ঋজু ভট্টাচার্য ১ কলকাতার আকাশটা সকাল থেকেই মেঘলা ছিল। শহরের কনস্ট্যান্ট কোলাহলের মাঝেও যেন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল কোর্ট স্ট্রিটের চত্বর জুড়ে। আইনজীবীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা, কিছুটা উদ্বেগও, কারণ শহরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিমিনাল ল’ এক্সপার্ট বরণ ঘোষাল আজও কোর্টে আসেননি। এই নিয়ে সাত দিন হয়ে গেল তিনি নিখোঁজ। প্রথম দু’দিন ভেবেছিল সবাই হয়তো কোনো প্রফেশনাল ট্রিপে গেছেন, তৃতীয় দিনে একাধিক কেসের শুনানি বাতিল হওয়ায় শুরু হয়েছিল গুঞ্জন, এবং সপ্তম দিনে এসে পুরো শহরটা যেন চঞ্চল হয়ে উঠল। মিডিয়া জ্বলজ্বল করছে ‘সেলিব্রিটি লইয়ার নিখোঁজ’ শিরোনামে। পুলিশ অফিশিয়ালি এখনও “মিসিং পারসন” কেস ফাইল করলেও, তদন্তে নামানো হয়েছে দুই কনস্টেবল, একটি গোয়েন্দা…
-
-
মোহনা বসু উত্তর কলকাতার পুরনো এক গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা তিনতলা বাড়িটার নাম ‘শ্রীনিবাস’। বয়স প্রায় একশো বছরের কাছাকাছি। দরজার কাঠে হাত রেখে চোখ বন্ধ করলে এখনও মনে হয় যেন কেউ আঙিনায় রাঁধুনি দিদার হাঁকডাক দিচ্ছে, ভিতরে কেউ রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে, আর পেছনের জানালা দিয়ে ভেসে আসছে ফুলকোচুর গন্ধ। এই বাড়িরই বড় কন্যা রোহিনী সেন, বয়স একুশ, প্রেসিডেন্সি কলেজের দর্শনের ছাত্রী। জন্ম থেকে বড় হওয়া এই বনেদি পরিবারে, যেখানে মেয়েরা কথা কম বলে, হাঁটে মেপে মেপে, হাসে মাথা নিচু করে। রোহিনীর বাবা অশোক সেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, মুখে মেপে কথা বলা, চোখে ঠাণ্ডা নিয়ন্ত্রণের রোশনাই। মা বাণী সেন, সমাজে পরিচিত এক ‘আদর্শ স্ত্রী…
-
সৌম্যজ্যোতি ভট্টাচার্য ভোর চারটের দিকে কলকাতার আকাশে বৃষ্টির গন্ধ মিলিয়ে ছিল ধোঁয়ার মত আবছা আলো। কৌশিক মৈত্র জানালার ধারে বসে ছিল চুপ করে, ছয়তলার ফ্ল্যাটের নিচে তখনও শহর জেগে ওঠেনি। তার গলায় ঝুলে থাকা কাঁপতে থাকা একচিলতে নিঃশ্বাস, বিছানার ধারে পড়ে থাকা খোলা ঘুমের ওষুধের শিশি, ও পাশের টেবিলে ছেঁড়া কাগজে কুংথিত দুটো শব্দ— “মাফ করো”। গত রাতটা সে ঠিক কীভাবে পার করল, মনে পড়ে না। অথবা, মনে পড়াতে চায় না। এ জীবনের সব ছায়া, সব আগুন, সব ব্যর্থতা ঘিরে রেখেছিল তাকে এক অদ্ভুত অস্পষ্ট ধোঁয়াশায়, যেন কিছুই আর বাস্তব নয়—সবই বাষ্প। সেই বাষ্পেই ঘোর লাগা চোখে হঠাৎ পড়ে যায়…
-
শুভ্রনীল দে ১ নতুন শহরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো দোতলা বাড়িটা প্রথম থেকেই ইরার ভালো লাগেনি। বাইরে থেকে একরকম, ভেতরে ঢুকলেই মনে হয়, সময় যেন এখানে আটকে গেছে— দেওয়ালের ছোপ ধরা রঙ, কাঠের সিঁড়ির আর্তনাদ, আর অলিন্দে সারাদিনই একটা চাপা ছায়া। ইরার মা স্মিতা এক বড়ো কোম্পানিতে কাজ করে, রাতে দেরি হয় প্রায়শই, ফলে স্কুল থেকে ফিরে ইরাকে বেশিরভাগ সময় একাই কাটাতে হয়। প্রথম কয়েকদিন তেমন কিছু মনে হয়নি— নতুন স্কুল, নতুন পাড়া, নিজের ছোট একটা ঘর— সবকিছু মিলিয়ে একরকম উত্তেজনা ছিল। কিন্তু ঠিক সপ্তম দিন রাতে শুরু হয় প্রথম অস্বস্তি। রাতে ঘুম ভেঙে যায়, পাশে টেবিল ঘড়ির কাঁটায়…