• Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    পুতুলবাড়ির রহস্য

    পুরোনো বনেদি বাড়ি শহরের একটি পুরোনি অঞ্চলেই অবস্থিত, যেখানে সময় যেন থেমে গেছে। বাড়ির প্রবেশদ্বারে পৌঁছালেই চোখে পড়ে সেই বিশাল, ত্রিমাত্রিক কাঠের দরজা, যা কালের সঙ্গে বিবর্ণ হয়ে ধূসর হয়ে উঠেছে। দরজার নক বেজে উঠলেই মনে হয় যেন অতীতের কোনো আভাস শোনাচ্ছে। বাইরে থেকে বাড়ি যতটা বড় মনে হয়, ভেতরে প্রবেশ করলে তার বিশালতা আরও প্রমাণিত হয়—দীর্ঘ, অন্ধকার করিডর, যার একপাশে ধুলো জমে থাকা অগণিত প্রতিমা স্থাপন করা। প্রতিমাগুলোর চোখ যেন জীবন্ত, মনে হচ্ছে কেউ নীরবে কাত হয়ে দাঁড়িয়ে বাড়ির ভেতরের অব্যক্ত রহস্যগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। করিডরের মাঝখানে একটি পুরোনো ঝুলন্ত বাতি, যার কাঁচে ধুলো জমে রয়েছে, আর কখনো কখনো বাতির…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    মহালয়ার সুর

    অমিয় মল্লিক ১ ভোরের ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন আকাশের গাঢ় নীল ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে রঙ নেয় কমলা-সোনালি আভা, গ্রামের মানুষদের ঘুম যেন এক অদৃশ্য শক্তি ভেঙে দেয়। একে একে কুঁড়েঘরের দরজা খুলে যায়, উঠোনে আলো ফোটার আগেই গৃহস্থরা চমকে ওঠে—দূর থেকে ভেসে আসছে এক অদ্ভুত সুর, এক চণ্ডীপাঠের গম্ভীর ধ্বনি। মাটির ভেতর থেকে যেন শিকড় টেনে আনে সেই শব্দ, আর সকালের শিউলি গাছের ফুলের মতো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসী জানে, সেই বাড়িটা বহু বছর ধরে ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে, তাতে আর কেউ থাকে না। তবু প্রতি মহালয়ার ভোরেই শোনা যায় এই পাঠ। বৃদ্ধারা চোখে আতঙ্ক মাখে, কিশোররা সাহস দেখাতে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    দোতলার লাল আলো

    অধ্যায় ১ — উত্তর কলকাতার পুরনো পাড়াগুলোর এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে—গলির ভেতর ঢুকলেই সময় যেন কয়েক দশক পিছিয়ে যায়। আধুনিক শহরের ব্যস্ততার বাইরে, এখানে এখনো ছিমছাম পুরনো দোতলা-তিনতলা বাড়ি, কার্নিশে শ্যাওলা জমে থাকা দেওয়াল, এবং ধুলো জমা বারান্দার খিলান। সেই রকমই এক সরু, বাঁকানো গলি—যেখানে দিনের বেলাতেও আলো ঠিকমতো ঢোকে না। গলির মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন দোতলা বাড়ি, যার লোহার গেট মরচে পড়ে বাদামি হয়ে গেছে, আর তার ওপরে গাছের লতা-পাতা জট বেঁধে পড়ে আছে। লোকজন দিনের বেলায়ও বাড়িটির দিকে তাকাতে সাহস পায় না, রাতের কথা তো বাদই দিলাম। কারণ গুজব বলে, রাত নামলেই দ্বিতীয় তলার এক জানালায় জ্বলে…

