সুমন দাস ১ পুরোনো জমিদার বাড়ি, যে দীর্ঘদিন ধরে খালি এবং নীরব হয়ে আছে, তার দেয়ালগুলোতে ধুলোর একটি গাঢ় স্তর জমে গেছে। সূর্যপ্রদত্ত বিকেলবেলার আলো বাড়ির শীর্ণ জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে, ধূসর বালির মিশ্রণে জমে থাকা সময়ের চিহ্নগুলোকে হালকা করে তুলছিল। চারপাশে ভাঙা ফার্নিচার, ছেঁড়া পর্দা আর সময়ের সাথে ছেঁড়া দেয়ালভাঙা পুঁতে রাখা পুরোনো নকশাগুলো যেন এই বাড়ির অতীতের গল্পগুলো চুপচাপ বলে চলেছে। সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে নতুন শ্রমিকদের সাথে, যারা কাজের হাতকড়ি আর সরঞ্জামের সঙ্গে নতুন জীবনের ছোঁয়া দিতে এখানে এসেছে। কিন্তু ঘরে ঢুকেই তাদের চোখে পড়ে দেয়ালের ভেতরের অস্বাভাবিক ফাঁপা শব্দ, যা একরকম রহস্যময় আতঙ্ক তৈরি করছে।…
-
-
আলোক গুপ্ত ভোরের আলো তখনো পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি, আকাশের কোণে হালকা লাল আভা। গ্রাম বেলতলা প্রতিদিনের মতো ঘুম ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই গ্রাম এমনই, যেখানে প্রকৃতির নিজস্ব সুরে সকাল শুরু হয়—পূর্ব দিকের তালগাছের মাথায় দোয়েল গান গাইতে থাকে, ঘরের উঠোনে মুরগির ডাকে কৃষাণী ঘুম থেকে ওঠে, গরুর গলায় বাঁধা ঘণ্টা বাজে আর মন্দির থেকে শাঁখ আর ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসে। সকালের এমন হুল্লোড়ে বেলতলার প্রতিটি মানুষ নিজের কাজ শুরু করত। কিন্তু সেদিন সকালটা ছিল একেবারে আলাদা। অদ্ভুত নিস্তব্ধতা যেন চারদিক জড়িয়ে ধরেছিল। গাছের ডালে পাখিরা উড়ছিল, ঠোঁট নড়ছিল—কিন্তু কোনো ডাক শোনা যাচ্ছিল না। উঠোনে মুরগিরা এদিক-ওদিক ছুটছিল, কিন্তু একটিও ডাক কানে…
-
পুলক বিশ্বাস নীলয় সেনের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছিল বইয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ইতিহাসের স্তর থেকে, কিন্তু এবার তার গবেষণার পথ তাকে নিয়ে এল বাস্তবের ভেতরে জমে থাকা সময়ের ধুলোয় ঢাকা রহস্যে। কলকাতা থেকে ট্রেনে চেপে দীর্ঘ ভ্রমণের পর যখন মুর্শিদাবাদের মাটিতে পা রাখল, তার চোখের সামনে খুলে গেল এক অচেনা অথচ পরিচিত ইতিহাসের দরজা। রেলস্টেশনের পুরনো কাঠের বেঞ্চ, দেওয়ালে ঝুলে থাকা ম্লান বিজ্ঞাপন, আর মানুষের চেনা-অচেনা মুখগুলোর ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে সে যেন অনুভব করছিল—এই শহর কেবল ভৌগোলিক স্থান নয়, এটি এক অদৃশ্য সময়ের ভাণ্ডার, যেখানে প্রতিটি ইট, প্রতিটি পথ, প্রতিটি গাছ লুকিয়ে রেখেছে গল্প। মুর্শিদাবাদকে বলা হয় বাংলার মুঘল রাজধানীর উত্তরসূরি,…