• Bangla - প্রেমের গল্প

    দূরত্বের শেষপ্রান্তে

    ঋদ্ধিমান গুহ ১ বেঙ্গালুরুর ব্যস্ততার ভিড়ে অদ্বৈতের দিন শুরু হয় একঘেয়ে অফিসের কাজ দিয়ে, শেষ হয় আবার সেই অফিসেই জমে থাকা ফাইলের পাহাড়ে ডুবে থেকে। কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে রাত কেটে যায়, কফির কাপে ভর করে শরীর চালায়, কিন্তু ভেতরের শূন্যতাকে কিছুতেই পূর্ণ করতে পারে না। উত্তর কলকাতার ছেলেটি ছোটবেলা থেকে কখনো ভাবেনি—শহরের এত দূরে একা পড়ে থাকবে। কাজের চাপ, নতুন জায়গার অনিশ্চয়তা, আর নিঃসঙ্গতা মিলে তাকে ধীরে ধীরে ক্লান্ত করে তোলে। তবু প্রতিদিন রাত নামলেই একটুখানি আলো জ্বলে ওঠে—সোহিনীর কল। ফোনের পর্দায় ভেসে ওঠা তার মুখই যেন অদ্বৈতের দিনের সমস্ত ক্লান্তি মুছে দেয়। কিন্তু এই দেখা শুধুই কাঁচের দেয়ালে…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    ছুটির বাড়ির রাত

    পৌলমী বসাক অধ্যায় ১ : ট্রেনের জানালা দিয়ে ধেয়ে যাওয়া দৃশ্য যেন অর্ণব আর ঈশিতার চোখে এক নতুন পৃথিবীর চিত্র আঁকছিল। কলকাতার কোলাহল পেরিয়ে ট্রেন যত ভেতরের দিকে এগোচ্ছিল, ততই বাড়ছিল সবুজের প্রলেপ, ঝকঝকে মাঠ আর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছের সারি। সাদা মেঘে ছাওয়া আকাশের নিচে এই ভ্রমণ যেন তাদের জন্য এক মুক্তির নিশ্বাস। কলেজে গত কয়েক মাস ধরে পরীক্ষা, প্রোজেক্ট আর শহরের চাপে তারা দু’জনেই যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই গ্রামে ছুটি কাটাতে যাওয়ার এই পরিকল্পনা, যেটা প্রথমে হালকা মজার প্রস্তাব ছিল, এখন এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে। ট্রেনের সীট ভাগাভাগি করে বসে অর্ণব আর ঈশিতা একে অপরের দিকে…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    বুকের ভাঁজে শিমুলগাছ

    অনিন্দিতা রায় পর্ব ১ — ট্রেনের জানালা শিয়ালদহ স্টেশন গমগম করছে মানুষের চিৎকারে, বোঝাই ট্রেনের হুইসেলে আর উদ্বাস্তুদের কান্নায়। আগস্টের আর্দ্র গরমে ছাপোষা মানুষের ভিড় যেন এক বিশাল ঢেউ হয়ে উঠেছে, যাদের কোনো ঠিকানা নেই, আছে শুধু ছিন্ন দেহের মতো ভেঙে যাওয়া স্মৃতি। অঞ্জলি দাঁড়িয়ে আছে ভাই হরিদাসকে পাশে নিয়ে, হাতের মুঠোয় একটা ভাঁজ করা চিঠি। সেই চিঠি খুলনা থেকে সঙ্গে এনেছে, অন্য কিছু আনতে পারেনি। ট্রাঙ্কে আছে সামান্য কাপড় আর কয়েকটা হাঁড়ি-পাতিল, কিন্তু বুকের ভেতর যেটা নিয়ে এসেছে সেটা অদৃশ্য—শিকড় ছেঁড়া এক গ্রামের ঘ্রাণ, উঠোনে ঝরা শিমুলফুল, আর রহিমার মুখ। চারপাশে রেললাইনের শব্দে ভরে উঠলেও অঞ্জলি শুনতে পাচ্ছে কেবল…

