মৈনাক সেন ডঃ নীরব মুখার্জীর জীবনে আজকের দিনটি অন্যরকম একটি দিনের মতো মনে হচ্ছিল। প্রত্নতত্ত্বের প্রতি তার আগ্রহ এবং অতীতের অজানা ইতিহাসকে উদঘাটনের তৃষ্ণা তাকে প্রাচীন রাজবাড়ির দিকে নিয়ে এসেছিল। বর্ধমান জেলার কোলাহলপূর্ণ শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত এই রাজবাড়ি প্রায় শত বছরের ইতিহাস লুকিয়ে রেখেছিল। স্থানীয়রা তাকে সতর্ক করেছিল, গুজবের ছায়ায় ভরা এই প্রাসাদে প্রবেশ করলে অজানা বিপদের মুখোমুখি হতে হতে পারে, কিন্তু নীরবের কৌতূহল তাকে থামাতে পারেনি। প্রবেশদ্বার পেরোতেই, তার চোখে ধরা পড়ল বিশাল পাথরের দেয়াল, যেগুলোতে সময়ের ছাপ স্পষ্ট। পাথরের গায়ে খোদাই করা অদ্ভুত প্রতীক এবং ধূসর রঙের পাপড়ির মতো ছোপ তাকে এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে নিক্ষেপ…
-
-
অজয় মাহাতো ১ পুরুলিয়ার জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করতেই পর্যটক দলের মধ্যে এক অদ্ভুত উদ্দীপনা তৈরি হয়। পাকা রাস্তার সীমারেখা শেষ হতেই পথটি ঢেউ খেলানো মাটির ও শিকড়ে ভরা হয়ে ওঠে, চারপাশে গাছেদের সোনালি রোদ আর গাঢ় ছায়ার খেলা যেন এক আলাদা জগৎ খুলে দিচ্ছিল। দলের সকলের চোখে এক সঙ্গে আগ্রহ এবং অজানা ভয়ের মিশ্রণ—কারণ তারা জানত, এই জঙ্গলের মাঝখানে ব্রিটিশ আমলের এক ডাকবাংলো তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে হঠাৎ করেই দেখতে পাওয়া যায় এক ধুলোমাখা, দু’তলার ভবন, যার খণ্ডিত জানালা আর দারুণভাবে কেটে ফেলা দরজা অতীতের কাহিনী কল্পনার আঙিনায় উদ্ভাসিত করছিল। ছায়াময় বাতাসে দূর থেকে ঘোড়ার টগবগ আওয়াজ…
-
সৌমিক হালদার এক কলকাতার শহরটা যেন প্রতিদিনই নিজের মতো এক নতুন রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ততা, রাস্তায় গাড়ির হর্ণ, ফুটপাতের দোকানদারদের হাঁকডাক, হাওড়া-ব্রিজ থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত প্রতিটি রাস্তায় শহরের নিজস্ব ছন্দ ছড়িয়ে থাকে। এমনই এক ব্যস্ত মোড়, যেখানে চারপাশের গাড়ির ভিড়, ঠেলাগাড়ির ধাক্কাধাক্কি, ট্রাফিক পুলিশের বাঁশির শব্দ আর মানুষের ভিড় একসাথে মিশে গিয়ে তৈরি করে এক অসহ্য কোলাহল। ট্যাক্সিচালক রাহুল প্রতিদিনই এই মোড় পেরোয়। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর—তার জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে এই মোড়। কিন্তু প্রতিদিনই সে লক্ষ্য করতে শুরু করে এক অদ্ভুত কিশোরী মেয়েকে। মেয়েটি কখনো ফুটপাতের ধারে দাঁড়িয়ে থাকে,…
-
গ্রামের নাম ঘোলশ্বরীপুর। নদিয়ার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে, পদ্মা নদীর এক পুরনো শাখার ধারে গড়ে ওঠা এই গ্রাম বহু শতাব্দীর পুরোনো। শস্যে ভরা মাঠ, ঘন বাঁশঝাড়, আর ভাঙন–খাওয়া কাদামাটি মেশানো গলিঘুপচি পথ দিয়ে ছড়িয়ে আছে মানুষের বসতি। দিনের বেলা এখানকার জীবন ঠিক যেমন সরল, তেমনি হাসিখুশি; কিন্তু রাত নামলেই এক ভিন্ন ছায়া নেমে আসে এই জনপদে। গ্রামের সবচেয়ে বড় রহস্য হল মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল তেঁতুলগাছ। গ্রামের বৃদ্ধেরা বলেন, এই গাছ অন্তত চারশো বছরের পুরোনো। এর ছায়ার নীচে একসময় পুঁথি পাঠ হতো, বউভাতের ভোজ বসত, আবার মহামারীর সময় কবরও দেওয়া হয়েছে এরই তলায়। কিন্তু যত পুরোনো স্মৃতি তেঁতুলগাছ ঘিরে রয়েছে, ততই…