• Bangla - প্রেমের গল্প

    বন্ধুত্ব থেকে প্রেম

    সুদীপ্ত দাস আরিয়ান আর নন্দিতা দু’জনের বাড়ি একই মহল্লায়। জন্ম থেকে একই পরিবেশে বড় হওয়া, দু’জনের পরিবারও অনেকটা কাছাকাছি। মহল্লার সরু গলিতে প্রতিদিন বিকেলে খেলাধুলার আসর বসত—লাঠি খেলা, লুকোচুরি, বা ক্রিকেটের ম্যাচ। সেই মাঠে সবসময় একসঙ্গে দেখা যেত আরিয়ান আর নন্দিতাকে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরও তাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়ে যায়। প্রথম দিন যখন স্কুলে ক্লাস টিচার তাদের একই বেঞ্চে বসিয়ে দেন, তখন থেকেই যেন অদ্ভুত এক সখ্য তৈরি হয়। ছুটির টিফিনে নন্দিতার মা যে আলুভাজা দিয়ে পাঠাতেন, আরিয়ানের হাতে সেটা না দিলে নন্দিতার খাওয়া শেষ হতো না। আরিয়ানও টিফিনের ডিমটা ভেঙে নন্দিতাকে দিত—তাদের ছোট ছোট ভাগাভাগির ভেতরেই জন্ম নেয়…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    অসমাপ্ত ভালোবাসা

    অৰ্ণা দে শীতল জানলার কাচে ভোরের শিশির জমেছে, আলো এসে পড়েছে থেরাপি রুমের কাঠের মেঝেতে। ড. মেঘলা দত্ত প্রতিদিনের মতো আজও ক্লিনিকের টেবিলে বসে, পেশেন্ট ফাইল ঘাঁটছেন। ঘড়িতে তখন সাড়ে ন’টা। নতুন রোগী আসার কথা সাড়ে দশটায়—রেফার করা হয়েছে একটি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র থেকে। “স্মৃতিভ্রষ্ট, আচরণ স্বাভাবিক, অস্থায়ী আবাসন হোমে রাখা হয়েছে,”—এইমাত্র এমন একটি রোগী এসেছেন যার জীবন যেন এক ছেঁড়া পাজল। মেঘলা চোখ বুলিয়ে নেয় রিপোর্টে, কিন্তু বিশেষ কিছু ধরা পড়ে না। তার মনে অদ্ভুত এক শূন্যতা কাজ করে, কারণ এই ধরনের রোগীদের মাঝে প্রায়ই এমন কিছু থেকে যায়, যা রিপোর্টে ধরা পড়ে না—হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক, অসম্পূর্ণ গল্প, বা…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    গোপন ফ্ল্যাট

    স্নেহা চ্যাটার্জী ১ নন্দিতা প্রতিদিনের সকালে একই রুটিনে ঘুম থেকে ওঠে—সকালের ছয়টায় আলার্মের কড়া শব্দ, কফির গরম কাপ হাতে নিঃশ্বাস ফেলে প্রস্তুতি শুরু। সে একজন কর্পোরেট জগতে সাফল্য পেয়েছে, তার নাম ও পরিচয় যথেষ্ট প্রভাবশালী, কিন্তু সেই পরিচয় যেন শুধুই এক বহিরাগত দৃষ্টিতে সুন্দর। অফিসের কাগজপত্র, ইমেল, ভিডিও কনফারেন্স, মিটিং—সবকিছুই নিখুঁত নিয়মে চলছে। কিন্তু এই নিখুঁত ছাতার নীচে, নন্দিতার মনে এক অজানা শূন্যতা বাস করছে। বসে বসে তিনি লক্ষ্য করেন, কখনো নিজেকে সে হাসতে দেখেনি, কখনো নিজের জন্য কিছু করার আনন্দ পাননি। প্রতিটি মিটিং শেষে, সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তার মধ্যেও সে নিজেকে অদৃশ্য মনে করে। বাইরে থেকে যেন তার জীবন সম্পূর্ণ,…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    চাঁদের আলোর ঘর

