• Bangla - তন্ত্র

    রুদ্রাক্ষের অভিশাপ

    অয়ন চক্রবর্তী পর্ব ১: উত্তরাধিকার কলকাতার ব্যস্ত জীবন থেকে অনেক দূরে, পুরোনো গ্রাম বাড়িটায় পা রাখতেই অর্কের মনে হল যেন সময় থমকে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিক নিস্তব্ধ, কেবল বাতাসে খেজুরপাতার শোঁ-শোঁ শব্দ। অর্ক বহু বছর পর ফিরেছে এখানে—তার ঠাকুরদার মৃত্যুর খবর পেয়েই। ছোটবেলা কেটেছিল এই বাড়িতেই, তারপর বাবা-মায়ের সঙ্গে শহরে উঠে যাওয়া। ঠাকুরদা ছিলেন একেবারে গ্রামীণ মানুষ, কিন্তু তার চোখে একটা অদ্ভুত দীপ্তি ছিল, যেন তিনি অনেক অজানা কিছু জানতেন। বাড়ির ভেতর পা রাখতেই ধুলোমাখা গন্ধ নাকে এল। মাটির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে, সিঁড়িতে শেওলা জমেছে। কিন্তু ঠাকুরদার ঘরটা ছিল যেমন ছিল, তেমনই আছে। বাঁশের খাট, একপাশে বইয়ের তাক, আর পুরোনো কাঠের…

  • Bangla - তন্ত্র

    পঞ্চমন্ত্র

    ঋতব্রত চক্রবর্তী পর্ব ১ : স্বপ্নের শুরু রাতের নিষ্প্রভতা যেন লালচে ছাই হয়ে উঠে বসে আছে স্বপ্নের ভেতরে—একটা শ্মশান, পাঁচটি নিবিড় প্রদীপ, নিরাবেগ নদীর ধারে কাঁসার থালায় রাখা কালচে ধূলি, আর কোথাও থেকে ভেসে আসা অসম্পূর্ণ শব্দ: “হ্রীং… ক্রৌঁ… শৌঃ… ন—” তারপরই ফাঁকা, এমন এক ফাঁকা যা নিঃশব্দ নয়; অদৃশ্য কণ্ঠের ভাঙন-ধ্বনি সেখানে ঘণ্টার মতো পাক খেতে থাকে, মাটির নিচে চোরা জলের শব্দের মতো সরে যায়, আবার ফিরে আসে। সেই স্বপ্ন থেকে পাঁচজন পাঁচ জায়গায়, পাঁচটি শরীর ভিন্ন ভিন্ন ঘামে, একই আতঙ্কে জেগে উঠল—যেন কোনো অদেখা আঙুল তাদের বুকের ওপর অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে লিখে রেখে গেল একটি মাত্র বৃত্ত, যার ভিতরে…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    বনানীর অন্ধকারে

    অভ্রনীল দত্ত পর্ব ১ – যাত্রা শুরু সকালবেলা কোলাহলমুখর শিয়ালদহ স্টেশনের ভিড়ের ভেতর দিয়ে যখন তারা সবাই প্ল্যাটফর্মে পৌঁছল, তখনও কারও মাথায় ছায়ামাত্রও ছিল না কী অপেক্ষা করছে সামনে। কলকাতার এই পাঁচজন কলেজ–বন্ধু—অনিক, সুমিত, তন্ময়, দেবলীনা আর রুদ্র—দীর্ঘদিন পর আবার মিলে একসঙ্গে কোথাও বেরোচ্ছে। গন্তব্য সুন্দরবন। ভ্রমণের উদ্দেশ্য একটাই—দু–একদিন শহরের কোলাহল ভুলে প্রকৃতির নির্জন অরণ্যে কিছুটা সময় কাটানো, বাঘ দেখার ভাগ্য হলে আরও ভালো, আর সবার ওপরে একধরনের অদেখাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা। রুদ্র, যে দলের মধ্যে সবচেয়ে উচ্ছল, আগেই পরিকল্পনা করেছিল গোটা ট্রিপ। সে বলেছিল—“এইবার তো পুজোর ভিড় নেই, একেবারে নিস্তব্ধ জঙ্গলে গিয়ে আসব। কী রোমাঞ্চ বলো তো!” বাকিরা তার কথায়…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    বটতলার কঙ্কাল

