ঐশী সেনগুপ্ত পর্ব ১: বৃষ্টির ব্রেক কলকাতার জুলাই মাসের বৃষ্টি ঠিক যেন কাকেই বা কখন চমকে দেবে বোঝা যায় না। সকালে রোদ, দুপুরে গুমোট, আর বিকেল গড়াতেই যেন মেঘ ভিজিয়ে দিয়ে যায় ব্যস্ত মানুষগুলোর অবসরের ফাঁকফোকর। তিথি সিংহরায় ঠিক সাড়ে তিনটে নাগাদ নামল গেটস টেক পার্কের সামনে। তার ল্যাপটপ ব্যাগটা আজ অদ্ভুত ভারি লাগছে, হয়তো বা ভেতরের টেনশনটাই বেশি। আজ যে প্রেজেন্টেশনটা দিতে হবে, সেটা হেড অফিস থেকে সরাসরি এসেছে—এবং সঙ্গে এসেছে তিনটি কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। পা রেখেই সে বুঝল, মেঘ জমছে। “দুপুরের পরে এমন আবহাওয়ায় বরাবরই কিছু একটা হয়,” নিজের মনেই বলে উঠল তিথি। অফিস ক্যান্টিনটা প্রায় ফাঁকা। আরেকটা…
-
-
অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায় পর্ব ১: প্রথম বার্তা সৌম্য মুখার্জী প্রথম দিন স্কুলে ঢুকেই বুঝেছিল, এই স্কুলটা একটু অন্যরকম। শান্তিনিকেতনের সীমানা ছুঁয়ে থাকা এই পুরনো হাইস্কুলটির নাম ‘চৈতন্য বিদ্যামন্দির’, তবে গেটের ওপরে নামটা আধফাটা, আর নিচে একটা ছেঁড়া ব্যানারে আজও ঝুলছে গত বছরের নববর্ষের শুভেচ্ছা। স্কুলের বিল্ডিংটা অনেক পুরোনো, লাল ইটের দেয়াল আর কড়ি-পাতার ছাদ। অথচ, ভেতরের পরিবেশে একটা অদ্ভুত স্তব্ধতা। যেন কেউ কথা বলতে ভয় পায়। যেন স্কুলটা চুপচাপ নিঃশব্দে কোন কিছু লুকিয়ে রাখছে। সৌম্য বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স করে সদ্য চাকরিতে ঢুকেছে, ইংরেজি পড়ায়। নিজের মধ্যেই গম্ভীর স্বভাব, কিন্তু আজ সকাল থেকেই বুকের ভেতর টানটান অস্বস্তি। প্রিন্সিপাল রুমে বসে থাকা মাঝবয়সী…
-
ঋতুপর্ণা চৌধুরী শান্তিনিকেতনের পথচলা রুদ্রর হাত থেকে নোটবুকটা প্রায় খসে যাচ্ছিল, বাইক থেকে নামার সময়। শান্তিনিকেতনের হেমন্তের রোদ যেন কাগজের পাতার উপর কবিতার মতো পড়ছিল। কলকাতা থেকে পালিয়ে আসার পর প্রথমবার মনে হচ্ছিল, বেঁচে আছে। রাস্তার ধারে তাল গাছের সারি, লাল মাটি, আর ভোরের মিষ্টি শীত—সব মিলিয়ে একটা পুরনো কবিতা মনে হচ্ছিল চারপাশটা। “তুই আবার কবিতা লিখতে এলি, না পালাতে?”—প্রশ্নটা বাবার কণ্ঠে এখনো মাথার মধ্যে বাজছে। রুদ্র কিছু বলেনি, শুধু বলেছিল, “একটু সময় দে, নিজেকে খুঁজে নিচ্ছি।” কলকাতার ঘিঞ্জি ফ্ল্যাট, মা’র গুমরে রাখা কান্না, বাবার ভ্রুকুটি—এসব থেকে পালিয়ে এখানে এসেই যেন আবার শ্বাস নিতে পারছে সে। রুদ্র থাকছে শান্তিনিকেতনের…
-
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার শহরে শেষ বিকেলের আলো ম্লান হয়ে আসছে। একটা ছেঁড়া ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখটা দেখল শুভ্র। ২০শে জুলাই। বিখ্যাত অ্যাপোলো ১১-র মিশনের দিন। এই দিনটাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে বিশেষ প্রদর্শনীর জন্য। নাসা থেকে নিয়ে আসা আসল ‘মুন রক’, অর্থাৎ চাঁদের পাথর। শুভ্র হাতের ক্যামেরাটা ভালোভাবে চেপে ধরল। সাংবাদিকতার জীবনে এমন দিন খুব কম আসে। কলকাতায় চাঁদের পাথর দেখতে এত মানুষের ভিড় দেখে নিজের চোখকেও বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। সিকিউরিটির বিশাল ব্যবস্থা। পুলিশের উঁচু অফিসার থেকে সাধারণ দর্শনার্থী—সবাই আসছে দেখতে। “দেখে নে শুভ্র, এই পাথরের জন্য ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছিস তুই,” পেছন থেকে শুভ্রর বন্ধু অর্ণব এসে চাপা…