• Bangla - তন্ত্র

    তান্ত্রিক বনাম বৈজ্ঞানিক

    সুজন কর্মকার ১ কলকাতার এক শীতল বিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অডিটোরিয়ামে জমে উঠেছিল এক বিশেষ বক্তৃতা। উপস্থিত দর্শকদের ভিড় ভরিয়ে দিয়েছিল সাদা দেয়ালঘেরা হলে, যেখানে একদিকে ছাত্রছাত্রীরা তাদের খাতায় দ্রুত নোট নিচ্ছিল, অন্যদিকে কিছু অধ্যাপক কপালে ভাঁজ ফেলে মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন ড. অরিত্র মুখার্জী—একজন প্রখ্যাত পদার্থবিদ, যিনি গবেষণায় যেমন কড়া, তেমনি মতামতে দৃঢ়। লম্বাটে চেহারা, নাকের উপর সোনালি ফ্রেমের চশমা, আর হাতে একটি সাদা চক—এমন ভঙ্গিমায় তিনি যেন একাই এক অদম্য শক্তি। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল স্বচ্ছ, কঠিন অথচ প্রলুব্ধকর। তিনি বোর্ডে জটিল সমীকরণ লিখে বলছিলেন, “এই মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটছে, তার পেছনে আছে গণনা, সূত্র, এবং ব্যাখ্যাযোগ্য পদার্থবিদ্যা।…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    অসীমের ঘড়ি

    ঋত্বিক দে অসীম দে শ্যামবাজারের পুরোনো গলির ভেতরে ছোট্ট কিন্তু নামী জুয়েলার্স দোকানের মালিক। বয়স পঁয়ত্রিশের কোঠায়, কিন্তু চোখেমুখে তার বয়সের চেয়ে অনেক বেশি ক্লান্তির ছাপ। ব্যবসাটা তার নিজের তৈরি, বাবার থেকে পাওয়া নয়, তাই দোকানের প্রতিটি শোকেস, প্রতিটি রুপোর গহনা, প্রতিটি কাচের তাকের পেছনে লুকোনো আছে অসীমের বহু বছরের ঘাম আর অভিজ্ঞতা। সে বিশ্বাস করে প্রতিটি রত্নের নিজস্ব ইতিহাস থাকে, প্রতিটি অলঙ্কার এক-একটি অদৃশ্য গল্প বহন করে। তাই যখনই কোথাও কোনো নিলামের কথা শোনে, তার ভেতরে এক অদ্ভুত কৌতূহল জন্ম নেয়। সেই কৌতূহলই তাকে নিয়ে গেল বৌবাজারের এক পুরোনো নিলামঘরে। ভাঙাচোরা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অসীম অনুভব করছিল,…

  • Bangla - তন্ত্র

    পঞ্চমন্ত্র

    ঋতব্রত চক্রবর্তী পর্ব ১ : স্বপ্নের শুরু রাতের নিষ্প্রভতা যেন লালচে ছাই হয়ে উঠে বসে আছে স্বপ্নের ভেতরে—একটা শ্মশান, পাঁচটি নিবিড় প্রদীপ, নিরাবেগ নদীর ধারে কাঁসার থালায় রাখা কালচে ধূলি, আর কোথাও থেকে ভেসে আসা অসম্পূর্ণ শব্দ: “হ্রীং… ক্রৌঁ… শৌঃ… ন—” তারপরই ফাঁকা, এমন এক ফাঁকা যা নিঃশব্দ নয়; অদৃশ্য কণ্ঠের ভাঙন-ধ্বনি সেখানে ঘণ্টার মতো পাক খেতে থাকে, মাটির নিচে চোরা জলের শব্দের মতো সরে যায়, আবার ফিরে আসে। সেই স্বপ্ন থেকে পাঁচজন পাঁচ জায়গায়, পাঁচটি শরীর ভিন্ন ভিন্ন ঘামে, একই আতঙ্কে জেগে উঠল—যেন কোনো অদেখা আঙুল তাদের বুকের ওপর অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে লিখে রেখে গেল একটি মাত্র বৃত্ত, যার ভিতরে…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    বনানীর অন্ধকারে

