• Bangla - ভূতের গল্প

    আলতা পায়ের ছাপ

    সুদীপ্তা কর ১ সরকার পরিবার বহু পুরোনো। শহরতলির শেষপ্রান্তে, ক্যানেলের ধারে মোটা পাঁচিলে ঘেরা প্রাসাদসদৃশ এক বাড়ি—যার কাঠের দরজার ওপর এখনও খোদাই করে লেখা আছে ‘সরকার ভিলা, ১৯২৩’। প্রবোধ সরকার এখানে জন্মেছিলেন, তাঁর বাবা-মারও জন্ম এই বাড়িতেই। সময় বদলেছে, কিন্তু বাড়ির চালচিত্র, লোহার রেলিং, কাঠের মেঝে—সবই থেকে গেছে ঠিক তেমনি। বিয়ের দিনটা ছিল মাঘের মাঝামাঝি—হালকা শীত, শিউলির শেষ গন্ধ, আর বাড়ি ভরা আলো। বিয়ের কোলাহলের মধ্যে শ্রেয়া এসে পা রাখল এই পুরনো সংসারে, লাল বেনারসীতে ঢাকা মুখে একরাশ লাজ লুকিয়ে। মীনাক্ষী দেবী, নতুন বৌমাকে দেখে অদ্ভুত একটা প্রশান্তি অনুভব করলেন—মেয়েটা যেন একদম শান্ত, পরিণত, গম্ভীর। সে কম কথা বলে, হাসে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    পূর্ণিমা ডায়েরি

    দেবযানী মিত্র ১ নদীয়ার ‘গিরিজামোহিনী বালিকা বিদ্যালয়’ বরাবরই শান্ত, ছায়াস্নাত পরিবেশে গড়া একটি পুরনো স্কুল, যার পেছনে ছড়িয়ে আছে রহস্যে মোড়া এক আভা। বারো মাসে একদিন, পূর্ণিমা রাতে, হঠাৎ যেন স্কুলের প্রাচীরের আড়ালে নেমে আসে এক অদৃশ্য ছায়ার করাল উপস্থিতি। মেয়েরা জানে, কোনো অলীক কথা নয়, কেউ বা কিছু ওই স্কুলের পেছনের বিশাল বটগাছটিকে ঘিরে জেগে থাকে। দশম শ্রেণির ছাত্রী রিমা সাহা এই ধরনের গুজবে বিশ্বাস করে না, বরং হাসি ঠাট্টায় উড়িয়ে দেয় সবকিছু। কিন্তু সেই রাতটা ছিল আলাদা—পূজা ছুটি শেষে স্কুলে ফেরার আগের সন্ধ্যা, আকাশে টানা মেঘের ছায়া, তবু এক নিখুঁত গোল চাঁদ ঝলসে উঠেছে পশ্চিমের আকাশে। বাড়ির ছাদে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ভাসমান শবদল

    রবীন ঘোষ অধ্যায় ১: রাত তখন একটার ঘর পেরিয়ে গেছে, আকাশের বুকজোড়া ছড়ানো পূর্ণিমার চাঁদ নীচের ভাগীরথীর গায়ে রূপোর মত আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। হরিপদ মাঝি সেই রাতে একা ফিরছিল জলপথে, তার কাঠের নৌকাটা খালি, গলার লুঙ্গিটা গুটিয়ে কোমরে বাঁধা, হাতে হ্যাজাক জ্বলছে ক্ষীণ আলো নিয়ে। সে যখন ‘ঘাটনিঘাট’ মোড় পেরোচ্ছে, হঠাৎ চোখে পড়ল—নদীর উপর ভেসে আছে কিছু একটা, যেন মানুষ, যেন একটা দেহ। প্রথমে সে ভাবল পাট বা খড়ের পুতুল হবে, কিন্তু হ্যাজাকের আলোটা বাড়িয়ে যখন নৌকা কাছে টানল, তার বুকের মধ্যিখানে যেন ঠাণ্ডা কাঁপুনি বয়ে গেল। শব! নদীর গায়ে ঠাস করে মুখ থুবড়ে ভেসে আছে একটি মৃতদেহ, আর সবচেয়ে…

