ঐশী মুখার্জি ট্রেনটা আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ছিল পুরুলিয়ার ছোট্ট স্টেশনে। জানালার ফাঁক দিয়ে লালচে ধুলো হাওয়ায় উড়ছিল, যেন মাটির গন্ধে মাখানো কোনো অদৃশ্য ধোঁয়া। রিনি ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে বসেছিল জানালার ধারে। কলকাতার চাকরিজীবনের ব্যস্ত, ধাতব আওয়াজে ভরা দিনগুলো থেকে বেরিয়ে সে এসেছিল, ঠিক এক মাসের জন্য। নিজের ইচ্ছেতেই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে, বন্ধুদের কাছে এখনো সে সিদ্ধান্তটা অযৌক্তিক, অনেকটা পাগলামির মতো শোনায়। কিন্তু রিনির মনে হচ্ছিল, এই লালমাটি-ঢাকা পথই তাকে নতুন কিছু শিখিয়ে দেবে। স্টেশনটা ছোট, নিস্তব্ধ, বাইরে নামতেই সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি আর হকারের ডাক একসাথে কানে বাজলো। রোদটা ঝলমল করছিল, তবুও হাওয়ায় একটা শুষ্ক ঠান্ডা মিশে ছিল। রিনি বুকের ভেতর হঠাৎ…
- 
				
 - 
				
সুকান্ত আইচ পর্ব ১ পাড়ার নাম মধুবন কলোনি। কলকাতার এদিকেই, গঙ্গার ধার ঘেঁষা এক অদ্ভুত গলি। এই গলির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ—একজন টিউশন মাস্টার। নাম—বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী। বয়স পঞ্চান্ন, কিন্তু চেহারায় বোধহয় এখনও তিরিশের মতো এনার্জি। পরনে খাটো পাঞ্জাবি, চোখে মোটা পাওয়ারের চশমা, আর মাথার উপরে তেল দেওয়া টাকের চারপাশে জেগে থাকা ঝাঁকড়া চুল। বিষ্ণুপদবাবু একসময় কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন, পরে কাজ ছেড়ে দিয়ে “প্রাইভেট টিউশনের দুনিয়া”য় নামেন। আর তারপর থেকেই তার জীবন অন্যদিকে ঘুরে গেল। আশপাশের পাড়ায় নাকি তিনি এমন সব বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন যে পড়ুয়ারা ভিড় জমিয়ে ফেলল। বিজ্ঞাপনে লেখা— “যে যা পড়তে চাও, এসো আমার কাছে। আমি সব শেখাই। অংক,…
 - 
				
অর্পিতা দাশগুপ্ত অধ্যায় ১: ইশারার প্রথম পাঠ নবনীতা মুখার্জি যখন প্রথম “পূর্ব আনন্দনিকেতন বিশেষ বিদ্যালয়”-এর ধুলোমাখা ফটকে পা রাখেন, তখন আকাশে কুয়াশা জমেছিলো যেমন, তেমনি তাঁর মনের ভিতরেও ছিল অনিশ্চয়তার এক অদৃশ্য কুয়াশা। শহরের একপ্রান্তে ঝাঁপসা হয়ে থাকা এই স্কুলটিকে অধিকাংশ মানুষ ‘বাতিল জায়গা’ বলে এড়িয়ে যায়। গেটের ধারে একটা মরচে পড়া সাইনবোর্ড—যেখানে অর্ধেক লেখা খসে গেছে, তবু বোঝা যায়: এটি বাকপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত একটি বিদ্যালয়। স্কুল চত্বরের ভাঙা পাঁচিল, পুরোনো আমগাছের নিচে জমে থাকা শুকনো পাতা, আর একটি কাঠের বেঞ্চে বসে থাকা কেয়ারটেকার রফিক মিঞা—এই ছিল নবনীতার নতুন কর্মস্থল। সদ্য বিএড পাশ করা নবনীতা এই স্কুলে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষিকার…