সুনন্দা সোম বীরভূমের দেউলতলা গ্রামটি যেন সময়ের গতির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে ঢেউখেলানো মাঠ, মাটির ঘর, পাখিদের ডাক আর নিরিবিলি দুপুর—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত শান্তির আবহাওয়া। কিন্তু এই শান্ত গ্রামটির বুকেই দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন মন্দির, যেন ইতিহাসের এক নিঃশব্দ সাক্ষী। কেউ কেউ বলে মন্দিরটির বয়স চারশো বছরেরও বেশি, আবার কেউ বলে আরও প্রাচীন। দিনের বেলায় এখানে গ্রামের মানুষ আসে পুজো দিতে, গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেয়, মন্দিরের চাতালে বসে বাচ্চারা খেলা করে। কিন্তু সূর্য ডুবে গেলেই সবকিছু যেন পাল্টে যায়। মন্দিরটিকে ঘিরে এক অদ্ভুত শূন্যতা নেমে আসে, এমন নীরবতা যেন কেউ অদৃশ্য হয়ে সারা পরিবেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। গ্রামবাসীরা…
-
-
এক অরিন্দমের পদধ্বনি যখন গ্রামের সরু মাটির পথগুলোতে প্রতিধ্বনিত হলো, তখন তার মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা জন্ম নিল। গ্রামটি এমন একটি স্থানে অবস্থিত, যেখানে সময় যেন নিজেই ধীরে চলার চেষ্টা করছে। চারপাশের ঘরবাড়ি প্রায়শই কাঁকড়া মাটির তৈরি, তার ছাদগুলো বাঁশের খোঁপায় ঘেরা, এবং প্রতিটি ঘর যেন গল্পের অংশ বহন করছে। গ্রামের প্রবেশদ্বার থেকে দেখা যায় প্রাচীন মন্দিরের সোনালী কল্পচিত্র—যেখানে সূর্য ওঠার সময় মন্দিরের গম্বুজে আলোর খেলা যেন এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। অরিন্দম গ্রামে এসেছিল তার গবেষণার জন্য, কিন্তু এখানে এসে তার মনে হলো যেন ইতিহাস ও বাস্তবের মধ্যে এক অদৃশ্য সেতু তৈরি হয়েছে। সে শোনেছে, গ্রামবাসীর জীবন এই দেবীর মূর্তির চারপাশে…
-
তীর্থঙ্কর সেন ১ ঘরের ভেতর তখন মাঝরাত পার হয়ে গেছে। অভিষেক ধর একা বসে ছিল তার পুরোনো ডেস্কটপের সামনে, চোখের নিচে হালকা কালি, ঠোঁটে ক্লান্তির চিহ্ন, তবু মনোযোগ অটুট। কোড লেখার থেকে বেশি আজ তার আগ্রহ ছিল ডার্ক ওয়েবের অদ্ভুত সব ফোরাম ঘাঁটাঘাঁটিতে। টর ব্রাউজারে ‘Deep Onion’ রাউট দিয়ে সে ঢুকেছিল এমন এক সাইটে যেখানে হ্যাকিং টুল, অস্ত্রের ব্লুপ্রিন্ট, এমনকি কালো বাজারে বিক্রি হওয়া মানুষের ডেটা পাওয়া যায়। এসব তার কাছে নতুন নয়, বরং নেশার মতো। হঠাৎ সে এক লিংকে ক্লিক করল— “TantraDoc.net – Unlock Ancient Tantra Through Live Sessions”. চোখ কুঁচকে পড়ল সে। তন্ত্রমন্ত্র নিয়ে ওয়েবে এমন সাইট সে…
-
রক্তিম মজুমদার ১ কান্নার মতো এক বিষণ্ণ বাঁশির সুর যখন প্রথম শোনা গেল, তখন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সদ্য ঘুম থেকে উঠছিলেন। আসলে ঘুম বলে কিছু ছিল না—অচেনা বিছানা, কাঠের জানালার কড়চড় আওয়াজ, আর পাশের ঘর থেকে আসা থালার টুংটাং সব মিলিয়ে তার ঘুম গভীর হতে পারেনি। তিনি চোখ মেলে দেখলেন চারপাশ অন্ধকারে ডুবে, কেবল সামনের দেয়ালে রাখা ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই। ৩টা ১০ বাজে। তিনি জানালার কপাট খুলে চেয়ে দেখলেন—বাইরে নিঃস্তব্ধতা; না কুকুরের ঘেউ ঘেউ, না পাখির ডানার শব্দ। কুয়াশায় ঢাকা মাঠের ওপারে কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে বাঁশির মায়াবী সুর। না, রবি ঠাকুরের মতো মন ভোলানো নয়; এই সুরে যেন…
-
শিলিগুড়ির পাহাড়ি রাস্তায় সন্ধ্যার অন্ধকার ধীরে ধীরে জমে উঠছিল, হালকা কুয়াশার পর্দা চেপে বসছিল বাতাসের গায়ে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সায়ন চৌধুরী নিঃশব্দে পাহাড়ের বুক চিরে চলা রাস্তাগুলোর নিঃসঙ্গ সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। সে বহুদিন ধরেই শহরের কোলাহল থেকে দূরে, একা কোথাও যাওয়ার কথা ভাবছিল—শেষমেশ এই পুরনো রিসর্টের খোঁজ পেয়ে বুকিং করে ফেলে। পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি রিসর্টটি স্থানীয়দের ভাষায় “নীলবন হিল রিট্রিট” নামে পরিচিত, কিন্তু বছর কয়েক আগে একটি রহস্যজনক ঘটনায় এক পর্যটক নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর জায়গাটি খানিকটা ভৌতিক তকমা পেয়ে যায়। সায়নের ব্লগ ‘Ghosts of Bengal’-এর পাঠকেরা তাকে অনেকবার বলেছে এই জায়গার কথা লিখতে, আর সেই আগ্রহেই…