• Bangla - প্রেমের গল্প

    তোমার অক্ষরে প্রেম

    অনিমা সেন পর্ব ১: প্রথম দেখা কলকাতার এক ঐতিহ্যবাহী কফি হাউসে, একটি স্বাভাবিক বিকেল, যেখানে মানুষের ভিড় এবং কফির গন্ধ মিশে এক অদ্ভুত মাধুর্যে পরিণত হয়, সেখানে প্রথমবারের মতো দেখা হয় নিলয় এবং রাধিকার। সেদিন রাধিকা কোনো কারণে তার usual জায়গা ছাড়িয়ে অন্য একটি টেবিলে বসেছিল। কফি হাউসে এসেছে তার বন্ধুদের সাথে কিছু সময় কাটাতে। তবে, তার মনের মধ্যে কিছু ছিল, যেটি সেদিন সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় পেয়ে গিয়েছিল। সে আসলে কিছুটা বিধ্বস্ত, কিছুটা ক্লান্ত, আর ঠিক তখনই নিলয়ের চোখ পড়েছিল তার ওপর। নিলয় ছিল এক উচ্চাভিলাষী তরুণ। লেখক হতে চেয়েছিল, কিন্তু সে এখন এক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। সে…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    স্বপ্নের ক্লিপবোর্ড

    মিতা চট্টোপাধ্যায় স্বরূপা নিজের জীবনের মধ্যে এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করে, যদিও তার কাজ ছিল কিছুটা অদ্ভুত এবং রহস্যময়। সে এক ধরনের ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিল, যা তাকে অন্যদের স্বপ্নে প্রবাহিত হতে সাহায্য করত। তার কাজ ছিল মানুষের স্বপ্ন রেকর্ড করা, তাদের সেসব অনুভূতি, দৃষ্টিকোণ এবং অভিজ্ঞতাকে বিশ্লেষণ করা। প্রতিদিন সে তাদের স্বপ্নের সুর ও ছন্দে প্রবাহিত হয়ে যেত, যেন একটি অবিকল চিত্র, যা তার কাছে একান্ত সত্য হয়ে উঠত। তার ঘরটা ছিল এক অদ্ভুত জায়গা, যেখানে শত শত স্বপ্নের ডায়েরি রাখা ছিল, স্বপ্নের টুকরো, ছবি, শব্দ — সব কিছু যার মাধ্যমে সে তাদের মানসিক জগতের গভীরে পৌঁছাতে পারত। তবে, এই…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    টেলিফোন বুথে ঠায় দাঁড়িয়ে

    সুদীপ্তা মিত্র অধ্যায় ১ বৃষ্টি আসবে কি না, সেটি নিয়ে আকাশ যেন নিজেই দ্বিধায়। পাড়ার মাথায় পুরোনো অশ্বত্থ গাছটার পাতায় কুয়াশার মতো শিশির জমে আছে, রোদ এখনও মুখ খুলে উঠতে পারেনি। সকাল ঠিক দশটা। এই সময়েই প্রতিবারের মতো ধীরপায়ে এসে দাঁড়ালেন অনুরাধা মিত্র—মনে হলো যেন প্রতিটি পা-ই কোনও অদৃশ্য প্রতিশ্রুতির ভার বইছে। তাঁর শাড়িটা একরঙা হালকা ধুসর, মাথায় সাদা খোঁপা, কপালে ছোট্ট লাল টিপ। মুখে একরকম ধীর, নরম বিষণ্ণতা—যেটা বয়সের চিহ্ন নয়, বরং সময়ের সঙ্গে লড়াই করে রয়ে যাওয়া অভ্যেস। তিনি বোথের ভেতর ঢুকলেন, দরজাটা নিজে থেকেই খট করে বন্ধ হল, আর পাশের চায়ের দোকানে বসা সোমনাথ ঠোঁটে চায়ের কাপ…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    একটা সাইকেলের স্মৃতিকথা

    সুদীপ্ত চৌধুরী পর্ব ১ আমার জন্ম হয়েছিল এক গরম দুপুরে, হাওড়ার একটি ছোট গ্যারেজের ভেতর। চারপাশে ধুলো, কাঠের গন্ধ, আর যন্ত্রপাতির আওয়াজ। তখন আমি কিছুই বুঝতাম না—শুধু টের পাচ্ছিলাম, কিছু একটা নতুন হচ্ছে। লোহা, রাবার আর রঙের গন্ধে ভরা সেই অদ্ভুত পরিবেশে কেউ আমাকে তৈরি করছিল, নিঃশব্দে, নিখুঁতভাবে। আমার কঙ্কাল জুড়ে নিচ্ছিল একে একে চাকা, হ্যান্ডেল, প্যাডেল। আমার গায়ে পড়ছিল চকচকে লাল রঙ, ঠিক যেন একটা নতুন জামা। সেই রঙে আমার আত্মা খুঁজে পেল নিজেকে। আমার গায়ে প্রথম স্পর্শ দিয়েছিল একটি খুদে হাত—সে ছিল শিবু, বছর আটেকের এক ছেলেমানুষ। ওর বাবা সেই গ্যারেজে কাজ করত, আর আমাকে তৈরি করেছিল তাঁরই…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    এক কাপ চা ও একফোঁটা প্রেম