    অনন্যা দত্ত ১ কলকাতার ভিড়ভাট্টা, ট্রাফিকের হর্ন, অফিসের শেষ না হওয়া মিটিং আর সময়ের পেছনে দৌড়তে থাকা জীবন—এই সব মিলিয়ে সৌভিক ও অভিসারিকার সংসার যেন এক অদৃশ্য যান্ত্রিক চক্রে আটকে গেছে। সৌভিক সকালেই বেরিয়ে যায়, অফিসের নথি, ক্লায়েন্ট কল আর প্রেজেন্টেশনের মধ্যে ডুবে থাকে, ফেরে রাত অবধি; তখন ক্লান্ত মুখে একমুঠো হাসি দেওয়ার শক্তিও থাকে না তার। অভিসারিকা, একসময় যার দিন কাটত রঙতুলি আর ক্যানভাসের মাঝে, এখন নিজের শিল্পকর্মের থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছে। স্কুলে আঁকা শেখানোর ফাঁকে ফাঁকে মন চলে যায় বহু বছর আগের সেই দিনগুলিতে—যখন সৌভিক হঠাৎ সন্ধ্যায় এসে তার জানালার নিচে দাঁড়িয়ে ডাক দিত, কিংবা রঙিন চিঠি…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    বেডরুমের বাইরে

    কুশল রায় ১ শীতল বাতাসে ভেসে আসা ধোঁয়ার মতো কুয়াশার মধ্যে দার্জিলিং স্টেশনে ট্রেন থামতেই কাঁপতে কাঁপতে নামল অনির্বাণ ও মেহুলী। চারদিকে হালকা গুঞ্জন, মালবাহকদের হাঁকডাক, আর দূরে পাহাড়ে উঁকি দিয়ে থাকা বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে যেন একটা রঙহীন চিত্রকল্পে ঢুকে পড়েছে তারা। অনির্বাণের হাতে এক চামড়ার ট্রলি, অন্য হাতে মেহুলীর হাত। মেহুলী হালকা কমলা রঙের উলেন শালে নিজেকে জড়ানো, চোখে সানগ্লাস। তাদের মুখে বিবাহিত জীবনের সেই স্বাভাবিক জড়তা—যেখানে শরীরের স্পর্শ আছে, কিন্তু মনের ছায়াগুলো এখনো ধরা দেয়নি একে অপরকে। হোটেল থেকে গাড়ি পাঠানো হয়েছিল, চালক হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাল। গাড়ির জানালা দিয়ে তারা দেখতে থাকল কুয়াশার চাদরে মোড়ানো দার্জিলিংয়ের চায়ের বাগান,…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প

    পেনশনের শেষ চেক

    সন্দীপন ধর খামে মোড়া নীরবতা রমেশচন্দ্র বসু বসে আছেন জানালার ধারে রাখা সেই পুরনো বেতের চেয়ারে। জানালার গরাদের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া বিকেলের আলো তার রুপোলি চুলে খেলে যাচ্ছে। মাথার ঠিক পাশেই একটা ছোট কাঠের তাক, সেখানে রাখা তার স্ত্রীর একটা ছবি — মেঘলা শাড়ি, মৃদু হাসি, কপালে ছোট্ট টিপ। নাম ছিল তার — কাবেরী। আজ অনেকদিন পর আবার পোস্টম্যান এসেছিল। লাল-হলুদ ইউনিফর্ম, কাঁধে ব্যাগ। সে বলল, “বসুবাবু, আপনার পেনশনের শেষ চেকটা এসেছে।” রমেশচন্দ্র ধীরে হাত বাড়িয়ে খামটা নিলেন। যেন মৃদু এক স্নেহে ছুঁলেন। এই খামে শুধু টাকা নেই, আছে একটা দীর্ঘ জীবনের সমাপ্তি ঘোষণা। অফিসের শেষ বেতন মাসেরও বেশি…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    ছেঁড়া পাজলের ভালোবাসা

    সায়নী বসু শীতল জানলার কাচে ভোরের শিশির জমেছে, আলো এসে পড়েছে থেরাপি রুমের কাঠের মেঝেতে। ড. মেঘলা দত্ত প্রতিদিনের মতো আজও ক্লিনিকের টেবিলে বসে, পেশেন্ট ফাইল ঘাঁটছেন। ঘড়িতে তখন সাড়ে ন’টা। নতুন রোগী আসার কথা সাড়ে দশটায়—রেফার করা হয়েছে একটি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র থেকে। “স্মৃতিভ্রষ্ট, আচরণ স্বাভাবিক, অস্থায়ী আবাসন হোমে রাখা হয়েছে,”—এইমাত্র এমন একটি রোগী এসেছেন যার জীবন যেন এক ছেঁড়া পাজল। মেঘলা চোখ বুলিয়ে নেয় রিপোর্টে, কিন্তু বিশেষ কিছু ধরা পড়ে না। তার মনে অদ্ভুত এক শূন্যতা কাজ করে, কারণ এই ধরনের রোগীদের মাঝে প্রায়ই এমন কিছু থেকে যায়, যা রিপোর্টে ধরা পড়ে না—হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক, অসম্পূর্ণ গল্প, বা…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    অন্তর্গত প্রেম

