• Bangla - ভূতের গল্প

    হাতিরপোলের অশরীরী

    তপন শিকদার উত্তর কলকাতার পুরনো মহল্লাগুলোর গলি যেন এক অদ্ভুত সময়যন্ত্র—যেখানে অতীতের প্রতিধ্বনি আজও দেয়ালের ভেতর আটকে আছে। দিনের বেলায় এই গলিগুলোয় ছেলেদের ক্রিকেট খেলা, ভ্যানরিকশার ঝমঝম শব্দ, আর পুরনো মিষ্টির দোকান থেকে ভেসে আসা রসগোল্লার গন্ধ মিশে থাকে; কিন্তু সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই যেন এই গলির প্রাণশক্তি শুষে নেয় অদৃশ্য কোনো শক্তি। হাতিরপোলের সেই নির্দিষ্ট ভাঙাচোরা গলিতে যখন সন্ধ্যার আলো ম্লান হয়ে আসে, তখন মনে হয় ছায়ারা যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে, পুরনো বাড়ির জানালা দিয়ে কেউ তাকিয়ে আছে। ম্লান আলোর নিচে কাদামাখা রাস্তা, ভাঙা ইটের স্তূপ, আর ধসে পড়া বারান্দার খচখচে কাঠ—সব মিলে তৈরি করে এক অদ্ভুত ভৌতিক আবহ।…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    কাশীপুরের ভিটে

    অভিজিৎ রায় পর্ব ১ কালো মেঘে ঢাকা সন্ধেটা যেন গ্রামের বুক থেকে আলোটুকু শুষে নিয়েছিল। নদীর ধারে পেঁচানো পথ দিয়ে হাঁটছিল অর্ণব। কলকাতা থেকে সে এসেছিল কিছু কাজের সূত্রে, কিন্তু এই গ্রামে এসে তার মনে হচ্ছিল, শহরের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পাওয়া মানে এই নয় যে মন শান্ত হয়ে যাবে। বরং প্রকৃতির অন্ধকারের ভেতরেই এক অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা ঘিরে ফেলছিল তাকে। গ্রামটার নাম কাশীপুর, লোকসংখ্যা অল্প, আর চারদিকে ঘন জঙ্গল। তার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল এক পুরোনো বাড়িতে—লোকেরা যাকে বলে মজুমদারদের পরিত্যক্ত ভিটে। লোকজন তাকে আগেই সাবধান করেছিল, রাত হলে যেন একা বাইরে না বেরোয়। অর্ণব ভেবেছিল, এগুলো নিছক গ্রামীণ গুজব, যেখানে ভূতের…

  • Bangla - তন্ত্র

    চন্দ্রনাথের কালো জল

    সায়ন্তন ঘোষ সন্ধ্যার আলো তখন পাহাড়ের ঢালে মিশে যাচ্ছে। সিলেট শহর ছেড়ে চন্দ্রনাথের পথে এগোতে এগোতে রুদ্র অনুভব করছিল এক অদ্ভুত গা ছমছমে শূন্যতা। পাহাড়ের রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে, শুধু কোথাও কোথাও ধূপের গন্ধ ভেসে আসছে—গ্রামের বাড়িগুলোতে পূর্ণিমার পূজা চলছে। ট্যাক্সির ভেতরে বসে অনন্যা জানলার কাঁচে কপাল ঠেকিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখছিল। তার মনে হচ্ছিল, পাহাড় যেন অদৃশ্য চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। —“এই জায়গাটার মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক আছে, তাই না?” হঠাৎ ফিসফিস করে বলল তিথি। অভিষেক হেসে উত্তর দিল, —“তুমি আবার ভূতের গল্প শুরু করছো নাকি? আমরা এসেছি বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে। কালো জলের খনিজ উপাদান বের করলে হয়তো একটা…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    অভিশপ্ত জমিদারবাড়ি