  • Bangla - কল্পবিজ্ঞান - প্রেমের গল্প

    রোবট কবি

    মৌমিতা রায়  এক ড. অরিন্দম মুখার্জি ছিলেন কলকাতার এক প্রখ্যাত রোবোটিক্স বিজ্ঞানী। বয়স তাঁর মাঝ চল্লিশে হলেও, জীবনের সবটুকু সময় তিনি ল্যাবরেটরির দেয়াল আর অসংখ্য তার, সার্কিট, স্ক্রিনের মধ্যে ডুবে কাটিয়েছেন। বন্ধু-বান্ধব, সাহিত্য, সঙ্গীত—এসব থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিলেন তিনি। যুক্তির খোলস আর যান্ত্রিক অনুশাসনের ভেতরেই তাঁর জীবন বন্দি হয়ে গিয়েছিল। ছোটবেলায় কবিতা লেখার একটা শখ ছিল ঠিকই, কিন্তু বিজ্ঞানের টানে তিনি চলে আসেন যন্ত্রের দুনিয়ায়। বছরের পর বছর ধরে তিনি এক অদ্ভুত স্বপ্ন লালন করেছেন—একটা এমন রোবট তৈরি করবেন, যে মানুষের মতো লিখতে পারবে, শুধু সাধারণ ভাষা নয়, শিল্পের ভাষা। কবিতা। তিনি ভেবেছিলেন, যদি যন্ত্রও মানুষের মতো সাহিত্য রচনা…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    বন্ধুত্ব থেকে প্রেম

    সুদীপ্ত দাস আরিয়ান আর নন্দিতা দু’জনের বাড়ি একই মহল্লায়। জন্ম থেকে একই পরিবেশে বড় হওয়া, দু’জনের পরিবারও অনেকটা কাছাকাছি। মহল্লার সরু গলিতে প্রতিদিন বিকেলে খেলাধুলার আসর বসত—লাঠি খেলা, লুকোচুরি, বা ক্রিকেটের ম্যাচ। সেই মাঠে সবসময় একসঙ্গে দেখা যেত আরিয়ান আর নন্দিতাকে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরও তাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়ে যায়। প্রথম দিন যখন স্কুলে ক্লাস টিচার তাদের একই বেঞ্চে বসিয়ে দেন, তখন থেকেই যেন অদ্ভুত এক সখ্য তৈরি হয়। ছুটির টিফিনে নন্দিতার মা যে আলুভাজা দিয়ে পাঠাতেন, আরিয়ানের হাতে সেটা না দিলে নন্দিতার খাওয়া শেষ হতো না। আরিয়ানও টিফিনের ডিমটা ভেঙে নন্দিতাকে দিত—তাদের ছোট ছোট ভাগাভাগির ভেতরেই জন্ম নেয়…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    অসমাপ্ত ভালোবাসা

    অৰ্ণা দে শীতল জানলার কাচে ভোরের শিশির জমেছে, আলো এসে পড়েছে থেরাপি রুমের কাঠের মেঝেতে। ড. মেঘলা দত্ত প্রতিদিনের মতো আজও ক্লিনিকের টেবিলে বসে, পেশেন্ট ফাইল ঘাঁটছেন। ঘড়িতে তখন সাড়ে ন’টা। নতুন রোগী আসার কথা সাড়ে দশটায়—রেফার করা হয়েছে একটি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র থেকে। “স্মৃতিভ্রষ্ট, আচরণ স্বাভাবিক, অস্থায়ী আবাসন হোমে রাখা হয়েছে,”—এইমাত্র এমন একটি রোগী এসেছেন যার জীবন যেন এক ছেঁড়া পাজল। মেঘলা চোখ বুলিয়ে নেয় রিপোর্টে, কিন্তু বিশেষ কিছু ধরা পড়ে না। তার মনে অদ্ভুত এক শূন্যতা কাজ করে, কারণ এই ধরনের রোগীদের মাঝে প্রায়ই এমন কিছু থেকে যায়, যা রিপোর্টে ধরা পড়ে না—হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক, অসম্পূর্ণ গল্প, বা…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    গোপন ফ্ল্যাট

    স্নেহা চ্যাটার্জী ১ নন্দিতা প্রতিদিনের সকালে একই রুটিনে ঘুম থেকে ওঠে—সকালের ছয়টায় আলার্মের কড়া শব্দ, কফির গরম কাপ হাতে নিঃশ্বাস ফেলে প্রস্তুতি শুরু। সে একজন কর্পোরেট জগতে সাফল্য পেয়েছে, তার নাম ও পরিচয় যথেষ্ট প্রভাবশালী, কিন্তু সেই পরিচয় যেন শুধুই এক বহিরাগত দৃষ্টিতে সুন্দর। অফিসের কাগজপত্র, ইমেল, ভিডিও কনফারেন্স, মিটিং—সবকিছুই নিখুঁত নিয়মে চলছে। কিন্তু এই নিখুঁত ছাতার নীচে, নন্দিতার মনে এক অজানা শূন্যতা বাস করছে। বসে বসে তিনি লক্ষ্য করেন, কখনো নিজেকে সে হাসতে দেখেনি, কখনো নিজের জন্য কিছু করার আনন্দ পাননি। প্রতিটি মিটিং শেষে, সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তার মধ্যেও সে নিজেকে অদৃশ্য মনে করে। বাইরে থেকে যেন তার জীবন সম্পূর্ণ,…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    চাঁদের আলোর ঘর