  • Bangla - তন্ত্র

    তন্ত্রপীঠের অগ্নিপরীক্ষা

    ১ প্রাচীন কাল থেকে গ্রামটির নাম শিউলিবাড়ি, তবে এই নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে বহু গোপন কাহিনি। গ্রামের উত্তর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষ প্রাচীন তন্ত্রপীঠ মন্দির, যার কাহিনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কানে কানে পৌঁছেছে। লাল ইটের গায়ে শ্যাওলা জমে গেছে, ফাটল ধরা প্রাচীর থেকে গাছের শিকড় নেমে এসেছে যেন সময়ের আঁচড়। জনশ্রুতি আছে, এই মন্দির একসময় এক তান্ত্রিক রাজা নির্মাণ করেছিলেন, যিনি দেবীর কৃপা পাওয়ার জন্য নরবলি পর্যন্ত দিতেন। গ্রামের বয়স্করা বলেন, মন্দিরের অন্তঃকক্ষে এক গোপন দরজা আছে, যার ওপারে বন্দি রয়েছে এক অদ্ভুত অলৌকিক শক্তি—শক্তি, যা একবার মুক্তি পেলে সমগ্র অঞ্চলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। দিনের বেলাতেও মন্দিরের ভেতরে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ঝর্ণার জ্বালানি

    সঞ্জয় দে এক ঝর্ণাটির সামনে দাঁড়িয়ে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করে যুবকটি, যেন এই নির্জন জলপ্রপাত এক গভীর নিঃশব্দ ডাক ছুঁড়ে দিচ্ছে তার বুকের ভেতর। গ্রামের একপ্রান্তে ঘন জঙ্গলের পেছনে লুকিয়ে থাকা সেই বিশাল ঝর্ণা, দিনের আলোয় যেন স্বচ্ছ অথচ রহস্যে মোড়া। জনশ্রুতি বলে, এই ঝর্ণায় কেউ একবার ঢুকলে আর ফিরে আসে না—আর এমন নিখোঁজের ঘটনা কেবল একজন নয়, বহুজনের। মানুষজন বলত, তারা নিজের চোখে দেখেছে—কে যেন একদিন হেঁটে হেঁটে ঝর্ণার ধার ঘেঁষে জলের ভেতরে ঢুকে গেল, কিন্তু জল কোনো গতি ছাড়াই স্থির থেকে গেল, আর সেই মানুষ আর ফিরে এল না। পঁচিশ বছর আগে এমনই একদিন যুবকের বাবা, একজন…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ভূতের WhatsApp Group

    প্রিয়ম সাহা ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টায় বিছানায় গড়াগড়ি করছিল, যখন ঘড়ির কাঁটা ঠিক ১২টা ছুঁলো। জানলার ওপারে কুকুরের ঘেউ ঘেউ, আশেপাশে নিস্তব্ধতা, আর ফোনের নোটিফিকেশন টুং টুং শব্দে হঠাৎ রাতটা কেমন অদ্ভুত ঠেকতে লাগল। গড়িয়াহাটের পুরনো বাড়ির দোতলার ঘরটায় আজ একা সে, ঠাকুরদা গত বছর মারা যাওয়ার পর তার পরিবার এখন উপরের ফ্ল্যাটে থাকে, সে নিচে নিজের মতো করে কাজ আর একলা সময় কাটায়। তখনই ফোনে ভেসে উঠল এক অচেনা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নোটিফিকেশন — “You’ve been added to the group: Dead But Chatty”। মনে হলো কেউ নিশ্চয়ই প্র্যাঙ্ক করছে, এমন নাম কে রাখে! কিন্তু যখন সে গ্রুপ খুলে দেখল, সেখানে লেখা…

  • Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    পটচিত্রের অভিশাপ

    শ্রীজিত সাহা অধ্যায় ১: হাটের হদিস কলকাতার গাঢ় ধূসর সকালে শহরের বুক চিরে যখন শরদ রায় তাঁর পুরনো অ্যাম্বাসাডার গাড়ি নিয়ে রওনা দিলেন, আকাশে তখনও কুয়াশার বৃষ্টি লটকে ছিল। পেছনের সিটে রাখা ছিল একটি ধুলোমাখা ক্যামেরা, নোটবই, এবং বছর তিরিশেক পুরনো বাংলার লোকশিল্প বিষয়ক একটি জীর্ণ বই। শরদ একজন খ্যাতনামা শিল্প সংগ্রাহক হলেও তাঁর সংগ্রহ মানেই কেবল গ্যালারির ঝকঝকে ফ্রেম বা বিদেশ থেকে আনা মিনিয়েচার নয়—তিনি খোঁজেন মাটির গন্ধে মাখা হারিয়ে যাওয়া শিল্প, লোকজ ঐতিহ্য। আর তাই আজ তিনি চলেছেন নদিয়ার ধারের এক প্রাচীন গ্রামে, যেখানে প্রতি বছর বসে “মারগাঁ হাট”—এক আশ্চর্য হাট, যেখানে লোকশিল্পীরা নিজেদের সৃষ্ট পট, মুখোশ, মাটির…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    রক্তাক্ত আলপনা

