• Bangla - তন্ত্র

    মায়াবী তাবিজ

    শৌনক দে অধ্যায় ১ – ঝড়ের রাতে রাতটা ছিল অদ্ভুত অশুভ। পশ্চিম আকাশে মেঘ জমে গিয়েছিল সারাদিন, কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই বজ্রপাতের সাথে শুরু হল তীব্র ঝড়। গাছপালা হেলে পড়ছে, গ্রামের কুঁড়েঘরের চালা একে একে খুলে উড়ে যাচ্ছে, আর বাতাসের সাথে মিশে আসছে শ্মশানঘাট থেকে ভেসে আসা শীতল গন্ধ। সেই রাতে সাধারণত গ্রামের মানুষ ঘর থেকে বের হয় না, কারণ বিশ্বাস করা হয়—শ্মশানের আত্মারা ঝড়ের সাথে বেরিয়ে আসে। কিন্তু গ্রামের ওঝা ভবানী সাধু, যার মাথায় গেরুয়া কাপড়, হাতে ত্রিশূল, চোখে রহস্যময় দৃষ্টি—সে বেরিয়েছিল এক মৃতদেহ দাহের কাজে সাহায্য করতে। হঠাৎ বজ্রের আলোয় দেখা গেল শ্মশানের এক কোণে এক সন্ন্যাসী শুয়ে আছেন,…

  • Bangla - তন্ত্র

    তারার মাঝখানে তান্ত্রিক

    পাৰ্থ প্ৰতিম মুখার্জী পূর্ণিমার রাত ছিল শান্তিনিকেতনের। আশ্রমের চারপাশে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে, শুধু দূরে মাঠের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। এমন রাতে আকাশে এক বিরল দৃশ্য ফুটে উঠল—দিগন্ত জুড়ে টানা লালচে আগুনের রেখা, যেন কেউ জ্বলন্ত মশাল ছুড়ে দিয়েছিল আকাশের বুকের ভেতর দিয়ে। গ্রামের ছেলেরা উল্লাস করে চিৎকার করল—“উল্কাপাত!” মহিলারা মন্দিরের ঘন্টার শব্দ তুলল, ভাবল দেবতার আশীর্বাদ নেমে এসেছে। কিন্তু বৃদ্ধ লোকেরা স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। তাদের চোখে ভয়, কপালে ঘাম, ঠোঁটে নিঃশব্দ ফিসফিসানি। তারা জানত, এটা কেবল কোনো নক্ষত্রপতন নয়—এটা “তান্ত্রিক পথ,” যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অন্ধকার ইতিহাস। বহু বছর আগে শোনা গিয়েছিল, এক তান্ত্রিক পূর্ণিমার রাতে এই…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    হাতিয়ার টুং টুং শব্দ

    প্রনব কুমার সিনহা এক কলকাতার এক ব্যস্ত সন্ধ্যায়, শহরের কোলাহলের ভেতর থেকে অর্ণব সেনের মনটা যেন ছুটে যাচ্ছিল অন্য এক জগতে। তিনি পেশায় সাংবাদিক, কিন্তু নেহাত সংবাদ সংগ্রহ নয়, অর্ণবের আলাদা দুর্বলতা ছিল ইতিহাস ও লোককথার প্রতি। কলেজের সময় থেকেই তার অভ্যাস—শহরের পুরোনো ঘাট, অজানা গলি বা অচেনা গ্রামে গিয়ে স্থানীয় লোকেদের কাছ থেকে অদ্ভুত গল্প শোনা। সেদিনও একে একে রাত নেমে আসছিল বাগবাজার ঘাটে, হাওয়ায় ভেসে আসছিল ভেজা কাদার গন্ধ আর গঙ্গার জলে তরঙ্গের গুঞ্জন। সেই সময়েই হঠাৎ তার সঙ্গে পরিচয় হলো এক বৃদ্ধ নাবিকের, যার মুখে জড়ানো ছিল বহু বছরের লোনা জলের স্মৃতি। ঝাপসা চোখ, মুখে সাদা দাড়ি,…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    মোবাইল টাওয়ারের ছায়া