    অনির্বাণ দত্ত  সেই বিকেলের দেখা গড়িয়াহাট মোড়ের ব্যস্ততা তখন বর্ষার বৃষ্টিতে খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। পথঘাট কাদা আর জলের প্যাচপেচে স্রোতে ভারাক্রান্ত, অথচ সেই মেঘলা বিকেলে কলকাতার আকাশে যেন কোনো অচেনা অপেক্ষার আলো ছড়িয়ে ছিল। ভিড় ঠেলে হাঁটছিল ঈশিতা। হাতে ধরা ছাতাটা বারবার উল্টে যাচ্ছিল হাওয়ায়, আর তার চশমার কাচে জলের ছিটে জমে অদ্ভুত একটা ঝাপসা দৃষ্টি তৈরি করছিল। মনে হচ্ছিল, চারপাশের সবকিছু যেন ভুল ঠিকানায় রাখা ছবি—একটু চেনা, একটু অচেনা। হঠাৎই চোখে পড়ল সেই মুখটা—অরণ্য। পাঁচ বছর পর। মাথার চুলে হালকা পাক ধরেছে, চোখের কোণে একটু বয়সের রেখা, কিন্তু হাসিটা এখনও তেমনই—একটু লাজুক, একটু ঠোঁটের কোণে অসমাপ্ত। তার হাতে কাগজে…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    এক মুঠো পুরোনো আলো

    সোমা মিত্র আমার স্মৃতি পুরোনো অ্যালবামের মতো—কিছু ছবি রঙ হারিয়েছে, কিছু এখনো ঝকঝকে। উত্তর কলকাতার যে বাড়িটাতে আমার জন্ম, সেই লালবাড়িটা এখন আর নেই। সেটার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে চকচকে অ্যাপার্টমেন্ট, নাম—“মঙ্গলতারা হাইটস”। মাঝে মাঝে ভাবি, নামটা কত গ্ল্যামারাস, অথচ সেই নামের নিচেই চাপা পড়ে গেছে আমার ছোটবেলার চটি পায়ে দৌড়ানো বারান্দা, কাঁঠালের গন্ধমাখা দুপুর, আর দিদার হাতে বাঁধা তুলসী মালা। আমাদের বাড়িটা ছিল এক রকম রেওয়াজি—সকালে প্রার্থনা, দুপুরে শব্দ করে পাখার ঘুরন্ত আওয়াজ, আর সন্ধ্যেবেলা harmonium-এর একঘেয়ে সুর। বাবা অফিসফেরতা এককাপ চায়ে দিন শেষ করতেন, আর মা রান্নাঘরের কোণে বসে চুপচাপ মাছ কুটতেন—কখনোই অকারণে হাসতেন না। তবু আমি জানতাম, মা…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    অলীক ছায়ার ঘর

    অলীক ছায়ার ঘর রোজকার আলোচ্য বিষয়ের বাইরে কলকাতার একটি ছোট্ট ফ্ল্যাট, বালিগঞ্জের গলিতে। জানালার পাশে বসে শিউলি তাকিয়ে থাকে একঘেয়ে আকাশের দিকে। মেঘ জমেছে, কিন্তু বৃষ্টি আসে না। যেমন তার জীবনে জমেছে ক্লান্তি, কিন্তু উপশম নেই। দশ বছর হয়ে গেল বিয়ের। রঞ্জনের সঙ্গে একসময় প্রেম ছিল, হাতে হাত রেখে সিনেমা দেখা, ট্রামে চেপে লেকের ধারে হাওয়া খাওয়া। এখন সেইসব স্মৃতি যেন পুরোনো কাপড়—আছে, কিন্তু ব্যবহার হয় না। রুটিনে বেঁধে গেছে জীবন। সকালে উঠে রান্না, অফিস, বিকেলে ফিরে টিভির আওয়াজ, রাতে নিঃশব্দ বিছানা। রঞ্জন বলে, — “আজ আবার টিফিনে ঝোল কম ছিল।” শিউলি মৃদু হেসে বলে, — “তুমি তো এমনিতেও কম…