• Bangla - ভূতের গল্প

    পেত্নীর পায়েস

    এক গ্রামের শেষ প্রান্তে যে কুঁড়ে ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে, তা যেন সময়ের করাল থেকে কিছুই রক্ষা করতে পারেনি। ছাদের কাঠের বোর্ড গলচ্ছে, দেয়ালগুলোতে ছোপছোপ ছাঁচ ধরে আছে, আর জানালার কাঁচ এমনিতেই ফাটল ধরেছে। রাত হলে বাতাসের সঙ্গে লুপ্তপ্রায় ছায়া ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে, আর দূরের বুনো গাছের ডালপালা হাওয়ায় দুলতে দুলতে অদ্ভুত শব্দ তৈরি করে। গ্রামবাসীরা এই কুঁড়ে ঘরটিকে এড়িয়ে চলে, বিশেষত রাতের পর রাত। তবে বাচ্চাদের কৌতূহল সীমাহীন; তারা শপথ করে যে একদিন ওই ঘরে ঢুকে দেখবে বুড়ো পেত্নীর রহস্যময় জীবন। পেত্নী নিজে কখনো গ্রামের লোকেদের সামনে আসেন না, আর রাতের আঁধারে তিনি যেন আরও এক ধাপ জীবন্ত এবং…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    বৃষ্টির রাতে বউমা

    ১ বৃষ্টির রাত। এমন এক বৃষ্টি, যা যেন শুধু রাতের নীরবতা চুরমার করে দিতে আসে। সরলা দেবী জানালার পাশে বসে পুরনো কাঠের দোলনায় আস্তে আস্তে দুলছেন। তাঁর সামনে ছোট টেবিলে রাখা একটি মাটির প্রদীপ টিমটিম করে জ্বলছে, এবং তার পাশে রাখা একটি ফ্রেম করা ছবি—অমিতের, তাঁর একমাত্র ছেলে, যিনি গত তিন বছর আগের এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এখনো সেই দিনটার কথা ভাবলে সরলার বুকের মধ্যে একধরনের ঠান্ডা ঢেউ খেলে যায়। ছেলের শেষ জন্মদিনের সময় তোলা ছবি—চোখে হাসি, মুখে আত্মবিশ্বাস, যেন বলছে, “মা, আমি আছি তো!” অথচ সেই হাসির পেছনে কি লুকিয়ে ছিল কোনো গোপন কথা? কিছুদিন ধরে সরলার মনে…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    শালবনের শব

    পুরুলিয়ার দিকে রওনা দেওয়ার সময় কলকাতার আকাশ ছিল রৌদ্রঝলমলে, কিন্তু দলের ভিতরে যেন এক চাপা উত্তেজনার ঘূর্ণি চলছিল। রুদ্র, অভিজিৎ, ইরা আর সঞ্জনা – এই চারজনের দলটার নেতৃত্বে ছিল রুদ্র, একজন বাস্তববাদী ডকুমেন্টারি নির্মাতা যিনি সব কিছুকে যুক্তির চোখে দেখতে অভ্যস্ত। তবু এই বিশেষ প্রজেক্টটা ছিল অন্যরকম – কারণ এটি ছিল একটি পরিত্যক্ত আদিবাসী গ্রামের লোককাহিনি নিয়ে, যেখানে কথিত আছে, পূর্ণিমার রাতে মৃতরা উঠে আসে মাটির নিচ থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা পুরুলিয়ার এক গভীর শালবনের ভেতর অবস্থিত জামদা নামের একটি গ্রামে যাবে – একটি গ্রাম যা দীর্ঘদিন আগে উধাও হয়ে গেছে, যেখানে আর কেউ থাকে না, অথচ গ্রামের গল্প আজও…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চৌরাস্তার শ্মশানঘর

    দিব্যজ্যোতি নন্দী এক বর্ধমান শহরের শেষপ্রান্তে যে পুরনো রেলগেটটা পড়ে আছে, তার ঠিক পরেই একটা আঁকাবাঁকা রাস্তা সোজা চলে গেছে চৌরাস্তার দিকে। দিনের বেলায় জায়গাটা নেহাতই সাধারণ—দুটো চায়ের দোকান, একটা পানের খুচরো স্টল, আর রাস্তার ধারে পুরনো বিদ্যুতের খুঁটি। কিন্তু রাত নামলেই জায়গাটার চেহারা পাল্টে যায়। এই শহরের বাসিন্দারা জানে, চৌরাস্তার সেই ধূসর শ্মশানঘরটার পাশ দিয়ে কেউ বারোটার পরে হেঁটে যায় না। নতুন থানায় বদলি হয়ে আসা ঋষভ চট্টোপাধ্যায় এসব কাহিনি প্রথম শুনেছিল থানার কনস্টেবল অসীমের মুখে। “স্যার, ওদিকে একবার গেলে পেছনে তাকাবেন না। লোকজন বলে, পেছনে তাকালে নিজের ছায়াও হারিয়ে যায়।” ঋষভ এসব কথা শুনে হেসেছিল। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    প্রেতবাড়ির প্রদীপ

    অদ্রিজ দাশগুপ্ত বিকেলের রোদ যেন পাকা শালপাতার মতো গায়ের ওপর নেমে এসে বসে ছিল। আজনা গ্রামের রেলস্টেশনটি ছিল খুব ছোট, একটা মাত্র প্ল্যাটফর্ম, তাও অর্ধেকটা ঘাসে ঢাকা। কলকাতা থেকে লোকাল ধরে এসে নামল নয়ন দত্ত—একটা পুরনো রঙচটা ব্যাগ কাঁধে, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, আর ঠোঁটের কোণে একরকম দ্বিধা। ট্রেনটা চলে গেল ধোঁয়ার লেজ রেখে, আর নয়ন একবার ঘড়ি দেখল—বিকেল চারটে দশ। রিকশা নেই, টোটো নেই, সামনে মাঠের ধার দিয়ে কাঁচা রাস্তাটা নেমে গেছে গ্রামের দিকে। সে একটু থেমে ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে কপালে ঘাম মুছে নিল। এই গ্রামের নাম আজনা—সে অনেক দিন আগে একবার এসেছিল, খুব ছোটবেলায়। তখন তার মা…

  • Bangla - তন্ত্র

    তন্ত্রবৃত্তের ছায়া

    অদ্বৈত বসু চন্দ্রপুর গ্রামের শেষ প্রান্তে, গহন বাঁশবনের মাঝে লুকিয়ে ছিল একটা জরাজীর্ণ পোড়ো মন্দির। গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা বলত, এককালে সেখানে সিদ্ধতান্ত্রিক করালীনাথ তপস্যা করতেন। তার মৃত্যুর পর কেউ আর সাহস করে ওই মন্দিরে পা রাখেনি। কিন্তু শহর থেকে আসা প্রত্নতত্ত্ব গবেষক দিব্যজিৎ বিশ্বাস কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন না। তিনি ঠিক করলেন, এই তন্ত্রমন্দিরের ইতিহাস খুঁজে বার করবেন। গ্রামের এক বৃদ্ধ পুরুত তাকে সাবধান করলেন— “ওখানে রাত কাটানো মানেই আত্মার আহ্বান। করালীনাথের মৃত্যু হয়নি… সে এখনও শক্তির আকারে রয়ে গেছে।” দিব্যজিৎ হেসে উড়িয়ে দিলেন। পরদিন বিকেলে একটি লণ্ঠন, ক্যামেরা আর টেপরেকর্ডার নিয়ে তিনি প্রবেশ করলেন মন্দিরের গর্ভগৃহে। পাথরের মেঝেতে আঁকা ছিল বিশাল…