    অভ্রনীল দত্ত পর্ব ১ – যাত্রা শুরু সকালবেলা কোলাহলমুখর শিয়ালদহ স্টেশনের ভিড়ের ভেতর দিয়ে যখন তারা সবাই প্ল্যাটফর্মে পৌঁছল, তখনও কারও মাথায় ছায়ামাত্রও ছিল না কী অপেক্ষা করছে সামনে। কলকাতার এই পাঁচজন কলেজ–বন্ধু—অনিক, সুমিত, তন্ময়, দেবলীনা আর রুদ্র—দীর্ঘদিন পর আবার মিলে একসঙ্গে কোথাও বেরোচ্ছে। গন্তব্য সুন্দরবন। ভ্রমণের উদ্দেশ্য একটাই—দু–একদিন শহরের কোলাহল ভুলে প্রকৃতির নির্জন অরণ্যে কিছুটা সময় কাটানো, বাঘ দেখার ভাগ্য হলে আরও ভালো, আর সবার ওপরে একধরনের অদেখাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা। রুদ্র, যে দলের মধ্যে সবচেয়ে উচ্ছল, আগেই পরিকল্পনা করেছিল গোটা ট্রিপ। সে বলেছিল—“এইবার তো পুজোর ভিড় নেই, একেবারে নিস্তব্ধ জঙ্গলে গিয়ে আসব। কী রোমাঞ্চ বলো তো!” বাকিরা তার কথায়…

  • Bangla - ভ্রমণ

    আন্দামানের নির্জন দ্বীপ

    ঋত্বিক দত্ত পার্ট ১: যাত্রার প্রথম সকাল শহরের ভিড়ভাট্টা থেকে সমুদ্রের দিকে যাত্রা শুরু করার মুহূর্তটাই যেন এক অদ্ভুত মুক্তি। কলকাতা বিমানবন্দরের জানালার কাচের ওপার থেকে ভোরবেলা আকাশের নীলচে আলো যখন সোনালি হতে শুরু করছিল, তখন আমার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক উৎকণ্ঠা কাজ করছিল। দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন দেখেছিলাম আন্দামান যাওয়া হবে—কেবল হাভলক বা নীল দ্বীপের সমুদ্রস্নান নয়, আমি চেয়েছিলাম খুঁজে বের করতে অজানা এক কোণ, যেখানে পর্যটকদের কোলাহল নেই, নেই রঙিন বিজ্ঞাপনমাখা হোটেলের ছায়া, আছে কেবল নির্জনতার ঘন অরণ্য আর সমুদ্রের শ্বাস। বিমান মেঘ কাটিয়ে নামতে শুরু করতেই জানালার বাইরে নীলের উপর সবুজের ছোপ দেখা গেল। দূর থেকে যেন অসংখ্য…

  • Bangla - ভ্রমণ - রহস্য গল্প

    হিমালয়ের ছায়ায়

    ঋদ্ধি সেনগুপ্ত পর্ব ১: ভোরট্রেন কলকাতার ভ্যাপসা গরম আর অনন্ত জটের ভিড়ের মধ্যে অর্ণার বুক ভরে উঠছিল এক অদৃশ্য ক্লান্তিতে। প্রতিদিন সকালেই সে অফিসের বাস ধরত, ফাইল আর কম্পিউটার স্ক্রিনে ডুবে থেকে সন্ধ্যার পরে ঘরে ফিরত। চারপাশের সবাই যেন শুধু ছুটছে, অথচ কোথাও পৌঁছোচ্ছে না। গত কয়েক মাসে সে বুঝতে পেরেছিল—তার নিজের ভেতরেও এক রকম শূন্যতা জমেছে, যা ভরাট করার মতো কিছু নেই। এই শহর তাকে আর টানে না। একরাতে ডেস্কে বসেই সে হঠাৎ বুকিং করেছিল দার্জিলিংয়ের ট্রেন টিকিট—আর ভাবেনি। সকাল সাড়ে তিনটেয় অ্যালার্ম বাজার আগেই তার ঘুম ভেঙে যায়। চারদিক তখনও অন্ধকার, কেবল ভেজা বাতাসে ভেসে আসছিল বৃষ্টির গন্ধ।…

  • Bangla - তন্ত্র

    ছাই ও শিখা

    অরিত্র মুখার্জী     পর্ব ১: আগুনের চোখ অমাবস্যার রাতে গ্রামের নিস্তব্ধতা যেন অদৃশ্য কোনো হাত এসে একেবারে চেপে ধরত। গঙ্গার তীরের ছোট্ট জনপদ খয়েরপুরে তখন বাতাসও গায়ে লাগতে চাইত না। মাটির ঘরগুলো মৃদু শ্বাসের মতো নিস্তেজ হয়ে থাকত, পুকুরের জলে চাঁদের প্রতিফলন তো নেই-ই, তারকারাও যেন আকাশের কালো পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। শুধু মন্দিরের গায়ে, কুঁচকে যাওয়া লালচে ইট আর কালো ধোঁয়া-মাখা দেয়ালের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেই প্রাচীন কালীমূর্তি—যার চোখে অদ্ভুত এক জ্যোতি নাকি দেখা যায়। বৃদ্ধরা বলত, “আগুনের চোখ”। তাদের দাবি, প্রতি অমাবস্যার রাতে মূর্তির দু’চোখ হঠাৎই জ্বলে ওঠে যেন কারো গায়ের ভিতর থেকে দাউ দাউ করে আগুন…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    দেয়ালের চোখ

