অধ্যায় ১: অশরীরীর আগমন ধনপুর নামের ছোট্ট গ্রামটি যেন প্রকৃতির এক নিভৃত কোলে বসে আছে। শরৎকালের শুরুতে গ্রামজুড়ে এখন পুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে, মেঘের আড়াল থেকে নীল আকাশ উঁকি দিচ্ছে, কাশফুলে ঢাকা মাঠে বাতাসের খেলায় দুলছে সাদা ফেনার মতো শিরীষের তুলো। গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর দুর্গাপুজোর প্রতিমা গড়ার দায়িত্ব থাকে মৃৎশিল্পী নিবারণ পাল ও তাঁর পরিবারের হাতে। নিবারণের হাতে তৈরি মূর্তির খ্যাতি আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে বহু বছর ধরেই। গাঁয়ের মানুষ বিশ্বাস করে, নিবারণের আঙুলের ছোঁয়ায় যেন দেবীর জীবন্ত ছায়া ফুটে ওঠে। দিনভর কাদা মাটি আর রঙের ঘ্রাণে ভরা কর্মশালায় চারদিক গমগম করে, কিন্তু রাত নামলেই সে ঘর একেবারে…
-
-
ৰজনী কাশ্যপ ১ গ্ৰীষ্মৰ ছুটিৰ দিনবোৰ সদায়ে যেন সপোনৰ দৰে আহি পৰে—স্কুলৰ পাঠ্যপুথিৰ গাদবোৰৰ মাজৰ পৰা এন্ধাৰ মেঘ আঁতৰাই আহি নাতি-নাতিনীয়ে পোৱা মুক্তিৰ নিশ্বাস যেন। এইবাৰো তেনে সময়তে ৰিয়া আৰু অনিৰ্বাণে দেউতাকৰ ঘৰলৈ আহিবলৈ মনস্থিৰ কৰিছিল। নগৰৰ সঁচাকৈকেইটা ধুমুহাই নিদি থকা দিন আৰু কংক্ৰিটৰ আকাশচুম্বীৰ ভিৰৰ পৰা আঁতৰি অহা এই ভ্ৰমণত তেওঁলোকে পোৱা পৰিৱেশ যেন স্বৰ্গৰ পৰা নামি অহা। দেউতাকৰ ঘৰখন গাঁওখনৰ একেবাৰে সলনি কোণত, নদীটোৰ কাষত, য’ত হাওঁৱাতো আলাদা গন্ধ লৈ আহে—গছৰ পাত, মাটিৰ সোঁতা আৰু পুৰণি সময়ৰ নিশ্বাস। ঘৰখন কাঠ আৰু ইটাৰে গাঁথি তোলা, ৰঙা টালি-ঢাকনি থকা দোচাল ঘৰ। কাষত এক বৃহৎ বটগছ, যিটো অদ্ভুত এক জটিলতাৰে ভৰপূৰ।…
-
ৰজনী কাশ্যপ ১ গ্ৰীষ্মৰ ছুটিৰ দিনবোৰ সদায়ে যেন সপোনৰ দৰে আহি পৰে—স্কুলৰ পাঠ্যপুথিৰ গাদবোৰৰ মাজৰ পৰা এন্ধাৰ মেঘ আঁতৰাই আহি নাতি-নাতিনীয়ে পোৱা মুক্তিৰ নিশ্বাস যেন। এইবাৰো তেনে সময়তে ৰিয়া আৰু অনিৰ্বাণে দেউতাকৰ ঘৰলৈ আহিবলৈ মনস্থিৰ কৰিছিল। নগৰৰ সঁচাকৈকেইটা ধুমুহাই নিদি থকা দিন আৰু কংক্ৰিটৰ আকাশচুম্বীৰ ভিৰৰ পৰা আঁতৰি অহা এই ভ্ৰমণত তেওঁলোকে পোৱা পৰিৱেশ যেন স্বৰ্গৰ পৰা নামি অহা। দেউতাকৰ ঘৰখন গাঁওখনৰ একেবাৰে সলনি কোণত, নদীটোৰ কাষত, য’ত হাওঁৱাতো আলাদা গন্ধ লৈ আহে—গছৰ পাত, মাটিৰ সোঁতা আৰু পুৰণি সময়ৰ নিশ্বাস। ঘৰখন কাঠ আৰু ইটাৰে গাঁথি তোলা, ৰঙা টালি-ঢাকনি থকা দোচাল ঘৰ। কাষত এক বৃহৎ বটগছ, যিটো অদ্ভুত এক জটিলতাৰে ভৰপূৰ।…
-
