ঋত্বিক দে অসীম দে শ্যামবাজারের পুরোনো গলির ভেতরে ছোট্ট কিন্তু নামী জুয়েলার্স দোকানের মালিক। বয়স পঁয়ত্রিশের কোঠায়, কিন্তু চোখেমুখে তার বয়সের চেয়ে অনেক বেশি ক্লান্তির ছাপ। ব্যবসাটা তার নিজের তৈরি, বাবার থেকে পাওয়া নয়, তাই দোকানের প্রতিটি শোকেস, প্রতিটি রুপোর গহনা, প্রতিটি কাচের তাকের পেছনে লুকোনো আছে অসীমের বহু বছরের ঘাম আর অভিজ্ঞতা। সে বিশ্বাস করে প্রতিটি রত্নের নিজস্ব ইতিহাস থাকে, প্রতিটি অলঙ্কার এক-একটি অদৃশ্য গল্প বহন করে। তাই যখনই কোথাও কোনো নিলামের কথা শোনে, তার ভেতরে এক অদ্ভুত কৌতূহল জন্ম নেয়। সেই কৌতূহলই তাকে নিয়ে গেল বৌবাজারের এক পুরোনো নিলামঘরে। ভাঙাচোরা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অসীম অনুভব করছিল,…
-
-
দীপায়ন চক্রবর্তী ১ শহরের ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও অয়নের মন সবসময় অদ্ভুত রহস্যের খোঁজে ঘুরে বেড়াত। তার ইউটিউব চ্যানেল মিস্ট্রি অফ বেঙ্গল ইতিমধ্যেই হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার পেয়ে গেছে, কারণ সে এমন সব ঘটনা খুঁজে আনে যা সাধারণ মানুষ কেবল গুজব বলে উড়িয়ে দেয়। এক শীতের সকালে যখন ফোনে এক অপরিচিত নাম্বার থেকে ভিডিও ক্লিপ আসে, প্রথমে ভেবেছিল এটাও হয়তো কারো প্র্যাঙ্ক। কিন্তু প্লে বাটনে চাপ দিতেই চোখ বড় হয়ে যায়—ঘন সাদা কুয়াশায় ঢাকা গোপালগঞ্জের এক সরু রাস্তা, আর সেই কুয়াশার গভীর থেকে ভেসে আসছে নারীর এক বিকৃত, কাঁপা কাঁপা হাসি। হাসিটা যেন দূর থেকে, কিন্তু আবার কানে হালকা ফিসফিস করে বাজছে।…
-
ঋতবান চ্যাটার্জী হারিয়ে যাওয়া সকাল পুরুলিয়ার ঘাঘরা গ্রাম যেন একটানা নিঃশব্দে বেঁচে থাকে। এই গ্রামের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে শীতল সুবর্ণরেখা, আর মাথার ওপর ছায়া ফেলে রেখেছে অজস্র শাল-সেগুন। এখানে দিনের আলো পড়ে নরম, আর রাতের অন্ধকার গাঢ়, জ্যোৎস্নাতেও কালো। কেবলই যেন কেউ দেখে, তবু ধরা পড়ে না। বিপ্লব দাস ছিলেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক। গ্রামের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করত, কিন্তু ভালোবাসার চোখে—যেন তিনি তাঁদের আশার বাতি। সকাল সাতটায় উঠোনে লাল চায়ের কাপ হাতে বসে থাকতেন, পোষা কুকুর ‘রাঙা’ পায়ের পাশে বসে। সেদিন সকালে রাঙা ছিল, কাপটাও ছিল, শুধু মানুষটা ছিল না। অরুন্ধতী, বিপ্লবের স্ত্রী, প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো বাজারে…
-
সিঞ্জিনী চক্রবর্তী আগমন নদিয়ার চন্দ্রপুর গ্রামটা সময়ের দিক থেকে যেন অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। শহরের তুলনায় এখানে সময় যেন একটু ধীরে চলে। দিনগুলো এখানে বড় শান্ত, নিঃসঙ্গ; সন্ধ্যা নামতেই ঘরবাড়ির দরজা জানলা বন্ধ হয়ে যায়, কুকুরের ডাকে চমকে ওঠে মানুষ। গ্রামটা যেন নিজেই একটা দীর্ঘশ্বাস। পাকা রাস্তা নেই, মোবাইল টাওয়ারের সংকেত আসে-যায়। চায়ের দোকানে বিকেলের আড্ডাও যেন কেমন নিরুত্তাপ। আর সন্ধ্যে নামলেই চারপাশে এমন এক নীরবতা নামে, যেন শব্দ করাটাই পাপ। এই চন্দ্রপুর গ্রামেই আসে রক্তিম সেন—কলকাতার যুবক, ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের ছাত্র। সে আসছে তার মামাবাড়িতে, গরমের ছুটির জন্য। পুরনো দিনের মতো চিঠি বা ফোন করে নয়, হঠাৎ করেই একদিন চেপে…