    সুমনা মাইতি অধ্যায় ১ – গ্রামের চৌহদ্দি পেরিয়ে কিছুদূর এগোলেই যে জঙ্গলঘেরা পথটা মাঠের দিকে চলে গেছে, তার মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে এক বিরাট পুরোনো বটগাছ। চারদিকে ঝুলে থাকা অজস্র দড়ির মতো শেকড় আর অন্ধকারে ঢেকে রাখা পাতার ছাউনি যেন দূর থেকে দেখলে আকাশের সঙ্গে মিশে থাকা কোনো দানবের রূপ মনে হয়। দিনের বেলা মানুষ সেখানে গরু চরাতে যায়, শুকনো কাঠ কুড়িয়ে আনে, কিংবা ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেয়। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা নেমে আসে, পাখিরা ডাকতে ডাকতে থেমে যায়, আর বটগাছের শেকড়ের ফাঁক দিয়ে ওঠে অচেনা ফিসফিস শব্দ। গ্রামের ছেলেমেয়েরা একে অপরকে ভয় দেখাতে প্রায়ই বলে—“ওই গাছটার নিচে ভূত…

  • Bangla - ভ্রমণ - রহস্য গল্প

    হিমালয়ের ছায়ায়

    ঋদ্ধি সেনগুপ্ত পর্ব ১: ভোরট্রেন কলকাতার ভ্যাপসা গরম আর অনন্ত জটের ভিড়ের মধ্যে অর্ণার বুক ভরে উঠছিল এক অদৃশ্য ক্লান্তিতে। প্রতিদিন সকালেই সে অফিসের বাস ধরত, ফাইল আর কম্পিউটার স্ক্রিনে ডুবে থেকে সন্ধ্যার পরে ঘরে ফিরত। চারপাশের সবাই যেন শুধু ছুটছে, অথচ কোথাও পৌঁছোচ্ছে না। গত কয়েক মাসে সে বুঝতে পেরেছিল—তার নিজের ভেতরেও এক রকম শূন্যতা জমেছে, যা ভরাট করার মতো কিছু নেই। এই শহর তাকে আর টানে না। একরাতে ডেস্কে বসেই সে হঠাৎ বুকিং করেছিল দার্জিলিংয়ের ট্রেন টিকিট—আর ভাবেনি। সকাল সাড়ে তিনটেয় অ্যালার্ম বাজার আগেই তার ঘুম ভেঙে যায়। চারদিক তখনও অন্ধকার, কেবল ভেজা বাতাসে ভেসে আসছিল বৃষ্টির গন্ধ।…

  • Bangla - তন্ত্র

    ছাই ও শিখা

    অরিত্র মুখার্জী     পর্ব ১: আগুনের চোখ অমাবস্যার রাতে গ্রামের নিস্তব্ধতা যেন অদৃশ্য কোনো হাত এসে একেবারে চেপে ধরত। গঙ্গার তীরের ছোট্ট জনপদ খয়েরপুরে তখন বাতাসও গায়ে লাগতে চাইত না। মাটির ঘরগুলো মৃদু শ্বাসের মতো নিস্তেজ হয়ে থাকত, পুকুরের জলে চাঁদের প্রতিফলন তো নেই-ই, তারকারাও যেন আকাশের কালো পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। শুধু মন্দিরের গায়ে, কুঁচকে যাওয়া লালচে ইট আর কালো ধোঁয়া-মাখা দেয়ালের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেই প্রাচীন কালীমূর্তি—যার চোখে অদ্ভুত এক জ্যোতি নাকি দেখা যায়। বৃদ্ধরা বলত, “আগুনের চোখ”। তাদের দাবি, প্রতি অমাবস্যার রাতে মূর্তির দু’চোখ হঠাৎই জ্বলে ওঠে যেন কারো গায়ের ভিতর থেকে দাউ দাউ করে আগুন…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    কালো লন্ঠন