নন্দিতা দাস ১ শীতলপুর নামের ছোট্ট গ্রামটি যেন সময়ের স্রোতকে অগ্রাহ্য করে দাঁড়িয়ে আছে। মাটির বাড়ি, কাঁচা রাস্তা, চারপাশে গাছপালা আর মাঝে দিয়ে বয়ে চলা শান্ত কুশাবতী নদী—সব মিলিয়ে গ্রামের এক সহজ, নিরিবিলি ছবি। দিনের বেলায় নদীর ধারে হাট বসে, গ্রামের ছেলে-বুড়ো সেখানে বসে গল্প করে, গৃহিণীরা আসে কলসি ভরতে। কিন্তু রাত নামলেই এই কুশাবতী নদীর চেহারা যেন অন্যরকম হয়ে ওঠে। আকাশজোড়া চাঁদ উঠলে নদীর কালো জলের ওপর ঝিলমিল আলো পড়ে, গাছের ছায়া জলে মিশে যায়, আর সেই নির্জনতাকে ভেঙে কখনও শোনা যায় এক অচেনা কান্নার শব্দ। গ্রামবাসী অনেক বছর ধরে সেই কান্নাকে চন্দ্রাবতীর অভিশাপ বলে মানে। কারণ বহু আগে,…
-
নীলয় বসাক এক অরণ্যের আঁকাবাঁকা রাস্তায় ভোরের প্রথম আলো ভেসে আসছিল। শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ধরে বহুটা পথ পেরিয়ে রিচার্ড অবশেষে পৌঁছাল সেই প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে, যাকে স্থানীয়রা ‘রংভ্যালি’ বলে ডাকে। গ্রামের নাম মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না, পর্যটন গাইডবুকেও তার উল্লেখ নেই। তবু পাহাড়ের নিস্তব্ধতায় মোড়া জায়গাটির প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ টেনেছিল তাকে। মেঘলা আকাশের নিচে সিঁড়ির মতো সাজানো ধানক্ষেত, কুয়াশায় আধঢাকা ছোট ছোট কুঁড়েঘর আর মাটির রাস্তার ধারে পাথর বসানো ঢাল—সবকিছু যেন রিচার্ডের চোখে এক অলৌকিক দৃশ্যের মতো ভেসে উঠল। লম্বা দেহ, খয়েরি দাড়ি আর গলায় ঝোলানো ক্যামেরা নিয়ে গ্রামের সীমানায় পা রাখতেই লোকেরা থমকে তাকাল। এত দূরে, এত…
-
ৰূপকেশ শইকীয় অৰুণৰ জীৱন সেই দিনটোৰে আৰম্ভ হৈছিল, যেতিয়া তেওঁ দেখিলে মাক তীব্ৰ অসুখত পৰা অৱস্থাত। গাঁওখনৰ সৰু ঘৰখনৰ কোঠাত মাক বেডত শুই আছিল, মুখত বেছি জ্বৰ আৰু শৰীৰত অস্বাভাবিক দুর্বলতা দেখা গৈছিল। অৰুণৰ হৃদয় কঁপিবলৈ ধৰিলে, কিয়নো মাক তেওঁৰ বাবে সকলো আছিল—দুখৰ সময়ত আশ্ৰয়, আনন্দৰ সময়ত হাঁহিৰ উৎস। গাঁওখনৰ চিকিত্সকে মাকক ওষুধৰ পৰামৰ্শ দিলে, কিন্তু সেই সকলো চেষ্টা কোনো প্ৰভাৱ দেখুওৱা নাছিল। অৰুণ চকু ভৰাই কান্দিবলৈ ধৰিলে, মাকৰ দুখ আৰু কষ্টৰ আগ্ৰহত তেওঁ নিজক অসহায় বুলি অনুভৱ কৰিলে। তেওঁ অনুভৱ কৰিলে, কোনো সাধাৰণ চিকিত্সা, কোনো সৰু গাঁওৰ ডাক্তৰৰ সলাহ, মাকক বাঁচাবলৈ যথেষ্ট নহ’ব। অৰুণৰ মনত দৃঢ় সংকল্প জন্ম ল’লে—তেওঁ…
-
তৰালিকা দত্ত গাঁৱখন একেবাৰে সৰু, কিন্তু নৈ–টিলা–বনৰ সমাহাৰে জীয়াই থকা। সৰু সৰু কুঁহিয়াৰ ঘৰৰ মাজেৰে আঁকাবাঁকা পথ, পথৰ কাষত ফুল–পাত, ঘাস–বুটলি, আৰু গোটেই পৰিবেশত শান্তি। সেয়েহে গাঁৱৰ মানুহবোৰৰ জীৱন ধীৰ, প্ৰকৃতিৰে মিলি গঢ়ি উঠা। সেই গাঁৱৰ মাজত কণমানি নামৰ এটা এপাটি জীয়ৰী আছিল। সি পৰিয়ালৰ একমাত্ৰ সন্তান, ঘৰৰ সকলোৰে মৰমৰ ধন। কণমানিৰ চকুত সদায় কৌতূহলৰ জোনাক জ্বলিছিল। আন পুৱাৰ বেলেগ বেলেগ কামত ব্যস্ত হ’লেও কণমানিৰ মন সদায় কেতিয়াবা মাটিত, কেতিয়াবা ফুলপাতত, আৰু বিশেষকৈ আকাশলৈ উৰি যাবলৈ ব্যাকুল হৈ পৰিছিল। বেলেগ ল’ৰা–ছোৱালীয়ে খেলপথাৰত খেলি ফুৰিলেও কণমানিৰ মন বেলেগ, সি আকাশৰ গহীন নীলা পিন্ধা মেখেলাত কি কি গোপন রহস্য আছে তাৰ খোজ…
