে। ২১৮০ সালের কলকাতা, এখন আর কলকাতা নেই—নাম পাল্টে হয়েছে “এয়ারজোন-৯”। শহরের আকাশে সবুজ নেই, কেবল ধূসর ও গাঢ় বাদামি রঙের এক বিষাক্ত স্তর যা দিনের আলোকেও ম্লান করে দেয়। মানুষ হাঁটে ফিল্টার মাস্কে মুখ ঢেকে, শিশুদের কৃত্রিম ফুসফুসে জন্ম দিতে হয়। আর সেই অদ্ভুত পৃথিবীর এক কোণে, কাঁচের ছাদের নিচে একটি ছোট্ট কেবিনে বসে আছে আরুণিকা সেন, চোখে ক্লান্তি, হাতে ট্যাবলেট, আর সামনে মায়ের বিছানা—ভেন্টিলেটরে নিঃশব্দে শুয়ে থাকা এক জীর্ণ শরীর। মায়ের চোখ বন্ধ, তবে মন খোলা—কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ যেন এ ঘরের একমাত্র জীবনের চিহ্ন। হাসপাতালের এই “অক্সি-ওয়ার্ড” প্রতি…
-
-
নীলাদ্রি দে এক হাসপাতালের বহির্বিভাগের করিডোরে হাঁটছিলেন ড. অর্ণব মুখার্জী, সবে মাত্র দুপুর গড়িয়েছে। এক হাতে কফির কাপ, অন্য হাতে মেডিকেল ফাইল। এই হাসপাতালেই তিনি রেডিওলজি বিভাগের প্রধান, গত আট বছর ধরে। সবকিছুই যেন রুটিনের মতো চলছিল, যতক্ষণ না রিসেপশন থেকে ফোন আসে—“ডাক্তারবাবু, একজন নতুন রোগী এসেছেন, বুকের ব্যথা নিয়ে, কিন্তু একটু অদ্ভুত আচরণ করছেন।” ড. অর্ণব চোখ কুঁচকে রুমে ঢুকলেন। রোগীর নাম রোহিত সেন, বয়স আনুমানিক সাতাশ-আটাশ, স্মার্ট পোশাক, চুপচাপ চোখ। প্রথমে দেখে মনে হয় না খুব গুরুতর কিছু, তবে রোহিতের চোখদুটো যেন ঘুমহীন আতঙ্কে ধকধক করছিল। প্রশ্নের জবাব দিল সংক্ষেপে—“বুকটা মাঝে মাঝে এমন টান মারে, যেন কেউ ভিতর…
-
সৌম্যজ্যোতি ঘোষাল সকালটা ছিল অস্বাভাবিক রকমের শান্ত। পাখিদের কিচিরমিচির যেন কেউ কেটে নিয়েছে আকাশ থেকে। উত্তর কলকাতার বাঘবাজারের গলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে রেণুকা দেবী প্রতিদিনের মতো এসে ঢুকলেন হরিপদ দত্তর বাড়িতে। পুরনো রকমের বাড়ি, মেঝের ওপর কাঠের পাটাতন, খোলামেলা বারান্দা আর লোহার গেট। হরিপদবাবু সাধারণত খুব ভোরে উঠতেন—বারান্দায় বসে জল খেতেন, আর তার পোষা শালিখ পাখি ‘কলু’-কে খাওয়াতেন। কিন্তু আজ বারান্দার দরজা খোলা, অথচ তিনি কোথাও নেই। পাখির খাঁচা পাশে ঝুলছে, কলু ঘাড় একদিকে কাত করে তাকিয়ে আছে রেণুকার দিকে, আর বলছে সেই অদ্ভুত কথাটি—”তিনটে বাজে… ও পেছনে তাকিও না!” কাঁপা কাঁপা পায়ে রেণুকা এগিয়ে গেলেন। বারান্দার কোণায়, বাঁশের চেয়ারটিতে…