• Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    শিমুলফুলের দিনগুলো

    তিতলি মুখার্জী অধ্যায় ১: শিমুলগাছের ছায়ায় তিতির পালের জীবনের সেইসব দিন, যেগুলো সে পরবর্তীকালে স্মরণ করত “শিমুলফুলের দিন” নামে, আসলে ছিল এক অবিচল, নির্ভেজাল গ্রামীণ শৈশবের প্রতিচ্ছবি। তার গ্রাম—জয়নগর, ছিল যেন এক আলসে দুপুরের মতো ধীর, ছায়াঘেরা, অথচ অনুভবের গভীরে গাঁথা। কাঁচা রাস্তার দু’ধারে খেজুরগাছের ছায়া, পুকুরপাড়ে বসে থাকা ধলেশ্বর মাছের প্রত্যাশায় জাল ফেলে রাখা, আর বিকেলে মাঠের ধারে ছুটোছুটি—এইসবই ছিল তিতিরের দুনিয়া। তাদের ছোট্ট কুঁড়েঘরটি ছিল শিমুলগাছের পাশে, যে গাছের ছায়ায় বসে তিতির স্কুলের হোমওয়ার্ক করত। সেই গাছ, গাঢ় লাল শিমুলফুলে ভরা, যেন তার ছোট্ট জীবনের প্রতিটি স্বপ্নকে আগলে রাখত। হরিপদ পাল—তিতিরের বাবা, ছিলেন একজন গ্রাম্য পাঠশালার শিক্ষক, যিনি…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    আয়নার অন্যপাশে

    সুতপা মল্লিক কলকাতার উত্তরের এক পুরনো বনেদি বাড়ির ভেতর দুপুরটা যেন হাঁপিয়ে উঠেছিল। ছাদের ওপর চড়া রোদ, নিচের দোতলা বাড়ির অন্দরে নিঃশব্দের এক গহ্বর। ব্রতী সেন জানলার ধারে বসে ছিল, পাশের ঘরে টিকটিকির ডাকে একটানা সময় যেন আটকে পড়েছিল। দুপুরের খাবার, থালা বাসনের শব্দ, শাশুড়ির নিয়মিত বকুনি—সবই সেদিনের মতো সেরে ফেলা হয়েছে। অরিন্দম অফিসে, শাশুড়ি ঘুমোচ্ছেন, আর এই সময়টুকু তার—সে জানে, এই এক-দেড় ঘণ্টা সে তার মতো করে বাঁচতে পারে। কিন্তু কীভাবে বাঁচে, তা সে নিজেই জানে না। তার পছন্দের খাতা, একটা পুরনো পেন আর সেই শাদা পৃষ্ঠা—যেখানে সে শব্দে শব্দে নিজের নিঃশব্দ চিৎকারগুলো গেঁথে রাখে। কেউ জানে না, কেউ…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    নৌকোর নাম ‘তুমি’

    অর্ক ভট্ট ১ পদ্মার কোলঘেঁষে ছায়াঘেরা এক গ্রাম, যেখানে সকাল শুরু হয় কাকডাকা ভোরে আর শেষ হয় নদীর ঢেউয়ের নিঃশব্দ হাহাকারে। ঠিক সেই জায়গাটায় পৌঁছাল মেঘা সেন, শহরের এক ডকুমেন্টারি নির্মাতা, যাকে নিয়ে এসেছে তার নিজস্ব কৌতূহল—নদী, তার মানুষ আর তাদের জীবনগাথা। লাল মাটি, ভাঙাচোরা কাঁচা রাস্তা, কাদা-মাখা পায়ের ছাপ পেরিয়ে মেঘ দাঁড়ায় নদীর ঘাটে। কাঁধে ঝোলানো ক্যামেরা, পরনে হালকা তুলো কাপড়ের সালোয়ার, চোখে একরাশ আগ্রহ আর মুখে একরাশ ক্লান্তি। তার চোখ প্রথমেই আটকে যায় এক মাঝির ওপর, যার গায়ের রং ঠিক নদীর পলির মতো ধূসর, যার নৌকা যেন নদীর বুকে গড়িয়ে চলা এক অভ্যস্ত ছায়া। সে জলে দাঁড়িয়ে জাল…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    বাঁশবাগানের গন্ধ

