• Bangla - ভূতের গল্প

    শ্মশানের প্রহরী

    সুমন্ত বসাক অধ্যায় ১: নতুন চাকরি অনির্বাণের বয়স মাত্র চব্বিশ। স্নাতক পাশ করার পর থেকেই কাজের খোঁজে এখানে-ওখানে ছুটছে, কিন্তু ভাগ্য যেন তাকে বারবার ঠকাচ্ছে। শহরে একসময় অনেক চেষ্টা করেছিল, কল সেন্টারের চাকরি থেকে শুরু করে প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতার জন্য সাক্ষাৎকার দিয়েছে, কিন্তু কোথাও ঠিকমতো জায়গা হয়নি। গ্রামে ফিরে আসতে হয়েছে খালি হাতে। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে, আর মায়ের অসুখে ওষুধের খরচ মেটানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় গ্রামের মুন্সি হঠাৎ একদিন খবর দিল—পঞ্চায়েতের তরফ থেকে প্রহরীর একটা পদ খালি আছে। তবে জায়গাটা হলো গ্রামসংলগ্ন পুরনো শ্মশান। শুনে অনির্বাণের শরীর শিউরে উঠেছিল। শ্মশান পাহারা দেওয়া…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    শ্মশানের ডাকঘর

    ১ অমল ছিল এক সাধারণ গ্রামীণ ডাকপিয়ন, যার জীবন প্রতিদিনের রুটিন আর নির্দিষ্ট পথেই আবদ্ধ ছিল। সকালবেলায় সে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ত, চিঠির ব্যাগ কাঁধে নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেত, আর বিকেলের মধ্যেই সব বিলি শেষ করে বাড়ি ফিরত। কিন্তু সেদিনটা অদ্ভুতভাবে ভিন্ন হয়ে দাঁড়াল। অফিসে কিছু অতিরিক্ত কাজের জন্য তাকে দেরি হয়ে গেল, আর সন্ধ্যার আলো যখন ম্লান হতে শুরু করল, তখনও অমল চিঠির ব্যাগ নিয়ে রওনা দেয়নি। সে জানত, গ্রামের মানুষরা চিঠির অপেক্ষায় থাকে, আর দেরি করলে তাদের মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে। তাই অমল নিজের ক্লান্তি উপেক্ষা করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। পথে হাঁটতে হাঁটতে সে লক্ষ্য করল,…

  • Bangla - তন্ত্র

    রুদ্রাক্ষের অভিশাপ

    অয়ন চক্রবর্তী পর্ব ১: উত্তরাধিকার কলকাতার ব্যস্ত জীবন থেকে অনেক দূরে, পুরোনো গ্রাম বাড়িটায় পা রাখতেই অর্কের মনে হল যেন সময় থমকে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিক নিস্তব্ধ, কেবল বাতাসে খেজুরপাতার শোঁ-শোঁ শব্দ। অর্ক বহু বছর পর ফিরেছে এখানে—তার ঠাকুরদার মৃত্যুর খবর পেয়েই। ছোটবেলা কেটেছিল এই বাড়িতেই, তারপর বাবা-মায়ের সঙ্গে শহরে উঠে যাওয়া। ঠাকুরদা ছিলেন একেবারে গ্রামীণ মানুষ, কিন্তু তার চোখে একটা অদ্ভুত দীপ্তি ছিল, যেন তিনি অনেক অজানা কিছু জানতেন। বাড়ির ভেতর পা রাখতেই ধুলোমাখা গন্ধ নাকে এল। মাটির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে, সিঁড়িতে শেওলা জমেছে। কিন্তু ঠাকুরদার ঘরটা ছিল যেমন ছিল, তেমনই আছে। বাঁশের খাট, একপাশে বইয়ের তাক, আর পুরোনো কাঠের…

