অভিক দত্ত শহরের কিছু যুবক, যাদের মধ্যে রোহন, অন্বেষা এবং সৌম্য প্রকল্পের নেতৃত্বে রয়েছেন, শহরের কোলাহল থেকে দূরে গ্রামে পৌঁছানোর জন্য যাত্রা শুরু করেন। তাদের উদ্দেশ্য একটাই – গ্রামের নদী, পুকুর এবং বন সংরক্ষণে সচেতনতা এবং কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। শহরের ব্যস্ত জীবনের মধ্য দিয়ে তারা যাত্রা শুরু করে, শহরের উঁচু ভবন, ধূমায়িত রাস্তা এবং হট্টগোলের মধ্যে দিয়ে তারা আস্তে আস্তে গ্রামীণ পথে প্রবেশ করে। এই যাত্রা কেবল শারীরিক নয়; এটি একটি মানসিক এবং ভাবগত যাত্রাও। রোহন ভাবছে কিভাবে শহরের জীবন এবং গ্রামীণ জীবন একে অপরের থেকে কতটা ভিন্ন। অন্বেষা প্রকল্পের পরিবেশগত দিকগুলো নিয়ে চিন্তিত, সে লক্ষ্য রাখে নদীর ধারা কতটা…
- 
				
 - 
				
অরিত্র কুন্ডু ১ দীর্ঘ দিনের যাত্রা শেষে ভ্রমণকারী যখন খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে এসে পৌঁছাল, তখন সূর্যের আলো ফিকে হয়ে আসছে, আকাশে ধূসর-নীল রঙের সন্ধ্যার আভা মিশে আছে। চারপাশে এক অন্যরকম নীরবতা, যেন পাহাড়ের বুকজুড়ে সময় থেমে আছে শুধু তার জন্য। পথজুড়ে ছোট ছোট ঝোপঝাড়, ঢেউ খেলানো সবুজের সমুদ্র আর বাতাসে ভেসে আসা অচেনা ফুলের গন্ধ তাকে এক অদ্ভুত স্বস্তি এনে দেয়। ভ্রমণের ক্লান্তি যেন মুহূর্তে মুছে যায় এই অপার্থিব দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে। দূরে সবুজে ঢাকা পাহাড়ের কোল, ঝরনার ঝিরঝির শব্দ আর কুয়াশার চাদরে মোড়া ছোট্ট গ্রাম তাকে এক মুহূর্তে অন্য জগতে টেনে নেয়। গ্রামের দিকে তাকিয়ে তার মনে হয়, এ…
 - 
				
অতনু হালদার সকালবেলার শান্তিনিকেতন সবসময়ই আলাদা এক আবহ তৈরি করে রাখে। সূর্যের সোনালি আলো যখন গাছপালার পাতার ফাঁক দিয়ে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন গোটা গ্রামটাই যেন এক অদৃশ্য ক্যানভাসে আঁকা হয়ে ওঠে। এলিসা সেই সকালেই পৌঁছেছিল এই মাটির শহরে, তার বহু প্রতীক্ষিত ফটোগ্রাফি প্রজেক্ট নিয়ে। ইউরোপের একটি নামকরা ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিন তাকে বেছে নিয়েছিল ভারতবর্ষের গ্রামীণ শিল্প, প্রকৃতি ও মানুষের হাসিমুখ তুলে ধরার জন্য। সে আগে বহু বই ও নথিতে পড়েছে শান্তিনিকেতন নিয়ে—রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত এই জায়গার সংস্কৃতি, রঙ, মাটির গন্ধ, শিল্প ও গানের গল্প। কিন্তু বাস্তবে সেই সকালেই প্রথমবার সে হাঁটছিল লাল মাটির পথ ধরে। চারপাশে সোনাঝুরির গাছ, যার পাতার ঝিরঝির…
 - 
				