    ব্রততি সুর অংশ ১: ব্রাশ আর ক্যানভাসের মিলন ধোঁয়া ধোঁয়া আলোর মাঝে, তেলরঙ আর টারপেনটাইনের মিশ্রিত গন্ধ বাতাসে ভাসছিল। পুরোনো কাঠের ঘ্রাণও মিশে গিয়েছিল তাতে, যেন স্টুডিওটা সময়ের সাথে নিজেকেই মুছে ফেলেছে। দেয়ালে রাখা বড় বড় ক্যানভাস, অপরিস্কৃত চিত্রকর্ম আর অসমাপ্ত প্রতিকৃতি গুলি নীরবতার সঙ্গেই আলাপ করছিল। এটি ছিল একান্ত এক জায়গা, যেখানে শিল্পী তার আত্মাকে প্রতিটি ব্রাশের টানে খুলে রাখে। অনির্বাণ রায়, আশি বছর বয়সী এই প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, তাদের অন্যতম। তিনি এবারও তার এক অসাধারণ চিত্রকর্মের শেষের দিকের বিস্তারিত কাজ করছিলেন। তার হাত একটু কাঁপছিল, কিন্তু তাতে কোনো হুঁশ ছিল না। চোখের উপর মোটা চশমা হেলে পড়েছিল, কিন্তু তাকে…

  • Bangla - প্রেমের গল্প - রহস্য গল্প

    কুশলনগরের কাঠের ব্রিজ

    সমাপ্তি বর্মন সকালটা ছিল মেঘলা, অথচ বৃষ্টির কোনো আভাস নেই। রুক্মিণীর মাথার ওপর দিয়ে পাখির ছায়া উড়ে গেল—একটা নীল কুড়ুলি, সেইরকম রঙিন পালকের পাখি যেটা কেবল কুশলনগরের আকাশেই দেখা যেত তাদের ছোটবেলায়। বিশ বছর পর এই জায়গাটায় ফিরে আসার সাহস সে নিজের কাছেই একটা বিস্ময় মনে হচ্ছিল। পাশে বসে থাকা ভাই অর্ণব হঠাৎ বলে উঠল, “এই রাস্তার বাঁকে একটা নারকেল গাছ ছিল, মনে আছে?” রুক্মিণী হেসে মাথা নাড়ল। “আর মনে নেই? ওই গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আমি তোকে গুমরার জুস খাওয়াই বলেছিলাম, আর তো তোর গায়ে গড়িয়ে পড়েছিল!” দুজনেই হেসে উঠল। সেই হাসির মধ্যে ছিল পুরনো দিনের গন্ধ, ছিল শৈশবের ডাকে…

  • Bangla - তন্ত্র

    তান্ত্রিকের অভিশাপ

    শুভেন্দু বসাক তান্ত্রিকের অভিশাপ শুভেন্দু বসাক নিষিদ্ধ শক্তি শুভ, এক তরুণ তান্ত্রিক ছাত্র, জীবন থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করছিল। তার সাধনাতে গভীরতার জন্য সে ছটফট করছিল, দিনের পর দিন চূড়ান্ত নিষ্ঠার সাথে তন্ত্র শাস্ত্র অধ্যয়ন করছিল। সে জানত যে তার ভিতরের শক্তি শুধু তাকে নয়, পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে, যদি সে সেই শক্তির সঠিক ব্যবহার জানত। কিন্তু কেউ জানত না, যে তার তন্ত্র সাধনা শুধু এক ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু এর পরিণতি তাকে এক অন্ধকারে নিয়ে যাবে, যা সে কখনো কল্পনা করতে পারেনি। তন্ত্র সাধনায় দীক্ষিত হওয়ার পর, শুভ একদিন শিখে গেল একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মন্ত্র—এটি তার সাধনা…