    এক গ্রামের নাম শালপুকুর। নদীর ধার ঘেঁষে, সবুজ ক্ষেত আর তালগাছে ঘেরা এই গ্রাম বরাবরই শান্ত, নিরিবিলি। কোলাহলহীন জীবনযাত্রায় মানুষজন এখনো প্রথা মেনে চলে। গ্রামের মাঝখানে একটি পুরনো পুকুর—যার নাম থেকেই গ্রামটির নামকরণ। শালগাছ আর পুকুরের শাপলা মিলেমিশে গ্রামটিকে সাজিয়ে রেখেছে অন্যরকম আবহে। আধুনিকতার ছোঁয়া খুব কমই পৌঁছেছিল এই গ্রামে। ইন্টারনেট ধরা দিত কেবল পাহাড়ি মেঘের মতো—কখনো আসত, আবার হঠাৎ হারিয়ে যেত। ঠিক এই কারণে সরকার ও মোবাইল কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে শালপুকুর গ্রামে একটি আধুনিক 5G টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামের মানুষজন প্রথমে খুশি হয়ে ওঠে। তারা ভাবে, অবশেষে তাদের ছেলে-মেয়েরা শহরের মতো ভিডিও কল করতে…

  • Bangla - ভূতের গল্প - রহস্য গল্প

    ভূতের গলি

    অরুণাভ মৈত্র ১ কলকাতার উত্তর শহর মানেই পুরনো দিনের ছাপ, সময়ের ধুলো জমে থাকা মেঝে, কাঠের জানালার ফাঁকে ঢুকে পড়া রোদের রেখা, আর সেইসব রাস্তা—যেগুলো একসময় কুচকাওয়াজ দেখেছে, আবার অন্যদিকে ত্রাস হয়ে উঠেছে নিঃসঙ্গ রাতে। এমনই এক গলির নাম ‘বটতলা লেন’। নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় বইয়ের পাতা, নাটকের পোস্টার, কিম্বা উনিশ শতকের বিপ্লবীদের গা ঢাকা দেওয়ার কাহিনি। কিন্তু এই গলির ইতিহাস শুধু কাগজে-কলমে নয়—এখানে অলৌকিকতার এক অদৃশ্য ছায়া যেন ছায়ার মতো ঘোরে। লোকে মুখে মুখে বলে, “এই গলিতে কিছু একটা আছে।” কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না কী—কেউ বলে রাত্তিরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটা কণ্ঠস্বর, কেউ বলে দরজার ফাঁক…

  • Bangla - তন্ত্র

    তাঁতের ঘরের তান্ত্রিকা

    নীলাদ্রী সেনগুপ্ত ১ রুদ্র বসুর চোখে নদিয়ার এই ছোট্ট গ্রামটা ছিল শুধু আরেকটা বিনিয়োগের জায়গা, অথচ আজ যখন সে ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে পুরনো তাঁতকলের সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন তার বুকের ভেতর যেন কিছু একটা গুমরে ওঠে। শহরের কোলাহল, ব্যস্ত কর্পোরেট দুনিয়া আর অবিরাম ডেডলাইনের জীবন থেকে বেরিয়ে রুদ্র এবার নিজের মতো করে কিছু শুরু করতে চায়—নিজের তৈরি কিছু, নিজের সিদ্ধান্তে। তাই তো সে কিনে নিয়েছে এই বহু বছর ধরে বন্ধ পড়ে থাকা, ধুলো-জমা এক তাঁতকল, যেটার ইটের গায়ে এখনও পুরোনো মসৃণতা আর গুমোট ঘামের গন্ধ লেগে আছে। কলের কেয়ারটেকার, বৃদ্ধ মদন, তাকে চাবি তুলে দেয় এক কথাও না বলে—শুধু একবার…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    মৃত্যুস্থান বনাম মুক্তিস্থান

    দীপঙ্কর মাহাতো পুরুলিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামটিতে ঢোকার পথটাই যেন শহরজীবনের ব্যস্ততা থেকে এক অলক্ষ্য ছেঁটে ফেলা। ঝাউগাছ, শাল, পিয়াল আর মহুয়ার সারি সারি গাছের ফাঁকে রাস্তা বেঁকে গেছে পাহাড়ের বুক চিরে। মে মাসের শুকনো রোদ আর ধুলোভরা বাতাসের মধ্যেও সেখানে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল, যেন প্রকৃতি নিজেই শব্দ চেপে বসে আছে। এমনই নিঃসঙ্গ, প্রায় বিস্মৃতপ্রায় এই জায়গাতেই নিজের শেষ জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডা. অনিরুদ্ধ গুহ। কলকাতার এক খ্যাতনামা হাসপাতালে চব্বিশ বছর ধরে সার্জারি বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি, সহকর্মী আর ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছিলেন এক কঠোর অথচ নীতিনিষ্ঠ পথপ্রদর্শক। তবে সময়ের নিয়মে অবসরের দিন ঘনিয়ে এলে…

