• Bangla - তন্ত্র

    মায়াবী তাবিজ

    শৌনক দে অধ্যায় ১ – ঝড়ের রাতে রাতটা ছিল অদ্ভুত অশুভ। পশ্চিম আকাশে মেঘ জমে গিয়েছিল সারাদিন, কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই বজ্রপাতের সাথে শুরু হল তীব্র ঝড়। গাছপালা হেলে পড়ছে, গ্রামের কুঁড়েঘরের চালা একে একে খুলে উড়ে যাচ্ছে, আর বাতাসের সাথে মিশে আসছে শ্মশানঘাট থেকে ভেসে আসা শীতল গন্ধ। সেই রাতে সাধারণত গ্রামের মানুষ ঘর থেকে বের হয় না, কারণ বিশ্বাস করা হয়—শ্মশানের আত্মারা ঝড়ের সাথে বেরিয়ে আসে। কিন্তু গ্রামের ওঝা ভবানী সাধু, যার মাথায় গেরুয়া কাপড়, হাতে ত্রিশূল, চোখে রহস্যময় দৃষ্টি—সে বেরিয়েছিল এক মৃতদেহ দাহের কাজে সাহায্য করতে। হঠাৎ বজ্রের আলোয় দেখা গেল শ্মশানের এক কোণে এক সন্ন্যাসী শুয়ে আছেন,…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    অভিশপ্ত গয়নাগুলি

    অধ্যায় ১: রাজবাড়ির ধনভাণ্ডার রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষের চারপাশে বিকেলের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। হাওয়ার সাথে সাথে মলিন দেওয়ালের ফাঁকফোকর দিয়ে শুকনো পাতা উড়ে এসে জমছে, যেন সময়ের স্তূপে চাপা পড়া একেকটি স্মৃতি। বহুদিন ধরে গ্রামবাসীর কাছে এই রাজবাড়িকে ঘিরে নানা গল্প প্রচলিত—কেউ বলে এখানে নাকি রাতে অদ্ভুত আলো জ্বলে ওঠে, আবার কেউ বলে রাজপরিবারের অশান্ত আত্মারা এখনও ঘুরে বেড়ায়। এসব কাহিনি শুনে অনেকে ভয়ে পা বাড়ায় না, কিন্তু নায়ক/নায়িকা ভেতরে এক ধরনের রহস্যময় টান অনুভব করে। আজ সেই টানেই সে প্রবেশ করেছে পুরনো রাজবাড়ির গা ছমছমে করিডোরে। ভাঙা ছাদের ফাঁক দিয়ে সূর্যের শেষ আলো ঢুকে পড়ছে, আর অচেনা আঁধারের সাথে মিলেমিশে তৈরি…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ভূতনাথ ডাকঘর

    সুপ্রিয় মল্লিক অধ্যায় ১: রহস্যময় ডাকঘর গ্রামের প্রান্তে, পুরনো কাঁঠালগাছের ছায়ায় ঢাকা এক বিরাট ডাকঘর দাঁড়িয়ে আছে, যেটি বছর কয়েক ধরে কার্যত উপেক্ষিত অবস্থায় ছিল। দিনের আলোয় ডাকঘরটি দেখতে যেন অতীতের এক ছায়াময় স্মৃতি—ধুলো জমে আছে চারপাশের প্রাচীরের ফাটলগুলোর মধ্যে, ছাদে কোথাও কোথাও মাটি ও কাদা জমে রয়েছে, এবং জানালার কাচগুলো ভাঙা ও ছেঁড়া। গ্রামের মানুষ দূরে দিয়ে হাঁটলেও ডাকঘরের দিকে তাকাতে অস্বস্তি বোধ করে; কেউ কেউ বলতো, “এখানে আর কোনো কাজকর্ম হয় না, শুধু রাতের বেলা ডাকঘরের প্রহরী হয়তো যাদুকরীর মতো নিজে নিজে ঘুরে বেড়ায়।” ডাকঘরের চারপাশে বেড়ে থাকা খড়ের গাদাগুলি ও ঝোপঝাড় যেন আরও ভয়াল একটি পরিবেশ তৈরি…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    জঙ্গলের ডাকবাংলো