  • Bangla - তন্ত্র

    শবনৃত্য

    ঋত্বিক বসু পর্ব ১ শ্মশানের ধোঁয়া যেমন ধীরে ধীরে রাতের বাতাসে মিলিয়ে যায়, তেমনই গোপালচন্দ্রর জীবনও এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় মিশে গেছে। সে এই শ্মশানকর্তার কাজ করছে প্রায় পনেরো বছর। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত—কখনও কফিনে ঢাকা শরীর, কখনও শবযাত্রার সানাই, আবার কখনও হাহাকার করা আত্মীয়দের চোখের জলে ভিজে যাওয়া কাঠের চৌকি। তার কাছে সব যেন একই রকম। শ্মশান মানেই মৃত্যু, মৃত্যু মানেই চুপচাপ এক ছায়ার দিকে মিলিয়ে যাওয়া। কিন্তু সে রাতে কিছু যেন অন্যরকম ছিল। আগুন নিভে এসেছে, শেষ কাঠটুকু ছাইয়ে পরিণত হয়েছে। গোপালচন্দ্র বাঁশের ঝুড়ি হাতে গঙ্গার জলে ভিজিয়ে ছাই ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। চারদিক নির্জন, কেবল রাতের পেঁচার ডাক আর…

  • Bangla - তন্ত্র

    পঞ্চমন্ত্র

    ঋতব্রত চক্রবর্তী পর্ব ১ : স্বপ্নের শুরু রাতের নিষ্প্রভতা যেন লালচে ছাই হয়ে উঠে বসে আছে স্বপ্নের ভেতরে—একটা শ্মশান, পাঁচটি নিবিড় প্রদীপ, নিরাবেগ নদীর ধারে কাঁসার থালায় রাখা কালচে ধূলি, আর কোথাও থেকে ভেসে আসা অসম্পূর্ণ শব্দ: “হ্রীং… ক্রৌঁ… শৌঃ… ন—” তারপরই ফাঁকা, এমন এক ফাঁকা যা নিঃশব্দ নয়; অদৃশ্য কণ্ঠের ভাঙন-ধ্বনি সেখানে ঘণ্টার মতো পাক খেতে থাকে, মাটির নিচে চোরা জলের শব্দের মতো সরে যায়, আবার ফিরে আসে। সেই স্বপ্ন থেকে পাঁচজন পাঁচ জায়গায়, পাঁচটি শরীর ভিন্ন ভিন্ন ঘামে, একই আতঙ্কে জেগে উঠল—যেন কোনো অদেখা আঙুল তাদের বুকের ওপর অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে লিখে রেখে গেল একটি মাত্র বৃত্ত, যার ভিতরে…

  • Bangla - তন্ত্র

    শ্মশানের সঙ্গিনী

    দেবব্রত সরকার নিঃসঙ্গ শ্মশানের অন্ধকারে সায়ন ধীরে ধীরে তার আসন গ্রহণ করে। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা শ্মশানশিল্পের অবচেতন ছায়া তার মনকে আরও উদ্বেগজনক করে তোলে। দূরে দূরে পঁচা পাতার ঘন স্তূপে কাকেরা কাঁকড়ির মতো ডাকছে, যেন শ্মশান নিজেই তার নিঃশ্বাসে সচেতন। বাতাস শীতল, ঠোঁট কামড়ে যায়, এবং হাওয়ার সঙ্গে মাটির ঘ্রাণ মিশে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ সৃষ্টি করছে। সায়নের চোখ বারবার অন্ধকারে মেলে—প্রায় মনে হচ্ছে, অদৃশ্য কোনো চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে মনে মনে গুরুজীর নির্দেশ অনুসরণ করে, নিজের নিশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু শ্মশানের অন্ধকার যেন তার প্রত্যেকটি পদক্ষেপকে ওজন দিচ্ছে। আগুনের ক্ষীণ আলো তার সামনে নাচতে নাচতে অদৃশ্য রূপে অঙ্কন…