    অনন্যা দত্ত ১ কলকাতার ভিড়ভাট্টা, ট্রাফিকের হর্ন, অফিসের শেষ না হওয়া মিটিং আর সময়ের পেছনে দৌড়তে থাকা জীবন—এই সব মিলিয়ে সৌভিক ও অভিসারিকার সংসার যেন এক অদৃশ্য যান্ত্রিক চক্রে আটকে গেছে। সৌভিক সকালেই বেরিয়ে যায়, অফিসের নথি, ক্লায়েন্ট কল আর প্রেজেন্টেশনের মধ্যে ডুবে থাকে, ফেরে রাত অবধি; তখন ক্লান্ত মুখে একমুঠো হাসি দেওয়ার শক্তিও থাকে না তার। অভিসারিকা, একসময় যার দিন কাটত রঙতুলি আর ক্যানভাসের মাঝে, এখন নিজের শিল্পকর্মের থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছে। স্কুলে আঁকা শেখানোর ফাঁকে ফাঁকে মন চলে যায় বহু বছর আগের সেই দিনগুলিতে—যখন সৌভিক হঠাৎ সন্ধ্যায় এসে তার জানালার নিচে দাঁড়িয়ে ডাক দিত, কিংবা রঙিন চিঠি…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    বেডরুমের বাইরে

    কুশল রায় ১ শীতল বাতাসে ভেসে আসা ধোঁয়ার মতো কুয়াশার মধ্যে দার্জিলিং স্টেশনে ট্রেন থামতেই কাঁপতে কাঁপতে নামল অনির্বাণ ও মেহুলী। চারদিকে হালকা গুঞ্জন, মালবাহকদের হাঁকডাক, আর দূরে পাহাড়ে উঁকি দিয়ে থাকা বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে যেন একটা রঙহীন চিত্রকল্পে ঢুকে পড়েছে তারা। অনির্বাণের হাতে এক চামড়ার ট্রলি, অন্য হাতে মেহুলীর হাত। মেহুলী হালকা কমলা রঙের উলেন শালে নিজেকে জড়ানো, চোখে সানগ্লাস। তাদের মুখে বিবাহিত জীবনের সেই স্বাভাবিক জড়তা—যেখানে শরীরের স্পর্শ আছে, কিন্তু মনের ছায়াগুলো এখনো ধরা দেয়নি একে অপরকে। হোটেল থেকে গাড়ি পাঠানো হয়েছিল, চালক হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাল। গাড়ির জানালা দিয়ে তারা দেখতে থাকল কুয়াশার চাদরে মোড়ানো দার্জিলিংয়ের চায়ের বাগান,…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প

    পেনশনের শেষ চেক

    সন্দীপন ধর খামে মোড়া নীরবতা রমেশচন্দ্র বসু বসে আছেন জানালার ধারে রাখা সেই পুরনো বেতের চেয়ারে। জানালার গরাদের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া বিকেলের আলো তার রুপোলি চুলে খেলে যাচ্ছে। মাথার ঠিক পাশেই একটা ছোট কাঠের তাক, সেখানে রাখা তার স্ত্রীর একটা ছবি — মেঘলা শাড়ি, মৃদু হাসি, কপালে ছোট্ট টিপ। নাম ছিল তার — কাবেরী। আজ অনেকদিন পর আবার পোস্টম্যান এসেছিল। লাল-হলুদ ইউনিফর্ম, কাঁধে ব্যাগ। সে বলল, “বসুবাবু, আপনার পেনশনের শেষ চেকটা এসেছে।” রমেশচন্দ্র ধীরে হাত বাড়িয়ে খামটা নিলেন। যেন মৃদু এক স্নেহে ছুঁলেন। এই খামে শুধু টাকা নেই, আছে একটা দীর্ঘ জীবনের সমাপ্তি ঘোষণা। অফিসের শেষ বেতন মাসেরও বেশি…