• Bangla - রহস্য গল্প

    কর্ণসুবর্ণের স্বর্ণমুদ্রা

    অরিত্র সেনগুপ্ত প্রথম পর্ব: ভাঙা মন্দিরের ছায়া কলকাতার গরম দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো গ্রন্থাগারে বসে ঋদ্ধি মুখোপাধ্যায় ধুলোমাখা এক দলিল উল্টেপাল্টে দেখছিল। দলিলটা এসেছে এক ব্রিটিশ কালেক্টরের আর্কাইভ থেকে—মলিন, ফ্যাকাশে কাগজে অদ্ভুত সব আঁকিবুঁকি। প্রথমে ওগুলো অর্থহীন দাগ মনে হলেও, চোখ অভ্যস্ত হতে না হতেই ঋদ্ধি দেখল ম্লান লাল কালি দিয়ে আঁকা একটা মানচিত্র। নদী, গাছপালা, আর মাঝখানে লেখা কয়েকটি সংস্কৃত শব্দ—“যত সূর্যের ছায়া, তত রাজাধন।” ঋদ্ধির বুকের ভেতর ঝড় উঠল। এ শুধু কোনো দলিল নয়—এ যেন ইতিহাসের অমূল্য দরজা খুলে দেওয়ার চাবি। কর্ণসুবর্ণ—গৌড়ের সেই প্রাচীন রাজধানী যেখানে শশাঙ্কদেব একসময় রাজত্ব করেছিলেন, সেখানকার ধনের ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে মানচিত্রে। ঠিক তখনই গ্রন্থাগারের…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    সেপাইয়ের কণ্ঠস্বর

    আলাপ মুখার্জি মুর্শিদাবাদের এক প্রাচীন কেল্লার দিকে পা বাড়ালেন, যেখানে নবাবি আমলের ছায়া আজও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। কেল্লার ভেতরের দেয়ালগুলো যেন সময়ের সঙ্গে মিশে গিয়ে ধুলো আর ছাইয়ের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে অতীতের গল্প। প্রতিটি পাথরের ছেদ, ভাঙা দেয়াল আর কুমড়ো করা তালের দরজা আলাপকে এক অদ্ভুত উত্তেজনা দিচ্ছিল। তিনি একদিকে গবেষক মন নিয়ে এখানে এসেছেন, ইতিহাসের খুঁটিনাটি অধ্যয়ন করতে; অন্যদিকে তার হৃদয়ে ঝাঁঝালো কৌতূহল কাজ করছিল। স্থানীয়রা তাকে নানা গল্প শোনিয়েছে—কেল্লার ভেতর রাত হলে বন্দুকের আওয়াজ শোনা যায়, কখনও দেখা যায় এক অদৃশ্য সেপাই পাহারা দিচ্ছে। আলাপ প্রথমে সেইসব গল্পকে কল্পনার জায়গা মনে করেছিলেন, কিন্তু কেল্লার প্রাচীন দুর্গযন্ত্র এবং গভীর…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    নীলকুঠির অন্ধকার

    পুলক বিশ্বাস নীলয় সেনের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছিল বইয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ইতিহাসের স্তর থেকে, কিন্তু এবার তার গবেষণার পথ তাকে নিয়ে এল বাস্তবের ভেতরে জমে থাকা সময়ের ধুলোয় ঢাকা রহস্যে। কলকাতা থেকে ট্রেনে চেপে দীর্ঘ ভ্রমণের পর যখন মুর্শিদাবাদের মাটিতে পা রাখল, তার চোখের সামনে খুলে গেল এক অচেনা অথচ পরিচিত ইতিহাসের দরজা। রেলস্টেশনের পুরনো কাঠের বেঞ্চ, দেওয়ালে ঝুলে থাকা ম্লান বিজ্ঞাপন, আর মানুষের চেনা-অচেনা মুখগুলোর ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে সে যেন অনুভব করছিল—এই শহর কেবল ভৌগোলিক স্থান নয়, এটি এক অদৃশ্য সময়ের ভাণ্ডার, যেখানে প্রতিটি ইট, প্রতিটি পথ, প্রতিটি গাছ লুকিয়ে রেখেছে গল্প। মুর্শিদাবাদকে বলা হয় বাংলার মুঘল রাজধানীর উত্তরসূরি,…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গোপন সিন্দুকের ছায়া

    অরিন্দম ঘোষ পর্ব ১ : প্রথম সূত্র কলকাতার গরম বিকেলটা অস্বাভাবিকভাবে নিস্তব্ধ ছিল। কলেজ স্ট্রিটের বুকশপগুলোতে ভিড় কমে আসছিল, বই হাতে নিয়ে দু-চারজন ছাত্র পায়ে টেনে হাঁটছিল। রক্তিম সেনের চোখ তীক্ষ্ণ, তার হাতের পাতায় ধরা এক মলিন খাতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো আর্কাইভ ঘেঁটে এইমাত্র সে খাতাটা পেয়েছে—ভুলে যাওয়া এক জমিদারবাড়ির দলিল। হলুদ হয়ে যাওয়া কাগজ, তার ভেতরে খসখসে অক্ষরে লেখা নাম—“রায়বাহাদুর শশাঙ্ক মুখার্জি, ১৮৬৪।” রক্তিমের ভ্রু কুঁচকে গেল। ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে সে জানে, শশাঙ্ক মুখার্জি ছিলেন মুর্শিদাবাদের এক বিত্তশালী জমিদার, যিনি ইংরেজদের সঙ্গে মিলেমিশে চলতেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পরে হঠাৎ করে পুরো বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিংবদন্তি আছে, তার ভিটেবাড়ির ভেতর…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    শ্বেতপাথরের বালিশ

    এক মাঘ মাসের শেষে মুর্শিদাবাদ শহরের ভেজা শীত এখনও হাড়ে হাড়ে কাঁপায়। গঙ্গার পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা রাজবাড়ির ছায়ায়, ড. সায়ন্তনী মুখোপাধ্যায় একটি পুরাতন প্রত্নতাত্ত্বিক ফাইল হাতে নিয়ে চুপ করে বসেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি অনুদানের ভিত্তিতে তিনি এসেছেন মুর্শিদাবাদের হারিয়ে যাওয়া ফোক-কালচার আর মুঘল-পরবর্তী ইসলামি নির্মাণকলা নিয়ে গবেষণার জন্য। কিন্তু আসল আগ্রহ তাঁর ছিল এক রহস্যময় বস্তু নিয়ে—যার নাম কেবলমাত্র একটি ডকুমেন্টে পাওয়া গিয়েছিল: “শ্বেতপাথরের বালিশ।” নথিতে লেখা ছিল, এটি এক সময় একটি প্রাচীন মসজিদের গোপন কামরায় রাখা হত এবং বলা হত যেই এই বালিশে একবার মাথা রাখে, সে মৃতদের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে—তাদের যন্ত্রণার স্মৃতি, তাঁদের না-বলা ইতিহাস যেন…