  • Bangla - তন্ত্র

    কালো দর্পণ

    সঞ্চারী নাগ উত্তরাধিকার চৌধুরী বাড়িটা যেন কলকাতার বুকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এক টুকরো ইতিহাস। বাইরের রাস্তায় কোলাহল, গলিপথে ঠেলাঠেলি অটো আর ছেঁড়া পোস্টারের ভিড়, কিন্তু উঁচু পাঁচিল ঘেরা সেই বনেদি বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই যেন সময় একেবারে অন্য গতিতে বয়ে চলে। আঙিনার মাঝখানে একটা বিশাল আমগাছ, তার চারপাশে বিক্ষিপ্ত ছায়া পড়ে আছে, আর সেই ছায়ার মধ্যে পড়ে আছে বহু প্রজন্মের অগণিত স্মৃতি। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেই প্রথমেই চোখে পড়ে একপাশের শীতল ঘরখানা, যেখানে ঢাকা দেওয়া আছে পুরোনো কাঠের আসবাবপত্র। ধুলো জমে থাকা পর্দার ফাঁক গলে আসা আলোয় দেখা যায় দেয়ালের কোণায় দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল আয়না, লম্বা কাঠের ফ্রেমে বসানো, যার…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চৌধুরীবাড়ির শেষ অতিথি

    তিথি বসু পর্ব ১: সেই ভগ্নপ্রায় দরজার শব্দ নদীয়ার কুয়াশা ঢাকা বিকেলে ট্রেন থেকে নামতেই শুভমর মনে হলো সময়টা যেন হঠাৎ করে থমকে গেছে। বাইরের হাওয়া ঠান্ডা, কিন্তু বাতাসের মধ্যে কিছু একটা গুমোট। সে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রিকশাওয়ালার দিকে এগোল। “চৌধুরীবাড়ি যাবেন?” জিজ্ঞেস করতেই রিকশাওয়ালার মুখটা কেমন থমথমে হয়ে গেল। “চৌধুরীবাড়ি? ওই যে শ্মশানের পাশে যেটা?” শুভম মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, ওটাই। আমি গবেষণার জন্য এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি আছে।” রিকশাওয়ালা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর বলল, “আমি ওইদিক যাই না বাবু। ওখানে এখন কেউ থাকেও না।” শেষমেশ অনেক বোঝানোর পরে একজন রাজি হলো। অন্ধকার নেমে আসছিল, আর চৌধুরীবাড়ির পথটা খড়ি গাছ…

  • Bangla - তন্ত্র

    অঘোরীর চোখ

    শুভাশীষ পাল                                         পর্ব ১: পাহাড়ের গা থেকে যাত্রা শিলিগুড়ি থেকে জিপ ছাড়ল সকাল আটটায়। ঋষভ জানালার ধারে বসে রেকর্ডারটা হাতে নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে একটা লাইন বলল, “আজ আমরা যাচ্ছি দার্জিলিং জেলার গভীর এক গ্রামে, যেখানে এখনও লোকমুখে ভয়ের সুরে উচ্চারিত হয় এক অঘোরী তান্ত্রিকের নাম—ভৃগুনাথ।” শান পিছনের সিটে বসে ক্যামেরার ব্যাগ আঁকড়ে ধরেছিল। মাথায় হালকা ঠান্ডা, বাইরে কুয়াশা। সামনে বসে গাইড টেমবা চুপচাপ পাহাড়ি রাস্তা দেখে গাড়ি চালাচ্ছিল, তার চোখে ছিল একটা অদ্ভুত স্থিরতা, যেন সে জানে তারা কোথায় যাচ্ছে, কিন্তু চায় না তারা সেখানে পৌঁছাক। চিলোংবস্তির নামটা প্রথম শোনা গিয়েছিল এক পুরোনো তান্ত্রিক পাণ্ডুলিপিতে, যেটা ঋষভ সংগ্রহ করেছিল…