• Bangla - রহস্য গল্প

    কালাপানির কাব্য

    অমিতাভ বসু পর্ব ১: জলের ওপারে শব্দ ১৮৯৭ সালের জানুয়ারি মাস। আন্দামানের বাতাসে তখনও রৌদ্রের ছায়া। দূর থেকে দেখা যায় সেলুলার জেলের লোহা-দেওয়া গঠন, যেটা যেন কোনো বিশাল মাছের কঙ্কালের মতো পড়ে আছে দ্বীপের বুক চিরে। লম্বা বারান্দা, ভয়ানক নির্জনতা, আর তিনতলার ফাঁসির মঞ্চ—সব মিলিয়ে এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের এক ঠান্ডা নরক। এই সেলুলার জেলেই এসে পৌঁছেছিল এক কবি—নাম হেমচন্দ্র সেন। কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে সাহিত্য পড়াতেন, বিপ্লবী ভাবনার জন্যে যুবকদের মধ্যে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। তবে তাঁর বিপ্লবের অস্ত্র ছিল আগুন নয়—কবিতা। তাঁর লেখা ‘রক্তঝরা বসন্ত’ কবিতা ব্রিটিশদের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়, কারণ তিনি তাতে এক বদ্ধঘরের ছাদ ভেদ করে বেরিয়ে আসতে…

  • Bangla - ভ্রমণ

    বর্ষায় বাংলাদেশের ভ্রমণ

    অনিরুদ্ধ বসাক পর্ব ১: পদ্মার পাড়ে, মেঘে ভেজা সকাল পদ্মার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানেই একটা নিঃশব্দ যাদুর মধ্যে ঢুকে পড়া। আমি তখন রাজশাহীতে, বর্ষার শুরুতেই এসে পড়েছি। ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামছিল, যেন মাটিকে এক নতুন জেগে ওঠার ডাক দিচ্ছে। বাংলাদেশে বর্ষার সৌন্দর্য আলাদা। এখানে মেঘ শুধু আকাশে থাকে না, জমে থাকে মানুষের চোখে, গন্ধ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে কাদামাখা পথঘাটে, ধানখেতের ফাঁকে, কাঁঠালের গন্ধে। সকালটা শুরু হয়েছিল এক কাপ ধোঁয়া ওঠা লেবু-চা দিয়ে, ছোট্ট এক চায়ের দোকানে। দোকানদার বললেন, “ভাই, বর্ষা কিন্তু আমাদের দেশের একেকটা প্রেমের গল্পের মত। শুরুতে আনন্দ, মাঝখানে অভিমান, শেষে শান্তি।” আমি চায়ের কাপ হাতে বসে ভাবছিলাম, ঠিকই তো—এই…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    বৃষ্টি ভেজা ছেলেবেলা

    অর্ঘ্য মৈত্র পর্ব ১: দোতলার জানালার ধারে বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ করে। জানালার পাশে বসে চুপচাপ শুনছি সেই শব্দগুলো, ঠিক যেমন করে শোনতাম ছোটবেলায়। সেই দোতলার ঘরটা, যেখানে একটা কাঠের টেবিল ছিল, তার ওপর সাদা কাপড়ে মোড়া একটা গোল ক্যালেন্ডার। জানালার ওপাশে ছিল বকুলগাছ, আর গাছের মাথায় লুকিয়ে থাকত বৃষ্টির ফোঁটাগুলো। আজকের দিনটা যেন সেই পুরোনো দিনের মতই, শুধু বদলে গেছে সময় আর শহর। মনে হচ্ছে, যেন আবার ফিরে গেছি দক্ষিণ কলোনির সেই ছোট্ট বাড়িটায়, যেখানে আমার ছেলেবেলা জমে ছিল একেকটা গল্পের মত। আমি অর্ঘ্য, জন্মেছিলাম এক শীতের সকালে। মা বলে, সেদিন খুব কুয়াশা ছিল, হাসপাতালের জানালা দিয়ে কিছুই দেখা যাচ্ছিল…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    নিলাচলের শেষ রাত্রি