    অদ্বৈত মুখার্জি পর্ব ১ : ফিরে আসা রাত শান্তিপুর গ্রামের মানুষ আজও ভরসা করে না ওই অন্ধকারমাখা গলিটা পেরোতে। গলির শেষে দাঁড়িয়ে থাকা ভাঙাচোরা জমিদারবাড়িটা যেন এক অদৃশ্য ছায়ার মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দিনের বেলা দূর থেকে দেখলেও বুকের ভেতর কেমন চাপা ভয় জমে ওঠে। রাত হলে তো কথাই নেই—নিশ্চুপ নীল অন্ধকারে বাড়িটার ভাঙা চূড়ার ওপর কাক ডেকে ওঠে, কখনো ঝোপের আড়াল থেকে শেয়ালের চোখ জ্বলে ওঠে, আর হাওয়ায় ভেসে আসে এমন এক অজানা গন্ধ, যেটা মানুষে মানুষে ছড়িয়ে দেয় আতঙ্কের গল্প। এই বাড়িরই মালিক ছিল এককালে রাজেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী—শান্তিপুরের জমিদার। গাঢ় লাল রঙের ইট, ঝলমলে ঝাড়বাতি, আর অন্দরমহলে…

  • Bangla - তন্ত্র

    কালো দর্পণ

    সঞ্চারী নাগ উত্তরাধিকার চৌধুরী বাড়িটা যেন কলকাতার বুকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এক টুকরো ইতিহাস। বাইরের রাস্তায় কোলাহল, গলিপথে ঠেলাঠেলি অটো আর ছেঁড়া পোস্টারের ভিড়, কিন্তু উঁচু পাঁচিল ঘেরা সেই বনেদি বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই যেন সময় একেবারে অন্য গতিতে বয়ে চলে। আঙিনার মাঝখানে একটা বিশাল আমগাছ, তার চারপাশে বিক্ষিপ্ত ছায়া পড়ে আছে, আর সেই ছায়ার মধ্যে পড়ে আছে বহু প্রজন্মের অগণিত স্মৃতি। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেই প্রথমেই চোখে পড়ে একপাশের শীতল ঘরখানা, যেখানে ঢাকা দেওয়া আছে পুরোনো কাঠের আসবাবপত্র। ধুলো জমে থাকা পর্দার ফাঁক গলে আসা আলোয় দেখা যায় দেয়ালের কোণায় দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল আয়না, লম্বা কাঠের ফ্রেমে বসানো, যার…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    ফিসফিসে কবরস্থান

    ঋতা মিত্র পর্ব ১: কাঁচের নাম বিকেলের আলো যেদিন জঙ্গলের কিনারায় ঢালু হয়ে পড়ে, সেদিনই নীলার ক্যামেরা সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকে; যেন আলোটা সরে যাওয়ার আগেই তা ধরে ফেলতে চায়। শহরের উত্তর-পশ্চিমে, পুরনো রেললাইনের পাশে, গলানো টার আর ঘাসের গন্ধমেশানো একটা ফাঁকা জমিতে দাঁড়িয়ে ছিল কবরস্থানটা—চুনসুরকির মলিন রঙ, বুজে থাকা লোহার ফটক, আর তার উপর দিয়ে বুনো লতাগুল্মের চক্রাকার আঁচড়। জায়গার নাম বোর্ডে নেই, মানচিত্রে নেই; তবু গুগল ম্যাপে জুম করলে একটা অচেনা ছোপ, যেন পুরনো দাগের মতো, চোখে পড়ে। নীলা প্রথমে ভেবেছিল বোধহয় এটা একটা ব্যক্তিগত জমি—পুরনো পরিবারের কবরখানা—যেখানে কেউ আসে না, কেবল সময় এসে পড়ে থাকে। কিন্তু লোহার…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    শ্মশানের শাঁখ

    মৈনাক গাঙ্গুলী এক সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে আকাশে এক অদ্ভুত গুমোট ভাব নেমে এসেছে। বৃষ্টি হবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু বাতাসে যেন স্যাঁতসেঁতে এক শীতলতা ভেসে বেড়াচ্ছে। তরুণ পুরোহিত অরিন্দম চক্রবর্তী মন্দিরের ছোট ঘরে বসে সেদিনের সন্ধ্যারতি সেরে নিজের থালাবাসন ধুচ্ছিল, এমন সময় মন্দিরের দ্বারপাল গুরুচরণ কাঁপা গলায় এসে বলল—”অরিন্দম, তোমাকে রাতেই শ্মশানে যেতে হবে।” অরিন্দম প্রথমে ভ্রূ কুঁচকে তাকাল, কারণ এত রাতে শ্মশানে যাওয়ার কোনো কারণ থাকে না। কিন্তু গুরুচরণ জানাল, আজ অমাবস্যার রাত, আর গ্রামের ‘শ্মশান পূজা’র দিন। পুরোনো বিশ্বাস—এ রাতে শ্মশান দেবতার কাছে বলি ও ধূপ-দীপ না দিলে, গ্রামে অশুভ শক্তি নেমে আসে। এই কাজটা বহুদিন…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চতুষ্পথে দাঁড়িয়ে

