অমিয় রায় এক শৈশবের সেই গ্রামের সকালটা একেবারে জ্যোৎস্নার মতো উজ্জ্বল, কিন্তু তার আলো কখনোই চোখে আঘাত করে না। পলাশ আর তারকা, দুজনেই ছেলেবেলার অদ্ভুত সাহস আর কৌতূহলের সঙ্গে ধানখেতের মধ্যে দৌড়াচ্ছে। ধানের কাঁচা গাছগুলো যেন তাদের হাতছানি দিচ্ছে, আর তাদের খেলা যেন প্রকৃতির সাথে মিশে যাচ্ছে এক অদ্ভুত সমন্বয় তৈরি করে। গ্রামের ঘরে এখনও কেবল ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙছে, কয়েকটা হাঁস কষ্টে হাঁসছে, আর পথের ধুলো কৌতূহল নিয়ে সূর্যের আলোয় ঝকঝকে করছে। নদীর ধারে সোনালী রোদ পড়ছে, আর তার মধ্যে ছোট ছোট মাছেরা ঝলমল করে হেঁটে বেড়াচ্ছে। পলাশ হেসে চিৎকার করে বলল, “তারকা, ধরা পড়বি না!” আর তারকা হাসি…
- 
				
 - 
				
সুকুমার ঘোষ এক কলকাতার সল্টলেকের অষ্টম তলার কর্পোরেট অফিস কাচের দেওয়ালের ভিতর বন্দি এক ফ্ল্যাটস্ক্রিন-চালিত জীবন। কেবিনের মাথার উপরে দুলছে স্পটলাইট, ডেস্কের কোণায় রাখা অ্যালো ভেরা পাত্রে মাটি শুকিয়ে গেছে, অথচ অভিরূপ বসুর চোখে ক্লান্তির ছায়া নেই—সে অভ্যস্ত। প্রত্যেকদিন সকাল ন’টায় ঠিক নীল শার্ট, ধূসর ব্লেজার আর চকচকে লেদারের জুতো পরে অফিসে প্রবেশ করে; তার মুখে এক প্রকার যান্ত্রিক আত্মবিশ্বাস—যেটা হয়তো মাল্টিন্যাশনাল পরিবেশের জরুরি পোশাক। অভিরূপ একজন সফল ব্র্যান্ড ম্যানেজার, মেট্রিক্স আর কনভার্সনের পরিসংখ্যানের সঙ্গে যার ঘুম–জাগরণের সম্পর্ক। সে জানে কোন ক্লায়েন্ট কবে “impression” চায়, কাকে “engagement” দিয়ে মাতাতে হয়, আর কোন প্রেজেন্টেশনের সময় একটা থ্রি-পয়েন্টার স্লাইড শেষ মুহূর্তে গুঁড়িয়ে…
 - 
				
সুদীপ্ত চৌধুরী পর্ব ১ আমার জন্ম হয়েছিল এক গরম দুপুরে, হাওড়ার একটি ছোট গ্যারেজের ভেতর। চারপাশে ধুলো, কাঠের গন্ধ, আর যন্ত্রপাতির আওয়াজ। তখন আমি কিছুই বুঝতাম না—শুধু টের পাচ্ছিলাম, কিছু একটা নতুন হচ্ছে। লোহা, রাবার আর রঙের গন্ধে ভরা সেই অদ্ভুত পরিবেশে কেউ আমাকে তৈরি করছিল, নিঃশব্দে, নিখুঁতভাবে। আমার কঙ্কাল জুড়ে নিচ্ছিল একে একে চাকা, হ্যান্ডেল, প্যাডেল। আমার গায়ে পড়ছিল চকচকে লাল রঙ, ঠিক যেন একটা নতুন জামা। সেই রঙে আমার আত্মা খুঁজে পেল নিজেকে। আমার গায়ে প্রথম স্পর্শ দিয়েছিল একটি খুদে হাত—সে ছিল শিবু, বছর আটেকের এক ছেলেমানুষ। ওর বাবা সেই গ্যারেজে কাজ করত, আর আমাকে তৈরি করেছিল তাঁরই…
 - 
				
সোমা মিত্র আমার স্মৃতি পুরোনো অ্যালবামের মতো—কিছু ছবি রঙ হারিয়েছে, কিছু এখনো ঝকঝকে। উত্তর কলকাতার যে বাড়িটাতে আমার জন্ম, সেই লালবাড়িটা এখন আর নেই। সেটার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে চকচকে অ্যাপার্টমেন্ট, নাম—“মঙ্গলতারা হাইটস”। মাঝে মাঝে ভাবি, নামটা কত গ্ল্যামারাস, অথচ সেই নামের নিচেই চাপা পড়ে গেছে আমার ছোটবেলার চটি পায়ে দৌড়ানো বারান্দা, কাঁঠালের গন্ধমাখা দুপুর, আর দিদার হাতে বাঁধা তুলসী মালা। আমাদের বাড়িটা ছিল এক রকম রেওয়াজি—সকালে প্রার্থনা, দুপুরে শব্দ করে পাখার ঘুরন্ত আওয়াজ, আর সন্ধ্যেবেলা harmonium-এর একঘেয়ে সুর। বাবা অফিসফেরতা এককাপ চায়ে দিন শেষ করতেন, আর মা রান্নাঘরের কোণে বসে চুপচাপ মাছ কুটতেন—কখনোই অকারণে হাসতেন না। তবু আমি জানতাম, মা…