• Bangla - প্রেমের গল্প

    পাহাড়ের ওই পাশে

    রুদ্রনীল ধর পাঁচ বছর পর, চিলেরবস্তি টয় ট্রেনটা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে দিয়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। জানালার ধারে বসে ঈশান পাহাড়ের কুয়াশার ভেতর তাকিয়ে ছিল। পাইনগাছগুলো যেন কুয়াশার শরীরে শীতের চাদর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক যেমন তার স্মৃতিতে তীর্থার চোখে ছিল এক ধরনের মেঘলা অভিমান। পাঁচ বছর। সময়টা কম নয়। তবু তার মনে হয় এইতো সেদিন, সে এই চিলেরবস্তির গলিগুলো ধরে হাঁটছিল তীর্থার সঙ্গে। পাথরের সিঁড়ি, পাহাড়ি চা, সন্ধ্যার আগেই ঘনিয়ে আসা অন্ধকার। সেই সব কিছু এখন কেমন একটা আবছা গল্পের মতো লাগে। তীর্থার সঙ্গে দেখা হয়েছিল একেবারে হঠাৎ করে। ঈশান তখন তার মাস্টার্সের রিসার্চ প্রজেক্ট নিয়ে পাহাড়ি পরিবেশ…

  • Bangla - উপন্যাস

    মেঘবালিকার ডায়েরি

    ঋতা মিত্র বাড়ির পেছনের ছোট উঠোনটাতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল মেয়েটা। নাম তার মেঘলা, কিন্তু আকাশে তখন মেঘ ছিল না—ছিল একরাশ বিস্ময় আর প্রশ্ন। পাড়ার লোকেরা বলে, “এই মেয়েটা নাকি ছেলেদের মতো, এত পড়াশোনা কিসের?” মা মাঝে মাঝে কাঁদে—চুপচাপ, রান্নাঘরের কোণে, যেন হাঁড়ির ফুটতে থাকা ডালের গন্ধে কান্নার লোনা গন্ধ মিশে যায়। মেঘলা পড়ে বারো ক্লাসে। ছোট শহরের এই স্কুলে এমনিতেই মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা। তার মধ্যে মেঘলা—যার চোখে রয়েছে খবরের কাগজের শিরোনাম, রিপোর্টারের মাইক ধরা হাত আর সত্যি বলার সাহস। সে চায় সাংবাদিক হতে। এ শহরে সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্নটা প্রায় অপরাধের মতো। শিক্ষক বলেছে, “তুই যদি ম্যাডাম…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    একটি চুপ থাকা ভালোবাসা

    ঋতুপর্ণা বসু শীতের দুপুরে শীত তখন শহরের কাঁধে নেমে বসেছে। কলেজের লাইব্রেরির বাইরের কাঠের বেঞ্চে বসে ছিল অনিরুদ্ধ। তার পরনে ছিল ধূসর সোয়েটার, গলায় মাফলার, আর হাতে ছিল একটিমাত্র বই—জীবনানন্দ দাশের কবিতা। সে বইটা যেমন ছিল, তেমনই তার মনটাও—অদ্ভুত নিঃশব্দ, সময়ের গন্ধ মাখানো। বইয়ের পাতায় চোখ ছিল, কিন্তু মন ছিল বইয়ের বাইরের জগতে। প্রতিদিন বিকেলে লাইব্রেরির সিঁড়ি দিয়ে যে মেয়েটা নামে, আজও সে ঠিক সময়মতো নামছে। তার নাম প্রভা। ছিমছাম পরিপাটি সাজ, নীল-সাদা শাড়ি, কানে ছোট্ট ঝুমকা। চোখে এক অদ্ভুত আভা, যেন কোনো কথা না বলেই সে অনেক কিছু বলে যেতে পারে। অনিরুদ্ধ বহু দিন ধরেই তাকে লক্ষ করে, কিন্তু…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    এক মুঠো পুরোনো আলো

