সুপ্রিয় মল্লিক অধ্যায় ১: রহস্যময় ডাকঘর গ্রামের প্রান্তে, পুরনো কাঁঠালগাছের ছায়ায় ঢাকা এক বিরাট ডাকঘর দাঁড়িয়ে আছে, যেটি বছর কয়েক ধরে কার্যত উপেক্ষিত অবস্থায় ছিল। দিনের আলোয় ডাকঘরটি দেখতে যেন অতীতের এক ছায়াময় স্মৃতি—ধুলো জমে আছে চারপাশের প্রাচীরের ফাটলগুলোর মধ্যে, ছাদে কোথাও কোথাও মাটি ও কাদা জমে রয়েছে, এবং জানালার কাচগুলো ভাঙা ও ছেঁড়া। গ্রামের মানুষ দূরে দিয়ে হাঁটলেও ডাকঘরের দিকে তাকাতে অস্বস্তি বোধ করে; কেউ কেউ বলতো, “এখানে আর কোনো কাজকর্ম হয় না, শুধু রাতের বেলা ডাকঘরের প্রহরী হয়তো যাদুকরীর মতো নিজে নিজে ঘুরে বেড়ায়।” ডাকঘরের চারপাশে বেড়ে থাকা খড়ের গাদাগুলি ও ঝোপঝাড় যেন আরও ভয়াল একটি পরিবেশ তৈরি…
-
-
অমৃতা মাঝি ১ শান্তিনিকেতনের উপকণ্ঠের সেই পুরনো আশ্রমটি বছরের পর বছর ধরে ধুলো ও সময়ের ছায়ায় অজানার মতো লুকিয়ে ছিল। মূল পথে পৌঁছুতে গেলে পথচলার প্রায় সব জায়গায় গাছপালা ও ঘাসের লাজুক আঁচড় চোখে পড়ত। আশ্রমের প্রাচীন দেওয়ালগুলোতে আজকাল আর কোনো রঙ বা আলোর ছোঁয়া নেই, শুধুই কিছু পুরনো খণ্ডিত মূর্তি আর ধুলো মেখে যাওয়া ভগ্নাংশের অবশিষ্টাংশ। হরিপদ মণ্ডল, যিনি আশ্রমের আশেপাশের জমি দেখাশোনা করতেন, একদিন হঠাৎ করেই কয়েকটা পুরনো গর্ত খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার কৌতূহল মূলত ধন বা পুরনো শিল্পকর্মের প্রতি নয়; বরং আশ্রমের নিঃশব্দ ইতিহাসের মধ্যে লুকানো কিছু রহস্য উন্মোচনের জন্য ছিল। তিনি তার ছোটো কেঁচো-ছোঁচে…
-
১ বৃষ্টির রাত। এমন এক বৃষ্টি, যা যেন শুধু রাতের নীরবতা চুরমার করে দিতে আসে। সরলা দেবী জানালার পাশে বসে পুরনো কাঠের দোলনায় আস্তে আস্তে দুলছেন। তাঁর সামনে ছোট টেবিলে রাখা একটি মাটির প্রদীপ টিমটিম করে জ্বলছে, এবং তার পাশে রাখা একটি ফ্রেম করা ছবি—অমিতের, তাঁর একমাত্র ছেলে, যিনি গত তিন বছর আগের এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এখনো সেই দিনটার কথা ভাবলে সরলার বুকের মধ্যে একধরনের ঠান্ডা ঢেউ খেলে যায়। ছেলের শেষ জন্মদিনের সময় তোলা ছবি—চোখে হাসি, মুখে আত্মবিশ্বাস, যেন বলছে, “মা, আমি আছি তো!” অথচ সেই হাসির পেছনে কি লুকিয়ে ছিল কোনো গোপন কথা? কিছুদিন ধরে সরলার মনে…