    সুকুমার ঘোষ এক কলকাতার সল্টলেকের অষ্টম তলার কর্পোরেট অফিস কাচের দেওয়ালের ভিতর বন্দি এক ফ্ল্যাটস্ক্রিন-চালিত জীবন। কেবিনের মাথার উপরে দুলছে স্পটলাইট, ডেস্কের কোণায় রাখা অ্যালো ভেরা পাত্রে মাটি শুকিয়ে গেছে, অথচ অভিরূপ বসুর চোখে ক্লান্তির ছায়া নেই—সে অভ্যস্ত। প্রত্যেকদিন সকাল ন’টায় ঠিক নীল শার্ট, ধূসর ব্লেজার আর চকচকে লেদারের জুতো পরে অফিসে প্রবেশ করে; তার মুখে এক প্রকার যান্ত্রিক আত্মবিশ্বাস—যেটা হয়তো মাল্টিন্যাশনাল পরিবেশের জরুরি পোশাক। অভিরূপ একজন সফল ব্র্যান্ড ম্যানেজার, মেট্রিক্স আর কনভার্সনের পরিসংখ্যানের সঙ্গে যার ঘুম–জাগরণের সম্পর্ক। সে জানে কোন ক্লায়েন্ট কবে “impression” চায়, কাকে “engagement” দিয়ে মাতাতে হয়, আর কোন প্রেজেন্টেশনের সময় একটা থ্রি-পয়েন্টার স্লাইড শেষ মুহূর্তে গুঁড়িয়ে…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    তিন নদীর মেয়েরা

    অনিরুদ্ধ বাগচী ১ গঙ্গা, পদ্মা আর মেঘনা—তিন নদী, তিন স্রোত, তিন বুকভরা কান্না। এবং সেই কান্নার নিচে চাপা পড়ে থাকা তিনটি মুখ—রোহিমা, পার্বতী, আর নিরু। ১৯৪৩ সালের অগাস্ট মাস। আকাশ যেন প্রতিদিন আগুনে পোড়া ভাতের মতো ঝাঁজালো। সূর্য চৌচির মাটি ফাটিয়ে ঢুকতে চাইছিল মানুষের নাভিমূলে। মাঠ নেই, ফসল নেই, কুয়াশা নেই—শুধু চিৎকার আর খিদে। গঙ্গার ধারে রোহিমার গ্রামটা কখনও মাটি হারায়নি, বর্ষায় শুধু উঠোনে জল দাঁড়াত। কিন্তু এই বছর বর্ষা এল না। আর এল না বাজারের দিকে চালের গন্ধ। তার স্বামী কাসেম ঘাটে কাজ করত। একদিন ঘরে ফিরে বলল, “আজ পাঁচ পয়সার চাল বিশ পয়সায় উঠছে। দু-সপ্তাহের মধ্যে চাল থাকবে…

  • Bangla - নারীবিষয়ক গল্প

    মুখোশ

    ঈশিতা বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যায় ১: ছায়া নামে লেখা রাত তখন প্রায় তিনটে। কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে, গড়িয়া অঞ্চলের একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটের বারান্দায় বসে ইরা সেন ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ভাসা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে মনস্থির করলেন—আজ লিখতেই হবে। এই সপ্তাহের শেষে পাণ্ডুলিপি পাঠানোর সময়সীমা। কিন্তু ইরার ভেতর যেন এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব—লিখবেন, কিন্তু নিজের নামে নয়। নামটা হবে আগের মতোই—রুদ্র সেন। ইরা জানতেন, আজকের এই সাহিত্যের জগতে, একজন নারী যখন সাহসী, স্পষ্টভাষী, এবং পুরুষদের অন্তর্জগৎ বিশ্লেষণ করে—তাকে সহজভাবে নেওয়া হয় না। অযথা তর্ক, ট্রোল, অবমাননা—এসবই তার পূর্বের অভিজ্ঞতা। অথচ যখন “রুদ্র সেন” নামে তিনি পুরুষ সেজে লেখেন, তখন সেই একই ভাষা প্রশংসা কুড়ায়, পুরস্কার পায়,…

  • Bangla - অনুপ্রেরণামূলক গল্প

    আঁচল

    শুভশ্রী হাজরা অধ্যায় ১: সুতোয় বাঁধা স্বপ্ন ঝিরঝিরে হাওয়ায় গঙ্গার ধারে ঢেউ খেলছে পাটের সুতো। আঁচল সরকার ধৈর্যের সঙ্গে তা শুকোতে দিচ্ছে রোদে, শাড়ির রঙ যেন ঠিকঠাক বসে। এ দৃশ্য যেন শুধু শিল্প নয়, একটা স্বপ্নের সূচনা। আঁচলের বয়স মাত্র ২৪। ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর মা সুমিত্রা সরকার আর দিদিমা বাসন্তী সরকারই ছিল তার আশ্রয়। আঁচল বড় হয়েছে এই গ্রামেই — নদিয়ার চরবাঁশবেড়িয়া। ছোট্ট, সরল একটা গ্রাম। কিন্তু তার চোখে ছিল আকাশ ছোঁয়ার বাসনা। “মা, আজকে পাটের রঙটা যেন ঠিকঠাক না বসে,” রোদে শুকোনো সুতোটা হাতে তুলে এনে আঁচল বলল। সুমিত্রা উত্তর দিল, “তুই যেমন মন দিয়ে বানাস, তাতে যা-ই…