    সোমা মিত্র আমার স্মৃতি পুরোনো অ্যালবামের মতো—কিছু ছবি রঙ হারিয়েছে, কিছু এখনো ঝকঝকে। উত্তর কলকাতার যে বাড়িটাতে আমার জন্ম, সেই লালবাড়িটা এখন আর নেই। সেটার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে চকচকে অ্যাপার্টমেন্ট, নাম—“মঙ্গলতারা হাইটস”। মাঝে মাঝে ভাবি, নামটা কত গ্ল্যামারাস, অথচ সেই নামের নিচেই চাপা পড়ে গেছে আমার ছোটবেলার চটি পায়ে দৌড়ানো বারান্দা, কাঁঠালের গন্ধমাখা দুপুর, আর দিদার হাতে বাঁধা তুলসী মালা। আমাদের বাড়িটা ছিল এক রকম রেওয়াজি—সকালে প্রার্থনা, দুপুরে শব্দ করে পাখার ঘুরন্ত আওয়াজ, আর সন্ধ্যেবেলা harmonium-এর একঘেয়ে সুর। বাবা অফিসফেরতা এককাপ চায়ে দিন শেষ করতেন, আর মা রান্নাঘরের কোণে বসে চুপচাপ মাছ কুটতেন—কখনোই অকারণে হাসতেন না। তবু আমি জানতাম, মা…

  • Bangla - হাস্যকৌতুক

    ভজহরি মামার বউ খোঁজা

    বাপ্পা মণ্ডল পাড়ার সবচেয়ে আজব চরিত্র যদি কেউ হয়, তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে ভজহরি মণ্ডল। বয়স ৪৫ হলেও মনটা আটকে আছে ১৮-তে। বগলে রেডিও, গলায় প্রেমের গান, মুখে রসিকতা—এই হলো তার দৈনন্দিন জীবন। পুরো গ্রাম তাকে চেনে “ভজহরি মামা” নামে—কেউ হাসে, কেউ বিরক্ত হয়, কিন্তু সবাই জানে, তার মত ব্যাচেলর আর হয় না। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই ভজহরির মাথায় চেপে বসে বিয়ের ভূত! “আমি কি বিয়ে করব না?”—এই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় এক অসম্ভব মজার, অদ্ভুতুড়ে এবং কখনো কখনো আবেগঘন অভিযান। পর্ব ১: ব্যাচেলর বোম্বা ভজহরি ভজহরি মণ্ডল—এই নামটা শুনলেই গাঁয়ের মানুষদের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। কেউ বলে তিনি পাগল,…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    চন্দ্রবিলের ডাক

    সিঞ্জিনী চক্রবর্তী আগমন নদিয়ার চন্দ্রপুর গ্রামটা সময়ের দিক থেকে যেন অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। শহরের তুলনায় এখানে সময় যেন একটু ধীরে চলে। দিনগুলো এখানে বড় শান্ত, নিঃসঙ্গ; সন্ধ্যা নামতেই ঘরবাড়ির দরজা জানলা বন্ধ হয়ে যায়, কুকুরের ডাকে চমকে ওঠে মানুষ। গ্রামটা যেন নিজেই একটা দীর্ঘশ্বাস। পাকা রাস্তা নেই, মোবাইল টাওয়ারের সংকেত আসে-যায়। চায়ের দোকানে বিকেলের আড্ডাও যেন কেমন নিরুত্তাপ। আর সন্ধ্যে নামলেই চারপাশে এমন এক নীরবতা নামে, যেন শব্দ করাটাই পাপ। এই চন্দ্রপুর গ্রামেই আসে রক্তিম সেন—কলকাতার যুবক, ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের ছাত্র। সে আসছে তার মামাবাড়িতে, গরমের ছুটির জন্য। পুরনো দিনের মতো চিঠি বা ফোন করে নয়, হঠাৎ করেই একদিন চেপে…