    মেঘলা রায় পর্ব ১: সেই চিঠি পূর্ব ক্যালকাটা কর্পোরেশনের ঘিঞ্জি কোয়ার্টার, হরিদেবপুরের বাসা। সেইখানেই প্রতিদিন ঠিক আটটায় ঘুম ভাঙে সৌম্য মিত্রর। ঘুম থেকে উঠেই বাম দিকের দেয়াল ঘেঁষে থাকা পুরনো লোহার আলমারিটা খোলে—চাবি নেই, সরাসরি তালা ভেঙে রাখা। সেই তালার ভেতরেই পুরোনো চিঠিগুলো থাকে, মায়ের লেখা, ভাইয়ের পাঠানো, কয়েকটা সরকারি চিঠি, দু-তিনটে কাটা টিকিট। কিন্তু আজ সকালটা যেন কেমন অন্যরকম। জানলা গলে ঢুকছে একরাশ ঝিরঝিরে ঠান্ডা আলো, যেটা কলকাতার চেনা আষাঢ়ে মেলে না। আর তার ফাঁক দিয়ে, ছেলেবেলায় শোনা মাধবীলতার ঘ্রাণ এসে পড়ছে বিছানার বালিশে। হাতের প্রথম চিঠিটা হলুদ হয়ে যাওয়া খামে মোড়া। উপরে কালো কালিতে বড় বড় হরফে লেখা—সৌম্য…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    পদচিহ্ন

    নিবেদিতা চক্রবর্তী অধ্যায় ১: কুমিরডাঙার বাংলো অরিত্র বসুর মনটা বেশ কয়েক মাস ধরেই ভারী হয়ে আছে। ছবি আঁকার চেষ্টা করলেই মনে হয়, ব্রাশটা যেন বাতাসে দোলা খায়, কিন্তু রঙে ডুবে না। ক্যানভাসে রঙ মিশে যায় ঠিকই, কিন্তু তাতে জীবন থাকে না। তার ভেতরের কিছু যেন চুপ করে বসে আছে, আর তা না জাগলে কিছুই উঠে আসে না ক্যানভাসে। কলকাতার কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে, এক বন্ধুর পরামর্শে সে চলে এল পুরুলিয়ার এক প্রাচীন, নির্জন গ্রামে—কুমিরডাঙা। পাহাড়, জঙ্গল আর অদ্ভুত নীরবতায় ঘেরা এই গ্রাম এখনো যেন কালের গায়ে আঁচড় পড়তে দেয়নি। এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক চলে না, ইলেকট্রিকের তার আসে আবার যায়—আর…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    অরুণপুকুরের মেয়ে

    দেবযানী ভট্টাচার্য এক বীরভূমের প্রত্যন্ত এক গ্রামে অবস্থিত অরুণপুকুর—চারপাশে শাল, মহুয়া, আর শিমুল গাছে ঘেরা এক নিঝুম জলাশয়, যেটিকে ঘিরে রয়েছে শত গল্প, শত কানাঘুষো। দিনের বেলায় সেটি যেন নিরীহ; গ্রামের মহিলারা সেখানে জল তোলে, শিশুরা খেলে। কিন্তু সূর্য ঢলে যাওয়ার পর সেই পুকুরের ঘাট কেমন যেন থমকে যায়। পাখিরা উড়ে যায় অন্য দিকে, কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করে উঠলেও কিছুক্ষণ পরেই চুপ করে যায়। গ্রামের মানুষ বলে—“ওই সময় কেউ যেও না ঘাটের দিকে, মেয়েটা দাঁড়িয়ে থাকে জলে।” এই গল্পে সৌরভ মুখোপাধ্যায়, গ্রামের হাইস্কুলের ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র, আদৌ বিশ্বাস করে না। বিজ্ঞান, লজিক, নিউরোলজি, আর ইউটিউব ডকুমেন্টারির উপর দাঁড়ানো তার যুক্তিনির্ভর…