সৌম্যজিৎ বসাক ১ সকালের আলো জানালার পাতলা পর্দার ফাঁক গলে এসে পড়ছে বিছানার চাদরে। ঘড়ির কাঁটা আটটা বাজিয়ে থেমে গেছে—না, থেমে যায়নি, চলছে, কিন্তু তার কাছে যেন সব স্থির। ড. অরিজিৎ ধর ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ছাদের দিকে। মস্তিষ্কে যেন কোনো শব্দ নেই, কোনো স্মৃতি নেই, কোনো প্রতিচ্ছবি নেই। তিনি উঠে বসলেন বিছানায়। মাথাটা ভারী লাগছে, যেমন হয় একটানা অনেকক্ষণ ঘুমালে। চারপাশে চেনা আসবাবপত্র, পরিচিত বইয়ের তাক, ল্যাম্পশেডের নিচে রাখা একটা পুরোনো পেন স্ট্যান্ড। কিন্তু এই ঘরটা যেন আজ নতুন মনে হচ্ছে—কিংবা মনে পড়ছে না একেবারেই। তিনি টেবিলের দিকে হাঁটলেন, যেখানে একটি নীলমাখা ডায়েরি খোলা পড়ে আছে। নিজের হাতের…
-
-
সম্বিত দাশগুপ্ত অধ্যায় ১: সংকেত চাঁদের প্রান্তরের সেই গভীর নিশুতি ভেদ করে যখন ‘অরোরা-১’ গবেষণা কেন্দ্রের অ্যান্টেনা প্রথমবারের মতো এক অদ্ভুত কম্পনধর্মী সংকেত ধরা পড়ল, তখন কেউই তা গুরুত্ব দিতে চায়নি। মহাকাশে এমন ইন্টারফেরেন্স হরহামেশাই দেখা যায় — সৌরঝড়, উপগ্রহের প্রতিধ্বনি, কিংবা অজানা মহাজাগতিক কণার ছোটাছুটি। কিন্তু ড. অনিরুদ্ধ সেনের অভিজ্ঞ চোখ বুঝে ফেলল, এতে আছে কিছু ভিন্নতা। সংকেতটি ছিল ছন্দোময়, নির্দিষ্ট বিরতিতে ফিরে আসছিল। সময়মতো পুনরাবৃত্তি, নির্দিষ্ট উচ্চতা ও কম্পাঙ্কে শব্দের মতো কিছু… যা প্রাকৃতিক নয়, বরং কৃত্রিম। তারপরে আরও অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল — সেই সংকেতের তরঙ্গবিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিস্তা রায় বললেন, “এটা যেন কারও নিঃশব্দ আর্তি… যেন কেউ…
-
অসিত চক্রবর্তী ১ সকালের আলো জানালার পর্দা ছুঁয়ে যখন ঘরে ঢুকল, তখন ঘুম ভাঙল রিমা দাশের। মাথাটা ভার লাগছিল, ঠিক যেন সারারাত ঘুম হয়নি। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা বলছে সে ন’ঘণ্টা ঘুমিয়েছে। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে আচমকা সে বুঝতে পারল—কিছু একটা নেই। কিছু একটা অদৃশ্য, অথচ খুব জরুরি। সেই অনুভূতিটা একেবারে হাড়ে হাড়ে টের পেল। সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখের দিকে তাকাল—চোখের নিচে হালকা কালো ছাপ, ঠোঁট শুকনো, কিন্তু তার চেয়ে বেশি যেটা ভাবাচ্ছিল তা হলো এক রকম ভেতরের খালি জায়গা। তার মাথার ভিতর একটা চিত্রকল্প বারবার ঘুরে ফিরে আসছিল—কোনো পুরনো কথা, কারও মুখ, অথবা একটা হাসি—যা এখন আর সে…
-
অগ্নি সরকার ১ পাহাড়ের বুক চিরে একটা নির্জন বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার। বাইরে থেকে তাকালে কেবল পাথুরে ঢালু, কিছু গুল্ম আর ঝরনার শব্দ। কিন্তু পাহাড়ের গভীরে, মাটির তলায় কয়েকশো ফুট নিচে, বিস্ময়কর এক পরীক্ষা চলেছে বহু বছর ধরে— এমন এক পরীক্ষা, যার অস্তিত্ব জানে না কোনো সরকার, কোনো সংবাদমাধ্যম, এমনকি বিজ্ঞানসমাজও। এই গবেষণাগারের একমাত্র মালিক ও পরিচালক, ড. পারিজাত সেন— একসময় কলকাতার খ্যাতনামা বায়োটেক ল্যাবের প্রধান গবেষক ছিলেন। কিন্তু নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘনের দায়ে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি অন্তর্ধান হন, আর আজ থেকে প্রায় এক যুগ ধরে গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন এমন এক গবেষণা, যা মানবজাতির সংজ্ঞা বদলে দিতে পারে। তাঁর লক্ষ্য— মানব ও…