-
উৎসব তরফদার ১ গ্রামের উত্তর প্রান্তে ভাঙাচোরা ইটের দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে সেই অদ্ভুত জমিদারবাড়ি—যেন সময়ের আঘাতে ক্ষয়ে যাওয়া এক প্রাচীন স্মারক। একসময় এখানে ছিল উজ্জ্বল আলো, অতিথিদের কোলাহল, শঙ্খধ্বনি আর ঢাকের তালে উৎসবের জোয়ার। আজ সবই ম্লান হয়ে গেছে। পুরু দরজায় মরচে, জানালার শিক ভাঙা, ঘাস-লতাপাতা ক্রমে ঢেকে ফেলেছে সিঁড়ির পাটাতন। দিনের বেলায়ও ভেতরে ঢোকার সাহস করে না কেউ, কারণ ভাঙা ছাদের ফাঁক দিয়ে আলো এলেও, ঘরগুলোতে যেন চাপা অন্ধকার জমে থাকে। অথচ এই অন্ধকারের মাঝেই আছে সেই রহস্যময় বাগান—যা এখনো গ্রামজুড়ে লোককথার বিষয়। বাড়ির পিছনের দিক থেকে শুরু হয়েছে এক বিশাল বাগান, যেখানে আজ আর নিয়মিত যত্ন হয়…
-
দেবাশিস রায় পুরোনো নদীর ঘাটটি এখন যেন সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া একটি জায়গা। দিনের বেলায়ও মানুষের পদচারণা খুবই কম, রাতে তা যেন আরও একাকী হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের তীব্র রোদ কিংবা বর্ষার ঝড়—সবকিছু মিলিয়ে ঘাটের কাঠের ডেক, ছেঁড়া দোলনা, এবং ভাঙা নৌকা-সবকিছুই অবহেলিত ও পরিত্যক্ত। নদীর ধারে ধুলো মিশ্রিত কাদামাটি, নরম বাতাসে পানি ধীরে ধীরে ধোঁয়া হয়ে ওঠে, আর নীরবতা এতটাই ঘন যে মাঝে মাঝে দূরের জঙ্গলের পাতা হেলানো শব্দও স্পষ্ট মনে হয়। রাতের অন্ধকারে ঘাট যেন এক রহস্যময় স্থান, যেখানে সময় থেমে গেছে—প্রতিটি সোপান, প্রতিটি নৌকা যেন অতীতের কোনো গল্পের সাক্ষী। অরুণ, একমাত্র নৌকাওয়ালা, এখানে দিনরাত কাটায়। সে নিজেকে এই…
-
১ শান্তিপুর গ্রাম যেন একদিকে শান্ত, অন্যদিকে ভয়ঙ্কর রহস্যে মোড়া। গ্রামটি ছোট, কিন্তু চারদিকে বিস্তৃত ধানক্ষেত, ঘনবনের মাঝখানে পেঁচানো কাঁচা রাস্তা আর দিগন্তজোড়া নীরবতা যেন একে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। দিনের বেলায় এই গ্রাম প্রাণচঞ্চল—কৃষকের হালচাষ, বাচ্চাদের খেলা, মহিলাদের কুয়োয় ভিড় জমা, আর বিকেলের পর আড্ডায় মেতে ওঠা যুবকরা। কিন্তু রাত নামলেই অন্য ছবি। গ্রামের মানুষদের মুখে একটা অনবরত ফিসফিস—সোনালি পালকির গল্প। বহু প্রজন্ম ধরে চলা এই কাহিনি এতটাই শক্তভাবে গ্রামের মাটিতে গেঁথে গেছে যে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে সাহস পায় না কেউ। গল্পটা হলো, মধ্যরাতের অন্ধকারে কেবল একবার দেখা যায় অদ্ভুত এক সোনালি পালকি। মাটির রাস্তার ধুলোয় যেন আলো…