  • Bangla - তন্ত্র - রহস্য গল্প

    নির্বাপিত প্রদীপ

    সুব্রত গাঙ্গুলি প্রতীক দত্ত, কলকাতার এক নামকরা দৈনিকের অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিক, চিরকাল যুক্তির পথ ধরেই হাঁটতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু কিছু ঘটনা এমন থাকে, যেগুলো যুক্তিকে ছাপিয়ে যায়—এমনই এক ঘটনার পেছনে ছুটে সে এসে পৌঁছেছিল পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এক গ্রামে, নাম উজানডাঙা। শহর থেকে অনেকটা পথ পেরিয়ে, রুক্ষ কাঁচা রাস্তা ও নিস্তব্ধ পলিমাটির ফাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামটির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এক পরিত্যক্ত জমিদারবাড়ি—মহিমা চৌধুরী প্রাসাদ। এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কাহিনি তাকে টেনেছিল এখানে: প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির রাতে, বাড়ির মধ্যবর্তী ত্রিকোণ চত্বরে রাখা এক প্রাচীন ব্রোঞ্জের প্রদীপ নিজে থেকেই জ্বলে ওঠে—কেউ জ্বালায় না, কেউ দেখেনি জ্বালাতে, তবুও জ্বলে। খবরটি প্রথম সে পায় এক…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    রুদ্রসিংহের দোতলা

    তথাগত বিশ্বাস অধ্যায় ১ বর্ধমান শহর থেকে খানিক দূরে, কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে সবুজ ধানক্ষেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিশাল পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল সেই চারজন। অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ, হালকা কুয়াশা ভাসছে বাতাসে, আর সন্ধ্যার আলো ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। চারদিকে নিস্তব্ধতা, শুধু মাঝে মাঝে দূরের কুয়ো থেকে ভেসে আসা কুকুরের ঘেউঘেউ শব্দ। সৌগত চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, চোখে চশমা ঠিক করে বাড়িটার দিকে তাকাল। ইট আর চুনের প্রাচীন কারুকাজ করা বাড়ি, সময়ের থাবায় কালচে হয়ে গেছে। তার পাশে নন্দিতা রায়, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ব্যাগ থেকে নোটবুক বের করে কিছু লেখার আগে গা ছমছমে কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, “এই বাড়িটা যেন…

  • Bangla - ভূতের গল্প - হাস্যকৌতুক

    ভূতের হোস্টেল

    কলকাতার উত্তরে অবস্থিত “চন্দ্রমোহন কলেজ”-এর হোস্টেলটা শহরের মধ্যে হলেও একেবারে বাইরের অংশে পড়ে। চারদিকের কোলাহলের মধ্যেও হোস্টেলের গেট পেরোনোর পরেই যেন এক অদ্ভুত নীরবতা আচ্ছন্ন করে রাখে জায়গাটাকে। পুরনো লাল ইটের বিল্ডিং, জংধরা লোহার গ্রিল, আর হোস্টেলের চারপাশে ছড়ানো অশ্বত্থ ও কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো যেন দিনের বেলাতেও ছায়া ফেলে রাখে আশপাশে। সোহম মুখার্জি, সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া ছাত্র, বাবা-মায়ের সঙ্গে এসে উঠল ওই হোস্টেলে। তার সঙ্গে একই ঘরে থাকবে রাহুল দে, ওর স্কুলজীবনের বন্ধু, আর তুষার সাহা — এক আধুনিক, সদ্য দেখা হওয়া ফেসবুক-বন্ধু। রুম নম্বর ৭ — তিনতলার এক কোণে, যেটা দেখে মনে হয় অনেক বছর কেউ পরিষ্কার করেনি। সিলিং…

  • Bangla - তন্ত্র

    আশ্বিনের রাত ও অশুভ চক্র

    দেবজয় ঘোষ (এক) কলকাতার উত্তর শহরের শোভাবাজার অঞ্চলে শীতকাল প্রবেশ করার আগেই বাতাসে একটা অদ্ভুত শিরশিরে অনুভব জাগে — যেন গলির অন্ধকার কোণাগুলো আরও গভীর হয়, পুরনো বারান্দাগুলো থেকে ছায়ারা লাফিয়ে পড়ে রাস্তায়। সেই শহরেরই এক কোণে, চৌবাগান স্ট্রিটের শেষ প্রান্তে পড়ে থাকা একটি পুরনো, বন্ধ হয়ে যাওয়া দুর্গা মণ্ডপ — “মিত্র চৌধুরী পরিবার মণ্ডপ” নামে পরিচিত — আজও বেঁচে আছে স্মৃতির মধ্যে, কিন্তু সকালের আলোয়ও কেমন ছায়াচ্ছন্ন লাগে। ঋদ্ধিমা রায়, কলকাতার এক সাহসী তদন্তকারী সাংবাদিক, বহুদিন ধরে এই স্থানটির গুজব নিয়ে শুনে এসেছে— আশ্বিন মাসের প্রতি দশমীর রাতে এখানে ঘটে কিছু অলৌকিক, তান্ত্রিক আচার, যেগুলোর স্বাক্ষী শুধু বাতাস আর…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    আলোকবিন্দু

