দেবযানী চৌধুরী কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদগামী বাসটা যখন রাতের অন্ধকারে গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে এগোচ্ছিল, তখন অভিষেক মুখার্জি জানালার কাঁচের বাইরে তাকিয়ে ভাবছিল, সে কি সত্যিই এমন কিছু পাবে যেটা রিপোর্টে ব্যবহারযোগ্য? বছর দুয়েক হল সে এক অনলাইন নিউজ চ্যানেলে কাজ করছে—”রিয়েল শ্যাডো”—যেখানে তাকে পাঠানো হয় গ্রামীণ অলৌকিক ঘটনার অনুসন্ধানে। ভূত, প্রেত, চুড়েল, পেত্নী—এইসব নিয়ে সাধারণত ভিডিও বানানো হয়, আর টাইটেল হয় “Real Ghost Spotted in West Bengal” টাইপের। কিছুটা বিরক্তি, কিছুটা কৌতূহল নিয়েই সে এসেছিল। কিন্তু এইবারের গন্তব্য একটু আলাদা। মুর্শিদাবাদের এক অজপাড়া গ্রাম—ভাঙ্গাড়িপুর, যেখানে এক বৃদ্ধা থাকেন একা, শ্মশানের পাশে। গ্রামবাসীরা বলেন, তার ঘরে মৃতরা কথা বলেন। তাকে সবাই…
-
-
সৌমিক ভট্টাচার্য ১ পাহাড়ি রাস্তাগুলো যেন কোনও অজানা গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল অভিজিৎ সেনগুপ্তকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক, লোকবিশ্বাস এবং পাহাড়ি সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘদিনের আগ্রহ ছিল তার। একটি গবেষণা প্রকল্পের সূত্রে সে এবার রওনা দিয়েছিল উত্তরবঙ্গের এক অদ্ভুত দূরবর্তী গ্রামে—সিংরিপাহাড়। ট্রেন থেকে নামার পর পায়ে হেঁটে, জিপে চড়ে, শেষমেশ খচ্চর পিঠে চেপে পৌঁছাতে হয়েছিল তাকে সেই দুর্গম স্থানে। পাহাড়গুলো যেন দাঁড়িয়ে ছিল এক অভেদ্য প্রাচীর হয়ে—মানুষের সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন, অথচ নিজেদের মতো করে সাজানো এক অলৌকিক গ্রাম। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত ছোট্ট গ্রামটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ল ছায়াঘেরা গাছপালা, পাথরের বাড়ি, আর সন্ধ্যার আগেই বন্ধ হয়ে আসা কুড়িটি দরজা-জানালা। অভিজিৎ…
-
ঋতম ঘোষাল ১ বীরভূমের মাঠ পেরিয়ে ধুলো ধরা লাল মাটির রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আদিত্য রায় এক অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করল, যেন সূর্যের আলো সত্ত্বেও তার চারপাশে সময় থমকে আছে। রোদ মাখানো দুপুর, তবু ওই গাঁয়ের কাঁচা রাস্তা যেন নিস্তব্ধতার এক দীর্ঘ করিডোর—যার শেষে দাঁড়িয়ে আছে পোড়ো জমিদারবাড়িটি, স্থানীয়দের ভাষায় “মাকড়সার কুঠি”। সে একা নয় এখানে, তার সাথে ছিল ব্যাগ ভর্তি রেকর্ডিং যন্ত্র, ক্যামেরা, আর কিছু পুরনো নথি, যেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল কুঠির ইতিহাস, জমিদার অচ্যুত লাহার নাম, আর এক অর্ধ-পরিচিত নারীর অস্পষ্ট ছায়া। লোকেরা বলে বাড়ির ভেতরে নাকি এত ঘন মাকড়সার জাল যে মানুষ ঢুকলে আর বেরোতে পারে না—ভবনের গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে…
-
শুভদীপ দাস ১ কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর এক কোণে লুকিয়ে থাকা সেই বুথটা আজও দাঁড়িয়ে আছে—একটি মৃত সাক্ষীর মতো, শহরের কোলাহলের মাঝেও তার গায়ে নেমে আছে এক নিস্তব্ধতার আবরণ। রাস্তার পাশে এক পুরনো বাজারের পেছনে, ছোট্ট একটা গলিতে ঢুকলে চোখে পড়ে সেই ভাঙা টেলিফোন বুথটি—যার কাচ অর্ধভাঙা, ভিতরে ধুলো জমে ছাইয়ের মতো বসে আছে, আর তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাগজের ঠোঙা, পচা ফলের খোসা, আর মাঝে মাঝে ভবঘুরে বিড়ালদের বিশ্রামের স্থান। অনেক বছর ধরেই কেউ ওখানে ফোন করতে আসে না, কারও দরকার পড়ে না এমন একটা প্রযুক্তির যা এখন কেবল ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। তবুও, রাত বারোটার পর, ঠিক নির্দিষ্ট একটা…
-
ঈশান মৈত্র পর্ব ১: পুরীর ডাকে সকালবেলা, কলকাতার গড়িয়াহাটের এক পুরনো ক্যাফেতে ছ’জন পুরনো বন্ধু বসে আছে—অর্ণব, রাহুল, কিয়া, দৃষ্টি, অদ্বিতী, আর নীলয়। কলেজ ফেস্টে গান, নাটক, ট্রেক—সবকিছুর অভিজ্ঞতা থাকা এই টিম একসাথে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করছিল বহুদিন ধরে। “এইবার সমুদ্র চাই,” বলে উঠল কিয়া, “আর কোনো পাহাড় টাহাড় নয়।” অর্ণব মুখ তুলে বলল, “পুরী? শ্রীমন্দির, বিচ, খানা-দানা?” “ডান! ডান!” চেঁচিয়ে উঠল সবাই। সপ্তাহখানেক পর তারা রওনা দিল পুরীর দিকে। ট্রেনে কাটানো রাত, জানালার বাইরে ছুটে যাওয়া মাঠ আর গাছের ফাঁকে ফাঁকে দূরের আলো যেন নতুন এক অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল। পুরী পৌঁছে তারা উঠল সমুদ্রের কাছে একটা ছোট্ট হোটেলে।…