মেঘলা সেনগুপ্ত পর্ব ১: কুয়াশার ভেতর প্রথম দেখা দার্জিলিংয়ের সকালটা যে রকম হতে পারে—একটু কড়া চা, টিনের ছাদের উপর টুপটাপ জল, আর দূরে টাটকা ধোঁয়ার মতো ভেসে থাকা মেঘ—তৃষা ঠিক ওই রকম এক সকালে পাহাড়ে পৌঁছোল। রাতের ট্রেনের ক্লান্তি চোখে গড়িয়ে থাকলেও তার ভেতরে ছিল সেই পুরনো অস্থিরতা—নতুন জায়গা, নতুন আলো, নতুন মুখ। ব্যাকপ্যাকে দুটো লেন্স, একখানা নীল নোটবুক, আর একটা পুরনো স্কার্ফ—ওর মা দিয়েছিল কলকাতা থেকে বেরোনোর আগে—“পাহাড়ে হাওয়া লাগে, গলা ঢেকে রাখবি।” তৃষা মুখে হালকা হাসি টেনে স্টেশনের ভিড় পার হল, বাইরে বেরিয়ে এল কুয়াশার ধোঁয়াটে পর্দা ভেদ করে। তার বুক-পকেটে লিখে রাখা ছিল একটি নাম—“অভয় শেরপা”—স্থানীয় গাইড।…
-
-
বহ্নি চক্রবর্তী পর্ব ১ পদ্মার ওপার থেকে সূর্য যখন মাথার ঠিক ওপর উঠে এল, তখন রমিজ আলী তার নৌকাটা ধীরে ধীরে ঘাটে বাঁধছিল। ঘাটটা এখন অস্থায়ী—বাঁশের খুঁটি দিয়ে বাধানো, পেছনে শুকনো খড়ের ছাউনি। সকালে তিনটে পরিবার পার করে এনেছে ওপার থেকে, এখন আবার পাঁচজন অপেক্ষা করছে যাবার জন্য। রমিজ কারো নাম জিজ্ঞেস করে না, ধর্মও না, শুধু বলে—“চুপচাপ বসেন, ভয় পাইয়েন না।” তার নৌকায় ওঠা মানেই যেন এক নীরব চুক্তি—পদ্মা কিছুই মনে রাখে না, আর মাঝিও না। বছরখানেক আগেও এই নদীর পাশে ছিল তার স্ত্রী আর ছেলের কুটির, দুজনেই এক রাতে উধাও। কেউ বলে হিন্দুদের দাঙ্গাকারীরা তুলে নিয়ে গেছে, কেউ…
-
রুদ্রনীল ধর পাঁচ বছর পর, চিলেরবস্তি টয় ট্রেনটা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে দিয়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। জানালার ধারে বসে ঈশান পাহাড়ের কুয়াশার ভেতর তাকিয়ে ছিল। পাইনগাছগুলো যেন কুয়াশার শরীরে শীতের চাদর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক যেমন তার স্মৃতিতে তীর্থার চোখে ছিল এক ধরনের মেঘলা অভিমান। পাঁচ বছর। সময়টা কম নয়। তবু তার মনে হয় এইতো সেদিন, সে এই চিলেরবস্তির গলিগুলো ধরে হাঁটছিল তীর্থার সঙ্গে। পাথরের সিঁড়ি, পাহাড়ি চা, সন্ধ্যার আগেই ঘনিয়ে আসা অন্ধকার। সেই সব কিছু এখন কেমন একটা আবছা গল্পের মতো লাগে। তীর্থার সঙ্গে দেখা হয়েছিল একেবারে হঠাৎ করে। ঈশান তখন তার মাস্টার্সের রিসার্চ প্রজেক্ট নিয়ে পাহাড়ি পরিবেশ…
-
ঋতুপর্ণা বসু শীতের দুপুরে শীত তখন শহরের কাঁধে নেমে বসেছে। কলেজের লাইব্রেরির বাইরের কাঠের বেঞ্চে বসে ছিল অনিরুদ্ধ। তার পরনে ছিল ধূসর সোয়েটার, গলায় মাফলার, আর হাতে ছিল একটিমাত্র বই—জীবনানন্দ দাশের কবিতা। সে বইটা যেমন ছিল, তেমনই তার মনটাও—অদ্ভুত নিঃশব্দ, সময়ের গন্ধ মাখানো। বইয়ের পাতায় চোখ ছিল, কিন্তু মন ছিল বইয়ের বাইরের জগতে। প্রতিদিন বিকেলে লাইব্রেরির সিঁড়ি দিয়ে যে মেয়েটা নামে, আজও সে ঠিক সময়মতো নামছে। তার নাম প্রভা। ছিমছাম পরিপাটি সাজ, নীল-সাদা শাড়ি, কানে ছোট্ট ঝুমকা। চোখে এক অদ্ভুত আভা, যেন কোনো কথা না বলেই সে অনেক কিছু বলে যেতে পারে। অনিরুদ্ধ বহু দিন ধরেই তাকে লক্ষ করে, কিন্তু…