অরিত্র মুখার্জী পর্ব ১: আগুনের চোখ অমাবস্যার রাতে গ্রামের নিস্তব্ধতা যেন অদৃশ্য কোনো হাত এসে একেবারে চেপে ধরত। গঙ্গার তীরের ছোট্ট জনপদ খয়েরপুরে তখন বাতাসও গায়ে লাগতে চাইত না। মাটির ঘরগুলো মৃদু শ্বাসের মতো নিস্তেজ হয়ে থাকত, পুকুরের জলে চাঁদের প্রতিফলন তো নেই-ই, তারকারাও যেন আকাশের কালো পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। শুধু মন্দিরের গায়ে, কুঁচকে যাওয়া লালচে ইট আর কালো ধোঁয়া-মাখা দেয়ালের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেই প্রাচীন কালীমূর্তি—যার চোখে অদ্ভুত এক জ্যোতি নাকি দেখা যায়। বৃদ্ধরা বলত, “আগুনের চোখ”। তাদের দাবি, প্রতি অমাবস্যার রাতে মূর্তির দু’চোখ হঠাৎই জ্বলে ওঠে যেন কারো গায়ের ভিতর থেকে দাউ দাউ করে আগুন…
-
-
তনিমা বসাক পর্ব ১: অজ্ঞাত সংলাপ কলকাতার গ্রীষ্মের বিকেল যখন কাচে ধাক্কা মারে, মনের ভেতরের অতীত-বর্তমানও তখন এক অদ্ভুত তাপমাত্রায় কাঁপে। ড. অরণ্য সেন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বাইরের ঝিম ধরা রোদ আর ঘামচাপা শহরের ভাঁজে ভাঁজে যতসব অদেখা গল্প জমা হচ্ছে, তার দিকে তাকিয়ে। তাঁর চেম্বারটি শহরের দক্ষিণে, বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছাকাছি, চতুর্থ তলায়, চুনে ধরা দেওয়ালের পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া বিবর্ণ সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এক প্রাইভেট চেম্বার। এইখানেই তিনি মানুষের মন পড়েন—যেমন দারোয়ান পড়ে কাগজে মোড়া চা, কিংবা বইয়ের দোকানের ছেলে পড়ে পৃষ্ঠার ভাঁজ। আজ তাঁর টেবিলের সামনে বসে রয়েছে এক অদ্ভুত মেয়ে—নিপা বসু। চোখে সুরের মতো নরম অস্থিরতা,…
-
জয় সাহা গলির মেয়ে সহেলীর জন্ম এক ছোট্ট শহরের এক অজপাড়া গলিতে। সে ছিল এক সাধারণ মেয়ে, যেখানে সমাজের চোখে তার কোন বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। তার জীবন ছিল একেবারে নিরস, রুটিনমাফিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কাজ ছিল ঘরের কাজ, মা-বাবার সহায়তা, ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা, আর মাঝে মধ্যে স্কুলে যাওয়া। তবে, সহেলী কখনোই এই নির্ধারিত জীবনটিকে সঙ্গী করতে পারেনি। তার মন ছুটতে চেয়েছিল দূরে, তার চোখ ছিল নতুন দিগন্তে, যেখানে জীবনের অনেক সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সে জানত, সে তার ছোট্ট গলির মধ্যেই বন্দী। সেই গলির প্রাচীরের বাইরের পৃথিবী তার জন্য এক কল্পনা মাত্র। সহেলী ছিল খুব চুপচাপ। একা থাকলেই…