    অধ্যায় ১: আগন্তুক শমিত সেন কলকাতার মেঘলা আকাশ থেকে নেমে এল একেবারে বাংলার বুকের ভিতর—বীরভূমের এক অখ্যাত গ্রামে, নাম আঁধারপুকুর। এই গ্রামের নাম তার কানে আসে এক অদ্ভুত সূত্র ধরে, একটি বয়স্ক লোকের ফেসবুক মন্তব্যে লেখা ছিল: “যারা আলো দেখেছে, তারা ফেরেনি—শুধু আঁধারপুকুর জানে তাদের শেষ নিশ্বাস কবে থেমেছিল।” সাধারণত এই ধরণের রহস্যে আকৃষ্ট হয় না শমিত, সে ক্রাইম ও পলিটিক্স কভার করত, কিন্তু বারবার একটাই ছবি তার চোখে ঘুরছিল—একটি সর্ষে ক্ষেতে মাঝরাতে উজ্জ্বল গোল আলোর বিন্দু, যার চারপাশে কেউ নেই, অথচ ছবির কোণে ভেসে আছে এক অস্পষ্ট ছায়া। একরকম প্ররোচনায়, একরকম পলায়নে সে খুঁজতে বের হয় সত্যের পেছনে লুকিয়ে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    মৃত টেলিফোন

    শুভদীপ দাস ১ কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর এক কোণে লুকিয়ে থাকা সেই বুথটা আজও দাঁড়িয়ে আছে—একটি মৃত সাক্ষীর মতো, শহরের কোলাহলের মাঝেও তার গায়ে নেমে আছে এক নিস্তব্ধতার আবরণ। রাস্তার পাশে এক পুরনো বাজারের পেছনে, ছোট্ট একটা গলিতে ঢুকলে চোখে পড়ে সেই ভাঙা টেলিফোন বুথটি—যার কাচ অর্ধভাঙা, ভিতরে ধুলো জমে ছাইয়ের মতো বসে আছে, আর তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাগজের ঠোঙা, পচা ফলের খোসা, আর মাঝে মাঝে ভবঘুরে বিড়ালদের বিশ্রামের স্থান। অনেক বছর ধরেই কেউ ওখানে ফোন করতে আসে না, কারও দরকার পড়ে না এমন একটা প্রযুক্তির যা এখন কেবল ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। তবুও, রাত বারোটার পর, ঠিক নির্দিষ্ট একটা…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    গহন রাতে ডাকিনীর ডাকে

    অমিয় দাসগুপ্ত 📜 অধ্যায় ১ বীরভূমের বুক চিরে যে সরু মেঠো পথগুলো কুড়ুলগাছ, শিমুলগাছের ছায়ায় মিশে গেছে শূন্যের অতলে, সেই পথে রাতের নিস্তব্ধতায় শুধু শোনা যায় দূরের শিয়ালের ডাক আর ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা সুর। সেদিনের রাত যেন আর পাঁচটা রাতের মতো নয়। পূর্ণিমার আলোয় ভিজে থাকা সেই রাত কেমন এক গা ছমছমে হাওয়ায় কেঁপে উঠছে বারবার। মহলপুরের সেই বিশাল প্রাসাদ—যার উঁচু মিনারগুলো আকাশ ছুঁয়েছে, যার সিংহদ্বারে দু’পাশে পাথরের বাঘ দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে, যার অন্দরমহলের অজস্র জানালা দিয়ে মৃদু বাতাস ঢুকে পড়ছে, সেই প্রাসাদের মধ্যে জ্বলছে শুধুমাত্র দুটি প্রদীপ। জমিদার অনন্ত নাথ রায় একাকী বসে আছেন দোতলার দক্ষিণ কোণের…