    স্নিগ্ধা ঘোষাল (১) শালডাঙা—বাঁকুড়ার ভিতরের এক মাটির গ্রাম, যেখানে সন্ধ্যা নামে বেলাগাভরে, আর কুয়াশা নামে বাতাসে যেন জমাট বিষের মতো। গ্রামটা খুব বড় নয়, কুঁড়েঘর, পুকুর আর শিমুল গাছে ভরা এই জনপদে আধুনিকতার স্পর্শ এখনো খুব বেশি পড়েনি। গাঁয়ের মানুষজন এখনো চাঁদের গতিপথ দেখে দিন গোনে, আর নতুন চাঁদের রাতে হাত জোড় করে মাথায় দেয় পাতাবিহীন বেলপাতা। এই গ্রামে পূর্ণিমার রাত মানে এক অদ্ভুত গুমোট অনুভব—শব্দ নেই, কুকুর ডাকে না, শিশুরাও কান্না থামায়। ঠিক এমন এক পূর্ণিমা রাতেই মেঘ ফুঁড়ে আলো নেমেছিল গ্রামের এক কোণার পুরনো বাড়ির উঠোনে। কেউ ঠিক জানে না কখন শুরু হয়েছিল ওটা—তবে সকালের আলসে আলোয় দেখা…

  • Bangla - তন্ত্র

    পাঁচ মুখো তান্ত্রিক

    অরুণাভ ভট্টাচার্য ১ সন্ধ্যা নামছিল ধীরে ধীরে, কিন্তু কালীঘাটের শ্মশানে সেই আলো-আঁধারির খেলা যেন কালেরও ঊর্ধ্বে। পুরনো বটগাছের গায়ে লেপ্টে থাকা শ্যাওলার মতো এক ধরণের অদৃশ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল চারপাশে। অগস্ত্য ধীর পায়ে ঢুকল ভেতরে। মাথায় পুরনো ছাইরঙা চাদর, চোখে লালসালুকে ছেয়ে যাওয়া অভ্যস্ত দৃষ্টির অভিব্যক্তি — এক সমাজচ্যুত তান্ত্রিক, যার নাম এখন আর কেউ স্মরণ করে না। কেউ বলে সে পাগল, কেউ বলে অভিশপ্ত, কিন্তু সে জানে — সে ফিরে এসেছে শ্মশানে একটা মাত্র মুখ খুঁজতে, যেটা তার নিজের। এখানে, এই আগুন আর ছাইয়ের ভেতরে লুকিয়ে আছে সেই মুখ — পাঁচ মুখো তান্ত্রিকের একটি অংশ — যে নাকি শুধুমাত্র…

  • Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

    ভূতের হেঁসেল

    সুশান্ত নস্কর অধ্যায় ১: উল্টোপাড়ার পোস্টমাস্টার নতুন পোস্টিং নিয়ে নবীনচন্দ্র যখন উল্টোপাড়া নামক গ্রামে পা রাখে, তখন সূর্য প্রায় অস্ত যায় যায়। কাঁকর-পাথরের রাস্তা ধরে রিকশা করে এসে সে নেমে পড়ে পোস্ট অফিসের সামনের ছোট্ট উঠোনে। চারদিকে ঝুপঝুপে গাছ, গাছের ফাঁক দিয়ে ছোট্ট করে দেখা যায় লালচে রঙের কাঠের দরজাওয়ালা সেই অফিসঘরটা। তার সঙ্গে গাঁয়ের পোস্ট অফিসের পরিচয় ছিল না আগেও—কলকাতায় বড় হওয়া ছেলেটা গ্রামে আসবে, তা কল্পনাও করেনি। তবে সরকারি চাকরি মিলেছে, আর তার প্রথম পোস্টিং এই উল্টোপাড়াতেই। অফিসের একমাত্র কর্মী বুড়ো গণেশ কাকা, যিনি সদা বিড়বিড় করে কথা বলেন, এবং এমন ভাব করেন যেন চিঠির ভেতরের কথাগুলোরও খবর…