  • Bangla - তন্ত্র

    মোহিনী মন্দির

    ছত্তিসগড়ের গভীর জঙ্গলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। চারদিকটা যেন অদৃশ্য কোনো চাপা রহস্যে ঘেরা—গা ছমছমে নিরবতা, ঘন কুয়াশা আর মাঝে মাঝে শোনা যায় অজানা পাখির ডানার শব্দ। ডঃ নীলয় সেনগুপ্ত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান, জিপ থেকে নেমেই চারপাশটা একবার ঠান্ডা চোখে স্ক্যান করলেন। পিছনে তাঁর দলের বাকি সদস্যরা: তরুণ তথ্যচিত্র নির্মাতা অরিন্দম পাল, প্রত্নতাত্ত্বিক চিত্র বিশারদ ডঃ শ্রুতি দত্ত, ইতিহাসের গবেষক তনুশ্রী মুখার্জী এবং স্থানীয় গাইড兼ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট রাহুল কোসলে। তাঁরা আজ যে জায়গায় এসে পৌঁছেছেন, তার হদিশ পেয়েছিলেন কিছু দুর্লভ আদিবাসী নকশা বিশ্লেষণ করে। কথিত আছে, এই নির্জন জঙ্গলের মধ্যেই আছে এক প্রাচীন মন্দির, যার অবস্থান এতদিন…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    শালবনের শব

    পুরুলিয়ার দিকে রওনা দেওয়ার সময় কলকাতার আকাশ ছিল রৌদ্রঝলমলে, কিন্তু দলের ভিতরে যেন এক চাপা উত্তেজনার ঘূর্ণি চলছিল। রুদ্র, অভিজিৎ, ইরা আর সঞ্জনা – এই চারজনের দলটার নেতৃত্বে ছিল রুদ্র, একজন বাস্তববাদী ডকুমেন্টারি নির্মাতা যিনি সব কিছুকে যুক্তির চোখে দেখতে অভ্যস্ত। তবু এই বিশেষ প্রজেক্টটা ছিল অন্যরকম – কারণ এটি ছিল একটি পরিত্যক্ত আদিবাসী গ্রামের লোককাহিনি নিয়ে, যেখানে কথিত আছে, পূর্ণিমার রাতে মৃতরা উঠে আসে মাটির নিচ থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা পুরুলিয়ার এক গভীর শালবনের ভেতর অবস্থিত জামদা নামের একটি গ্রামে যাবে – একটি গ্রাম যা দীর্ঘদিন আগে উধাও হয়ে গেছে, যেখানে আর কেউ থাকে না, অথচ গ্রামের গল্প আজও…

  • Bangla - তন্ত্র

    চন্দনবনের কঙ্কালতন্ত্রী

    মৈনাক ভৌমিক ১ পুরুলিয়ার চন্দনবন — নামটি আজও অনেকের কাছে অজানা, যদিও লোকমুখে ছড়িয়ে থাকা বহু গল্পের কেন্দ্রবিন্দু এই অরণ্য। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তঘেঁষা এই অঞ্চলটি আদিবাসী জনপদের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা ঘন জঙ্গলে ভরপুর, যেখানে আজও সূর্যাস্তের পর কেউ একা পথ মাড়ায় না। অথচ সেখানেই, এক শতাব্দী পুরনো ব্রিটিশ জরিপ মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া এক দাগচিহ্ন—“K.T. Akhra (Abandoned)”—ডঃ ঋত্বিক বসুর চোখে পড়ে। বহুদিন ধরে প্রাচীন ভারতীয় তন্ত্রচর্চা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসা এই প্রত্নতত্ত্ববিদ তার টিম নিয়ে রওনা দেন চন্দনবনের উদ্দেশ্যে। তাঁর দলের সঙ্গে ছিলেন ইতিহাসের গবেষক ইরা সেনগুপ্ত, ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর অভীক মণ্ডল, তথ্যলিপিকার তৃষা দে এবং স্থানীয় গাইড হিসেবে নিযুক্ত হন নিতাই মাহাতো,…