উৎসব তরফদার ১ গ্রামের উত্তর প্রান্তে ভাঙাচোরা ইটের দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে সেই অদ্ভুত জমিদারবাড়ি—যেন সময়ের আঘাতে ক্ষয়ে যাওয়া এক প্রাচীন স্মারক। একসময় এখানে ছিল উজ্জ্বল আলো, অতিথিদের কোলাহল, শঙ্খধ্বনি আর ঢাকের তালে উৎসবের জোয়ার। আজ সবই ম্লান হয়ে গেছে। পুরু দরজায় মরচে, জানালার শিক ভাঙা, ঘাস-লতাপাতা ক্রমে ঢেকে ফেলেছে সিঁড়ির পাটাতন। দিনের বেলায়ও ভেতরে ঢোকার সাহস করে না কেউ, কারণ ভাঙা ছাদের ফাঁক দিয়ে আলো এলেও, ঘরগুলোতে যেন চাপা অন্ধকার জমে থাকে। অথচ এই অন্ধকারের মাঝেই আছে সেই রহস্যময় বাগান—যা এখনো গ্রামজুড়ে লোককথার বিষয়। বাড়ির পিছনের দিক থেকে শুরু হয়েছে এক বিশাল বাগান, যেখানে আজ আর নিয়মিত যত্ন হয়…
 - 
				
প্ৰসূন মন্ডল প্রফেসর অরিন্দমের ল্যাবের ভেতরের পরিবেশ পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ল্যাবটি আধুনিক যন্ত্রপাতি, আলোকসজ্জা এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক নথি দিয়ে ভরা, যা যেন এক রহস্যময় জায়গার মতো মনে হয়। প্রফেসরের আবিষ্কৃত নতুন হেডসেটটি একটি চমকপ্রদ যন্ত্র, যার ধাতব কাঠামো এবং নরম প্যাডিং মানুষের মাথার সঙ্গে মিলিয়ে যায়। আলোছায়ার খেলা এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের শব্দ এক সঙ্গে মিলিয়ে এই ল্যাবকে জীবন্ত করে তোলে। অনির্বাণ, মীরা এবং রোহিত ল্যাবের মধ্যে প্রবেশ করতেই প্রথমে বিমোহিত হয়। তাদের চোখে ল্যাবটি এক অনন্য জগৎ মনে হয়, যেখানে বিজ্ঞান এবং কল্পনার মধ্যে সেতুবন্ধন ঘটেছে। প্রফেসর অরিন্দম নিজে একজন উদ্ভাবক এবং শিক্ষাবিদ, যার চোখে উদ্দীপনা ও গভীর…
 - 
				
পৌলমী বসু এক সকালের প্রথম আলোয় যখন ঘুম ভাঙে, তখন থেকেই সোমার দিন শুরু হয় দায়িত্বের দীর্ঘ তালিকা নিয়ে। রান্নাঘরে চায়ের কেটলি চড়ানো, টিফিনের বাক্স সাজানো, মৌয়ের স্কুলব্যাগ গুছিয়ে দেওয়া, কাপড় কাচা—সবই যেন একটা অভ্যাসের অংশ। কিন্তু এই অভ্যাসের ভেতরে কোথাও এক অদৃশ্য শূন্যতা দিন দিন গভীর হচ্ছে। জানলার ফাঁক দিয়ে আসা আলো তার চোখে পড়ে, কিন্তু সেই আলো তাকে আনন্দ দেয় না। বরং মনে হয়—এই আলোও যেন কেবল আরেকটা রুটিনকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। রান্নাঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে সোমা যখন নুন-মশলার অনুপাতে তরকারি কষে, তখন তার ভেতরে ভেসে ওঠে প্রশ্ন—এটাই কি তবে তার জীবন? রান্নাঘরের কড়া গন্ধ, চায়ের ফুটন্ত বুদবুদ, কিংবা…
 - 
				
প্রাপ্তি দাস ১ জীবন যেন একঘেয়েমি স্রোতে ভেসে চলছিল অন্বেষার। সকালবেলা চোখ মেললেই রান্নাঘরের ধোঁয়া, বয়স্ক মায়ের বকুনি আর সমাজের অলিখিত নিয়মের চাপ তাকে ঘিরে ধরত। বইয়ের তাক ভর্তি অসংখ্য খাতা, ডায়েরি, অর্ধলিখিত গল্প—সবকিছু যেন নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার দমিয়ে রাখা কণ্ঠের। লেখার হাত তার থেমে গেছে, অথচ ভেতরে জমে থাকা শব্দেরা ক্রমাগত কড়া নাড়ছে। মায়ের একটাই কথা—“এত পড়াশোনা করেছ, কিন্তু লিখে কী হবে? সংসার সামলানোই আসল কাজ।” বাইরে প্রতিবেশীদের কটাক্ষ, আত্মীয়স্বজনদের দৃষ্টি—সবই যেন তাকে বোঝাতে চায়, লেখালিখি কোনো জীবিকা নয়, এটা নিছক খেয়াল। অথচ অন্বেষা জানত, তার কলমের ভেতরে লুকিয়ে আছে তার সত্যিকারের জীবন, এক নতুন পৃথিবী।…
 - 
				
