চয়নিকা মজুমদার এক ঈশান সেনগুপ্তর বয়স ২৮। চিত্রশিল্পী, কিন্তু ভিড়ভাট্টা শহরের কোলাহলে তার তুলি আর রঙ একেবারেই শ্বাস নিতে পারছিল না। কলকাতার দক্ষিণে বাবা-মায়ের পুরোনো ফ্ল্যাটে বসবাস করতে করতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, যেখানে প্রতিদিন শব্দ, যানজট, অজস্র মানুষের দৌড়ঝাঁপ তাকে গ্রাস করে ফেলত। তাই একদিন সে ঠিক করল—নিজেকে গুছিয়ে নিতে হলে, একা হয়ে নিজের সৃষ্টিকে নতুন করে শুরু করতে হলে, তাকে চাই এক শান্ত আশ্রয়। বহু খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে সে পায় উত্তর কলকাতার এক পুরোনো ভাড়া-বাড়ি। গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটা যেন অনেক কিছুর সাক্ষী হয়ে গম্ভীর হয়ে বসে আছে—মলিন দেওয়াল, ভাঙা বারান্দার কার্নিশ, অচেনা ঘ্রাণে ভরা স্যাঁতসেঁতে ঘর,…
-
-
জয়ন্ত পাল ১ কলকাতার আকাশে সেদিন অদ্ভুত এক মেঘ ছিল, যেন কেউ কালির কুয়াশা ছড়িয়ে দিয়েছে শহরের উপর। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া মোড়ের চতুষ্পথে বিকেলবেলার ব্যস্ত ট্রাফিক হঠাৎ যেন স্তব্ধ হয়ে গেল, যখন এক ভবঘুরে মানুষ মাঝ রাস্তায় এসে দাঁড়াল। তার গায়ে ছিল মলিন গেরুয়া পোশাক, মাথাভর্তি উসকো চুল, আর গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। কেউ কেউ বলেছিল, সে হয়ত ভবঘুরে কোনও পাগল সাধু; আবার কেউ চোখ কপালে তুলে দেখছিল, তার চোখে যেন আগুনের ঝলকানি। লোকটা দুই হাত তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা জপতে লাগল, ভাষা বোঝা যাচ্ছিল না—কিন্তু আশেপাশে এক অদ্ভুত গুঞ্জন সৃষ্টি হচ্ছিল, যেন শব্দ নয়, ধ্বনি নয়, বরং সময়…
-
নিলয় মিত্র অধ্যায় ১ সাহিত্যিক সৌম্য মিত্রের নিথর দেহটি পড়েছিল তার উত্তর কলকাতার দোতলা বাড়ির লেখার ঘরে, জানালার পর্দা অর্ধেক সরানো, বাইরের ঝিরঝিরে বৃষ্টির আলো গালচে করে রেখেছে কাঁচের ওপর। ছোট একটি কাঠের টেবিলে ছড়িয়ে থাকা কাগজগুলো ছিল সযত্নে বাঁধা একটি পাণ্ডুলিপি, নামহীন, কেবল প্রতিটি পাতার নিচে লাল কালি দিয়ে স্পষ্টভাবে লেখা — “এটা আমার লেখা নয়।” তার ডান হাতে শক্ত করে ধরা একটি পার্কার কলম, পাশে পড়ে থাকা আধখোলা পেন্সিল বক্স, আর ঘরের কোণে নিঃশব্দে জ্বলছিল একটি কুয়াশামাখা টেবিল ল্যাম্প। পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্ট বলেছে—আত্মহত্যা। ঘুমের বড়ি ও হুইস্কির সম্মিলিত প্রভাবে মৃত্যু হয়েছে সম্ভবত রাত আড়াইটার সময়। কিন্তু বাড়ির কাজের…