    প্ৰদীপ্ত গুহ ১ অভিজিৎ ও মীরা যখন নিউটাউনের নতুন ফ্ল্যাটে প্রথম দিন পা রাখল, তখন তাদের চোখে ছিল একেবারে অন্যরকম আলো। দীর্ঘদিন ধরে যেই মুহূর্তের অপেক্ষায় তারা ছিল—নিজেদের একান্ত ঘর, নিজেদের সাজানো সংসার, অবশেষে সেই স্বপ্ন বাস্তব হলো। ফ্ল্যাটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে দু’জনেই কিছুক্ষণের জন্য নিঃশব্দে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর মীরা প্রথম হাসল, তার চোখে ছিল আনন্দ আর আবেগের মিশেল। লিভিং রুমে ঢুকেই বড় বড় জানালা দিয়ে ঢুকে পড়া সকালের রোদ তাদের গায়ে পড়ল, যেন সেই আলোও তাদের নতুন সূচনার সাক্ষী হতে চাইছে। অভিজিৎ সবকিছু লক্ষ্য করে মনে মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি পেল, এতদিনের পরিশ্রমের পর অবশেষে সে…

  • Bangla - তন্ত্র

    কালো আষাঢ়ের রাত

    ভাস্কর রায় আষাঢ়ের দিনগুলোতে গ্রামটা যেন সবসময়ই এক অদ্ভুত অশুভ আবহে ঢেকে থাকত। নদীর পাড় থেকে শুরু করে পুকুরঘাট পর্যন্ত, চারদিক যেন স্যাঁতস্যাঁতে বাতাসে ভারী হয়ে উঠত। সেদিনও বিকেল থেকেই মেঘ জমতে শুরু করেছিল আকাশে। কালো মেঘের দল যেন ঝাঁকে ঝাঁকে এসে একত্রিত হয়েছে গ্রামটার ওপর, যেন গোটা আকাশটাকে গিলে খাবে। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই মেঘের গর্জনে গ্রাম কেঁপে উঠল। মাটির কুঁড়েঘরের ভেতরে মহিলারা তাড়াতাড়ি প্রদীপ জ্বালিয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রার্থনা করতে লাগল। খড়ের ছাউনি ভিজে জলে টপটপ করে পড়ছিল, আর শিশুরা কোলের ভেতরে লুকিয়ে আতঙ্কে চুপ হয়ে গেল। গ্রামে তখন ভয় আর অশুভ সংকেতের গন্ধ ছড়িয়ে আছে। মানুষজন বলাবলি…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প - রহস্য গল্প

    অদৃশ্য উত্তরাধিকার

    সোনালী দেব ১ রায়চৌধুরী বাড়ি যেন ইতিহাসের এক প্রাচীন দলিল, যার প্রতিটি দেয়ালে লুকিয়ে আছে গৌরব ও ক্ষয়ের মিলেমিশে থাকা কাহিনি। বিশাল ফটক পেরোলেই চোখে পড়ে দোতলা প্রাসাদের মতো বিশাল বাড়ি—উঁচু খিলানওয়ালা জানালা, বারান্দার লোহার গ্রিলের কাজ, আর সিঁড়ির মাথায় শ্বেতপাথরের সিংহমূর্তি। একসময় এ বাড়ির জমিদারি ছড়িয়েছিল আশেপাশের বহু গ্রামে, ঘোড়ার গাড়ি, হস্তিদল, পালকি, এবং শত শত কৃষকের আনাগোনায় মুখর থাকত এই প্রাসাদ। এখন অবশ্য সময়ের সঙ্গে তার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, কিন্তু ছায়াঘেরা আঙিনা আর খসে পড়া দেওয়ালগুলো এখনো অতীতের গৌরবের সাক্ষী। সন্ধ্যা নামলেই যেন এই বাড়ি চারপাশের অন্ধকারকে গিলে নেয়; ঝুলে থাকা পুরোনো ঝাড়বাতি, কড়কড়ে দরজা আর বাতাসে…