    অভিষেক ভট্টাচার্য পর্ব ১: কোণের ঘরে এক পুরনো নথি শোভন রায়, কলকাতার এক উঠতি ইতিহাসবিদ, চাকরি করেন একটি নামী গবেষণা সংস্থায়। চৈতন্যদেবের জীবনের ওপর একটি নতুন ডকুমেন্টারি তৈরির কাজে তাকে পাঠানো হয় পুরী। উদ্দেশ্য—চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের শেষ দিনগুলির ওপর তথ্য সংগ্রহ এবং তার মৃত্যু সম্পর্কে প্রামাণ্য প্রমাণ খোঁজা। যদিও ইতিহাস বলে, ১৫৩৩ খ্রিষ্টাব্দে একরাত্রে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে কীর্তন করার সময় হঠাৎই অন্তর্ধান হয়ে যান তিনি—কেউ বলেন তিনি সমাধিস্থ হন, কেউ বলেন তিনি গিয়েছিলেন সমুদ্রপথে। কোনো স্পষ্ট সমাধান নেই। শোভনের আগ্রহ ইতিহাসের চেয়েও বেশি কৌতূহলের। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিটি অন্তর্ধান কিংবা মৃত্যু রহস্যের অন্তরালে থাকে বাস্তব। আর বাস্তব যত গোপন থাকে,…

  • Bangla - তন্ত্র

    তামার পায়ের ছায়া

    অরিজিৎ দে পর্ব ১: কুসুমবাড়ির ডাইনি পাহাড়ের কিনারে ছুঁয়ে বইছে জলঢাকা নদী। নদীর পাড়ে একটা গ্রাম—ছোট্ট, চুপচাপ, নাম তার কুসুমবাড়ি। দিনের বেলা গাছেদের ছায়ায় এখানে শিশুরা খেলে, বুড়োরা বিড়ি টানে আর মহিলারা কলতলায় গান ধরে। কিন্তু রাত নামলে? রাত নামলে কুসুমবাড়ি নিঃশব্দ হয়ে যায়। যেন কেউ বা কিছু পুরো গ্রামটাকে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়। এই কুসুমবাড়িতেই এসেছেন কমলিনি বসু। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি লোককাহিনি নিয়ে গবেষণা করছেন। তার বিষয়—“উত্তরবঙ্গের নারী-কেন্দ্রিক অপ্রাকৃত লোককাহিনির সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।” বলতে গেলে, ভূতের গল্প নিয়ে গবেষণা। কিন্তু তিনি বলেন, “আমি গল্প খুঁজি, ভূত না। গল্পের পেছনে লুকিয়ে থাকা সমাজকে দেখাই আমার কাজ।” গ্রামে পৌঁছে তাকে নিয়ে যাওয়া…

  • Bangla - ভূতের গল্প

    ছায়াসঙ্গী

    মৃনাল সরকার পর্ব ১ ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল পাঁচটা ছুঁই ছুঁই। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বানানো সেই পুরনো বাংলোটা একা দাঁড়িয়ে ছিল পাইন আর ওক গাছের ছায়ার নিচে। অরুণাভ যখন গেট খুলে ঢুকলো, সামনের রাস্তায় আর কোনো গাড়ি ছিল না, কোনো মানুষও না। সবকিছু যেন নিঃশব্দে অপেক্ষা করছিল তার আগমনের জন্য। বাংলোর নাম ‘শান্তিনিকেতন’, যদিও এই নামটা শুনে যে শান্তি পাওয়ার আশা করা যায়, তা ভবিষ্যৎ বলবে। সে একটি পুরনো, কাঠের দরজা ধাক্কা দিয়ে খুললো। হালকা কড়চড় শব্দে দরজাটা উন্মুক্ত হল, যেন দীর্ঘ ঘুমের পর কেউ চোখ মেলল। ঘরের ভেতরে ধুলোময় আসবাব, কাঠের মেঝে, আর সিলিং থেকে ঝুলে থাকা একটা মৃত…

  • Bangla - স্মৃতিকথা

    একটা সাইকেলের স্মৃতিকথা

    সুদীপ্ত চৌধুরী পর্ব ১ আমার জন্ম হয়েছিল এক গরম দুপুরে, হাওড়ার একটি ছোট গ্যারেজের ভেতর। চারপাশে ধুলো, কাঠের গন্ধ, আর যন্ত্রপাতির আওয়াজ। তখন আমি কিছুই বুঝতাম না—শুধু টের পাচ্ছিলাম, কিছু একটা নতুন হচ্ছে। লোহা, রাবার আর রঙের গন্ধে ভরা সেই অদ্ভুত পরিবেশে কেউ আমাকে তৈরি করছিল, নিঃশব্দে, নিখুঁতভাবে। আমার কঙ্কাল জুড়ে নিচ্ছিল একে একে চাকা, হ্যান্ডেল, প্যাডেল। আমার গায়ে পড়ছিল চকচকে লাল রঙ, ঠিক যেন একটা নতুন জামা। সেই রঙে আমার আত্মা খুঁজে পেল নিজেকে। আমার গায়ে প্রথম স্পর্শ দিয়েছিল একটি খুদে হাত—সে ছিল শিবু, বছর আটেকের এক ছেলেমানুষ। ওর বাবা সেই গ্যারেজে কাজ করত, আর আমাকে তৈরি করেছিল তাঁরই…