    ১ ড. অরিন্দম মুখার্জি, কলকাতার একটি নামকরা গবেষক, তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে সুন্দরবনের অদূরপ্রান্তে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম ধনডুবি পৌঁছান। তিনি বন এবং নদীর সঙ্গে মিশে থাকা গ্রামীণ জীবনের স্বাভাবিকতায় নিজেকে পুরোপুরি নিমগ্ন করতে চান, তবে তাঁর আসল উদ্দেশ্য আরও রহস্যময়—গ্রামের লোককথা অনুযায়ী প্রতি পূর্ণিমার রাতে নদীর পারে যে কালো লন্ঠন জ্বলে ওঠে, তা নিয়ে তিনি গভীর গবেষণা করতে চাচ্ছেন। গাছ-গাছালির মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, অরিন্দম অনুভব করেন যে এই গ্রামটি অন্য যে কোনও স্থানের মতো নয়। নদীর জলের নীরবতা, পাতা ছিঁড়ে পড়ার শব্দ, দূরে কোথাও পাখির ডাকে, সব মিলিয়ে যেন এক অদ্ভুত সুরের সৃষ্টিকর্ম। গ্রামের প্রধান রাস্তার ধারে পৌঁছলে,…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    কালো জানালার ভেতর

    উপাসনা রায় উত্তর কলকাতার যে রাস্তার নাম বারবার বদলেছে, সেখানে একটা বাড়ি আছে যার নাম কখনও বদলায়নি—লোকমুখে “কালোজানালা বাড়ি”। অর্পণ যখন প্রথম দিন চাবিটা হাতে পেল, বিকেলের আলো তখন ছেঁকে পড়ছে ছাদের ধুলোতে; সিঁড়ির মুখে জোনাকি বাতির মতো ঝুলছে পুরনো বাল্ব, আর মেঝের কালো-সাদা মোজাইকের ফাঁক থেকে উঠছে এক ধরনের স্যাঁতসেঁতে গন্ধ—আদ্রতা আর শেওলার মিশ্রণ। বাড়িওয়ালার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই, দালাল বাবু বলেছিল, “এখানে যারা থাকে তারা নিজ দায়িত্বে থাকে। পানীয় জল নিজের মতো জোগাড় করবেন, আর… কালো জানালাগুলো বন্ধ রাখবেন।” কথাটা বলে একটু থেমে হেসেছিল, যেন মজা করছে। অর্পণ ভেবেছিল, পুরনো বাড়ির দোষ। কিন্তু যে জানালাগুলোর কাঠে সরু লোহার…

  • Bangla - তন্ত্র

    চৌরঙ্গীর অমাবস্যা

    তিথি বসু পর্ব ১: তাবিজওয়ালা ঘর শহরের কোলাহলের মাঝখানে, যেখান থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঝাপসা দেখা যায়, সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে চৌরঙ্গীর একটি পুরনো হোটেল—‘হোটেল সম্রাট’। বাইরে থেকে দেখলে আধুনিক মনে হলেও ভিতরে ঢুকলেই যেন সময় পিছিয়ে যায়—ফিকে আলো, সাদা কাঠের জানালা, আর মোটা মোটা পর্দা যা আলো ঢুকতে দেয় না। সেই হোটেলের ৩১৫ নম্বর ঘর থেকে পাওয়া গেল এক মৃতদেহ। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখে—একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ খাটে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। ঘরের ভিতর অদ্ভুত একটা গন্ধ—মাটির, ধূপের, আর যেন ভেজা ছাইয়ের গন্ধ। মৃতদেহের পাশে পড়ে ছিল একটি তাবিজ—লাল সুতোয় বাঁধা, তাতে শিকল দিয়ে আটকানো একটা ক্ষুদ্র রৌপ্য বাক্স। এই খুনের…

  • Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

    ভূতের হাসি

    সঞ্জয় দে পর্ব ১: বাড়ির রহস্য অভিজিৎ ছিল ইতিহাসের ছাত্র। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল পুরনো বাড়িগুলোর ইতিহাস খোঁজা, বিশেষত সেগুলোর যেগুলো সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে অথবা কেউ তাদের কাহিনী জানে না। একদিন, তার বন্ধু প্রীতম তাকে একটি পুরনো বাড়ির কথা জানায়, যে বাড়ি সম্পর্কে নানা গুজব ছড়িয়ে আছে। লোকজন বলে, এখানে অদ্ভুত হাসির শব্দ শোনা যায় এবং অনেক মানুষ এখানে হারিয়ে গেছে। সেই রাতের পর থেকেই বাড়িটির নাম তার মনের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। অভিজিৎ ভেবেছিল, এই বাড়ির রহস্য উন্মোচন করতে পারলে তার গবেষণায় নতুন একটি দিক যোগ হবে। তাই এক সকালে, তার গবেষণার জন্যই সেদিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত…