অর্কদীপ চক্রবর্তী পর্ব ১ — প্রদর্শনীর রাত বালিগঞ্জের ‘মিত্র ভিলা’ যেন আজ আলোর এক জটিল গোলকধাঁধা। প্রাচীন করিন্থীয় স্তম্ভগুলোতে সাদা কাপড়ের পর্দা নেমে এসেছে, বাতাসে শীতাতপের সঙ্গে ফুলের গন্ধ—চামেলি, টিউব রোজ, আর একটু যেন আপাত অচেনা ধূপের ধোঁয়া। চৌহদ্দিতে অক্সফোর্ড স্ট্রিটের দিকে থেকে মৃদু ট্রামের ঘণ্টা ভেসে আসে, কিন্তু বাড়ির ভিতর তা পৌঁছয় না; ভিতরের উল্লাস আর ফিসফাস শব্দ সবকিছুকে আড়াল করে দেয়। আজ প্রদর্শনীর রাত—শুভ্রাংশু মিত্র তাঁর নতুন অধিগ্রহণ, সেই বিরল নীল হীরের ‘প্রাইভেট ভিউয়িং’-এর আয়োজন করেছেন। ‘নীল শাপলা’—এই নামটায় স্থির হয়েছে বাড়ির শিল্পপরামর্শদাতা মৃণালিনী বসু। কাঁচের বক্সের মধ্যে হীরেটা রাখা—জার্মানির বুলেটপ্রুফ গ্লাস, চারদিক জুড়ে ক্ষীণ লাল লেজার-গ্রিড, নিচে…
-
-
ঋত্বিক বসু পর্ব ১: কুয়াশার ভিতর হারিয়ে যাওয়া মানুষ শীতের সকাল। কলকাতার উত্তর শহরতলির এক পুরনো গলির ভেতর অদ্ভুত কুয়াশা জমে আছে। লাল ইটের বাড়ি, কাঠের দরজা, ম্লান আলো—মনে হয় যেন সময় এখানে থমকে গেছে। গলির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এক টালির ছাদওয়ালা পুরনো ডাকঘর। এই ডাকঘরের সামনে থেকেই নিখোঁজ হয়েছিল মানুষটা—সুদীপ্ত মল্লিক। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে, পেশায় কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক। ঘটনাটা ঘটেছিল মাত্র দু’দিন আগে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি প্রতিদিনের মতো চিঠি পাঠাতে এসেছিলেন ডাকঘরে। তখনো কুয়াশা কাটেনি। তিনি ভেতরে ঢুকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কয়েক মিনিট পর তাকে দেখা গেল না। আর বেরোলেন না তিনি। সবাই ভেবেছিল, হয়তো অন্য দরজা দিয়ে…
-
ঋদ্ধি চক্রবর্তী পর্ব ১: কালির চোখ কলকাতা শহরের মধ্যভাগে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা এক পুরোনো পাঠাগার—“রায় রে’ডিং রুম”—তেমন কোনও বিখ্যাত জায়গা নয়। অথচ সেখানে প্রতিদিন দুপুর তিনটার সময় ঠিক এক জন মহিলা এসে বসেন, বাম দিকের দ্বিতীয় সারির তৃতীয় টেবিলে। তাঁর নাম অনামিকা বাগচী। বয়স আটাশ। পেশায় গবেষক, জাদুবিদ্যা ও তন্ত্রশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তাঁর আসল কাজ শুরু হয় যখন বইয়ের পাতাগুলো শেষ হয়, আর প্রশ্নগুলো মুখে না থেকে ঢুকে পড়ে মগজে। সেদিন দুপুরেও অনামিকা এসে বসেছিল টেবিলটায়। লাল কাপড়ে মোড়া একটা পুরনো খাতা তার সামনে। নাম নেই, লেখকের উল্লেখ নেই। পাতাগুলোতে শুধুই আঁকা—ত্রিকোণ, মন্ডল,…
-
স্নেহা মুখার্জী অধ্যায় ১: আগমন পৃথিবীতে কিছু আগমন নিতান্তই ঘটনাক্রম নয়, বরং পূর্বনির্ধারিত ছক, যা কারও অজান্তে বুনে চলে ভাগ্যের জাল। অরিন্দম মুখার্জির শান্তিনিকেতনে আগমন তেমনই এক আগমন। আপাতদৃষ্টিতে গবেষণার জন্য শান্ত, নির্জন পরিবেশে এসে লোকসাহিত্য নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে এসেছেন তিনি, কিন্তু বাস্তবে—এই যাত্রা ছিল অতীতের একটি অসমাপ্ত অধ্যায়ের টান। এক মেঘলা শরতের দুপুর। খোলা রিকশায় বসে অরিন্দম শান্তিনিকেতনের দিকে এগোচ্ছে। রাস্তার ধারে লালমাটির পথ, পাশে শাল-পলাশের অরণ্য, মাঝে মাঝে কাঁঠালের গন্ধ ভেসে আসে বাতাসে। আকাশে রোদ-আলোর সঙ্গে মিশে আছে হালকা কুয়াশা, যেন প্রকৃতিই কিছু লুকিয়ে রেখেছে। রিকশাওয়ালা জিজ্ঞাসা করল, — “আপনার বাড়ি কোথায়, বাবু?” — “কলকাতা। তবে এখন…