  • Bangla - সামাজিক গল্প

    একটি নৌকা, দুটি নাম

    বহ্নি চক্রবর্তী পর্ব ১ পদ্মার ওপার থেকে সূর্য যখন মাথার ঠিক ওপর উঠে এল, তখন রমিজ আলী তার নৌকাটা ধীরে ধীরে ঘাটে বাঁধছিল। ঘাটটা এখন অস্থায়ী—বাঁশের খুঁটি দিয়ে বাধানো, পেছনে শুকনো খড়ের ছাউনি। সকালে তিনটে পরিবার পার করে এনেছে ওপার থেকে, এখন আবার পাঁচজন অপেক্ষা করছে যাবার জন্য। রমিজ কারো নাম জিজ্ঞেস করে না, ধর্মও না, শুধু বলে—“চুপচাপ বসেন, ভয় পাইয়েন না।” তার নৌকায় ওঠা মানেই যেন এক নীরব চুক্তি—পদ্মা কিছুই মনে রাখে না, আর মাঝিও না। বছরখানেক আগেও এই নদীর পাশে ছিল তার স্ত্রী আর ছেলের কুটির, দুজনেই এক রাতে উধাও। কেউ বলে হিন্দুদের দাঙ্গাকারীরা তুলে নিয়ে গেছে, কেউ…

  • Bangla - রহস্য গল্প

    গহনপুরের গুপ্তধন

    অর্ণব গুহ অধ্যায় ১: হারিয়ে যাওয়া নোটবই গহনপুর – নামটায় এক রকম রহস্য আছে। বাঁকুড়া জেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটার ইতিহাস কতদূর ছড়িয়ে, কেউ তা স্পষ্ট বলতে পারে না। জঙ্গলে ঘেরা, পিচঢালা রাস্তা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানেই এই গহনপুর। গ্রামের মধ্যে এখনও কিছু টালির ছাউনি ঘর, একটা ভাঙা জমিদার বাড়ি আর একটা প্রাচীন শিবমন্দির—কোনটা কবে তৈরি, সঠিক কেউ জানে না। সেই গহনপুরেই পৌঁছল তিনজন বন্ধু—সুদীপ্ত, ঐন্দ্রিলা আর বাপি। কলকাতার স্কুলজীবনের বন্ধুত্ব এখন কাজের চাপে একটু আলগা হলেও, এই রহস্যময় আমন্ত্রণ তাদের আবার এক করল। “এই বাড়িটা তো একেবারে হন্টেড সিনেমার মতো!”—বাপি গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে। ঐন্দ্রিলা একটু…

  • Bangla - প্রেমের গল্প

    নির্বাণের পথে প্রীতি

    মৈনাক দত্ত আখড়ার প্রথম আলো শান্তিনিকেতন ছাড়িয়ে কাঁকরপথ ধরে যত এগোয় প্রীতম, ততই যেন শব্দ কমে আসে, গন্ধ বাড়ে। মাঠে বাতাসে ধানগাছের ঘ্রাণ, পাখিরা গানের মতো ডাকছে, আর মাঝে মাঝে কোনো অজানা সুর কানে বাজে—কোনো একতারা, না কি সময়ের ধ্বনি, বোঝা যায় না। প্রীতম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। বিষয়—“বাউল দর্শনে দেহতত্ত্ব: এক সমকালীন পাঠ”। থিসিস লিখছে, কিন্তু বই পড়া আর কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে তার মন ভরে না। সে চায় ছুঁয়ে দেখতে, শ্বাস নিতে। তাই এসেছে শান্তিনিকেতনের কাছের এই অখ্যাত বাউল আখড়ায়, নাম ‘উত্তরের পথ’। পৌঁছাতেই প্রথম যে জিনিস চোখে পড়ে, তা হল একটা তুলসী গাছ। উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে শান্ত, স্থির।…