    অজয় মাহাতো ১ পুরুলিয়ার জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করতেই পর্যটক দলের মধ্যে এক অদ্ভুত উদ্দীপনা তৈরি হয়। পাকা রাস্তার সীমারেখা শেষ হতেই পথটি ঢেউ খেলানো মাটির ও শিকড়ে ভরা হয়ে ওঠে, চারপাশে গাছেদের সোনালি রোদ আর গাঢ় ছায়ার খেলা যেন এক আলাদা জগৎ খুলে দিচ্ছিল। দলের সকলের চোখে এক সঙ্গে আগ্রহ এবং অজানা ভয়ের মিশ্রণ—কারণ তারা জানত, এই জঙ্গলের মাঝখানে ব্রিটিশ আমলের এক ডাকবাংলো তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে হঠাৎ করেই দেখতে পাওয়া যায় এক ধুলোমাখা, দু’তলার ভবন, যার খণ্ডিত জানালা আর দারুণভাবে কেটে ফেলা দরজা অতীতের কাহিনী কল্পনার আঙিনায় উদ্ভাসিত করছিল। ছায়াময় বাতাসে দূর থেকে ঘোড়ার টগবগ আওয়াজ…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    তেঁতুলগাছের চোখ

    গ্রামের নাম ঘোলশ্বরীপুর। নদিয়ার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে, পদ্মা নদীর এক পুরনো শাখার ধারে গড়ে ওঠা এই গ্রাম বহু শতাব্দীর পুরোনো। শস্যে ভরা মাঠ, ঘন বাঁশঝাড়, আর ভাঙন–খাওয়া কাদামাটি মেশানো গলিঘুপচি পথ দিয়ে ছড়িয়ে আছে মানুষের বসতি। দিনের বেলা এখানকার জীবন ঠিক যেমন সরল, তেমনি হাসিখুশি; কিন্তু রাত নামলেই এক ভিন্ন ছায়া নেমে আসে এই জনপদে। গ্রামের সবচেয়ে বড় রহস্য হল মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল তেঁতুলগাছ। গ্রামের বৃদ্ধেরা বলেন, এই গাছ অন্তত চারশো বছরের পুরোনো। এর ছায়ার নীচে একসময় পুঁথি পাঠ হতো, বউভাতের ভোজ বসত, আবার মহামারীর সময় কবরও দেওয়া হয়েছে এরই তলায়। কিন্তু যত পুরোনো স্মৃতি তেঁতুলগাছ ঘিরে রয়েছে, ততই…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    হাতিয়ার টুং টুং শব্দ

    প্রনব কুমার সিনহা এক কলকাতার এক ব্যস্ত সন্ধ্যায়, শহরের কোলাহলের ভেতর থেকে অর্ণব সেনের মনটা যেন ছুটে যাচ্ছিল অন্য এক জগতে। তিনি পেশায় সাংবাদিক, কিন্তু নেহাত সংবাদ সংগ্রহ নয়, অর্ণবের আলাদা দুর্বলতা ছিল ইতিহাস ও লোককথার প্রতি। কলেজের সময় থেকেই তার অভ্যাস—শহরের পুরোনো ঘাট, অজানা গলি বা অচেনা গ্রামে গিয়ে স্থানীয় লোকেদের কাছ থেকে অদ্ভুত গল্প শোনা। সেদিনও একে একে রাত নেমে আসছিল বাগবাজার ঘাটে, হাওয়ায় ভেসে আসছিল ভেজা কাদার গন্ধ আর গঙ্গার জলে তরঙ্গের গুঞ্জন। সেই সময়েই হঠাৎ তার সঙ্গে পরিচয় হলো এক বৃদ্ধ নাবিকের, যার মুখে জড়ানো ছিল বহু বছরের লোনা জলের স্মৃতি। ঝাপসা চোখ, মুখে সাদা দাড়ি,…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    মোবাইল টাওয়ারের ছায়া

