সুদীপ্ত পাল ১ অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনে এই মুহূর্তটি ছিল এক অদ্ভুত উত্তেজনা এবং অস্থিরতার মিশ্রণ। তার দীর্ঘদিনের গবেষণার অবসানপ্রাপ্তি তাকে এক নতুন অভিযানে নিয়ে আসছে—পুরুলিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলের গভীরে লুকানো একটি প্রাচীন নগরীর সন্ধানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির আবর্জনায় তিনি বহু পুরনো মানচিত্র এবং বিভিন্ন ধরণের প্রাচীন খণ্ডচিত্র পরীক্ষা করেছিলেন। নিখুঁত বিশ্লেষণ এবং শতাধিক নথি পরীক্ষা করার পরও নগরীর অবস্থান আজও রহস্যময় ছিল। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসীদের মুখে ছড়িয়ে থাকা কাহিনী এবং মূর্তিভঙ্গিতে উপস্থিত সতর্কবার্তাগুলি তাকে ভয় দেখাতে পারেনি; বরং প্রতিটি গল্পে লুকানো রহস্য তাকে আরও উত্তেজিত করে তুলেছিল। গ্রামের বৃদ্ধরা বলেন, “যারা সেই বনপথে প্রবেশ করেছে, তারা আর ফিরে আসেনি, কিংবা ফিরে এলে…
-
-
সৃজন বসু এক পার্ক স্ট্রিটের রাত মানেই আলো, কোলাহল, গাড়ির হর্ন আর মানুষের হাসি-আড্ডায় ভরা এক জীবন্ত ছবি। সেদিনও ব্যতিক্রম ছিল না। শীতের শুরুতে রাস্তায় রঙিন লাইটের মালা, বিদেশি আর দেশি সুরের মিশ্রণ, আর খাবারের গন্ধে ভরে উঠেছিল বাতাস। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ‘দ্য ব্লু অর্কিড’ নামের এক বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় ডিনারের ভিড় ঠাসা। মোটা মোটা গ্লাসের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছিল, শহরের ধনী-প্রভাবশালী মহল ব্যস্ত নিজেদের গল্পে, কেউ চুমুক দিচ্ছে রেড ওয়াইনে, কেউবা কাঁটাচামচে কেটে নিচ্ছে স্যামন স্টেকের টুকরো। হঠাৎ করেই দূরের আকাশে একটি মৃদু গুঞ্জন শোনা যায়—প্রথমে মনে হয় কোনো মোটরসাইকেল পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, কিন্তু শব্দের দিকনির্দেশ যেন উপরের…
-
প্রিয়ম সরকার কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তের নামকরা এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুল—সাউথ সিটি মডার্ন হাই—সেই শুক্রবার দুপুরে যেন কিছুক্ষণ নিঃশব্দ হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় পিরিয়ডের গণিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর হঠাৎই হইচই শুরু হয়, যখন ছাত্রী রুদ্রানী ঘোষের দেহ পাওয়া যায় পুরনো লাইব্রেরির সিঁড়ির পাশে পড়ে থাকতে। তার চোখদুটি খোলা, ঠোঁট রক্তাক্ত, আর পাশে ছড়িয়ে আছে তার জ্যামিতি বক্স—যেন কোনও শেষ মুহূর্তের আঁচড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সব। হেডমাস্টার বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন—“আত্মহত্যা, ক্লাসের চাপ নিতে পারেনি,” এবং পুলিশকে ফোন করলেও মৃদু স্বরে অনুরোধ করেন বিষয়টি মিডিয়াতে না পৌঁছাতে। ছাত্রছাত্রীরা কাঁদছে, শিক্ষিকারা অস্বস্তিতে—কিন্তু একজন শিক্ষক, অভিজিৎ সেন, ওই সময় কিছু না বলেই ধীরে ধীরে…
-
