• Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    পটচিত্রের অভিশাপ

    শ্রীজিত সাহা অধ্যায় ১: হাটের হদিস কলকাতার গাঢ় ধূসর সকালে শহরের বুক চিরে যখন শরদ রায় তাঁর পুরনো অ্যাম্বাসাডার গাড়ি নিয়ে রওনা দিলেন, আকাশে তখনও কুয়াশার বৃষ্টি লটকে ছিল। পেছনের সিটে রাখা ছিল একটি ধুলোমাখা ক্যামেরা, নোটবই, এবং বছর তিরিশেক পুরনো বাংলার লোকশিল্প বিষয়ক একটি জীর্ণ বই। শরদ একজন খ্যাতনামা শিল্প সংগ্রাহক হলেও তাঁর সংগ্রহ মানেই কেবল গ্যালারির ঝকঝকে ফ্রেম বা বিদেশ থেকে আনা মিনিয়েচার নয়—তিনি খোঁজেন মাটির গন্ধে মাখা হারিয়ে যাওয়া শিল্প, লোকজ ঐতিহ্য। আর তাই আজ তিনি চলেছেন নদিয়ার ধারের এক প্রাচীন গ্রামে, যেখানে প্রতি বছর বসে “মারগাঁ হাট”—এক আশ্চর্য হাট, যেখানে লোকশিল্পীরা নিজেদের সৃষ্ট পট, মুখোশ, মাটির…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    রক্তাক্ত আলপনা

    স্নিগ্ধা ঘোষাল (১) শালডাঙা—বাঁকুড়ার ভিতরের এক মাটির গ্রাম, যেখানে সন্ধ্যা নামে বেলাগাভরে, আর কুয়াশা নামে বাতাসে যেন জমাট বিষের মতো। গ্রামটা খুব বড় নয়, কুঁড়েঘর, পুকুর আর শিমুল গাছে ভরা এই জনপদে আধুনিকতার স্পর্শ এখনো খুব বেশি পড়েনি। গাঁয়ের মানুষজন এখনো চাঁদের গতিপথ দেখে দিন গোনে, আর নতুন চাঁদের রাতে হাত জোড় করে মাথায় দেয় পাতাবিহীন বেলপাতা। এই গ্রামে পূর্ণিমার রাত মানে এক অদ্ভুত গুমোট অনুভব—শব্দ নেই, কুকুর ডাকে না, শিশুরাও কান্না থামায়। ঠিক এমন এক পূর্ণিমা রাতেই মেঘ ফুঁড়ে আলো নেমেছিল গ্রামের এক কোণার পুরনো বাড়ির উঠোনে। কেউ ঠিক জানে না কখন শুরু হয়েছিল ওটা—তবে সকালের আলসে আলোয় দেখা…

  • Bangla - তন্ত্র

    পাঁচ মুখো তান্ত্রিক

    অরুণাভ ভট্টাচার্য ১ সন্ধ্যা নামছিল ধীরে ধীরে, কিন্তু কালীঘাটের শ্মশানে সেই আলো-আঁধারির খেলা যেন কালেরও ঊর্ধ্বে। পুরনো বটগাছের গায়ে লেপ্টে থাকা শ্যাওলার মতো এক ধরণের অদৃশ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল চারপাশে। অগস্ত্য ধীর পায়ে ঢুকল ভেতরে। মাথায় পুরনো ছাইরঙা চাদর, চোখে লালসালুকে ছেয়ে যাওয়া অভ্যস্ত দৃষ্টির অভিব্যক্তি — এক সমাজচ্যুত তান্ত্রিক, যার নাম এখন আর কেউ স্মরণ করে না। কেউ বলে সে পাগল, কেউ বলে অভিশপ্ত, কিন্তু সে জানে — সে ফিরে এসেছে শ্মশানে একটা মাত্র মুখ খুঁজতে, যেটা তার নিজের। এখানে, এই আগুন আর ছাইয়ের ভেতরে লুকিয়ে আছে সেই মুখ — পাঁচ মুখো তান্ত্রিকের একটি অংশ — যে নাকি শুধুমাত্র…

  • Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

    ভূতের হেঁসেল

    সুশান্ত নস্কর অধ্যায় ১: উল্টোপাড়ার পোস্টমাস্টার নতুন পোস্টিং নিয়ে নবীনচন্দ্র যখন উল্টোপাড়া নামক গ্রামে পা রাখে, তখন সূর্য প্রায় অস্ত যায় যায়। কাঁকর-পাথরের রাস্তা ধরে রিকশা করে এসে সে নেমে পড়ে পোস্ট অফিসের সামনের ছোট্ট উঠোনে। চারদিকে ঝুপঝুপে গাছ, গাছের ফাঁক দিয়ে ছোট্ট করে দেখা যায় লালচে রঙের কাঠের দরজাওয়ালা সেই অফিসঘরটা। তার সঙ্গে গাঁয়ের পোস্ট অফিসের পরিচয় ছিল না আগেও—কলকাতায় বড় হওয়া ছেলেটা গ্রামে আসবে, তা কল্পনাও করেনি। তবে সরকারি চাকরি মিলেছে, আর তার প্রথম পোস্টিং এই উল্টোপাড়াতেই। অফিসের একমাত্র কর্মী বুড়ো গণেশ কাকা, যিনি সদা বিড়বিড় করে কথা বলেন, এবং এমন ভাব করেন যেন চিঠির ভেতরের কথাগুলোরও খবর…

  • Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    পোড়োবাড়ির প্রেতছায়া

    অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী কলকাতার গরম রোদের মধ্যে দিয়ে হোঁচট খেতে খেতে এক সাদা রঙের সেকেন্ড হ্যান্ড জিপ গ্রামের দিকে এগিয়ে চলেছে। ড্রাইভিং সিটে বসে দীপ, চশমার কাচে ঘাম জমে গেছে, কপালে টপটপ করে ঘামের ফোঁটা পড়ছে। পাশে বসে অমিত, রোদ থেকে বাঁচতে মাথায় কাপড়ের ফেট্টি বেঁধেছে। ওদের দুজনের মুখেই রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার ছাপ। “আর কত দূর, দীপ?” অমিত হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করে। “আর বেশি না। এই বুঝি মদনপুর পৌঁছে গেলাম,” দীপ বলে। রাস্তা সরু হয়ে এসেছে। দুপাশে বিস্তৃত ধানের মাঠ, মাঝে মাঝে নারকেল আর তালগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। একপাশ দিয়ে সরু খাল বয়ে চলেছে। হালকা বাতাসে ধানের শীষ দুলছে, যেন প্রকৃতির…