    এক গ্রামের নাম শালপুকুর। নদীর ধার ঘেঁষে, সবুজ ক্ষেত আর তালগাছে ঘেরা এই গ্রাম বরাবরই শান্ত, নিরিবিলি। কোলাহলহীন জীবনযাত্রায় মানুষজন এখনো প্রথা মেনে চলে। গ্রামের মাঝখানে একটি পুরনো পুকুর—যার নাম থেকেই গ্রামটির নামকরণ। শালগাছ আর পুকুরের শাপলা মিলেমিশে গ্রামটিকে সাজিয়ে রেখেছে অন্যরকম আবহে। আধুনিকতার ছোঁয়া খুব কমই পৌঁছেছিল এই গ্রামে। ইন্টারনেট ধরা দিত কেবল পাহাড়ি মেঘের মতো—কখনো আসত, আবার হঠাৎ হারিয়ে যেত। ঠিক এই কারণে সরকার ও মোবাইল কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে শালপুকুর গ্রামে একটি আধুনিক 5G টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামের মানুষজন প্রথমে খুশি হয়ে ওঠে। তারা ভাবে, অবশেষে তাদের ছেলে-মেয়েরা শহরের মতো ভিডিও কল করতে…

  • Bangla - তন্ত্র

    তাঁতের ঘরের তান্ত্রিকা

    নীলাদ্রী সেনগুপ্ত ১ রুদ্র বসুর চোখে নদিয়ার এই ছোট্ট গ্রামটা ছিল শুধু আরেকটা বিনিয়োগের জায়গা, অথচ আজ যখন সে ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে পুরনো তাঁতকলের সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন তার বুকের ভেতর যেন কিছু একটা গুমরে ওঠে। শহরের কোলাহল, ব্যস্ত কর্পোরেট দুনিয়া আর অবিরাম ডেডলাইনের জীবন থেকে বেরিয়ে রুদ্র এবার নিজের মতো করে কিছু শুরু করতে চায়—নিজের তৈরি কিছু, নিজের সিদ্ধান্তে। তাই তো সে কিনে নিয়েছে এই বহু বছর ধরে বন্ধ পড়ে থাকা, ধুলো-জমা এক তাঁতকল, যেটার ইটের গায়ে এখনও পুরোনো মসৃণতা আর গুমোট ঘামের গন্ধ লেগে আছে। কলের কেয়ারটেকার, বৃদ্ধ মদন, তাকে চাবি তুলে দেয় এক কথাও না বলে—শুধু একবার…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    বৃষ্টির রাতে বউমা

    ১ বৃষ্টির রাত। এমন এক বৃষ্টি, যা যেন শুধু রাতের নীরবতা চুরমার করে দিতে আসে। সরলা দেবী জানালার পাশে বসে পুরনো কাঠের দোলনায় আস্তে আস্তে দুলছেন। তাঁর সামনে ছোট টেবিলে রাখা একটি মাটির প্রদীপ টিমটিম করে জ্বলছে, এবং তার পাশে রাখা একটি ফ্রেম করা ছবি—অমিতের, তাঁর একমাত্র ছেলে, যিনি গত তিন বছর আগের এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এখনো সেই দিনটার কথা ভাবলে সরলার বুকের মধ্যে একধরনের ঠান্ডা ঢেউ খেলে যায়। ছেলের শেষ জন্মদিনের সময় তোলা ছবি—চোখে হাসি, মুখে আত্মবিশ্বাস, যেন বলছে, “মা, আমি আছি তো!” অথচ সেই হাসির পেছনে কি লুকিয়ে ছিল কোনো গোপন কথা? কিছুদিন ধরে সরলার মনে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    শালবনের শব

    পুরুলিয়ার দিকে রওনা দেওয়ার সময় কলকাতার আকাশ ছিল রৌদ্রঝলমলে, কিন্তু দলের ভিতরে যেন এক চাপা উত্তেজনার ঘূর্ণি চলছিল। রুদ্র, অভিজিৎ, ইরা আর সঞ্জনা – এই চারজনের দলটার নেতৃত্বে ছিল রুদ্র, একজন বাস্তববাদী ডকুমেন্টারি নির্মাতা যিনি সব কিছুকে যুক্তির চোখে দেখতে অভ্যস্ত। তবু এই বিশেষ প্রজেক্টটা ছিল অন্যরকম – কারণ এটি ছিল একটি পরিত্যক্ত আদিবাসী গ্রামের লোককাহিনি নিয়ে, যেখানে কথিত আছে, পূর্ণিমার রাতে মৃতরা উঠে আসে মাটির নিচ থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা পুরুলিয়ার এক গভীর শালবনের ভেতর অবস্থিত জামদা নামের একটি গ্রামে যাবে – একটি গ্রাম যা দীর্ঘদিন আগে উধাও হয়ে গেছে, যেখানে আর কেউ থাকে না, অথচ গ্রামের গল্প আজও…