দেবব্রত সরকার নিঃসঙ্গ শ্মশানের অন্ধকারে সায়ন ধীরে ধীরে তার আসন গ্রহণ করে। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা শ্মশানশিল্পের অবচেতন ছায়া তার মনকে আরও উদ্বেগজনক করে তোলে। দূরে দূরে পঁচা পাতার ঘন স্তূপে কাকেরা কাঁকড়ির মতো ডাকছে, যেন শ্মশান নিজেই তার নিঃশ্বাসে সচেতন। বাতাস শীতল, ঠোঁট কামড়ে যায়, এবং হাওয়ার সঙ্গে মাটির ঘ্রাণ মিশে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ সৃষ্টি করছে। সায়নের চোখ বারবার অন্ধকারে মেলে—প্রায় মনে হচ্ছে, অদৃশ্য কোনো চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে মনে মনে গুরুজীর নির্দেশ অনুসরণ করে, নিজের নিশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু শ্মশানের অন্ধকার যেন তার প্রত্যেকটি পদক্ষেপকে ওজন দিচ্ছে। আগুনের ক্ষীণ আলো তার সামনে নাচতে নাচতে অদৃশ্য রূপে অঙ্কন…
 - 
				
মধুরিমা বসু ১ অর্ণবের জীবন ছিল ভীষণ ব্যস্ততার, ভিড়ে ভরা শহরের একঘেয়ে ছন্দের। প্রতিদিনের যান্ত্রিক সকাল আর রাত তাকে যেন ধীরে ধীরে গ্রাস করছিল। অফিস থেকে বাড়ি, বাড়ি থেকে অফিস—এটাই তার জীবনের রুটিন হয়ে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে নিজের ভেতরে এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করত সে, যেন কোথাও কিছু হারিয়ে গেছে। এই শূন্যতাই তাকে শহর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেছিল। তাই হঠাৎ করেই একদিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল—শান্তি খুঁজতে পাহাড়ের কোলে যাবে। সে ঠিক করল, কোনো জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে নয়, বরং এক প্রত্যন্ত গ্রামে যাবে, যেখানে শহরের কোলাহল নেই, শুধু প্রকৃতির নিশ্বাস টের পাওয়া যায়। ট্রেন থেকে নামার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিপে…
 - 
				
স্নেহা চ্যাটার্জী ১ নন্দিতা প্রতিদিনের সকালে একই রুটিনে ঘুম থেকে ওঠে—সকালের ছয়টায় আলার্মের কড়া শব্দ, কফির গরম কাপ হাতে নিঃশ্বাস ফেলে প্রস্তুতি শুরু। সে একজন কর্পোরেট জগতে সাফল্য পেয়েছে, তার নাম ও পরিচয় যথেষ্ট প্রভাবশালী, কিন্তু সেই পরিচয় যেন শুধুই এক বহিরাগত দৃষ্টিতে সুন্দর। অফিসের কাগজপত্র, ইমেল, ভিডিও কনফারেন্স, মিটিং—সবকিছুই নিখুঁত নিয়মে চলছে। কিন্তু এই নিখুঁত ছাতার নীচে, নন্দিতার মনে এক অজানা শূন্যতা বাস করছে। বসে বসে তিনি লক্ষ্য করেন, কখনো নিজেকে সে হাসতে দেখেনি, কখনো নিজের জন্য কিছু করার আনন্দ পাননি। প্রতিটি মিটিং শেষে, সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তার মধ্যেও সে নিজেকে অদৃশ্য মনে করে। বাইরে থেকে যেন তার জীবন সম্পূর্ণ,…