• Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    কালো শাড়ির ভোর

    চৈতালি ঘোষ কলকাতার এক আর্দ্র গ্রীষ্মের দুপুরে সায়ন্তনী মুখার্জী তার চেম্বারে বসে ছিল, ডেস্কে জমে থাকা কেস ফাইলের পাতাগুলো উল্টাচ্ছিলেন। জানলার বাইরে থেকে ভেসে আসছিল রাস্তার গরম ধুলো আর রিকশাওয়ালার ক্লান্ত গলার আওয়াজ। এদিনটা অন্য দিনের মতোই ছিল, যতক্ষণ না দরজায় ধীর, দ্বিধাগ্রস্ত কড়া নাড়ার শব্দ হয়। “ভেতরে আসুন,” বলতেই দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, এক তরুণী — বয়স তিরিশের কম — সাদামাটা কটন সালোয়ারে, মুখে চাপা আতঙ্কের ছাপ। তার হাতে এক পাতলা ফাইল আর একটি ছোট ব্যাগ। চেয়ার টেনে বসতে বললেও মেয়েটি প্রথমে বসেনি, যেন নিজেকে সামলাতে পারছে না। অবশেষে বসে, এক গ্লাস জল হাতে নিয়েই সে ফাইলটি সায়ন্তনীর…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প - সামাজিক গল্প

    অন্তঃসারশূন্য

    অনিন্দিতা ধর শীতের সকালের আলো জানালার পর্দা ছুঁয়ে ঘরে ঢুকছিল ধীরে ধীরে। দেয়ালের বইয়ের তাকের পাশে দাঁড়িয়ে দীপ্তেন্দু বসু আয়নায় নিজেকে দেখছিলেন। আয়নায় যেন সবসময়ই তার চেহারায় একটা সন্তুষ্টির ছায়া ধরা দেয়— একটা “আমি সমাজের জন্য কিছু করছি” ধাঁচের আত্মতৃপ্তি। আয়নার সামনে ছোট্ট টেবিলে রাখা ছিল ঘড়ি, পারফিউম, স্কুল ব্যাজ আর একটা পুরোনো খাতার পাতা— যেখানে কাল রাতেই লিখেছিলেন, “নারীর মর্যাদা রক্ষায় সমাজের ভূমিকা”। আজ শহরের এক নামী স্কুলে আলোচনা সভা; তিনিই প্রধান বক্তা। টেবিলের ওপর রাখা ছিল গীতার বানানো লাল চা। গীতা— গৃহপরিচারিকা মঞ্জুর মেয়ে, বয়স চোদ্দো, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে প্রায় এক বছর হলো, তবু তার চায়ের স্বাদ দীপ্তেন্দু…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    চতুরঙ্গের রহস্য

    অর্ঘ্য দত্ত অধ্যায় ১: অজানা উত্তরাধিকার তীর্থর জীবনের সেই দিনটি যেন অন্য সব দিনের মতোই শুরু হয়েছিল, অথচ শেষ হয়েছিল এমন এক ঘটনার মধ্যে যা তার ভাবনার সীমার অনেক বাইরে। সকালে কলেজের ক্লাস শেষ করে বিকেলে বাড়ি ফিরতেই কাকা এসে বলল, দাদুর পুরনো ঘরের জিনিসপত্র কিছু বাছাই করতে হবে, আর সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তীর্থকে, কারণ দাদু নাকি প্রায়ই বলতেন কিছু জিনিস কেবল তার প্রিয় নাতির হাতেই থাকা উচিত। দাদুর সেই ঘরটায় ঢুকতেই তীর্থর মনে হল যেন পুরনো কালের গন্ধে ভিজে আছে প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি আসবাব। টালির চালের নীচ দিয়ে হালকা আলো এসে পড়ছে ধুলো জমা ট্রাঙ্ক আর বুকশেলফের ওপরে।…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    কুয়াশার ভিতর সত্যি

    সৌমেন পাল কুন্দিলপুর — ছোট্ট একটি গ্রাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পেটের ভেতর সেঁধিয়ে থাকা, যেন চুপিচুপি বেঁচে থাকা এক টুকরো সময়। এখানে ভোর হয় ধানক্ষেতে পাখিদের ডাকে, আর বিকেল নামে কুঁচো মাছ ধরা ছেলেদের হৈচৈয়ে। ঝিলের ধারে প্রাচীন বটগাছটা আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, যেমনটা ছিল পঁচিশ বছর আগে — যখন অভয়চরণ মণ্ডল প্রথম এই গ্রামে এসেছিলেন সরকারি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে। মাথায় তখন পাকা চুল তেমন ছিল না, চোখের কোণেও ক্লান্তির রেখা ছিল না। তিনি তখন সদ্য কলেজ-ফেরত এক আদর্শবাদী তরুণ, বিশ্বাস করতেন শিক্ষাই পারে সমাজকে বদলাতে। গ্রামের মাটির রাস্তা, খড়ের ঘর, ঘোলা জলের পুকুর, অবিশ্বাস আর কুসংস্কারে ভরা মন…