প্রতুল মন্ডল ১ নভেম্বরের হিমেল সকাল। শিয়ালদহ থেকে ছুটে আসা দার্জিলিং মেল ধীরে ধীরে পাহাড়ের কোলে ঢুকছে। ট্রেনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকা ঋত্বিক চৌধুরীর চোখে ছিল গভীর এক কৌতূহল—একটা অদ্ভুত টান। অভিষেক তার সঙ্গী, যার চোখে-মুখে রোমাঞ্চের ঝলক থাকলেও সে ছিল মূলত ছুটি কাটাতে এসেছে, হিমালয়ের শান্তি আর কিছু ইনস্টাগ্রাম-যোগ্য ছবি তুলতে। ওরা দুজনেই কলকাতা থেকে বেরিয়ে পড়েছে কাজের ক্লান্তি ঝেড়ে একটু প্রকৃতির কাছে যেতে, কিন্তু ঋত্বিক জানে, এই ভ্রমণ শুধু অবকাশ নয়। গত ছ’মাসে তার হাতে কোনও ‘কেস’ আসেনি, অথচ এই পাহাড়ি গ্রাম ‘চান্দাক’-এর আশেপাশে কয়েকজন পর্যটক হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার খবর এক অখ্যাত অনলাইন ব্লগে পড়ে সে স্থির করে,…
-
সম্বিত দাশগুপ্ত অধ্যায় ১: সংকেত চাঁদের প্রান্তরের সেই গভীর নিশুতি ভেদ করে যখন ‘অরোরা-১’ গবেষণা কেন্দ্রের অ্যান্টেনা প্রথমবারের মতো এক অদ্ভুত কম্পনধর্মী সংকেত ধরা পড়ল, তখন কেউই তা গুরুত্ব দিতে চায়নি। মহাকাশে এমন ইন্টারফেরেন্স হরহামেশাই দেখা যায় — সৌরঝড়, উপগ্রহের প্রতিধ্বনি, কিংবা অজানা মহাজাগতিক কণার ছোটাছুটি। কিন্তু ড. অনিরুদ্ধ সেনের অভিজ্ঞ চোখ বুঝে ফেলল, এতে আছে কিছু ভিন্নতা। সংকেতটি ছিল ছন্দোময়, নির্দিষ্ট বিরতিতে ফিরে আসছিল। সময়মতো পুনরাবৃত্তি, নির্দিষ্ট উচ্চতা ও কম্পাঙ্কে শব্দের মতো কিছু… যা প্রাকৃতিক নয়, বরং কৃত্রিম। তারপরে আরও অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল — সেই সংকেতের তরঙ্গবিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিস্তা রায় বললেন, “এটা যেন কারও নিঃশব্দ আর্তি… যেন কেউ…
-
স্নেহা চৌধুরী ১ রেলগাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের সবুজ সমুদ্রের মতো বিস্তৃত চা-বাগান আর দূরের বনভূমি দেখে পবিত্রর মনে হল যেন কারও আলতো হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে তার হৃদয়ের গোপনতম কোণ। পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে থাকা ডুয়ার্সের অপার সৌন্দর্য তাকে বহুবার ডেকেছে, কিন্তু এবার সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার রূপ একেবারেই ভিন্ন—সঙ্গে নতুন বউ অনুরাধা, আর তাদের প্রথম মধুচন্দ্রিমা। নিউ মাল জংশনে নামার সময় সকালটা ছিল কোমল কুয়াশায় মোড়া, আকাশে রোদের ঝলকানি আর বাতাসে হালকা শীতের আমেজ। অনুরাধা ঘাড়ের ওপর শাড়ির আঁচল টেনে বলল, “এতটাই নির্জন জায়গা! একটু ভয় ভয় করছে জানো?” পবিত্র হেসে বলল, “তাই তো এখানে এসেছি। শহরের ব্যস্ততা থেকে দূরে, শুধু…
-
অয়ন চক্রবর্তী ১ গ্রীষ্মের দুপুর যেন রোদে গলে যাওয়া মিছরি। দক্ষিণ কলকাতার অলি-গলি পেরিয়ে রবীন্দ্র সরোবরের ঘন ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া যেন শীতলতার অভিজ্ঞান। আজ ছিল স্কুলের শেষ দিন। আর আজ থেকেই শুরু সেই কাঙ্ক্ষিত ছুটি। তিন বন্ধু—ঋভু, সোহিনী আর আদিত্য—প্রায় রোজের মতোই দেখা করল লেকের কাছে। তাদের তিনজনের ছুটির প্রথম দিনের আড্ডা শুরু হলো পাথরের বেঞ্চে বসে পাঁপড় ভাজা খেতে খেতে। হালকা বাতাসে কদমগাছের পাতা দুলছিল, আর জলের ওপরে সূর্যের আলো রুপোর মাছরাঙার মতো লাফিয়ে পড়ছিল। ঋভু বলল, “এই লেকের নিচে যদি কিছু লুকানো থাকে রে? ধর, কোনো গুপ্তধন বা পুরনো রহস্য?” আদিত্য এক চুমুক দিয়ে বলল, “তোর গোয়েন্দাগিরির শুরু…